নীলা এই মুহুর্তে বসে আছে থানার কর্তব্যরত অফিসারের সামনে। নীলা এসেছে ১ বছর আগে তার মায়ের খুনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে। নীলার অভিযোগ শোনার পর অফিসার বললেন– আপনি আরো একবার ভেবে দেখুন,আপনি যা বলছেন তা কি শুধুই সন্দেহ বা অনুমানের ভিত্তিতে?
– না, আমি যা বলছি সেইটাই প্রবল সত্যি বিশ্বাস করুন অফিসার!
– দেখুন মিস নীলা আপনি শিক্ষিতা মেয়ে। আপনাকে নতুন করে আইন বুঝানোর দরকার পড়বে না। আপনি জানেন আইন অনুমান বা সন্দেহের উপর চলে না। আইন প্রমাণে কথা বলে।
– তদন্ত করে প্রমাণসহ আসল সত্যি বের করায় আপনাদের কাজ স্যার।
অফিসার নীলার উত্তরে কিছুটা বিব্রত হলেও পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো– আচ্ছা, মিস নীলা আপনার কেন মনে হয় খুনটা আপনার বাবাই করেছে? আর আপনার মা মারা গেছে আজ থেকে ১ বছর আগে তখন কেন আপনি অভিযোগ করেননি?
এই বলে সামনে রাখা পানির গ্লাস নীলার দিকে এগিয়ে দিলো অফিসার। ইশারায় পানি খেতে বললো।
পানি এগিয়ে দিতেই নীলা ঢকঢক করে এক নিমিষে গ্লাসের সব পানি খেয়ে ফেললো। যেন অনন্তকাল ধরে বড্ড তেষ্টায় ভুগছিলো নীলা।
অফিসারের কৌতূহল চোখ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে।
– বলুন মিস নীলা কেন আপনার মনে হয় খুনটা আপনার বাবাই করেছেন?
– কারণ বাবা এবার আমাকে খুন করবে! ঠান্ডা মাথায় প্লানমাফিক ঠিক যেমন ১ বছর আগে আমার মায়ের রহস্যময়ী মৃত্যু হয়েছিলো সেইভাবে। আপনি জানতে চাইছেন কেন আমি তখন বলিনি বা আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি? বাবার এই নোংরা ষড়যন্ত্রের আভাস আমি পেয়েছি আজ থেকে মাস দুয়েক আগে। বাবার নামে একটি চিঠি আসে তখন বাবা তার ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন। আমি ছোট থেকেই চরম কৌতুহুলপনা। চিঠিটা ছিলো সাধারণ খামের থেকে আলাদা। অদ্ভুত কালো কারুকার্যের ডিজাইন করা খামটি। খামটির পিছনে একটি বাজপাখির দুই ডানার চিহ্ন আকা। আমি বাবা ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ধীরে ধীরে খুব কৌশলে খামটি খুলে ফেলি। এবং খামের মধ্য যেই চিরকুটটি পাই সেইটাও অদ্ভুত কালো একটি কাগজের উপর সিদুরের মতো লাল লাল কালিতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখাছিলো–
“খুব বেশী দেরী হয়ে যাচ্ছে, এরপরের কাজটি আরো কৌশলে করতে হবে। কেউ যেন বুঝতে না পারে অতীতের মতো। কাজটি ঠিক দুই মাসে দশদিনের মধ্যেই করতে হবে তোমার নিজ বাড়িতে। দেখো এবার যেন কোন ভুল না হয় তাহলে ঘোর সর্বনাশ বয়ে যাবে।”
এইটুকুই লিখা ছিলো সেই চিঠিতে। আমি চিঠিটা পড়ে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই এবং চিঠিটা ভয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলি। বাবাকে কিছুই জানাই না চিঠির কথা। ঠিক পরপর এইভাবে ৩ টা চিঠি আসে। আমি ৩ টা চিঠিই আগুনে পুড়িয়ে ফেলি প্রতিটা চিঠিতেই কাজটি খুব সতর্কের সাথে করতে বলার নির্দেশ লেখা থাকে।
– কিন্তু চিঠির সাথে আপনার মায়ের মৃত্যু কিভাবে সম্পর্কিত? প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় অফিসার নীলার দিকে।
– আমাকে পুড়োটা বলতে দিন অফিসার তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন।
অফিসার তাকে পুনরায় বলার অনুমতি দেয় নীলা আবার চলে যায় ঘটনায়।
– পরপর ৩ টা চিঠিই আমি পুড়িয়ে ফেলি। আমার মনে প্রচন্ড ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করে। আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আমার আর কোন ভাইবোন নেই, বাড়িতে সদস্য সংখ্যা বলতে আমি, বাবা, আর গৃহপরিচারিকারা। মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের ঘরে আমি খুব কমই ঢুকতাম। প্রচন্ড মন খারাপ হলে মায়ের ঘরে গিয়ে বসে থাকতাম। সেদিন মায়ের ঘরে গিয়ে মায়ের পুরাতন বইয়ের শেলফটা দেখছিলাম। আমার মায়ের বইপড়ার প্রবল নেশা ছিলো হরেক রকমের বইয়ে শেলফ ছিলো পরিপূর্ন। আমি একটি বই নিয়ে বইয়ের পেজ খুলতেই আতকে উঠি! কারণ সেই একই রকম খাম এই বইয়ের মধ্যেও কিন্তু ভিতরে কোন চিরকুট নেই অথচ খামটি একই কালো রঙ এর। আমি কিছুই বুঝতে পারি না হঠাৎ জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি সেই চিঠি দেওয়া লোকটি আমাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। সর্বনাশ বাবা যে আজ বাড়ি, আমি দ্রুতবেগে দোতলা পেরিয়ে সিড়ি ভেঙে নিচে গিয়ে দেখি চিঠিটা ততক্ষণে বাবার কাছে পৌঁছে গেছে। আমাকে দেখে বাবা চিঠিটা লুকিয়ে ফেললেন এবং বাবা দ্রুত তার ঘরে চলে গেলেন। ঘন্টা দুয়েক পর বাবা আমাকে ডেকে পাঠালেন। খুবই গম্ভীর দেখাচ্ছিলো বাবাকে আমার বাবা প্রচন্ড রাশভারী রাগী ব্যক্তি। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সাথে আমার প্রয়োজন ব্যাতীত কথায় হয় না। বাবা মাথা নীচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বললেন বাকি চিঠিগুলো তুমি কি করেছো নীলা? আমি কিছুটা আতকে উঠি এবং আমতা আমতা করে বলে উঠি চিঠি! কিসের চিঠি বাবা? বাবা এবার কর্কশ স্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠে বুঝতে পারছো না তুমি কিসের চিঠি? তোমার পরিণতিও তোমার মায়ের মতোই হবে কারম অতি চালাকের গলায় দড়ি। সেদিনের পর থেকে বাবার সাথে আমার কথা হয়নি। গত সপ্তাহে বাবার কাছে আবারো চিঠি আসে। বাবা দুপুরে ঘুমালে আমি বাবার ঘরে যাই এবং খুব সাবধানে চিঠিটা খুঁজতে থাকি খুঁজতে খুঁজতে একটি পুরাতন বইয়ের মধ্যে চিঠিটা পেয়ে যাই। একই খাম একই কাগজে লেখা সেই একই চিরকুট শুধু লেখাগুলো আলাদা। এবারের লেখাটা মাত্র এক লাইনের যা লিখা ছিলো খুব দ্রুত কাজটি করতে হবে এ মাসেই। আমি চিঠিটা পুনরায় খামের মধ্যে রেখে চলে আসি। অফিসার, আজ এ মাসের ২৭ তারিখ আর ৩ দিন আছে। আমার বিশ্বাস এই ৩ দিনে আমার সাথে ভয়ানক কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এবং আমি এইটাও জোর দিয়ে বলতে পারি আমার মায়ের মৃত্যুর পিছনে আর কেউ নয় আমার বাবা দায়ী। আমার বাবাই আমার মায়ের খুনী।
অফিসার এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধ এর মতো শুনছিলো। তিনি নীলার দিকে তাকিয়ে বললেন– কেসটা অনেক জটিল মিস নীলা। একে তো আপনার কাছে কোন প্রমাণ নেই। তারপরে আপনি চিঠিগুলোও পুড়িয়ে ফেলেছেন। আবার আপনার ভাষ্যমতে সব সত্যি হলে আপনার জীবনও বিপদের মুখে। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ ব্যতীত আপনার বাবাকে এই মুহুর্তে এরেস্ট করাও সম্ভব নয়।
– স্যার, আমার আপনার সাহায্য প্রয়োজন। আপনি আমাদের বাড়িতে আসলে হয়তো বা আমাকে সাহায্য করার পাশাপাশি আপনি অনেক কিছু বুঝতে পারবেন। আপনাকে আমাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ রইলো।
– ঠিক আছে মিস নীলা, আমি যাবো আপনাদের বাড়িতে। এই হলো আমার ফোন নাম্বার কোনো রকম বিপদের আভাস পেলেই আমাকে একটা ফোন করবেন।
– ঠিক আছে, অফিসার, আজ তাহলে আমি আসি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার কথাগুলো গুরত্ব দেওয়ার জন্য এবং আমাকে সহযোগীতা করার জন্য।
এই বলে নীলা দ্রুত প্রস্থান করলো।
৩০ তারিখ বিকেল বেলা নীলার ফোন পায় অফিসার। এবং দ্রুত নীলা তার বাড়ির ঠিকানায় অফিসারকে চলে আসতে বলে।
অফিসার যখন নীলাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায় তখন প্রকৃতি তার দিনের আলো গুটিয়ে ফেলে রাতের অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়েছে।
বাড়িটি পুরোনো আমলের দোতলা বাড়ি। সামনের রাস্তাটি পিচঢালা, দুইপাশে সারিবাধা সুপারীগাছ লাগানো। বাড়িটিতে ঢুকতেই সদর দরজায় একটি বিশাল আকারের সিংহের মূর্তি। বাড়িটা কেমন যেন অদ্ভুত গা ছমছম করা পরিবেশের মতো। অফিসার চারিদিকে তাকিয়ে বাড়িটা দেখে নিলো আরেকবার। পকেটে হাত দিয়ে দেখলো রিভলভারটা ঠিকঠাকভাবে আছে কিনা। একটি বৃদ্ধমতো লোক এগিয়ে এলো হাতে লন্ঠন নিয়ে। লন্ঠনটি উঁচু করে ধরে হলদে দাঁত বের করে বিশ্রী এক হাসি দিয়ে বললো, নীলা দিদিমণি উপরের ঘরে আছে আপনাকে যেতে বলেছে উপরে।
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো অফিসার, দোতালার একটা রুম থেকে আলো দেখা যাচ্ছে সম্ভবত সে রুমেই আছে নীলা। অফিসার সে দিকেই এগিয়ে গেলো যেই সেই দরজার সামনে নক করতে যাবে ঠিক তখনই পিছন থেকে শুনতে পেলো নীলার চাপা কণ্ঠস্বর।
মিস্টার অফিসার ওদিকে নয় এদিকে আসুন। ঘাড় ঘুরাতেই দেখতে পেলো পিছনে নীলাকে, নীলা ইশারায় তাকে কথা বলতে নিষেধ করলো এবং তাকে অনুসরণ করতে বললো। দোতলায় বারান্দা দিয়ে ছাদে গিয়ে থামলো নীলা। নিঃশব্দে অফিসার ও তাকে অনুসরণ করে ছাদে গিয়ে থামলো।
– কোন অসুবিধা হয়নিতো মিস্টার অফিসার আপনার এই বাড়িতে পৌঁছাতে?
– না, কোন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু আপনার বাবা কোথায়? আর ঐ ঘরটিতে কে আছে?
– কিছুক্ষণের মধ্যেই সব জানতে পারবেন অফিসার। আপনি বরং ছাদেই লুকিয়ে থাকুন আমি আপনাকে সময়মতো ডেকে নেব। এখন আর কোন প্রশ্ন নয়।
এই বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে দ্রুতবেগে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো নীলা। ছাদটিতে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আবহাওয়া শীতল থাকার পরেও রীতিমতো ঘামছিলো অফিসার। এভাবে কতক্ষণ সেই ছাদে ছিলো তার ঠিক নেই। হঠাৎ একটা চিৎকারের আর্তনাদ কানে এসে লাগলো। আর অপেক্ষা না করে দ্রুত বেগে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অন্ধকারে কারোর শরীরের সাথে ধাক্কা লাগলো। এবং অন্ধকারে থাকা সেই আগন্তুক ক্রমাগত অফিসারকে নিচে নামতে বাধা দিতে লাগলো। এইদিকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকারটি তখনো হয়েই যাচ্ছে।
অন্ধকারেই এক প্রকার ধস্তাধস্তির পর সেই আগন্তুক কাবু হয়ে পড়লে লড়াইয়ে অফিসারকে ছেড়ে দেয়। অফিসার সেই সুযোগে একছুটে গিয়ে সেই আলো জ্বলানো রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হ্যা, চিৎকার এই ঘর থেকেই আসছে।
অফিসার তার গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে সজোরে বার কয়েক দরজায় লাথি দিতেই দরজাটা বিকট শব্দে খুলে যায়। এবং রুমে ঢুকেই অফিসার বলে উঠে– মিস নীলা আমি বলছি আপনি থামুন! নতুবা আপনার সকল অপকর্মের অপরাধের শাস্তি এই মুহুর্তে পেয়ে যাবেন। এই বলে পকেট থেকে রিভলভারটি বের করে নীলার দিকে তাক করে ধরে অফিসার।
নীলার হাতের ছুরিটি তখনো তার বাবার গলার দিকে ধরে রাখা। বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় নীলা, অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে– অফিসার!
– আপনার বাবাকে এখনি ছেড়ে দিন আর আপনি স্যালেন্ডার করুন। আপনার সব চালাকি আর নাটক শেষ। কোনোভাবেই আপনি আজ বাঁচতে পারবেন না। আপনার বাবার গলায় ছুরি বসানোর সাথে সাথে এই রিভলবারের গুলিতে আপনার মগজ ঝাঝড়া হয়ে যাবে।
হো হো করে পৈশাচিক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে নীলা। এবং বলে– আমি বাঁচতে পারবো না? নাকি আজ এখান থেকে তুই বেঁচে ফিরতে পারবি না। তোদের দুজনকে বলি দিয়ে তাজা রক্ত পান করে আমি পাবো অমরত্ব লাভ। বোকা অফিসার, তুই বড্ড বোকা! আমার ডাকিনী কালো জাদুর হাত থেকে আজ তোদের রক্ষা নেই। তুই নিজে এখানে মরতে এসেছিস আজ তোর মরণ আমার হাতে বোকা অফিসার। তোরা দুজনই মরবি কিন্তু তুই মরবি আগে পরে এই বুড়োটাকে মারবো। এখান থেকে পালানোর পথ বন্ধ।
এই বলে নীলা তার বাবাকে ফেলে অফিসারের দিকে এগিয়ে এলো। ঠিক সেই সময়ে হুড়মুড় করে কিছু পুলিশের কর্মকর্তা দরজা দিয়ে ঢুকে নীলাকে ঘিরে ধরলো। নীলা কিছুক্ষণ তাদের সাথে অহেতুক ব্যর্থ নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে অবশেষে থেমে গেলো।
নীলাকে দোতলায় থেকে নিচে নামিয়ে নিচতলার বিশাল হলরুমে এনে বসানো হলো। অফিসারের সাথে নীলার বাবাও এলেন। নীলা তখনো রাগে দাঁত কড়মড়িয়ে বিজবিজ করে কি যেন বলতে লাগলো। অফিসার এগিয়ে গেলেন নীলার দিকে এবং বললেন– আজ এই ভয়ানক রাতের সাথে আপনার সব নাটক শেষ হলো নীলা। মানতেই হবে ডাকিনীবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি আপনি একজন নিখুঁত অভিনেত্রী। আপনি যখন অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন তখনই আপনাকে আমার সন্দেহ হয়েছিলো। আপনি চলে আসার পর আপনার মায়ের মৃত্যুর কেস ফাইলটি ওপেন করি। যেখানে আপনার মায়ের মৃত্যুর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ লেখা ছিলো, ভদ্রমহিলার মাথায় আঘাত লাগার কারণে মারা গেছেন। কিন্তু ঘটনার সেইদিন আপনার বাবা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। সেদিনও বাড়িতে আপনিই ছিলেন। আপনার এই ডাকিনীবিদ্যার চর্চার শুরুতেই আপনার মা জানতে পেরে গিয়েছিলো। তাই আপনি আপনার মাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। আপনি দারুণ অভিনয় করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু কিছু ছোট ভুলের জন্য আপনার প্লানটি সাকসেসফুল হয়নি। আপনি বলেছিলেন আপনার বাবার নামে চিঠি এসেছিলো যা আপনি পুড়িয়ে ফেলেছেন। কিন্তু চিঠি আপনার বাবার নামে নয়, আপনার নামেই আসতো প্রতিটি চিঠি। আর সেই চিঠির ব্যাপার জানতে পেরে যায় আপনার বাবা। আপনার শেষ আরেকটি ক্ষুদ্র ভুল কি জানেন মিস নীলা? আমাকে ফোন দিয়ে একা আসার অনুরোধ জানানো। সব থেকে বড় খটকা এখানেই! যেখানে আপনার জীবন সংকটে সেই মূহুর্তেও কেন আপনি আমাকে একা আসতে বললেন? তাহলে অবশ্যই কোন না কোন রহস্য লুকিয়ে আছে।
এইবার কথা বললেন নীলার বাবা, তিনি বললেন– নীলার যদি আমাকে খুন করাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য হবে তাহলে আপনার কাছে কেন গিয়ে অভিযোগ করবে? আর কেনই বা আপনাকে আসতে বলবে!
অফিসার হেসে বললেন– কারণ উনার উদ্দেশ্য ছিলো আপনাকে মারার পর যেন পুলিশ কোনোভাবে তাকে সন্দেহ না করে। আর যদিও পুলিশ জানতে পেরে যায় তাহলে সকলে ভাববে নিজের আত্মরক্ষার জন্য সে এমনটি করেছে। এইক্ষেত্রে আইন তাকে শাস্তি প্রদানে কম কঠোর হবেন। এছাড়াও নীলা যে ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করছিলেন সেখানে দুজন মানুষকে বলি দেবার কথা ছিলো। তাই তিনি ১ম ব্যাক্তি হিসেবে আপনার পর আমাকেই নির্বাচন করেছেন। যেন মানুষের চোখে আরো ভালোভাবে ধুলো দেওয়া যায়। কেননা আজ আমরা দুজন খুন হলে সবাই ভাবতো আমরা একে অপরের সাথে লড়াইয়ে খুন হয়েছি। এই হলো পুরো ঘটনার মূল বিষয়বস্তু।
নীলা তখনো ফ্লোরে বসে হাঁপাচ্ছে আর বিজবিজ করে কী যেন বলেই যাচ্ছে।
অফিসার বললেন– এইবার থামুন মিস নীলা, আপনি অনেক ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করেছেন বাকিটা জেলে বসে করবেন!