সিঙ্গেল হওয়া সত্ত্বেও মেয়েটি প্রোফাইলে রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস ছিলো ইন এ রিলেশনশীপ। আজকাল রিলেশনে থেকেও সবাই প্রোফাইলে সিঙ্গেল স্ট্যাটাস দেয়। তাই সে সিঙ্গেল থেকেও ইন এ রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস দিয়েছিলো।
একদিন একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে, “নিস্তব্ধ রাত” নামে আইডি থেকে। একটি ছেলের আইডি।
মেয়েটি একসেপ্ট করে। একদিন সেই আইডি থেকে টেক্সট আসে, ইন এ রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস আগে দেখলে রিকোয়েস্ট ই দিতাম না। মেয়েটি রিপ্লে দেয়,”আমি মজা করে দিয়েছি। অনেকে রিলেশনে থেকেও সিঙ্গেল স্ট্যাটাস দেয়, তাই আমি সিঙ্গেল থেকেও ইন এ রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস দিয়েছি।” তারপর টুকটাক কথা হতে হতে একসময় তাদের চ্যাটিং এর সময় ঘন্টা পেরিয়ে যায়।
ছেলেঃ আচ্ছা তোমার পছন্দের বিষয়গুলো বলো তো।
মেয়েঃ বই পড়া, প্রিয় রং নীল, প্রিয় ঋতু বর্ষা আর প্রিয় ফুল কদম। আপনার?
ছেলেঃ প্রিয় রং কালো আর প্রিয় ফুল শাপলা। আচ্ছা প্রায় পনেরো দিন ধরে আমরা কথা বলছি। আমাকে তুমি করে বলবা কবে?
মেয়েঃ কখনো ই না। আপনি আমার বড়।
ছেলেঃ ওকে। আচ্ছা তুমি দেখতে কেমন?
মেয়েঃ কালো। খুব কালো।
ছেলেঃ কৃষ্ণকলি।
মেয়েঃ হুম। তাদের ফ্রেন্ড শীপের একমাস পেরিয়ে যায়। কথা আগের মতই চলতে থাকে।
ছেলেঃ আচ্ছা কৃষ্ণকলি তোমাকে একটা কথা বলি?
মেয়েঃ বলুন।
ছেলেঃ আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
মেয়েঃ হা হা হা।
ছেলেঃ হাসছো যে? আমি সিরিয়াস। একটু সিরিয়াস হও প্লিজ।
মেয়েঃ হলাম। কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি কৃষ্ণকলি। আপনি আমাকে দেখেন নি কথাও হয়নি। শুধু মেসেঞ্জারে টেক্সট করতে করতে ভালোবেসে ফেললেন। হাস্যকর বটে!
ছেলেঃ আমি মন থেকে বলছি। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি মায়াবতী।
মেয়েঃ মায়াবতী! কালো মেয়েদের এর চেয়ে ভালো কথা বোধহয় আর বলা যায় না। কখনো কৃষ্ণকলি কখনো মায়াবতী।
ছেলেঃ তুমি কালো হও যেমনি হও আমি তোমাকে চাই মায়াবতী। একবার বলো ভালোবাসো কিনা।
মেয়েঃ সম্ভব নয়। আমরা কেউ কাউকে দেখিনি। দেখার পর তো আমাকে আপনার নাও ভালো লাগতে পারে। আপনার প্রতি দূর্বল হলে শেষে আমাকেই কষ্ট পেতে হবে। কি দরকার শুধু শুধু?
ছেলেঃ তাহলে দেখা করো। আমি প্রমাণ করে দিতে চাই আমি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি।
মেয়েঃ ঠিক আছে।
ছেলেঃ দেখা করার দিন তুমি নীল শাড়ি পরবা। চোখে কাজল দিবা, লিপস্টিক দিবা আর চুড়ি পরবা হাত ভর্তি। আমি তোমার খোঁপায় কদম ফুল পরিয়ে দেবো। একঘন্টা বসে গল্প করবো।
মেয়েঃ কদম ফুল আবার খোঁপার পরা যায় নাকি? আর নীল শাড়ি পরবো না।
ছেলেঃ কেন নীল শাড়ি পরবে না? তোমার প্রিয় রং না!
মেয়েঃ প্রিয় রং তবে তা শুধু ই রংয়েই সীমাবদ্ধ। আমার নীল রংয়ের কোনো ড্রেস বা নীল রংয়ের কোনো কিছুই আমি ব্যবহার করিনা। নীল নাকি কষ্টের রং হয়। জীবনে এমনিতেই অনেক কষ্ট, নতুন করে আর পেতে চাই না।
ছেলেঃ তাহলে সবুজ শাড়ি পরে আসবে। আবারও বলছি তোমাকে ভালোবাসি মায়াবতী।
মেয়েঃ ওকে।
অবশেষে একদিন দেখা করার দিন এলো। কিন্তু মেয়েটা তার কথা রাখেনি। সে সবুজ শাড়ি পরেনি, হাত ভর্তি চুড়িও পরেনি, চোখে কাজল কিংবা লিপস্টিক ও পরেনি। মেয়েটা কালো বোরখা পরে এসেছিলো। ছেলেটা মেয়েটার দিকে দশ সেকেন্ডও তাকিয়ে থাকতে পারে না। অথচ বলে ছিলো একঘন্টা গল্প করবে। মেয়েটা সালাম দিয়ে জানতে চায়, কেমন আছেন?
ছেলেঃ ভালো।
মেয়েঃ আমিই কৃষ্ণকলি।
ছেলেঃ আচ্ছা পরে কথা হবে আজ আসি।
ছেলেটা পালিয়ে যায় রীতিমত। ভেবেছিলো মেয়েটা হয়তো মজা করেছিলো কিন্তু ও যে সত্যি কৃষ্ণকলি। মায়াবতী সে কিন্তু তার এক্স জি এফ কত সুন্দরী ছিলো। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার। মেয়েটা মুচকি হাসে। এই তাহলে সত্যি ভালোবাসার প্রমাণ। কৃষ্ণকলি, মায়াবতী শুধু মুখেই বলা যায়, বাস্তব বড় কঠিন।
আর কথা হয়না তাদের। মেয়েটা তার আইডি বেশিরভাগ সময় ডিএক্টিভ করে রাখে। ফেসবুকের প্রতি অরুচি ধরে গেছে তার। মাঝে মাঝে লগিন করে দু এক মিনিটের মধ্যে আবার বের হয়ে চলে আসে। কারোর হাই, হ্যালোর রিপ্লে দেয় না। কারো সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। বোধ করি কৃষ্ণকলিও ছেলেটার প্রতি সত্যি দূর্বল হয়ে পড়ে ছিলো। যেটা মায়াবতীর মুচকি হাসির আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে।