আজ টুনির বিয়ে

আজ টুনির বিয়ে

সকাল থেকে মাইগ্রেনের ব্যাথাটা ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে।তাই আজ ভোরেই ঘুমটা ভেঙে গেল।ব্যালকনিতে পায়চারী করছি আর বার বার ৪ বছরের রায়হানের একটাই কথায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।হ্যাঁ আমার স্টুডেন্ট রায়হান,মাত্র ৪বছর। ওর মুখেই শুনলাম কাল যে,আপ্পি জানো কালকে না টুনি আপুর বিয়ে।

শুনে আমি কত ভোল্টের যে শক্ খাইলাম নিজেও জানি না। রায়হানকে বল্লাম বাবু তুমি এসব কথা কোথা থেকে শুনেছো,আর কখনো যেন এসব না শুনি তোমার মুখে (ধমকের সুরে)।তারপর কথটাকে ভাবতে শুরু করলাম,আমার ক্লাস ৫ এর আরো কিছু ছাত্রছাত্রী ছিলো যারা টুনির সহপাঠী। সবাইকে ছুটি দিয়ে সাথীকে বল্লাম তুমি পরে যাও,বাকিরা চলে যাও।সাথীকে জিজ্ঞাসা করলাম,আজ দুই-তিন যাবৎ টুনি পড়তে আসে না কেন,তুমি কি জানো কেন? সাথী বললো জেসমিন আপু আপনি জানেন না টুনির তো কাল বিয়ে।

আমি বল্লাম কথাটা কি আসলেই সত্যি? উত্তরে সাথী বললো হ্যাঁ।আমি বল্লাম তুমি বাসায় গিয়ে টুনিকে বলবে জেসমিন আপু তোকে ডেকেছে কেমন। ও বললো আচ্ছা বলবো।আরো বললো যে টুনির বিয়ের দাওয়াত ও নাকি সাথীদের বাসায় দেওয়া হয়ে গেছে।তার মানে বলা যায় যে যখন রায়হান এর আম্মুকে দাওয়াত করতে গিয়েছিল তখন হয়তো কোনোভাবে রায়হান কথাটা শুনেছে যার জন্য ও কথাটাকে মাথায় রেখেছে।আর এখনকার দিনের বাচ্চারাও সাংঘাতিক টেন্ডুল।হ্যাঁ টুনির পরিবার আর ৮-১০ সাধারন নিম্নবিত্তদের মাঝেই একটি।বাবা -মা অজ্ঞ হলে যা হয় আর কি।তখন বিকেল ৫ টা আমি আমার কিছু কলেজের বন্ধুবান্ধবকে ফোনে ডেকে আনলাম বিষয়টা ওদের জানালাম।তখন সবাই মিলে টুনিদের বাসায় হাজির। ওর বাবা-মাকে বল্লাম চাচা দেখেন আপনার মেয়ে অনেক ছোট,মাত্র ১৪ বছর ওর এখনো বিয়ের বয়স হয়নি চাচা,আর ওর তো সামনে সমাপনী পরীক্ষা মাত্র অনেক সময় আছে ওর।

ওরে বড় হওয়ার সুযোগ আপ্নারা বাবা-মা আপনাদেরি তা করে দিতে হবে।প্রত্যেকটা মেয়েকে বাবা-মা প্রতিষ্ঠিত করে বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে,কিন্তু আপনারা ওর ভালোর থেকে খারাপটাই করছেন।আর তাছাড়া ছেলের যা তথ্য জানি তা মোতাবেক এমন অপাত্রের কাছে কেন মেয়ে বিয়ে দিবেন।টুনির মাকেও বুঝালাম,যে ছেলের বয়স এখন ২২-২৩, হ্যাঁ আমরা জানি ছেলে বিদেশ ফেরত,আর এও সত্যি যে এর আগে এই ছেলে এ পাড়ার ৬-৭ টা মেয়ের পিছনে ঘুরেছে,বাজে রেকর্ড ও আছে এত কিছু জেনেও এই বিয়েতে আপনারা কি করে রাজি হলেন চাচি।তার বাবা -মা উভয়েই বললেন যে মেয়েকে বিনা যৌতুকে নিবে ওই ছেলে,তারওপর বিয়ের সব খরচা ছেলেপক্ষ বহন করবে,আমি দরিদ্র অত পড়ালেখা করানোর সাধ্যি আমার নাই।মনে মনে বল্লাম ওই কুলাঙ্গার কি যৌতুক নিবে,ওর জন্য এমন একটা মেয়ে এই ঢের।

কোন রোগে ঘোড়া মরলো তা এবার আমার ফ্রেন্ডরা সবাই বুঝতে পারছি,তাই এদেরকে আর বোঝানোর মতো বৃথা চেষ্টা না করে শুধু অন্য আরেকটা পিচ্চিকে বল্লাম টুনিকে খোঁজে দিতে।কিন্তু টুনিকে পেলাম না কোথাও।সন্ধার আযান ও হয়ে গেলো।ওদের বল্লাম তোরা বাসায় চলে যা,দেখি আমি কি করতে পারি কালকেও সময় আছে।ওরা চলে গেলো,আমিও বাসায় আসলাম।বেশিদূর না আমাদের বাসার নিচে থেকে একটু দূরে।রাতে বাসায় মা-বাবার সাথেও ব্যাপারটা আলোচনায় আসলাম। মা ও নাকি ওদের বাসায় গিয়ে বুঝিয়েছেন কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। পরের দিন সকালের অপেক্ষায় রইলাম।সকাল ১০ টায় টুনিকে ডাকতে পাঠালাম।ছাদে বসে প্লান করছিলাম এমন সময় টুনির গলা,হ্যাঁ মনে হচ্ছে ছাদেই আসছে ও।ওর হাতটা ধরে ছাদের এক কোণায় গিয়ে ওকে বল্লাম তুই কি চাস বিয়েটা হোক…?ও নির্দিধায় বলে দিলো হ্যাঁ।

আমি শুনে টাস্কি।ওকে বল্লাম তোকে কি জোর করে রাজি করানো হইছে? ও বললো না,আমিও রাজি এই বিয়েতে কেননা আমিও শফিক ভাইকে ভালোবাসতাম,শফিক ভাইও আমাকে বিদেশ থেকে আসার পরর থেকেই আমাকে অনেক ভালোবাসছে,প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় দাড়িয়ে কথা বার্তা বলতো আমার সাথে।বুঝলাম জানোয়ারটা ওর মাথাটা পুরাটাই খাইছে।রাগে ঠাসসসসস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বল্লাম তুই ভালোবাসার কি বুঝিস,জানিস না তুই শফিকের চোখ,চরিত্র কোনোটাই ভালো না,তারপরও..? ও কাঁদতে কাঁদতে বললো শফিক ভাই ভালো হয়ে গেছে,ওনি আগের মতো আর নাই।আমি ওকে আরো বুঝালাম দেখ বোন তোর কি ইচ্ছে হয়না লেখাপড়া করে একদিন অনেক বড় হবি।প্রকৃত মানুষ হবি।

জবাবে শুধু এই বললো,আমি শফিক ভাইকে ভালোবাসি,আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই,তুমি প্লিজ আপু কোনো বাধা দিয়ো না,বলই চলে গেলো আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তার কথা শুনে,,নীরবে অজান্তেই চোখের কোণে জলের উপস্থিতি টের পেলাম,আরর মনে মনে বল্লাম আমার কথাকে কেন বুঝলি না বোন,আবেগের কাছে নিজেকে এতটাই সমর্পন করলি..?একদিন ঠিকি বুঝবি, সেদিন হয়তো তোর এই জেসমিন আপুর কথাতে সুর মিলাতেও সাহস পাবি না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত