আম্মু

আম্মু

আবির আদনান। এই নামের একটা ছেলে কোনো এক গ্রুপে খুব সুন্দর একটা গল্প পোষ্ট করেছিল। অনেক ভালোলেগেছিলো গল্পটা পড়ে। আমি তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেই এক্সেপ্ট করে ফেলে। আমি ওকে ইনবক্সে ‘হাই’ লিখে নক করি। উত্তরে ওর রিপ্লাই ছিলো অদ্রিজা আইমান!!! ওয়াট এ নাইস নেইম। এরপর থেকে আজ দিন পনের হতে চললো, প্রতিদিনই ওর সাথে কথা হয়। বেশির ভাগ কথা আম্মুকে নিয়েই হয়। আমিই সবসময় আগঝেচে আম্মুর কথা বলি ওকে।

– জানেন আমি ছোট থাকতে একবার কি হয়েছিলো?
– কি?
– তখন আমার বয়স সাড়ে চার বা পাঁচ ছিলো। আমার এক কাজিনের বিয়েতে গিয়েছিলাম আমরা।তখন আমি নাকি আম্মুকে বলেছিলাম আমিও বিয়ে করবো।তখন আম্মু কি করেছিলেন জানেন??
– কি করেছিলেন?
– আম্মু শপ থেকে নতুন লাল শাড়ি আনিয়ে আমাকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছিলেন।

আর যখন বলেছিলেন এখন তোকে শশুড় বাড়ি চলে যেতে হবে আমাদের সবাইকে ছেড়ে!! এ কথা শুনে আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছিলাম ‘না আম্মু তাহলে আমি বিয়ে করবো না।’ তখন সবাই হুহু করে হেসে উঠেছিলো।

– হাহাহাহা। তখন তো আপনি ছোট ছিলেন এটা মনে থাকার কথা না। তাহলে এখন বলছেন কিভাবে??
– আমি বড় হবার পর আম্মু আমায় বলেছিল এটা।
– ওহহ!! আবিরের সাথে যখনই কথা বলি তখন কেমন আছেন? কি করেন? এসব কথাবার্তার পরই আমি আম্মুর কথা বলা শুরু করে দেই। সেও বিরক্তবোধ করেনা কখনো।

– জানেন একবার আম্মু কি করেছিলো?
– কি?
– তখন আমি ক্লাস টেন এ পড়ি।

আম্মুর সাথে আব্বুর ঝগড়া হচ্ছিলো। আমি, আম্মু, আব্বু তিনজনই কিচেনে দাঁড়িয়ে। আম্মুর হাতের কাছে ছিলো পানি ভর্তি গ্লাস। ঝগড়ার একপর্যায়ে আম্মু ঐ এক গ্লাস পানি আব্বুর মুখে ছোড়ে মারলেন। এরপর আমার দিকে তাকিয়েই হাসি শুরু করলেন, আমি আর আম্মু বেদম হেসে যাচ্ছি!!! আব্বুর আরো রাগ করার কথা উল্টো আমার আর আম্মুর হাসি দেখে তিনিও হেসে ফেললেন!!

– হাহাহাহা। তাই নাকি।
– হিহিহি। জ্বি।
– কেমন আছেন আপনার আম্মু।
– ভালো। আচ্ছা আপনি এতো ভালো লিখেন কি করে?
– হাহাহা। কই আর ভালো লিখি!!
– আচ্ছা মায়েরা সন্তানদের কতটা ভালবাসে বলতে পারেন?
– মা সন্তানকে কতটা ভালবাসেন সেটা কেউ কখনো বলতে পারবেনা। এটা যাষ্ট সন্তানরাই অনুভব করতে পারে।
– আপনি অনেক সুন্দর করে এক্সপ্লেইন করেন যেকোনো কিছু।
– হাহাহা,,,না এটাতো সাধারণ একটা কথা বললাম, সবাই ই জানে এটা।

– হিহিহি,,,ওহ তাইনা?
– জ্বি তাই।
– আমি আজ অনেকদিন পর একটা কানের দুল পড়েছি দেখবেন?
– অবশ্যই! অবশ্যই! দেখান।
– তার আগে কানের দুলটা কিভাবে পেয়েছি সেটা শুনুন।
– আচ্ছা বলুন।
– আম্মু বানিয়ে দিয়েছিলেন।
– ওহ তাই?

– জ্বি, প্রায় ১০ বছর আগে বানিয়ে দিয়েছিলেন। এখনো আমার কাছে আছে এটা।
– দেখান তাহলে। আবিরকে দেখানোর পর সে জিজ্ঞেস করেছিলো…
– এটা অনেক স্পেশাল আপনার কাছে তাইনা?
– হিহিহি,,,জ্বি আম্মু বানিয়ে দিয়েছিলেন তাই।
– আপনার আম্মু অনেক লাকি আপনার মতো একটা আম্মু পাগল মেয়ে পেয়েছেন।
– হিহিহি,,,প্রতিটা সন্তানই আম্মু পাগল হয়!!
– হাহাহা,,, তাও ঠিক।

ফোনের ডাটা অন করতেই দেখি আবিরের অনেকগুলা মেসেজ!! কোথায় ছিলাম সারাদিন? অনলাইনে আসিনি কেন ইত্যাদি!! বললাম…

– এমনিই আসিনি। আপনার কি অবস্থা?
– ভালোই। ডিনার করেছেন?
– জ্বি। আপনি?
– জ্বি।
– মিস করেছেন বুঝি আমায় সারাদিন?
– তাতো একটু করেছি।
– ও আচ্ছা!!
– জ্বি। আজ আম্মুর কথা বলবেন না?
– না, ইচ্ছে করছেনা আজ।
– কেন? প্রতিদিনই তো বলেন!!
– আজকে কতো তারিখ?
– ২৫ অক্টোবর।

প্রায় ৩/৪ মিনিট সময় লাগলো লিখতে! ৩/৪ মিনিট সময় নিয়ে লেখলাম “আজ থেকে ঠিক ৪ বছর আগে এই দিনে আম্মু মারা যান!” লেখাটা সেন্ড করেই ফোন সুইচড অফ করে দিলাম। আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে! আমি এখন ঘুমাবো। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে গত তিন বছর থেকে এই দিনে ঠিক এই সময়টায় আমার প্রচণ্ড ঘুম পায়। আর ঘুমানোর পরই স্বপ্নে দেখি..আমি আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি আর আম্মু আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত