বাস স্ট্যান্ডে একদিন

বাস স্ট্যান্ডে একদিন

একদিন বাস স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো নীল। বাস স্ট্যান্ড এ একটি লোক দাড়িয়ে চিতই পিঠা,ডিম সমেত চিতই পিঠা এবং শুধু সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছিলো।আসে পাশে অনেক দোকান আছে। নীলের ফ্রেন্ডস রা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা পিঠা খাবে।যেই ভাবা সেই কাজ। লোকটিকে পিঠা দিতে বলা হলো।লোকটি পিঠা দিচ্ছিলো।নীল এবং তার ফ্রেন্ডস মিলে গল্প করছিলো আর পিঠা খাচ্ছিলো।যদিও এই পিঠে বিক্রেতা নীল এর পরিচিত।প্রায়শই বাসায় ফেরার পথে এই লোকটির থেকে পিঠা খায় নীল।মাঝে মাঝে লোকটি গল্পও জুড়ে দিতো নীলের সাথে।

অনেক লোক ভিড় করে ছিলো,যে রাস্তায় দাড়িয়ে পিঠা বানিয়ে পরিবেশন করছে তার আশে পাশ জুড়ে।তার একটি মাত্র ভ্যান গাড়ি যাতে করে পিঠা বানানোর জিনিস গুলো নিয়ে এখান থেকে সেখানে ঘুড়ে বেড়ান তিনি।লোকটির নাম রহিম মিয়া। বয়স ৩৫-৪০ এর মতো।মুখে দাড়ি,মাথায় টুপি দেখতে শুনতে ভালোই,নামায রোজাও করেন সময় মতো।একদিন সন্ধ্যায় নীল বাস এর জন্য বসে ছিলো তার ভ্যানের সামনে রাখা একটু বেঞ্চ এর উপর।রহিম মিয়া নীলকে বলে নামাযে চলে যায়।আর এইজন্যই নীল এর খুব ভালো লাগে রহিম মিয়া কে।

আজও সন্ধ্যার একটু আগে নীল বাস স্ট্যান্ড চলে এসেছে তবে আজ সাথে কিছু বন্ধুও আছে। খাবার এবং গল্প চলছিলো হটাৎ নীল এর চোখ পরে যায় দূরে কান্না করতে থাকা একটি ছোট্ট ছেলের দিকে।নীল মনযোগ দিলো ছেলেটির কান্নার কারন জানার জন্য।ছেলেটি ময়লা যুক্ত একটা হাফ প্যান্ট পরে আছে ,দেখতে রোগা মতো চেহারা।কিছুক্ষন এর মধ্যেই ছেলেটি কান্না করতে করতে রহিম মিয়ার কাছে চলে এসেছে। যদিও এখন কান্না কিছুটা থেমে গিয়েছে।ছেলেটির হাতে দেখা গেলো দশ টাকার একটি নোট। ছেলেটির পিছনে পিছনে একটি মহিলা এবং তার হাত ধরে হাটতে থাকা পিচ্চি একটা মেয়ে। নীল কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থাকার পর আবার আড্ডায় যোগ দিলো তবে তার মন এখন ছোট ছেলেটির দিকে।মহিলা এবং বাচ্চা ছেলেটির কথোপকথন শুনে নীল বুঝে উঠতে পারছিলো যে এইটিই হলো ঐ ছেলেটির মা এবং মা এর হাত ধরে হাটতে থাকা পিচ্চি মেয়েটি ছেলেটির বোন।নীল সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললো…

>আন্টি ও কান্না করছে কেনো?
>কি আর হরমু বাবা? কান্দোন তো লাগবেই।
>কেনো? কি হয়েছে?
>দশ টা টাকা আছিলো।চাইছিলাম একটি ডিম কিনুম আর বাড়ি যাইয়া সবাই একলগে ভাত খামু।আর পোলাডায় এহন পিডা খাইবার চায়।
>ওহ আচ্ছা।

নীল এর আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না।নীল বুঝতে পারলো খুবই হতদরিদ্র তারা। ছেলেটির সামান্য পিঠা খাবার ইচ্ছে পূরন করতে পারেনা।ছেলেটির মা এর কথা ছেলেটি শুনতে পেয়েছিলো।তবে তারপর ও ছেলেটি অনেক আশা নিয়ে রহিম মিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করলো এইটা কত,ঐটা কত।এভাবে জিজ্ঞেস করার পর,পিঠার দাম শুনে ছেলেটির মুখ মলিন হয়ে গেলো।কিছুক্ষন আনমনে তাকিয়ে ছিলো পিঠার দিকে।পরক্ষনেই কিছু না ভেবে টাকাটি তার মা এর দিকে বাড়িয়ে দিলো।মা টাকাটি নিয়ে ছেলেটিকে অন্য দিন পিঠা খাওয়াবে বলে আশা দিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এই পুরো ঘটনা দেখে নীল আর থাকতে পারেনি।নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে দুফোটা অশ্রু গরিয়ে পরল।কিছু না ভবেই বন্ধুদের না বলেই তাদের পিছনে পিছনে দৌড় দিলো।পেয়ে গেলো ছেলেটিকে।পথ আঁকড়ে দাঁড়ালো নীল।নীল এবার কিছু বললো….

>আন্টি যদি কিছু মনে না করেন আমি কি আপনার ছেলেকে এবং মেয়েকে একটু নিয়ে যেতে পারি?
>কি কন? কই নিয়া যাইবেন আমার পোলা মাইয়ারে?
>ঐ পিঠার দোকানের সামনে পর্যন্ত,আর কোথাও না।
>ক্যান? নিবেন ক্যান?
>আপনিও আসতে পারেন আমার সাথে,কোনো সমস্যা নেই।
>আইচ্চা।

এইদিকে নীল কিছু না বলে যাওয়ার জন্য নীল এর ফ্রেন্ড রাব্বি ও নীলের পিছনে পিছনে এসেছে এবং এই পুরো ঘটনা দেখলো। নীল রহিম মিয়ার কাছে তিনজন কে এনে তাদের পিঠে দিতে বললো এবং রাব্বি কে চুপিসারে বললো কিছু ডিম কিনে আনতে।রাব্বি ডিম আনতে চলে গেলো। কিছুক্ষন পরই রহিম মিয়া গরম গরম পিঠা দিলো ওদের।খুশিতে ছেলেটি এবং তার ছোট বোন খাওয়া শুরু করে দিলো কিন্তু ছেলেটির মা পিঠা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।তার চোখ বেয়েও এখন পানি পরছে।তাকিয়ে আছে নীল এর দিকে।নীল কিছু বলতে পারেনি।তাকিয়ে আছে ছেলেটির মা এর দিকে এবং পিচ্চি বাচ্চা দুটোর দিকে। এর মধ্যেই রাব্বি চলে আসছে এবং তার হাতে ডিম।নীল রাব্বির হাত থেকে ডিম গুলো নিয়ে ছেলেটির মা এর হাতে দিয়ে বললো…..

>এটা রাখুন আন্টি।
>এইগুলা ক্যান করতে গেলা বাবা?
>কিছুই তো করলাম না আন্টি
>যা করছো এইডাই অনেক কিছু এই গরিবেগো কাছে।
>আন্টি গরিব বলবেন না কখনো।এতে বাচ্চাগুলোর মন ছোট হয়ে যাবে।
>বাবা তোমাগো এই ঋন কখনো শোধ করতে পারুম না।
>কিছু করতে হবেনা শুধু আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
>দোয়া তো করুমই বাবা।আচ্ছা বাবা আজ যাই তাইলে।
>ঠিক আছে আন্টি। নাম কি ওদের??
>আমার পোলার নাম মুহিত আর মাইয়াডার নাম মিরা।তয় গেলাম বাবা।
>সাবধানে যাবেন।

এতক্ষনে বাস চলে গিয়েছিলো নীল এবং রাব্বি কে না নিয়েই।নীল এর ফ্রেন্ডসরাও নীল এবং রাব্বি এর কাছে বলে গিয়েছে।আজ তারাতারি বাসায় ফেরা হলোনা নীলের,হলোনা ফ্রেন্ডসদের সাথে কিছু সময় কাটানো। কিন্তু, নীল সেটা নিয়ে চিন্তা করছে না একটুও।নীল ভাবছে আজ কারো মুখে কিছু সময়ের জন্য হাসি ফুটাতে পেরেছে এর থেকে বেশি কি বা হতে পারে।সে সময় কাটিয়েছে কিছু ভালো মানুষের সাথে। খুশি করতে পেরেছে তাদের।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত