মানুষের মন খারাপের ধরণ সাধারণত দু’রকম। এক. কারণ বুঝে; দুই. অকারণে এই অকারণে মন খারাপ করা মানুষগুলো হয় সবার চাইতে আলাদা, খেয়াল করলে দেখা যায় তারা সবসময়ই থাকেন হাসিমুখে। তারা সবার সাথে মেশেন , আড্ডা দেন, গান করেন তারা সবাইকে বিশ্বাসও করে ফেলেন অকপটে!এবং এই বিশ্বাসের মূল্য তারা পরিশোধ করেন চোখের জল দিয়ে।
এই মানুষগুলোর সংখ্যা আমাদের সমাজে খুব কম, এরা হাসেন; এরা হাসান। কিন্তু এই হাসির পেছনে কোনো দুঃখ ভরা গল্প লুকিয়ে আছে কিনা সেটার খোঁজ নেবার সময় কারোরই নেই এই “অকারণে মন খারাপ সমিতি” এর প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা। বলতে গেলে অকারণে মন খারাপ করাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য! এরা দিনভর হাসে, কথা বলে, ফ্লার্টিং করে, আড্ডা দেয় আর রাতে টিউশনি করে এসে কোনো কারণ ছাড়াই বাসায় গাল ফুলিয়ে মন ভুলিয়ে বসে থাকে বড়ো খারাপ হয় এই ছেলেমেয়েগুলো, বড়ো স্বার্থপর হয়।
এরা শুধু অন্যের ছেলেমেয়ে পড়িয়ে তাদের মন ভুলিয়ে মাস শেষে কিছু টাকা আদায় করতেই ব্যস্ত থাকে এরা মা বাবাকে সময় দেয়না, ভাই বোনকে স্নেহ করেনা, প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, মা বাবার প্রতি তো এদের কোনো টানই নেই বলা চলে! হ্যাঁ ঠিকই তো, সারাদিন সবার সাথে বাইরে হেসেখেলে চলা ছেলেমেয়েগুলো বাসায় ফিরলেই কেনো এমন হয়ে যায়? কেনোই বা ভার্সিটি বা কলেজ যাবার সময় এদের মুখ ফ্যাকাশে দেখা যায়?
এই ছেলেমেয়েগুলোক রাতে মা বাবার সাথে একসাথে বসে খায় না, এরা একটা সময় পর মা বাবার কাছে কিছু চায় না মা বাবা ভাবেন, “আমার ছেলেটা/মেয়েটা আমাকে আর ভালোবাসে না, এখন নিজের মতো চলতে শিখে গেছে কিন্তু এই ছেলেমেয়েগুলোরও একটা গল্প আছে। এদের বন্ধুবান্ধব থাকে, কিন্তু কখনোই কোনো বন্ধুর জন্মদিন বা কোনো বন্ধুর ভাই বোন বা আত্মীয় স্বজনের বিয়ে কোনোকিছুতেই যায়না এরা সংকোচে ভোগে, জন্মদিনে কি শুধু খেতে যাবে? কিছু না দিয়েই? বিয়েতে কি পরে যাবে? একজোড়া ভালো জুতো নেই এসব করতে গেলেও আবার টাকা খরচ, স্বার্থপরের মতো এরা ভাবে “সামনের মাসে চলবো কি করে? বাসায় টাকা দেবো কী করে?”
এই স্বার্থপর ছেলেমেয়েগুলোই বন্ধুসমাজে “কিপটা, নিরামিষ, ক্ষ্যাত”-সহ নানা উপাধিতে ভূষিত হয়, কিন্তু যারা এসব উপাধি দেয় তারা তো জানেনা এই ছেলেমেয়েগুলো কতোটুকু বেহায়া এদের গায়ে কোনো অপমানবোধ নেই, এরা সব শুনতে পারে, সব সহ্য করতে পারে এদের মন গণ্ডারের চামড়া দিয়ে তৈরি! এই ছেলেমেয়েগুলোই যখন নানা মানুষের কাছে প্রতারিত হয়, যখন আঘাত পায় তখন মুচকি হাসে। আবার এরাই এক শার্ট, দুই প্যান্ট আর একজোড়া জুতো দিয়ে বছর কাটিয়ে দেয়।
আবার এই ছেলেমেয়েগুলোর একটা গুণ আছে, এরা খুব করে ভালোবাসতে জানে ভালোবাসার মানুষকে শ্রদ্ধা করতে জানে, এরা ডেটিংএও যায়না, নামীদামী রেস্টুরেন্টে বসে খাবারও খায়না এরা নিজের পুরোনো ক্ষয়প্রাপ্ত ব্যাটারিওয়ালা ফোনে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখেই রাত পার করে দিতে পারে এরাই রাত বিরেতে বন্ধুদের সাথে গানের আসরে চিৎকার করে গান গায়, “দুখিনী দুঃখ করোনা ” এরাই গায়, “ওরে নীল দরিয়া ভালোবাসার মানুষগুলো এদের ফেলে চলে যায়, কিন্তু এরা কাঁদেনা।
এরা ক্যাবলার মতো ভালোবাসার মানুষের চলে যাওয়া দেখে আর রাস্তা পার হয়ে চলে আসে বাসায়। আর তার পরদিন থেকে আবার পুরনো রুটিন অনুযায়ী স্বার্থপরতার ক্লাস করে যায় তার পরও প্রতি রাতে এরা কেনো জানিনা ডুকরে কাঁদে, সেই কান্নার জল, সেই কান্নার আওয়াজের সাক্ষী হয় সেই ছোট্টো খাট সেই ছোট্টো অগোছালো রুম এই স্বার্থপর ছেলেমেয়েগুলোই হয় “অকারণে মন খারাপ সমিতি”-র কর্ণধার এ সমিতিতে সবাই ই সভাপতি আবার সবাই ই সদস্য!