– কোথায় তুমি ?
– বাথরুমে ।
– বাথরুমে মানে ?
– হ্যা, বাথরুমে ইংলিশ কমোডে বসে আছি
– ইস, জগণ্য ।
– না না, আমি অন্য কিছু করছিনা
– তাহলে কি করছ ?
– কেনো তোমার সাথে চ্যাট করছি !
– বাথরুমে কি মানুষ চ্যাট করে ?
– উপায় নাই বাবুনী, বাবা আমার রুমে বসে বসে পেপার পড়ছে । মোবাইল হাতে থাকলে বাবা সেটা সহ্য করতে পারে না
– তাই বলে বাথরুমে ? কেনো ড্রয়িং আছে, বাসার ছাদ আছে।
– এত রাতে কি বলে ছাদে উঠব ? রাতে তো আমি কাপড় শুকাতে দে না ।
– গাধা তোমার বাবাকে বলো একটু ছাদ থেকে হেটে আসি ।
– না, সম্ভব না । আমার অতীতের রেকর্ড খারাপ, ছাদে সিগেরেট খেতে গিয়ে বাবার কাছে ধরা খেয়েছি । এরপর থেকে রাতে আমার আর ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখা হয় না । হঠাৎ তুষারের বাবা বাথরুমে দরজা knock করল আর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলল
– ওডা, এতক্ষণ বারুমত কিররদ্দে, কতক্ষণ ধরি তুই হাগর দে । কমড ফাটি ফেলাবিনি ( তুমি বাথরুমে কি করছ, বাথরুমে এতক্ষণ কেউ করে । বাথরুম তো দুর্গন্ধ করে ফেলবে ) এই শুনে তুষার, অনামিকাকে জলদি টাইপ করল
– এইরে, বাবা বাথরুম knock করছে আমি গেলাম ।
– ইডিয়ট কোথাকার । কালকে ভার্সিটি আসছ তো ?
– হ্যা হ্যা দেখা হবে, I love u bye bye..
– বাথরুমে I Love u ! idot এরপর তুষার পেট চেপে বাথরুম থেকে বের হলো এমন ভাব নিলো যেন ডায়েরিয়া হয়েছে । এই দেখে তুষারের বাবা বলল
– তোর তে কি হইয়ি দে ( তোমার কি হয়েছে)
– কিছু না বাবা, এমনেতেই
– তোর পকেটত ইভা কি ? ( তোমার পকেটে ওটা কি)
– কই কিছু না তো ? তুষারের বাবা পকেটে হাত দিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল, তারপর বলল
– তোর তো পেট ন গুতার,
তোরে তো ইভা গুতার, আজিয়ে তুন মোবাইল ইভা আর তুন থায়িবো ( তোমার তো পেটে সমস্যা না, এখানে সমস্যা, আজকে থেকে মোবাইলটা আমার কাছে থাকবে ) তুষারের বাবার কথা গুলো হজম করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না । তুষারের বাবা যতই রাগী হোক না কেন, অফিসে যাওয়ার আগে ফোন ঠিক তুষারের বালিশের নীচে দিয়ে যায় আদর মাথায় চুমু দিয়ে যায় । প্রতিদিনই এমনটা চলতে থাকে । পরেরদিন ভার্সিটিতে অনামিকার পাশে এসে তুষার
– হাই বাবুনী
– তুমি কি রোজ বাথরুমে, ঐ ইংলিশ কমোডে বসে, ইয়াগ করতে করতে আমার সাথে চ্যাট করো ?
– না না আমি বাথরুমে ইয়াগ করি না, শুধু চ্যাটই করি
– আবার কথা বলে ।
– তুমি বুজতস না তোমার সাথে চ্যাট করার জন্য আমি কত কষ্ট করি, বাথরুমের দুর্গন্ধ সহ্য করি, মাঝে মাঝে তেলাপোকা দেখে আঁতকে উঠি ।
– just shut up.. তোমাকে তো ইচ্ছে করছে…
– কি ?
– একদম চুপ ।
– বুজবা বুজবা, আমার কষ্ট একদিন তুমি বুজবা । যেদিন তুমিও বাবার শাসনের ফাঁদে পড়ে বাথরুমে গিয়ে আমার সাথে চ্যাট করবা ।
– জি না, আমি তোমার মতো কমন্সেস ছাড়া না ।
– বাদ দাও না, বাথরুমের প্রসংগ । এখন তো naturally আছি । এখন তো একটু সুন্দর ভাবে কথা বলো
– এটা নাটকও, এটা সিনেমাও না যে মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলবো
-ওহ, তাহলে আমি উঠলাম
– এই দাড়াও কই যাও, খালি রাগ করো । মিষ্টি করেই বলছি “চলো না দুজনে হারিয়ে যায় অজানায় ”
– ” যেখানে পাখিরা ডানা মেলে মিটি মিটি হাসায় ”
– এইত রাগ কমেছে, চলো হাঁটি । এইভাবেই প্রতিদিন রাত-দিন তাদের চ্যাট হয় । একদিন অনামিকার বাবা, অনামিকার মাকে বলল
– কি পড়া, কি খাওয়া, কি ঘুমা সব সময় তোমার মেয়ের হাতে মোবাইল মোবাইল মোবাইল, আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছে ওর উপর ।
– হুম, দেখি তো । মেয়েটা যে কি করবে কি জানে
– মামুনী শোন তোর হাতে যেন পড়ার সময় আমি আর মোবাইল না দেখি,
আর অনামিকার মা শুনো তুমি পড়ার সময় ওর পাশে থাকবে ও কি করে না করে সব দেখবে । সেদিন রাত ৮ টায় তুষারের মিস কল দিয়ে চ্যাটে আসার ইংগিত দিলো । অনামিকার মা সেটা খেয়াল করল আর মোবাইলটা নিয়ে বালিশের নীচে রেখে রান্না করতে চলে গেল । অনামিকার মন চ্যাট করার জন্য ছটফট করছে কিন্তু উপায় নেয় । হঠাৎ তুষার কথা অনামিকার কানে বেজে উঠল ” বুজবা, বুজবা আমি বাথরুমে কত কষ্ট করে তোমার সাথে চ্যাট করি ” । মুচকি হেসে অনামিকা মোবাইল নিয়ে বাথরুমে ঢুকল তুষারকে knock করল
– তুষার আমি মনে হয় রাতে আর তোমার সাথে চ্যাট করতে পারবো না ।
– কেনো আমি বাথরুমে বসে বসে তোমার সাথে চ্যাট করি বলে ?
– না, ব্যাপার সেটা না ।
– সত্যি আজকে আমি বাথরুমে নেয়, বাবা ঢাকা গেছে তাই রিডিং রুমেই চ্যাট করছি ।
– হুম, তোমার কষ্ট আমি বুজতে পেরেছি
– মানে ?
– তুমি বাথরুমে অনেক কষ্ট করে আমার সাথে চ্যাট করো
– তার মানে তুমিও ?
– হুম, আজকে থেকে রোজ ৮ টায় আমি বাথরুমেই চ্যাট করব ! নাহয় বাবা দেখলে মোবাইল রেখে দিবে
– হা হা, যদি বলে এতক্ষণ বাথরুমে কি ?
-তাহলে টেবিলে খাবার সেলাইন আর ফিলমেট রেখে বলবো প্যাট খুব ব্যাথা করছে ।
– কি বুদ্ধিরে, এইজন্যই তোমাকে আমার এত্ত ভালো লাগে ।
– Me to । এইরে মা দরজা knock করছে, তাহলে সে কথায় রইল, রোজ ৮ টায় হুম।
– হুম রোজ ৮ টায় বলবো “বাবা প্যাট ব্যাথা করছে, বাথরুমে যাবো “