সে ভালবেসেছিলো আমাকে। কি অদ্ভুতুড়ে ভালবাসা মেয়েটার। আমি মেয়েটার পাশে বসে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিলেও মেয়েটা বুঝতো না। কি অদ্ভুত মেয়েটা। ভালবাসার নামে সে আমাকে ঘুমাতে দিতো না। ঘুম তো নয় যেন আমার মরণ হয় রাতে। মেয়েটাকে ঘুমের কথা বললে বলতো…
-হুম শুভ রাত্রি।
মনের ভিতরে একটা চাপা রাগ এই কথাটাতেই খুঁজে পাই আমি। কি অদ্ভুত! চোখের নিচে কালি পড়ে যাওয়া নিয়ে মেয়েটার চিন্তা যেন আকাশছোঁয়া। কিন্তু তবুও কেন যেন আমার সাথে কথা না বললে তার রাতের আকাশে অমাবস্যা হতো না, জোছনা হতো না। আমি তার কাছে ঠিক যেন চাঁদের সমতুল্য। কি অদ্ভুতভাব মেয়েটার মধ্যে কাজ করে।
আমাতে সে বৃষ্টি খুঁজে। সেই বৃষ্টি, যে বৃষ্টিতে সে তার দুঃখ ভিজাতে পারে। আচ্ছা আমি কি মেঘ?? কিভাবে মেঘ হবো??আর মেঘ না হলে তো বৃষ্টি নিয়ে তার কাছে যেতে পারবো না। তার ভালবাসার আলোর তাপে আমি তো অচিরেই ঝরে যাই, ঠিক যেন মুষলধারে বৃষ্টি। ইংরেজি তে যাকে কুকুরে বিড়ালে বৃষ্টি বলে। হাসছি আমি। ধুর!হাসার সময়টাও বুঝার মতো ক্ষমতা হয় না আমার। কখন যে হাসতে হয় আর কখন যে চোখের পানিতে কষ্ট ঝরাতে হয় আমি বুঝি না। বুঝি না বললে হয়ত ভুল হবে। মেয়েটা বুঝতে দেয়নি। সেদিনের কথোপকথনটা এরকম ছিলো। আমি তাকে বলি…
-আমাকে কষ্ট বুঝাবি?? মেয়েটা আমার হাত চেপে বলে…
-না। কষ্ট বুঝতে হবে না তোর। তুই যদি এত তাড়াতাড়ি সব শিখে যাস তাহলে তুই সব জেনে যাবি, বুঝে যাবি। জানিস, সবজান্তারা খুব ঝগড়াটে হয়?? ওদের সাথে ঝগড়ায় পারা যায় না। আমি যদি তোকে সবজান্তা করে ফেলি তাহলে কিভাবে ঝগড়া করবো?? ভালবাসা মিশ্রিত ঝগড়া, আমি কিভাবে করবো??
মেয়েটার স্বপ্ন গুলোতে যেন আকাশপাতাল ব্যবধান। সে আমাকে তার মনের মতো করে তুলতে চায়। ঠিক ওর মনের মতো। আমিও কেন জানি ওর মনের মতো হওয়ার চেষ্টা করি। চেষ্টাগুলো খুব অদ্ভুতুড়ে লাগে। কখনো কখনো আমি চেষ্টা করি ওর জন্য কবিতা লিখতে। কবিতা কি আমার মাথায় আসে?? আমার মাথায় তো সবসময় ওর ভাবনা। ওকে কাছে পাওয়ার ভাবনা। ওর সাথে সারাজীবন কাটানোর ভাবনা। কি অদ্ভুতুড়ে ভাবনা গুলো! আমি একবার ওকে বিয়ে করেছি। সত্যি বলছি! আমি ওকে একবার না। কয়েকবার বিয়ে করেছি। অদ্ভুত বিয়ে! কোনো কাজী ছিলো না। সাক্ষী ছিলো না। কেবল দুজনে কবুল কবুল বলে বিয়ে করেছিলাম।
সে আমার বউ হবে। শুধুমাত্র সে আমার হতে চায়। ওকে সরাসরি একবার বউ বলাতে মুচকি হেসেছিলো। কি অদ্ভুত সেই হাসি। ওর হাসিতে যেন আমি স্বপ্ন খুঁজে পাই। ভালবাসা খুঁজে পাই। মেয়েটা আমাকে তার হাসিতে যেন সিক্ত করতে চায়। তার চাওয়া আকুতি গুলো যেন সত্যি হয়ে যায়। কিভাবে হয় সেটা জানি না। তবে হয়। আমি সত্যিই ওর হাসিতে সিক্ত হই। প্রথম যেদিন ওর সামনে আমি গিয়েছিলাম তখন বার বার আমি তাকে দেখছিলাম নির্বিকার হয়ে। সে বুঝেনি। বুঝবে কি করে। আমার বহিরাগত আচরণ গুলো তাকে বুঝতে দেয়নি। মেয়েটার তো কতকিছু করতে ইচ্ছা করে।আচ্ছা তার কি আমার মনে ঘুরে আসতে ইচ্ছা করেনা?? কখনো কখনো সে নাকি আমার আকাশে মেঘ পাঠাতে চায়। সে জানে আমি মেঘ পছন্দ করি। ঠিক ওর চোখের কাজল যেভাবে ওর শুভ্র মুখে ধূসর আভা ফেলে ঠিক তেমন মেঘ। কিন্তু সে পারেনা। সেজন্য হয়ত সে আমার মনেও ঘুরে আসতে পারে না। একবার সে আমাকে বলেছিলো…
-আমি তাকে কতোটা ভালবাসি??
এটা কোনো কথা?? আমি তাকে কতোটা ভালবাসি সেটা কি সে বুঝে না?? নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে??
অভিনয়?? এই রকমের অভিনয়ে নাকি মেয়েরা খুব পারদর্শী। তারা ভালবাসার মানুষের ভালবাসা বুঝেও হাজারো পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষাতো নয় যেন মরুভূমির বালিতে পানি চাষাবাদ করার প্রক্রিয়া। আমি তো ওকে সেদিন বলে দিয়েছিলাম…
-তোকে ভালবাসার কোনো সীমারেখা আমার মস্তিষ্কে নেই। তোকে পাশে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে পারলেই হলো। হোক সেটা দুঃখকর! তুই পাশে থাকলেই হলো। সে তখন কেঁদেছিলো। ওর চোখের পানিও যেন অদ্ভুতরস। শুধুই ঝরে পড়ে। শীতকালে আমার বাড়ির পাশের গাছটার পাতাও এত সহজে ঝরে পড়েনি। ভাগ্যিস! সে আমার চোখের সামনে বসে কাঁদেনি। তার চোখের ঝাপটানিতে সুনামি খেলে যেতো আমার হৃদপিন্ডে। হয়ত কোটি কোটি রক্তকোষ গুলো হঠাৎ করে থেমে যেত। জমে যেতো সারা শরীরে দ্রুতগামী সব রক্তকোষ।। লোকেরা আমাকে নিয়ে হাসপাতালে যেত। নিথর দেহ আমার সবাইকে বুঝিয়ে দিতো আমি নেই। তবুও তারা বলতো…
-ডাক্তার। ডাক্তার। জোরে বলতো এটা। ডাক্তার হন্তদন্ত হয়ে এসে বলতো….
-সে নেই। মেয়েটাও পাশে থেকে শুনে ধপাস করে বসে যেত সরকারী হাসপাতালের সেই ফ্লোরে। হা হা হা। হয়ত মেয়েটা এখন আমার পাশে থাকলে বলতো..
-তুই কি এসব বলা বন্ধ করবি?? আমি বলতাম না কিছু। অবুঝের মতো হাসতাম। সে বলতো…
-এত হাসে কেউ?? শুধুশুধু?? বাচ্চা নাকি তুই?? আমি তখন বলতাম..
-তুই কি বাচ্চা নাকি?? শুধুশুধু কেউ কাঁদে??
মেয়েটা চুপ করে যেত। আর কিছু বলতোনা। তার কাঁদার কারণ আছে। সে শুধু কাঁদে না। সেটা আমি বুঝেও যেন বুঝিনা। ইচ্ছা করেই বুঝিনা। বুঝতে চাই না। কারণ ও বলেছে…
-সবজান্তা হওয়া যাবেনা। সকালে সে আমাকে কল করে বলল…
-তোর সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করেছিলো আজ। আমি বললাম…
-আচ্ছা করবো। সে বলতো…
-নাহ। এখন আর করতে পারবো না। আজ কাজ আছে বাড়িতে।
আমি আর জিজ্ঞাসা করি না। কি কাজ তার। সারাদিন যাকে আমি বলি “এত খেয়ে মোটা হচ্ছিস সেটা কি চোখে পড়েনা?” সেই মেয়েটার কাজের কথা আমি জিজ্ঞাসা করতে পারিনা। তার একটাই কাজ আমি জানি! সামনে গিয়ে ধপাস করে বসে থাকা। মৌখিক পরীক্ষা দেওয়া। এখানে যারা পরীক্ষা নেয় তারাও নাম্বার দিতে পারে, আর যারা পরীক্ষা দেয় তারাও নাম্বার দিতে পারে। কি অদ্ভুত নিয়ম!
কিন্তু সব সময় পরীক্ষার্থী নাম্বার দিতে পারেনা। যখন দিতে পারেনা। তখন সেটা হয় অন্তিম পরীক্ষা। শেষ ফলাফলে সে অকৃতকার্য হয়। সে অকৃতকার্য হয় বিয়েটা আটকাতে। কি অদ্ভুত রকমের বাহানা করে সে অসংখ্যবার কৃতকার্য হয়েছিলো। অথচ এখন সে আর পারলো না। পরীক্ষা দিচ্ছে ও অথচ ক্লান্ত হয় ওর খাতাকলম। যেন পরীক্ষা গুলো শেষ হলেই তারা বাঁচে।
ধুর। ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে কেন?? এ কি! এদিকে আরো এক অদ্ভুত ঘটনা। আমার চোখে পানি! প্রথমত এক ফোটা পড়লো। মনে হয় ময়লা গেছে। তারপর আরেক ফোটা পড়লো। অনিচ্ছাবশত চোখের পাতা মিলাতেই যেন অঝোরে পানি পড়তে লাগলো। এটা কি সত্যিই আমার চোখের পানি?? নুনতে নুনতে লাগে কি না একটু চেখে দেখবো??
না না। কি বলি এসব?? এটা আমার চোখের পানিই। এই তোহ আমার ভিতর থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করার ইচ্ছা করছে। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে পারি?? ধুর। এটাও সম্ভব আমার দ্বারা? হয়ত! সম্ভব। আমার সাথে অদ্ভুতুড়ে হয়। হয়ত এটাও সম্ভব!