ক্যাডার

ক্যাডার

-এই শোনো…
-জ্বি আপু বলুন।
-ওই আমি তোমার কোন কালের আপুরে!একি ক্লাসে পড়ি so তুই অথবা তুমি করে বলো।
-আপনি করে বলা যাবেকি!
-ঘোড়ার আন্ডা,তুমি করে বলবা।
-সরি,আমার দ্বারা পসিবল না।

-ভাব নিবা না একদম আমার সামনে।
-[অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম]
-ভাব নিতে মানা করেছি।
-আচ্ছা,ডাকলে যে।
-সব সময় এমন এক ঘেয়ে থাকতে তোমার খারাপ লাগেনা?
-নাহ্,এর মাঝে লুকিয়ে থাকে হাজারো প্রতিভা।

-তো…তোমার মাঝে কোন প্রতিভা লুকিয়ে আছে!
-হাহাহা[শয়তানি হাসি দিলাম]
-তুমি বাহিরে যতটা ইনোসেন্ট দেখতে আসলে ভেতরে ততোটা নও।
-হয়তো।
-আচ্ছা আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি?
-সরি।
-তুমি কি জানো আমার কষ্ট লাগলে তোমাকেও কষ্ট পেতে হবে।
-আমি কি এখন যেতে পারি!
-আর একবার বলবো,নাহয় বন্ধু হও নাহলে শত্রু।

[মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে আসলাম। মেয়েটা অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো। হয়তো ভাবতেও পারেনি আমার মতন ছেলে ওর সাথে বন্ধুত্ব করতে মানা করবে।] পরেরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাসে বসতেই এক ছেলে এসে মাঠে ডেকে নিয়ে গেলো। মাঠে সিনিয়র ভাইরা দাঁড়িয়ে। সবার হাতেই হকি স্ট্রিক্ট। বুঝতে বাকি রইলোনা কি হতে চলেছে। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মার খাওয়ার জন্য সবার মাঝে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রথম হিটটা বাম পায়ে করলো,হাটু গেড়ে বসে পরলাম। দ্বিতীয়টা ডান পায়ে করলো,পুরো বসে পরতে বাধ্য হলাম। তারপর মাথায় হিট করার সাথেই পুরোটা মাটিয়ে লুটিয়ে পরলাম। শুরু হলো তুমুল ঝর,১৫-১৬ জন মিলে মাটিতে লুটিয়ে পরা আমার দেহটাকে লাথি মারতে শুরু করলো। তখনো শুধু আমর নিশ্বাস আর জ্ঞানটা রয়েছে। কিছুক্ষণবাদে মেয়েটা এলো।

মেয়েটাকে দেখে সবাই থেমে গেলো। তারপর মেয়েটা এসে আমার বুকে পা রেখে হাটু গেরে বসে বলতে লাগলো “আমি এখানকার এমপির মেয়ে।so নেক্সটে কথাটা মাথায় রাখবা।” আমি শুধু হাসলাম। তখনি মেয়েটার মুখে স্পষ্ট খেয়াল করলাম “অসস্থির” ছাপ। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মেয়েটা ছেলে গুলোর উদ্দেশ্যে বললো “আজকের মতন ছেড়ে দিতে।” পুরো ভার্সিটি ততক্ষণাত শুধু একটা নাটক দেখলো। তারপর সবাই যার যার মতন চলে গেলো। আমিও কোনো ভাবে হেঁটে একটা গাড়িতে করে হসপিটালে গেলাম। দুনিয়ায় যার কেউ নেই তাকে তো সব জায়গায় একাই যেতে হয়। হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছি মনে মনে মেয়েটার প্রতি রাগ হতে লাগলো। রাগ কমাতে মোবাইলটা বেড় করে কল দিলাম

-হ্যালো।
-রফি…
-জ্বি বস্ বলুন।
-ভার্সিটিতে আজ ১৫-১৬ জন মিলে একজনকে মেরেছে,খোঁজ নাও ওই ১৫-১৬ জন কারা।
-আচ্ছা বস্।
-এমন ব্যবস্থা করো যাতে,ছেলে গুলার বডিও খুঁজে পাওয়া না যায়।
-ওকে বস্।

ফোনটা কেটে জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। তখন হাসপাতালে সবার ফোকাস শুধু আমার দিকেই। সেটা প্রধাণ্য না দিয়ে আবারো ভাবতে লাগলাম,মেয়েটাকে এত সহজে ছেড়ে দেওয়া যাবেনা। তাঁর জীবন নষ্ট করে দিবো,তবে সেটা আমার স্টাইলে। প্রথমে কারো ভালো বন্ধু হও। তারপর তাঁর দূর্বলতা জানো। অবশেষে সেটার অপব্যবহার করো। অনেকদিন বাদে পুরোটা সুস্থ হয়ে ভার্সিটিতে গেলাম। ভার্সিটিতে গিয়েই মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে ক্লাসে পেয়ে গেলাম। কাছে এগিয়ে গিয়ে ছোট্ট করে বললাম….

-সরি।
-[মেয়েটা মিষ্টি একটা হাসি দিলো]
ব্যপারটা আগে বুঝলে ভালো হতো।
-আগে বুঝলে হয়তো আজকের এই মিষ্টি হাসিটা দেখতে পেতাম না।
-[আবারো মিষ্টি একটা হাসি দিলো]
-সেদিন যে ভুলটা করেছি,আজ সেটা করতে চাইনা।তোমার বন্ধু হতে পারি?[হাতটা বাড়িয়ে দিলাম]
-বাব্বাহ্,সূর্য আজ কোন দিকে উঠলো!আচ্ছা ডান।[হাতটা ধরে]
-কিন্তু বাই মিস্টেক,তোমার নামটা এখনো জানিনা।
-নিধি..
-নামটাও তোমারি মতন।
-[মিষ্টি হাসি দিলো শুধু]

সেখান থেকেই প্লানিং শুরু। সারাদিন এত্ত কেয়ারিং শেয়ারিং আর মাঝে মাঝে ঝগড়া,যে কেউ ভেবে বসবে প্রেমিক-প্রেমিকা। আস্তে আস্তে দুজনের মাঝে কথা বলার মাত্রা বেড়ে গেলো। এক সময় নিধির দূর্বল পয়েন্ট জেনে গেলাম। এরি মাঝে আরো একটা ঘটনা ঘটে গেলো। বালিকার আচার-আচরণ ভালবাসার ইংগিত করছে। সেটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।

সুযোগটা কাজে লাগাতে নিধিকে এক নদীর পারে আসতে বললাম। মেয়েটা তো দারুণ খুশি। প্রায় বিকেল পাঁচটা বাজে। নদীর তীরে নিধির জন্য অপেক্ষা করছি। সামনে তাকিয়ে যখন নদীর পানি দেখছি,পেছন থেকে তখন এক কোমল হাতের স্পর্শে চোখটা ঢেকে গেলো। পারফিউমের মিষ্টি ঘ্রাণটা বুঝাতে বাকি রাখলোনা এটা নিধি। হতটা ধরে যখন সামনে আনলাম তখন সবচেয়ে অবাক হবার পালা। হলুদ শাড়ীতে,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপগ্লোজ,দুই চোখে টানা মাশকারা,আর হাতে নানান ধরণের চুরি সত্যি আমায় পাগল করে ফেলেছে। হা করে শুধু তাকিয়ে রইলাম..

-ওই বুঝলে কি করে এটা আমি?
-তুমার উপস্থিতি আমার মনকে সাড়া দেয়।
-হাহ্,মিথ্যা কথা।
-জানো আজ ডেকেছি ক্যানো!
-ক্যানো!
-নীল এই খোলা আকাশের নিচে,চিৎকার করে তোমায় ভালবাসি বলবো বলে।
-শুনি একটু।
-আইইইইই…লাভ্….ইউউউউউ নি…ধি[জোড়ে চিৎকার করে]

নিমেষেই মেয়েটা কান্না করে দিলো। কান্না ভেজা চোখটা লুকাতে আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমিও জড়িয়ে ধরে মৃদু হাসলাম শুধু। নদীর তীরে সবাই তখন আমাদেরি দেখছে। সবার মনে হয়তো একটাই ভাবনা “আমাদের মাঝে প্রেমের গভীরতার।” তখন আমার মনে ছোট্ট একটা ছন্দ খেলা করতে লাগলো। “সবাই জানে যেটা” “আমি কি আদৌ সেটা” কিন্তু হঠাত নিধি অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো…

-রফি চলো বিয়ে করে ফেলি[কান্না জড়িত কন্ঠে]
-কিছুদিন বাদে করলে হয়না।
-না,আজ-এখন-এই মুহূর্তে।
-কিন্তু।
-কোনো কিন্তু না।

(হঠাৎ এমন ভাবে বললো মানা করতে পারলাম না। কি থেকে কি হয়ে যেতে লাগলো। রিক্সায় করে দুজন কাজি অফিসের সামনে এসে নামলাম। তারপর নিধি ওর কিছু ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে আসতে বললো। আমার প্লান আমারি গলার ফাস হয়ে আমাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলো। তারপর নিধিকে আমার বাসায় নিয়ে গেলাম…..

-ওয়াও,এত্ত বড় বাসা তোমার।
-হুম। [ভেতরে যাওয়ার পর]
-এত্ত বড় বাসায় তুমি একা থাকো!
-আমার আর কেউ নেই।
-ভয় হয়না একা থাকতে।
-[জোরে একটা হাসি দিলাম]ভয়,আমায় দেখে ভয় পায়।
-তোমার বাবা-মা কোথায় থাকে?
-তোমায় বলেছি না এই দুনিয়ায় আমি পুরো একা,আমার কেউ নেই।
-এখন থেকে আমি আছিতো।
-হুম,এখন বাসরঘরের আর কিছু খাবারের ব্যবস্থা করি।
-[মেয়েটা হাসলো]

তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড় হয়ে ছাদে চলে গেলাম। কঠর মনটা একটু একটু নরম হয়ে যাচ্ছে। যে মেয়ে সবকিছু ছেড়ে আমার হাত ধরে চলে এসেছে। আমি কি করে তার সাথে প্রতারণা করি! কি দিয়ে কি করবো ভেবে উঠতে পারলাম না। তারপর একটা কল দিয়ে ফুল আর খাবার নিয়ে আসতে বললাম। কিছুক্ষণ বাদে গেটের সামনে গাড়ি এসে কথামত ফুল আর খাবার গুলো রেখে গেলো। এক হাতে ফুল আর অন্য হাতে খাবার নিয়ে যখন ঘরে ফিরলাম নিধি তখন চেয়ারে বসে। আমায় দেখেই এক সস্থির নিশ্বাস ফেললো। নিধির হাতে খাবার ধরিয়ে দিয়ে খেয়ে নিতে বলে ফ্রেস হতে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি নিধি না খেয়ে বসে আছে।

-খেয়ে নাও।
-এক সাথে খাবো। [তারপর খেতে বসে গেলাম]
– এইই।
-হুম।
-খাইয়ে দিবা?

[আবার মনের মাঝে মায়া সাড়া দিলো। কেন জেন নিধি কিছু বললে সেটা না বলার সাধ্য আমার মাঝে থাকেনা। মেয়েটাকে খাইয়ে দিচ্ছি,আর সে মায়াবী চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে দুজনে মিলে ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে বিছানাটা সাজালাম। তারপর নিধির কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে পরলাম। নিধি আলতো করে শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কেন যেন মেয়েটাকে ঠকাতে ইচ্ছা হলোনা। তাই কোনো দ্বিধা না করে আমার জিবনের সব ঘটনা বলার প্রস্তুতি নিলাম।

-নিধি….
-হুম।
-একটা গল্প শুনবা!
-ওয়াও,হুম।
-শুনো তবে ডাস্টবিনের এক বাচ্চা চিৎকার করছে।

পাশ দিয়ে অনেকেই হেঁটে যাচ্ছে।কারো মনেই মানবিকতা নেই,যে কেউ বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে একটু অশ্রয় দেবে।তারপর এক পাগলী আসে।কেন যেন বাচ্চাটা তাঁর মনে জায়গা করে নিতে পেরেছিলো। পাগলি বাচ্চাটা নিয়ে তাঁর কাছে আশ্রয় দেয়।খুব আদর-যত্ন করে বাচ্চাটাকে বড় করে তোলে।যখন ডাস্টবিনে পরে থাকা সেই বাচ্চাটা একটু একটু করে বুঝতে শেখে তখনি পাগলিটা মারা যায়।

-বাচ্চাটা ছেলে না মেয়ে!
-ছেলে।তারপর পথে পথে ঘুরে বেড়ায় ছেলেটা।

যেখানেই যাক তাড়া খাওয়া ছাড়া আর কিছুই ভাগ্যে জোটেনি।কিন্তু সমাজের সাথে লড়াই করে হাল না ছেড়ে দিয়ে চলতে থাকে।ছেলেটা খুব মেধাবি ছিলো।প্রয়োজন ছিলো শুধু শিক্ষার।তাই নিজে থেকেই একটা স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়।কিন্তু চলার মতন অর্থের লোভে ছেলেটা এক সময় ড্রাগসের বিজনেস শুরু করে।দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্র হঠাত করে অনেকটা এগিয়ে যায়।তার ছোট্ট ব্যবসা এক সময় বড় রূপ ধারণ করে।দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠে ছেলেটা একটা নিজের গ্যাং খুলে।তারপর থেকে আজ পর্যন্ত সে যেটা পেয়েছে সেটা হলো সফলতা।

-ছেলেটা কে?
-রফি….

এবার নিধি সরে গেলো।কিছুক্ষণ ভেবে তারপর তার মাথায় হাত রেখে কসম কাটালো আমি যেন এগুলা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিই। খুব অদ্ভুত ভাবে আজো না বলতে পারলাম না। সেদিন পুড়ো রাত আরো অনেক অনেক গল্প করে ভোরে ঘুমালাম। যখন ঘুম ভাঙলো তখন পাশে নিধি নেই। ওর জন্য চিন্তা হতে লাগলো। পুড়ো বাড়ি খুঁজতে লাগলাম। কোথাও যখন খুঁজে পেলামনা তখল কল দিলাম।

-হ্যালো..
-নিধি কোথায় তুমি?
-এইতো একটু বাহিরে আসছি,পাঁচ মিনিটেই ফিরবো।
-একবার বলে তো যাবা।
-আচ্ছা আসছিতো।

মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু ভেবে পাচ্ছিনা কখন ওর প্রেমে পড়েছি! এমন সময় বাহিরে বাহিরে সাইরেন্সের আওয়াজ। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। খুব অবাক হলাম যখন শেষ জানালা দিয়ে পুলিশের সাথে দাঁড়ানো নিধিও ছিলো। খুবি কৌতুহল নিয়ে বেড় হলাম। সাথে সাথে ২০-২৫ জন পুলিশ এসে 0 পয়েন্টে পিস্তল ঠেকালো। তারপর থানায় নিয়ে গেলো। তখনো আমি কিছুই জানিনা। কিন্তু সব ক্লিয়ার হয়ে গেলো যখন নিধি এসে ওর পুড়নো রূপটা তুলে ধরলো।

-নিধি তুমি চিন্তা করোনা বেড় হয়ে আমি সব বাদ দিয়ে দিবো।ওরা কিছুই করতে পারবেনা।আমার নামে কোনো প্রুভি ওদের কাছে নেই তারপর বালিকা ওর ফোন টা বেড় করে কাল রাতে বলা কথা গুলো শুনালো।

-এমনটা ক্যানো করলা?
-ওই ১৫ জনের মার্ডার তোমারি আদেশে হয়েছে তাইনা।
-হুম।
-জানো তাদের মধ্যে আমার বড় ভাইও ছিলো।
-হাহাহা,আমার গেম আমারি ওপর।ভাল্লাগছে।শুধু জিতেছো তুমি,হেরেছে বিশ্বাস।আফসুস বুঝলে কি করে ওটা আমারি কাজ ছিলো!
-এক রাতে ১৫জনকে শেষ করার মতন লোক অবশ্যই আমাদের মতন সাধারণ মানুষ হতে পারেনা।
-দুনিয়া কতটা কঠিন,সেটা তোমাকে আমার জায়গায় রাখলে বুঝতে।প্লিজ এখন চলে যাও।

নিধি এক পা..দু পা করে চলে গেলো। আর আমি শুধু হাসছি। “সবার কষ্ট প্রকাশ কান্না হয়” “আমার কষ্ট প্রকাশ হাসিতে পরিপূর্ণ পায়”

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত