টাইম ট্রাভেল

টাইম ট্রাভেল

বিছানায় বসে কলম দিয়ে তারিখ কাটছিলাম,সময়টা ২০৪০ সালের ২০ অক্টোবর।হঠাৎ আমার স্ত্রী দুধের ফিডারটা আমার দিকে ছুড়েঁ দিয়েই হাঁটতে শুরু করলো,আর যেতে যেতে বলছিলো এই আজ অফিস থেকে আসতে আসতে আমার অনেক দেরী হবে,তুমি জ্যাক কে দুধ গুলো খাইয়ে দিও মনে করে। আমি মৃদু স্বরে মাথা নেড়ে জবাব দিলাম,হুম খাইয়ে দিবো।

লালচুলের যে মহিলাটা দ্রুতবেগে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো ও আমার স্ত্রী জ্যাকুলিন।বিবাহের সময় আমার শ্বশুর অবশ্য আমাকে বলেছিলেন তার নাম জয়এী।বিবাহের পর শুনলাম মেয়ে অনেক আধুনিক।তাই পাশ্চাত্য সংষ্কৃতির অংশ হিসেবে সে নিজের নাম পাল্টিয়ে রেখেছে জয়এী থেকে জ্যাকুলিন।আমার একটা ছেলে একটা মেয়েও আছে।যদিও আমার স্বপ্ন ছিলো ছেলের নাম রাখবো জগদীশ, আর মেয়ের নাম রাখবো জগৎদ্বাএী, কিনতু আমার স্ত্রী ওইসব নাম একদম পছন্দ না।সে তার খুশিতেই নাম রাখলো জ্যাক আর জ্যাকি।

আমি অবশ্য কোন প্রতিবাদ করিনি।কারন যে যুগে চলে এসেছি এখানে নারীদের কথার উপর কোন কথা বলা যাবে না।আমরা যখন ছোটছিলাম তখন দেখতাম ৯৯৯ ডায়াল করলে পুলিশ আসতো,আর এখন শুধু ৯ ডায়াল করলে পুলিশ চলে আসে।চারিদিকে মেয়েদের জয় জয়কার। কোথায় এখন আর মেয়েরা নেই! সব চাকরি,অফিস -আদালত,বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব জায়গায় মেয়েদের ক্ষমতা।রাস্তায় নামলেই দেখি মেয়েরা গাড়ি চালাচ্ছে বিশাল বিশাল বাস।গাড়ির এসিসটেন্ট ও মহিলা।চিৎকার দিয়ে দিয়ে বলছে,,,, ও,,, পটিয়া,,, পটিয়া পটিয়া যাইবেনা পটিয়া!!! ভাড়া ৩০!! ভাড়া ৩০!!

আমি অবাক হয়ে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে আছি।মহিলাটি আমার গায়ে হাত দিয়ে বললো কি সমস্যা আপনার? কই নাতো কোন সমস্যা নেই! উনি চলে গেলেন। আমি আবার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। গাড়ির বামপাশে এখন আর সেই সাইনবোর্ডে লেখাটি নেই,””মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত”” লেখাটে উল্টে গেছে এখন লেখা আছে -“”পুরুষদের সিট,এখানে বসবেন না”। পুরো বাসটা এখন মেয়েদের দখলে।কয়েকটি পুরুষমানুষ হুতুমপেঁচার মতো গাড়িতে উঠে নির্ধারিত জায়গায় বসে পড়েছে।

হাটে বাজারে মহিলারা বেচা,কেনা করছে।দোকানে অলিতে গলিতে সব মেয়েদের দোকান।কোথাও কোন পুরুষ মানুষ নেই। সবাই ঘরে বসে রান্না করছে।বসে বসে আমার মতো বাচ্চাকে দুধের ফিডার খাওয়াচ্ছে।দোলনায় দুল খাইয়া ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছে।স্ত্রী কখন বাড়ি ফিরবে তার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে।এই সব দৃশ্য আমাকে খুব কাঁদাচ্ছে।আমরা কি ছিলাম! আর কি হয়ে গেছি।

বাসায় বসে বসে আমি রিমোট নিয়ে স্টার জলসার সিরিয়াল দেখছি একটার পর একটা।একটা যদি মিস হয় বুকের কোন পাশে যেনো একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়।সিরিয়াল চলছে,এখন আর আগের মতো বজ্রপাত দিয়ে এক একটা ডাইনাসোর মুখ তিন চারবার করে দেখায় না।কারন এখন পুরুষ দর্শকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।সব সিরিয়াল পুরুষভিওিক। এক একটা পুরুষ বসে বসে শিখছে কিভাবে অন্যের সংসার ভেঙে আনন্দ পাওয়া যায়,কিভাবে স্ত্রী র মাথায় কাঠাল ভেঙে খেতে হয়,কিভাবে সংসার চালাতে হয়।আমার স্ত্রী অফিস থেকে এসেই রিমোট নিতে চাই।।কিন্তু আমার সিরিয়াল যে এখনো শেষ হয়নি।

শেষমেশ সে টিভি ভেঙে ফেলার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে রিমোট নিয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেয়।আমাদের ছেলেদের ক্রিকেট খেলা এইযুগে আর কেউ দেখে না সব ছেলেরা,মেয়েরা একসাথে বসে বসে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের খেলা দেখছে।টিভি কমেন্টারি থেকে ভেসে আসছে– “”সুরাইয়া বানু ইস দ্যা টপ অলরাউন্ডার ইন বাংলাদেশ।”” হোয়াট এ ম্যাচ দ্যাট ইজ একটার পর একটা ম্যাচ জিতছে মেয়েরা।সবাই হই হুল্লোড় করছে,নাচানাচি করছে।

এখন আর আমাদের সময়ের মতো কোন মেয়ে ধর্ষন হয়না।ধর্ষন হচ্ছে প্রতিনিয়ত ছেলেরা।ধর্ষনের ভয়ে ছেলেরা হাত, পা, মুখ ডেকে রাস্তায় বের হয়।তারপরো কোন কোন মেয়ের লালসার স্বীকার হয়ে কিছু ছেলে রাস্তায়, বাসে, এমনকি কর্মক্ষেএেও তাদের সম্ভ্রম হারাচ্ছে।অলিতে গলিতে কিছু বখাটে মেয়ে দাড়িয়ে থাকে,,, সহজ সরল ছেলে পেলাই ওরা গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে।হাফ পেন্ট, লুঙ্গি পরে কোন ছেলে এখন আর রাস্তায় বের হতে পারে না,ওদের জন্য।পুরো শরীর ঢেকে রাখতে হয়।

একা পেলেই ধর্ষন করার জন্য দৌড়ায় সেই নিরাপরাধ ছেলেগুলোকে।শুধু ধর্ষন করেই ওরা ক্ষ্রান্ত হবে না,হাতের চাকু দিয়ে গুরুত্ববহ জিনিস কেটে দিতে চেষ্টা করে।হাত পা শরীরে জখম করে।সবাই সবসময় এই সব বখাটেদের জন্য আতংকে থাকে।টিভি খুললেই চোখে পড়ে, ধর্ষনের চেষ্টা করায় তিন যুবকের আত্মহত্যা। ওই সব দৃশ্য আমাকে ভাবায়,আমাকে কাঁদায়।

আমার স্ত্রী আমার পিট চাপড়ে বলে কি আর করবে বলো।দেশটা যে রসাতলে গেলো।রাস্তাঘাটে বের হওয়ার সময় সাবধান।কোথাও যাওয়ার আগে আমাকে বলে যেওো সোনা। আমি ভয়ে কুকড়ে গিয়ে,আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরি।সে আমাকে সাহস দেয়।পাশের বাড়ির যে ছেলেটা আমাদের জমিদারের মেয়ে রঞ্জনা কে দেখতে আসতো প্রতিদিন,যাকে ভালোবাসতো জীবনের চেয়েও বেশী সেই ওই বখাটে মেয়েগুলোর ভয়ে আর এদিকে আসে না।কান্না কন্ঠে বলে,,,,,, পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব, বলেছে পাড়ার দিদিরা অন্য পাড়া দিয়ে যাচ্ছি তাই রঞ্জনা, আমি আর আসব না ।।

এতো কিছুর পরো ও কিছু নিরিহ পুরুষরা সাহস করে প্রতিবাদ করে।হাতে ব্যানার আর প্লেকার্ড নিয়ে পুরুষ ধর্ষনের বিচার চাইছে,প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছে। কেউ কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে গলা ফাটিয়ে।কেউ কেউ কেঁদে কেঁদে তাদের দুঃখের কথা শোনাচ্ছে।আমরা আর কত নির্যাতিত হবো,আর কতো ভাইয়েরা রাস্তায়,অলিতে গলিতে শ্রীলতাহাণি হবে।আমরা পুরুষ সমাজ এটা মেনে নিতে পারিনা।বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এসে একাত্মতা জানাচ্ছে।বহিবিশ্বে পুরুষনির্যাতন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম হয়ে উঠে এসেছে,এটা মানা যায় না। চাই চাই, আমরা বিচার চাই! পুরুষ ধর্ষনের বিচার চাই! পদ্মা-মেঘনা যমুনা বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বো না।। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া বিচার না হলে,করবো না বিয়া!!

হঠাৎ নারী পুলিশ,আর নারী লিগের ধাওয়া।সবাই যে যার মতো পারছে ছুটে পালাচ্ছে।কেউ কোথাও নিরাপদ না।কোন রকমে আশ্রয় নিয়ে ভয়ে ভয়ে যে যার ঘরে চলে এসেছে।এই সব দৃশ্য দেখে আমরা আমাদের স্ত্রী দের উপর আর কোন কথা বলতে পারছি না।বললেই ওরা আমাদের কথার কোন পাওা দেয়না।

আমি এসেই আমার স্ত্রী র জন্য রান্নাবান্না কাজ শুরু করেছি।বেশ কয়েকটা তরকারী রান্না করছি।তরকারী যদি ভালো না হয়,সারাদিন অফিস করে এসে ওর খেতে আর ভালো লাগবে না।তাই খুটিয়ে খুটিয়ে, ভালোভাবে সব রান্না করছি।কলিংবেলে আওয়াজ, নিশ্চয় ও চলে এসেছে।আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। আজ এতো দেরী করলে যে সোনা? অনেক কাজ ছিলো জান। ওও তোমাকে খুব মনে পড়ছিলো,থাকতে পারছিলাম না ঘরে। ওও,তো। বাইরে চলে গেলেই তো পারতে।

((কি করে বলি তোমাকে দেশের যে অবস্থা))আমি মনে মনে ভাবি। না,তোমার জন্য রান্না করছিলাম। ওও,তাই হুম তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি। আ,,,আ কি শুরু করলে এইসব।এই সব আদেক্ষেতা আমার ভালোলাগে না,যাও খাবার সাজাও টেবিলে। সারাদিন একা থাকি ঘরে,মনের দুঃখ কিভাবে বুঝবা তুমি!! ওও,ঢং করতে হবে না,যাও এবার। আমি গিয়ে এক এক করে খাবার সাজাচ্ছিলাম। হাতমুখ ধুয়ে চলে এসেছে ওও।বসেই খেতে শুরু করলো। মুখে দিতেই কেমন জানি একটা বীভিৎস আওয়াজ করে উঠলো সে জ্যাকুলিন।

ছিঃ এগুলো কি রাধলে,,,লবন হয়নি,মরিচ হয়নি,গরু পেয়েছো আমায়,যে ঘাস কেটে দিলেই খেয়ে ফেলবো।ভাতগুলোতে পানি ঢেলে উঠে গেলো আমার স্ত্রী। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।প্রিয় মানুষের জন্য এত কষ্ট করে খাবার রাধলাম,আর সে এভাবে ফেলে চলে গেলো।ওর সাথে সংসার করাটাই আমার সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিলো। একটু পরেই মশারি টেঙে শুতে গেলাম।শরীর টা খুব একটা ভালো না, গায়ে জ্বর আসছে।কিন্তু ওও তো সেটা বুঝবে না।ঝাপিয়ে পরলো।

ধর্ষন যে শুধু বাইরে হয় তা কিন্তু এই ভাবেও হয় অনেক ধর্ষন হয়।আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও সে আমাকে ধর্ষন করে প্রতি রাত। চোখের কোণে জল জমেছে।খুব অভিমান হচ্ছে মা বাবার উপর,কেনো এই বদ মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে গেলে!! ঢুকরে কেঁদেঁ উঠেছি আমি,মা আমি ওর সাথে সংসার করতে পারবো না,আমি তোমার থেকে মুক্তি চাই। আমার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দিদি আর আর আমার মা ঘরে প্রবেশ করেছে। কি হয়েছে বাবা,টগর। আমি ওই মেয়ের সাথে সংসার করতে পারবো না মা।এতো কষ্ট আমার সহ্য হয় না।

দেখছিস,তোর ভাই আবার স্বপ্ন দেখেছে,তাড়াতাড়ি যা পানি নিয়ে আয়,কতবার বলি অসভ্য ছেলে,খাটের উল্টো দিকে মাথা পা দিয়ে ঘুমোস না, ঘুমোস না।তাতে অমঙ্গল হয়,উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখে।কে শোনে কার কথা, উঠ,নে বাবা পানি খা, আমি পানি খাচ্ছি,,, ডুক ডুক ডুক আর ভাবছি যাই হোক।ভাগ্যিস ওটা স্বপ্ন ছিলো।যদি আমাদের সমাজ ঠিক এই স্বপ্নটার মতো সত্যি হতো তাহলে আমরা পুরুষরা কিভাবে বাঁচতাম।অথচও ওরাও দিব্যি বেঁচে আছে এত কষ্টের পরো। মা, ওমা, বলে আবার মা কে জড়িয়ে ধরলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত