অভাগার জীবন

অভাগার জীবন

রাতে ঘুমানোর অভ্যাস নেই অনেক আগে থেকেই। রোজার সময় সেহেরি করে ফজর এর নামাজ পড়ে তারপর ঘুমতে যাই। রাতের বেলা লিখা লিখি করতে গিয়ে কেনো জানি খুব ঘুম পাচ্ছিলো। তাই নামাজ পড়ে আর দেরি করিনি। সাথে সাথেই শুয়ে পরেছি। আমি গভীর ঘুমে। কিছুখন পর পর মোবাইল ফোনটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমার একটা বদ অভ্যাস হলো, আমি কখনও মোবাইলের ডাটা কানেকশন অফ করিনা। আর ফোনটাও রাখি সব সময় বালিশের পাশেই।

মেজাজটা মাএা অতিরিক্ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কে যেনো মেসেঞ্জার এ একটার পর একটা টেক্সট দিয়েই যাচ্ছে।
আমি ঘুমে চোখ মেলতে পারছি না। এর মধ্যে এমন অত্যাচার, কেমনটা লাগে! মনটা চাইতেছে মোবাইলটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলি। চোখ বন্ধ করে ভাবছি কে এতো টেক্সট দিচ্ছে? আমাকে তো টেক্সট দেয়ার মত কেউ নাই। ফেসবুকে যারা ভাই ব্রাদার আর টুকটাক ফেন্ড আছে তারা কেউই বছরে একদিন খোঁজ নেয় না আমার। এ নিয়ে অবশ্য আমার দুঃখের শেষ নাই। যাই হোক, হঠাৎ করে কার এতো সখ জাগলো এই ভোর বেলা আমার খোঁজ নেবার সেটাই দেখি। হাই! হ্যালো এই যে ভাইয়া শুনছেন? হ্যালো ভাইয়া প্লিজ একটু কথা বলেন খুব ইম্পর্টেন্ট প্লিজ ভাইয়া একটু রেসপন্স করেনহ্যালো হ্যালো ভাইয়া চোখে ঘুম থাকলেও আইডির নাম দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা একটা মেয়ের আইডি। অতিরিক্ত ঘুমের কারনে ইচ্ছেই হচ্ছে না রিপ্লে দিতে। এখন মেসেজ সিন করে ফেলছি। রিপ্লে না দিলেও বেপারটা খারাপ।

জী বলেন! কি সমস্যা? ভাল আছেন আপনি? আপনি কি এইটা জানার জন্য এই ভোর বেলা আমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছেন? জী না। তো কি বলবেন বলেন। ভাইয়া আমার অনেক কষ্ট। এ কথা শুনে মেজাজ গেলো আমার আরো গরম হয়ে। আরে অসভ্য মাইয়া! তোর মনে অনেক কষ্ট তাতে আমার কি? আমি কি মনের ডাক্তার! যে কেউ এসে বলবে ডাক্তার সাহেব আমার মনে অনেক কষ্ট! আর আমি ৫০০ টাকা পকেটে রেখে দিয়ে লিখে দিব পেরাসিটামল দুই বেলা!

আরে আপনার মনে কষ্ট তা আমাকে বলে লাভ কি? প্লিজ ভাইয়া এমন করবে না আমার সাথে আচ্ছা আপনার হয়েছেটা কি সেটা তো বলবেন? ভাইয়া আমাকে একটু হেল্প করেন প্লিজ প্লিজ ভাইয়া একটু হেল্প করেন হুট করে মাথায় চলে আসলো, টাকা পয়সা চাইবে না তো। এমনিতে রোজার মাস। টাকা পয়সা তেমন নাই। সামনে আবার ঈদ। এছাড়া শুনেছি আজকাল ফেসবুকে অনেক ভূয়া আইডি দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার দান খয়রাতের মাস। এই মাসে দান করলে সোয়াব হবে ৭০ গুন। কি হেল্প লাগবে বলেন? আমি আত্মহত্যা করবো একটা সহজ উপায় বলে দিন যাতে কম কষ্টে মরতে পারি।

এ কথা শোনার পর, মনে হইতেছে কে যেনো আমাকে সাত হাজার ফিট উপর থেকে মাটিতে ফেলে দিছে। ইচ্ছে করতেছে মেয়েটাকে ধরে টাসটাস করে কয়েকটা চটকানা মারতে! এমন চটকানা মারতে যাতে দুই দিন কানে না শুনতে পায়। তাহলে মনটা শান্তি পেত। আমি কি করে বলবো? আমি কি কোন দিন আত্মহত্যা করছি! নাকি আমি রোজ আত্মহত্যা প্রেকটিস করি! সে এমন ভাবে বলতেছে যেন আমি এর আগে হাজার খানিক বার প্রেকটিস করেছি। তাই আমিই ভাল করে বলতে পারবো কোন ওয়েতে আত্মহত্যা করলে কষ্ট কম হবে। কোন দুঃখে যে মেসেজ চেক করতে গিয়েলাম।

আজবতো! আপনি আত্মহত্যা করবেন করেন। আমি কি করে বলবো কোন ওয়েতে মরবেন! আমার মতো অবলা অসহায় একটা মেয়ের সাথে এমন করছেন! কি জ্বালায় পড়লাম আমি। এতো দেখি মহাবিপদ! প্রফাইল চেক করে দখিতো কে এই আপদ! নাহ, প্রফাইল এ তো একটা পিচ্চি মেয়ের ছবি ছাড়া আর কিছুই নাই। বুঝছি, নিশ্চয়ই কোন বদ পোলা ফেক আইডি খুলে মজা নিচ্ছে। কিছু পোলাপান আছে যারা মানুষ এর জীবন অতিষ্ঠ করে খুব মজা পায়। আজ আমার জীবন অতিষ্ঠ করবে, কাল আরেক জনের।

আপনার যা ইচ্ছা আপনি করেন। মরবেন যখন তখন খুব কষ্টের কোন উপায় বেছেনেন। বার বারতো আর মরবে না। তাই মরার সাধটা একটু বেশি উপভোগ কররেল ভাল। ছিঃ ভাইয়া! আপনি এতো নিষ্ঠুর! আমার জন্য একটু মায়াও হচ্ছে না? বেশ বুঝতে পারছি, কথা বারালেই কথা বারবে। তার চেয়ে এই ভালো মোবাইলটা রেখে ঘুমিয়ে পড়া যাক। কিন্তু চাইলেই কি সব সম্ভব? নাহ সহ্যের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা আপনি কে বলেনতো? কি চান আপনি? আমি জয়া। তোমার পুরোনো প্রেমিকা।

কথাটা শুনে আমার একশো ডিগ্রী গরম হওয়া মাথাটা ঠান্ডা হতে শুরু করে নরমাল তাপমাএায় এসে গেলো। বছর কয়েক হলো আমাকে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলো। পুরোনো প্রেম খোঁজ খবর নেয়া মানেই আশার প্রদীপ জেলে উঠা। তার মানে কি ডিভোস্ হয়ে গেছে? আমার কাছে ফিরে আসতে চায়? ভেবে ভালই লাগছে। ও আচ্ছা তুমি! হুম আমি। এখনও একাই আছো? নাকি তোমার নিউ গার্ল ফ্রেন্ড মানা করছে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতে?

মেয়েদের এই এক সমস্যা। ছুঁরির যেমন দুই দিকে ধার তেমনি এদের কথার ধারও দুই দিকে। ভাল মানুষ এদের কাছে চিটার বাটপার আর চিটার বাটপার গুলো সত এবং ব্যক্তিত্ববান। সেই পুরোনো প্রেম আজও পিছু ছাড়লো না আবার নতুন প্রেম। এক প্রেমের জ্বালায় জীবন শেষ, সাধ মিটে গেছে প্রেম করার। আমি এখনও একাই আছি। তা এতো দিন পর হঠাৎ কি মনে কর? তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো। তোমার ফোন নাম্বার ছিলো না। ফেসবুকে খুঁজে বের করলাম একটু আগে।

আহ! কি শান্তি লাগছে। হারিয়ে যাওয়া জীবন যেন ফিরে পেতে যাচ্ছি। জানতাম আমার ধারনা ভুল হবার নয়। হাজার হোক আমার গার্ল ফ্রন্ড ছিলো। আমার থেকে ভাল আর কে জানে। মনে হচ্ছে আজ বহু দিন পর মরুভূমিতে কে যেনো এক বালতি পানি ঢেলে দিলো। শুকিয়ে যাওয়া প্রাণ এ আজ যেনো বর্ষার বৃষ্টি এসে পড়লো। বলো কি জন্য এতো খোঁজা খুঁজি? তুমি মামা হয়েছো। মানে কি ? মানে আমার একটা ছেলে বেবি হয়েছে।

এই কথা শোনার পর আমি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সোজা বাথরুমে চলে গেলাম। কলটা ছেরে দিয়ে তার নিচে মাথা দিয়ে বসে পড়লাম। মনে হচ্ছে কে যেন মাথার ভিতরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ফেন এর পাখার মত মাথাটা ভন ভন করে ঘুরতেছে। হওয়ার কথা ছিলো বাবা, হয়ে গেলাম মামা। হে আল্লাহ! এ কথা শোনার জন্যই কি এতো দিন বাঁচিয়ে রেখেছিলে। এই রোজার মাসে সব গুলা শয়তান বেধে রাখলা ওরে কেন বেধে রাখলা না? আমি আর কোন রিপ্লে না দিয়ে মাথা মুছে মোবাইল অফ করে ঘুমিয়ে পরলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত