চকলেট

চকলেট

কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। বেরোনোর সময় আবার কে? দরজা খুলতেই পরীর মতো এক মেয়ে, বুকের কাছে একটা টেডি বিয়ার ধরে দাঁড়িয়ে।

– কী চাই?

– চকলেট আছে ঘরে। দাও না!

একটু ইতস্তত করে সে উত্তর দিলো– না, নেই।

– আছে তো আমি জানি দাও না গো।

ওকে, দাঁড়াও দিচ্ছি। আপন মনেই বিড়বিড় করতে করতে ফ্রিজে রাখা চকলেট বারটা এনে দেখে দরজায় কেউ নেই।

– এই যে আমি এখানে সোফায়।

– সে কি! তুমি ভিতরে ঢুকলে কেন? অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে ঢুকতে হয় না জানো না। এই নাও চকলেট, যাও।

– তুমি ডাক্তারের কাছে যাবে তো, যাও আমি টিভি দেখবো।

– তুমি কোন ফ্ল্যাটে থাকো? বাইরে যাও নয় তো তোমার মাকে ডাকবো।

– ডাকো। আমি যাবো না মিস নদী পালিত সি.এ।

নদী এবার অবাক হলো আরো, তুমি আমার নাম জানো! আমি ডক্টরের কাছে যাবো তাও জানো, আর কী জানো?

– আমি…. বলে মেয়েটা একটা মায়াবী হাসি ছড়িয়ে দেয়। তুমি তো গতকাল জেনেছো তুমি প্রেগন্যান্ট। আমি আরো মাস কয়েক আগেই জানি মা। সেদিন ঝিরঝির বৃষ্টি ছিলো সারাদিন তুমি আর উজান ঘুরে বেরিয়েছো সন্ধ্যার পর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফিরেছো তারপর…

বিস্ময়ে তাকায় নদী।

– মা, তুমি আমায় মেরে ফেলতে চাইছো?

– আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।

– ও তোমার ক্যারিয়ার তোমায় ভাবাচ্ছে। দিদাও তার ক্যারিয়ারের পিকে ছিলো যখন তুমি দিদার পেটে এলে। দিদা এও জানতো তার পেটে এক কন্যা সন্তান বাড়ছে, পরিবারও তো চায়নি তোমার জন্ম হোক। সে যদি চাইতো তোমায় নষ্ট করে ক্যারিয়ার গড়তে পারতো কিন্তু তা সে করেনি। কন্যা জন্ম দিয়ে সে একা লড়েছে সমাজ, পরিবারের সাথে।

– তুমি বুঝবে না, আমার মা বিবাহিত ছিলো কিন্তু এই সমাজ, ধর্ম একজন সিঙ্গেল মাদারকে মেনে নেয় না।

– আচ্ছা মা, মানুষের জন্য সমাজ, ধর্ম নাকি ধর্ম আর সমাজের জন্য মানুষ?

– তোমায় এই সমাজ বাঁচতে দেবে না, সবাই কি বলে ডাকবে জানো?

– জানি, কিন্তু তুমি ভাবো তুমি কি পারবে উজানকে ছাড়া একজন মা হতে?

নদী হেসে ওঠে। তুমি বেশ পাকা পাকা কথা বলছো। কিন্তু চকলেট খেতে খেতে বাচ্চাদের মতো হাত মুখ ভরিয়েছো, যাও হাত ধুয়ে এসো।

– না, বলেই মেয়েটি উঠে যায় নদীর টিশার্টে হাত মুছতে।

– না, একদম না যাও বেসিনে যাও বলছি, মায়ের কথা শোনো যাও।

ঘরময় নদীর পেছনে দৌঁড়াতে থাকা মেয়েটি কথাটা শুনে থমকে দাঁড়ায়, তুমি আমার মা, তা হলে ক্যারিয়ার! সমাজ, ধর্ম আর উজানের কী হবে?

– উজানকে বলবো যদি সে পছন্দ করে আমাদের সাথে থাকতে থাকবে। সমাজ, ধর্ম সব মানুষকে ঘিরেই কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে পরিবর্তন আনতে আমরা দুজনই না হয় সেই প্রথমটা হলাম। বলতে বলতে নদী বিছানায় শুয়ে হাঁপাতে থাকে।

বেসিনে হাত ধুঁতে ধুঁতে মেয়েটি হাসে, তোমার অ্যাবরশন করানোর টাইম কিন্তু এখনো আছে। বলতে বলতে মেয়েটি এসে নদীর পাশে শোয়।

– তোমার নামটাই তো জানা হলো না, কী নাম তোমার?

– কেন কলেজ লাইফে না ঠিক করেছিলে তোমার মেয়ে হলে নাম রাখবে মোহনা আর ছেলে হলে স্রোত।

ঘড়ির এলার্মে নামী সি.এ নদী পালিতের ঘুমটা ভেঙ্গে যায়… ডাইরি থেকে গাইনি স্পেশালিস্টের এপয়েন্টমেন্ট টাইমটা কেটে দিয়ে সে উঠে গিয়ে ঘরের সব পর্দা সরিয়ে দেয়, একঝাঁক রোদ ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত