টেনশন

টেনশন

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আম্মুর লেকচার শুরু হয়ে গেল লেকচার  শুনার জন্য অযথা কলেজে যাওয়া লাগবেনা দেখছি।আম্মু বলেই যাচ্ছেন,

-এতবড় একটা বিপদ কিন্তু তর মাঝে টেনশনের ছাপ নেই। ফাজলামি ছেড়ে জীবনের প্রতি একটু সিরিয়াস হবি কবে?

-সিরিয়াস মানে এমন সিরিয়াস হব যে পৃথিবীর মানুষ ডায়েরীতে লিখে রাখবে “২০১৭ তে জীবনের প্রতি এক ব্যাক্তি এমন সিরিয়াস হয়েছিলেন যে মহাপুরুষের পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন”।

-থাপ্পড় মেরে দাঁত সব ফেলে দিব সব কিছুতে হাসি টাট্টা পেয়েছিস?
-৫০০ টাকা দিয়ে মানুষ কেন যে ডাক্তারের কাছে যায় বুঝিনা।
-মানে এখন ডাক্তার আসল কোথা থেকে?
-আরে বললা না এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবা তাই বলছিলাম মানুষজন ৫০০টাকা ভিজিট দিয়ে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে তোমার কাছে চলে আসলেই পারত।

তুমি থাপড়াইয়া তাঁদের দাঁত ফেলে দিতা।।যাদের একটা দাঁত ফেলার প্রয়োজন তাঁদের আস্তে করে থাপ্পড় দিবা যাদের ২টা দাঁত ফেলে দেয়া প্রয়োজন তাদের আরেকটু জোরে থাপ্পড় দিবা আর যাদের কোন দাঁতের প্রয়োজন নাই তাদের জোরে থাপ্পড় দিবা সব দাঁত পরে যাবে।।আম্মু আমি কি বাহিরে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিব বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক নামের সাথে লিখা থাকবে থাপ্পড় বিশেষজ্ঞ।

-এখন আমার টেনশনে বেশি হচ্ছে অস্তির লাগছে নইলে তকে আমি জীবিত ২টুকরা করে নদীতে ভাসিয়ে দিতাম।।
-এই কাজ করলে তুমি তো সেলিব্রেটি হয়ে যাবা।।
-মানে?
-পত্রিকায় তোমার হাসি হাসি মুখের একটা ছবি চাপাবে হাতে থাকবে চাপাতি এবং হেডলাইন থাকবে মায়ের সাথে সন্তান খুন লাশ নদীতে ভেসে হাড়িয়ে গিয়েছে।।।
-দূর হ আমার সামনে থেকে আজ সকালে তর নাস্তা নাই বিকালে বাসায় ভাত ও খাওয়া বন্ধ।।

এখন আমার আম্মুর সম্পর্কে বলি উনি হচ্ছে টেনশন লেডি।খুব অল্পতেই টেনশন করে তিল থেকে তাল তৈরি করে ফেলেন। কয়েকটা উদাহরণ দেই তাহলে বুঝা যাবেন একবার খবর আসছে আম্মুর ফুফা হার্ট এট্যাক করে মারা গিয়েছেন তো আম্মু কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা সিরিয়াস এই খবর টা কে দিয়েছে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন সবাইকে বলছেন যে ফুফা ইন্নাল্লিহ পরে শোনা যায় যে কিছুই হয়নি গরমে মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়েছিলেন।।পরিশেষে ফুফা জিন্দা আর আম্মু প্রেশার বাড়িয়ে বিছানায়।আরেকবার খবর আসছে তিনার ছোট ফুফুর ক্যান্সার ধরা পরেছে সেইটা শুনে আম্মুর খাওয়া দাওয়া বন্ধ কেঁদেই যাচ্ছেন কেঁদেই যাচ্ছেন কয়েকদিন পর দেখা যায় ফুফু বাড়িতে এসে পুরা ফুরফুরা ক্যান্সার টেন্সার কিছু না কিন্তু আম্মু বিছানায় তিনি অসুস্থ তিনার প্রেশার যেন মাথায় উঠে গেছে। যাই হউক নাস্তা করে আমিও ভাবলাম,না এবার টেনশন কাকে বলে সবাইকে বুঝাব কিছুক্ষণ পর আম্মুর ডাক

-ফাহিম বাজারে গিয়ে ১ কেজি আলু নিয়ে আয়।
-সরি আম্মু টেনশনে আছি এখন যেতে পারব না।।
-টেনশন মানে?
-আরে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে টেনশন করছি ডিস্টার্ব করিও না।।
-আমার সাথে ফাজলামি।।
-ফাজলামি না সিরিয়াস মারাত্মক টেনশনে আছি।
-তুই টেনশন করা কবে শিখলি।
-কিছুক্ষণ আগে তোমার বক্তব্য শুনে ভাবলাম টেনশন করে যদি লাভ কিছু হয়।
-তুই আলু আনতে যাবি কিনা?
-আম্মু অস্তির লাগছে মনে হচ্ছে টেনশন করে করে জীবনের প্রতি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছি প্লিজ আলুর মত তুচ্ছ একটা ব্যাপার নিয়ে এখন আরো টেনশন দিও না।।
-উফফ অসহ্য আমি তদের সবাই কে রেখে তর নানার বাড়ি চলে যাব।।
-কখন যাবে গাড়ি ডেকে আনব।।।
-অসহ্য অসহ্য।।

আম্মু অসহ্য অসহ্য বলে চলে গেলেন। আমিও বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম রুপার সাথে দেখা করার কথা ছিল হবে কি হবেনা সেটাও জানিনা।বর্তমানে রুপার সাথেই বসে আছি মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টায় আছি রেগে আছে নাকি বিরক্ত হয়ে আছে।।রুপা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

-রিলেশন করেছিলে কেন?
-টেনশনে আছি উত্তর টা পরে দেই।
-তোমার আবার কিসের টেনশন।
-ভবিষ্যৎ নিয়ে টেনশন করছি।
-কি টেনশন?
-তোমাকে বিয়ে করলে সুখি হব নাকি দুঃখী হব সেটা।
-আমার সাথে ফাজলামি কর।।

-আচ্ছা রুপা আগে কি যেন জিজ্ঞেস করছিলে রিলেশন কেন করেছিলাম?
-হ্যাঁ বল কি জন্য করেছিলে?
-উত্তরটা খুঁজার চেষ্টা করছি জানা মাত্রই তোমাকে বলে দিব।
-উফফ অসহ্য লাগছে সত্যি করে একটা বলবা।
-অবশ্যই বলব কি জানতে চাও বল?
-তুমি কি আমাকে আগের মত ভালবাসো।
-না আগের মত বাসিনা।।
-ধন্যবাদ সত্যি কথাটা বলার জন্য।।
-তবে আগের থেকে বেশি ভালবাসি শুধু প্রকাশ করতে পারিনা।। রুপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে খুব সম্ভব কিছু বলার প্রস্তুতি মনে মনে লাইন গুলো সাজাচ্ছে।

-এখন কি তুমি ফ্রি আছো।
-ফ্রি থাকার তো কথা।।
-এই তোমাকে বলতে ভূলে গেছি কিছুদিন আগে তোমাকে নীলা নামে একটা মেয়ে ফেইসবুকে মেসেজ দিয়েছিল।
-নীলা জাহান নামে একজন দিয়েছিল।।
-হ্যাঁ সেটাই সে আমার ফ্রেন্ড তোমাকে নাকি মেসেজ দিছিল তুমি তাকে কি রিল্পাই দিছিলা।।

-এই টাইপ প্রশ্ন করলে আমি একি উত্তর সবাই কেই দিয়ে থাকি।।পাম দিয়ে আমাকে মেসেজ দিয়েছে বুঝেছে আমি গলে যাব।মেসেজ দিয়েছিল “ভাইয়া আপনি এত সুন্দর গল্প কিভাবে লিখেন আমিও শিখতে চাই” আমি উত্তর দিছি “এই সুন্দরের পিছনে লুকিয়ে আছে কলিকাতা হারবাল এক ফাইলেই যথেষ্ট মূল্য মাত্র ১২০০ টাকা” তারপর দেখি কোন রিল্পাই নাই একটু পর দেখি নীলা জাহান কালা জাহান হয়ে গেছে মানে ব্লক।

-তোমাকে নিয়ে পারা যাবে না এসব কি শুরু করেছো।।
-শুরু করেছি শেষ ও হবে এখন আমাকে যেতে হবে।।
-এখনি চলে যাবা।।
-হুম এখনি যাব কিছু কাজ আছে ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে হবে তুমি ধীরে ধীরে বাসায় চলে যাও।। রুপার কাছ থেকে ইমনের বাসায় আসলাম বেচারা প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে বিছানায় পড়ে আছে।।আমাকে দেখেই ইমন বলে উঠল,

-দোস্ত এটাই কি ছিল আমার ভাগ্যে।।
-কি আর করবি দোস্ত যা হয়ে গেছে টেনশন নিয়ে লাভ নাই এখন বল ডিসিশন কি নিয়ে নিছস।
-কিসের ডিসিশন?
-ওই যে সুইসাইডের ডিসিশন দোস্ত মরার আগে প্লিজ ফেইসবুকের ওয়াল তো খুলে দিবি সেটা জানি সাথে আমারে মেনশন দিয়ে একটা পোষ্ট দিয়ে যাইস যাতে মানুষ তর প্রোফাইল ভিজিট করার সাথে আমার টাও একটু করে যায় বহুদিনের শখ একজন সেলিব্রেটি হব।

-কি আমি সুইসাইড করব?
-ইদানিং যেহারে সুইসাইড হচ্ছে তুই যে করবিনা তার গ্যারান্টি কি?আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-কি সিদ্ধান্ত?
-একটা চেম্বার খুলব বাহিরে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে রাখব যেখানে লিখা থাকবে “এখানে বিনাকষ্টে সুইসাইড করার নিয়ম শিখানো হয়।যদি তিল পরিমাণ কষ্টে মৃত্যু হয় তাহলে টাকা ফিরত” আমার মনে হচ্ছে এবার আমি ব্যাবসায় সফল হবই।

-তুই সব কিছুতেই ফাজলামি পেয়েছিস মরার পর টাকা কিভাবে এসে ফিরত নিবে।
-আরে ব্যাটা সেটা তো আমিও জানি নিবে না।।
-আচ্ছা তুই চালিয়ে যা তর ব্যাবসা এখন আমাকে বল নাদিয়া আমার সাথে কি করল?
-নাদিয়া তর সাথে যা করেছে তাহল প্রথমে মুখে মধু নিয়ে তোমাকে ভালবাসি বলেছে এবং শেষে হাতে বাঁশ নিয়ে তোমাকে সেভেন আপ খাইয়ে বিদায় বলেছে”।

-তুই কি আমাকে একটা সাজেশন দিতে পারবি যে আমার এখন করণীয় কি?
-প্রথমে গোসল করবি তারপর ছাদে যাবি মুখে সিগারেট ধরাবি কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে “চলে গেছ তাতে কি?” গানটা  শুনবি তারপর মুখ থেকে ধোঁয়া ছেড়ে মনে মনে বলবি নাদিয়া দিলাম তর মুখে পাদিয়া।আমিও দিলাম তরে ছাড়িয়া।।

-এতেই কাজ হবে।
-হবার তো কথা না হলে ফেইসবুক ওয়াল খুলে দিয়ে ঝুলে পরবি ফি-আমানিল্লাহ। বাসায় ঢুকে সোফায় পা উঠিয়ে গম্ভীর মুখ করে বসে আছি। আমার পাশে আম্মু এবং ছোট বোন বসে আছেন।আম্মু আমাকে বললেন,

-তর টেনশন করতে হবেনা।
-তা কি করে হয় আম্মু জীবনে সিরিয়াস হতে হবে কথায় আছে “যে জাতী যত বেশি টেনশন করে সে জাতী তত বেশি উন্নতির শিখরে উঠে”।
-এইটা তরে কে বলল?
-নিজে নিজে ভেবে বের করছি যাই হউক টেনশনের বিষয় পাচ্ছিনা তোমার কাছে বিষয় থাকলে বল।
-থাক তুই তর টেনশন নিয়ে অসহ্য হয়ে উঠছিস দিন দিন।।

রাতে আম্মুকে বললাম বিরাট টেনশনের মধ্যে পরেছি আজ আর ভাত খাব না।এসে দিলাম রুপাকে ফোন ২বার রিং হওয়ার পর রুপা ধরে বলল,

-তুমি কি আমাকে বিয়ে করবা।
-অবশ্যই বিয়ে করব তবে সেটা কবে করব জানিনা।।
-জানো না কেন?কাল আমাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে?
-টেনশনের বিষয়?
-ফাজলামি করবা না।আজই তোমার ফ্যামিলি কে জানাবা যে আমাকে বিয়ে করতে চাও।
-একবার জানানোর চেষ্টা করেছিলাম সেটার ফল ভাল হয়নি?
-কেন কি হয়েছিল?
-সেটা জানলে তোমার টেনশন বেড়ে যাবে।।
-তাহলে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি?
-সেটাও সম্ভব না বাল্য বিবাহ হয়ে যাবে?
-আমার বয়স তো ১৮ হয়ে গেছে।
-তোমার হলে কি হবে আমার হয়নি যে?
-মানে কি?

-মানে হল আমার সার্টিফিকেটে বয়স ৩বছর কম এখন আমার বয়স ২৩ হলেও সার্টিফিকেটে ২০ সুতরাং কোন কাজী বিয়ে পড়াবেনা।।
-কুত্তা প্রেম করছিলি কেন যদি বিয়া না করবি?
-দেশে যে বন্যা হচ্ছে সেটা দেখে প্রেম করেছিলাম কবি তো বলে গেছেন “প্রেমের মরা জলে ডুবেনা” বন্যায় যেন ডুবে না যাই সেজন্য করেছিলাম।।
-ফাজলামি করছ কুত্তা আর জীবনেও ফোন দিবি না।।

রুপা ফোন কেটে দিল এইদিকে আমার টেনশন বেড়ে যাচ্ছে।। কবি যথার্থই বলেছেন,”প্রেম করলে প্যারায় পরবি,না করলে সারা জীবন আফসুস করবি শালার এই জীবনে একটা মেয়েরেও পটাইতে পারলাম না”।।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত