মেয়েটার নাম মরিয়ম, অনেক গরিব ঘরে তার জন্ম। বাবা ছিলেন দিনে আনে দিনে খায় এমন , তার বাবা কোনো কারনে কাজ করতে না পারলে মাঝে মাঝে তাদের না খেয়ে থাকতে হতো । ওরা তিন ভাই বোন, ভাই সবার বড় মরিয়ম মেজো আর সবার ছোট তার বোন।
তার বড় ভাই বিয়ের আগে কাজ করে সংসারে কিছু টাকা দিতো । কিন্তু তার বিয়ের পর সে সংসারে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়, সে তার সংসার আর বউ কে নিয়ে থাকতো। বাবা মা কে দেখতো না। তার ভাইয়ের বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। উনার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার হয়। মরিয়মের বাবা কাজ করে যে টাকা পেতো তাতে তার মা এর চিকিৎসা সংসারের খরচ হতো না। তাই সংসারের হাল মরিয়ম কে ধরতে হয় মরিহয় তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখন সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে মানুষের বাসায় কাজ করা শুরু করে।কাজ করে যা পেতো এতে তখন তাদের সংসার কোন রকম চলে যেতে।
এর চার বছর পর মরিয়মের বিয়ে হয়ে যায়, বিয়ে হবার সময় কথা হয় ২০ হাজার টাকা যৌতুক দিবে। কিন্তু তার বাবা ১০ হাজার টাকা দিতে পারে, এরপর আর দিতে পারে নাই। তাই তার স্বামী টাকার জন্য তাকে অনেক অত্যাচার করতে থাকে।দিন যতো যেতো টাকার জন্য অত্যাচারের মাত্রা বেশি বাড়তো । সে তখন স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে
না পেরে, বিয়ের তিন মাস পরে স্বামীর বাসা থেকে বাপের বাড়ি একবারে চলে যায়, স্বামীর বাসা থেকে এসে সে তার ভাই আর ভাবিদের সাথে থাকে কিন্তু সেখানে সে ভালো ভাবে থাকতে পারেনি । সব সময় তার ভাবীর নানান কথা শুনতে হতো, আজে বাজে কথা বলতো তার ভাবী। তাই সে আবার মানুষের বাসায় কাজ করা শুরু করে।
বাসায় কাজ করার সময়, তাদের এলাকার এক মেম্বারের বাসায় কয়েকদিন কাজ করছিলো মরিয়ম ।সেখান থেকে মেম্বারের সাথে তার পরিচয়। একদিন মেম্বার তাকে ডেকে বললো, তার এক ফ্রেন্ড পরিবার সহ লেবনান থাকে। তাদের পরিবারের দেখাশুনা আর বাসায় কাজ করার মতো একটা মেয়ে খুঁজছে। আমাকে বললো পরিচিত কেও থাকলে তাকে বলার কথা, তখন আমি তোমার কথা বললাম, তুমি কি যাবে মরিয়ম ।? তখন মরিয়ম বলে,আমার কাছে ঠিক মতো খাওয়ার টাকা নাই আর বিদেশ যাবার মতো এতো টাকা আমি পাবো কোথায়। মেম্বার তখন বলে,লেবনান যেতে যতো টাকা লাগবে এখন ওরা সব খরচ দিয়ে নিয়ে যাবে তোমায় , তবে ওখানে যাওয়ার পর ভিসা আর প্লেন ভাড়া যতো টাকা যাবে সেটা তোমায় পরিশোধ করতে হবে। টাকা নিয়ে এখন তোমার চিন্তা করতে হবে না, তুমি বিদেশ যাবে কিনা তা বলো। টাকার ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে। এরপর মরিয়ম অনেক ভেবে চিন্তে বিদেশ যেতে রাজি হয়ে যায়।তার একমাস পরে সে লেবনান চলে যায়।
সে বিদেশে এসে প্রথম ভিসা আর প্লেন ভাড়ার টাকা গুলো শোধ করে। তারপর তার ছোট বোনটাকে বিয়ে দেয়।বোনটাকে বিয়ে দেওয়ার পরে সে তার বড় ভাইকে বিদেশ পাঠায়।এতে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ যায়। সব টাকা মরিয়ম নিজে দেয়। সে ভাবে ভাইয়ের কাছে এখন টাকা নেই এই জন্য হয়তো বাবা মা কে সে দেখে রাখে না। যখন ভাইয়ের কাছে টাকা হবে, ভাই তখন ঠিকই মা বাবা কে দেখে রাখবে । কিন্তু তার এই ধারনা ভুল হয়। তার ভাই বিদেশ আসার পরেও, সে বাবা মা কে দেখতো না, সে তার বউকে নিয়ে থাকতো। বউ যা বলতো সে তাই শুনতো। মরিয়ম নিজে কষ্ট করে টাকা খরচ করে তাকে বিদেশ পাঠায়, অথচে তার ভাই তাকে একটা টাকাও দিলো না। মা বাবার ছোট সংসার টা কে দেখলো না।
তার ভাই বেশিদিন বিদেশ থাকতে পারে নাই। বিদেশ আসার দুই বছর পরে তার কোম্পানি তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় । বিদেশে কি জেনো খারাপ কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে । এই জন্য কোম্পানি থেকে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । মরিয়মের জীবনে এতো কিছু হবার পরেও সে অনেকটা সুখে ছিলো, কারন তখন একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো।ছেলেটার কারনে সে তার সব দুঃখ কষ্ট ভুলো থাকতো, ছেলেটার সাথে সে তার জীবনের সব কিছু শেয়ার করতো। মরিয়ম বিদেশে আসার কয়েক বছর পরে একদিন রং নাম্বারে পরিচয় হয় ছেলেটার সাথে। পরিচয়ের পর তার সাথে বন্ধুতো হয়, বন্ধুতের পরে তার সাথে সম্পর্ক হয়। ছেলেটাও প্রবাসে থাকতো, ছেলেটা থাকতো ওমান।
তাদের সম্পর্কের যখন দুই বছর হয়, তখন ছেলেটা ওকে বললো, লেবনান থেকে ওমানে চলে আসতে ,।সে তার জন্য এখানে কাজের ব্যবস্থা করে দিবো । মরিয়ম ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসতে অনেক বিশ্বাস করতো। তাই সে হাসি খুশি রাজি হয়ে যায়। ছেলেটার জন্য মরিয়ম লেবনান থেকে বাংলাদেশে এসে পরে ছেলেটার কথা মতো ওমানে চলে যায়। ওমানে গিয়ে সেই বাসার কাজই করতো মরিয়ম ।ছেলেটা আর সে একই শহরে থাকতো।
মরিয়মের জীবনে এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও তার ভাই যদি তার বাবা মা কে দেখতো, তাহলে সে নতুন করে ঘর সংসার করার স্বপ্ন দেখতো।কিন্তু ভাই বাবা মা কে দেখে না, তাই সে ঘর সংসার করার চিন্তা ভাবনা করে না। সে জানে সে যদি তার সুখের কথা ভাবে তাহলে তার বাবা মা কে অনেক কষ্ট পেতে হবে।কারন বাবা এখন কাজ করতে পারে না বয়স হয়েছে অনেক।মা সব সময় অসুস্থ থাকেন । মা এর চিকিৎসা আর ওষুধের জন্য প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে প্রয়োজন হয়।সে যদি তাদের না দেখেন তাহলে তার মা বাবাকে চিকিৎসা না পেয়ে আর খেয়ে মরতে হবে। তাই মরিয়ম তার সুখের কথা বাদ দিয়ে, বাবা মা এর সুখের কথা ভেবে নয় বছর ধরে প্রবাসে আছে। সে বর্তমানে ওমানে আছে।