তাড়াহুড়ো করে বাসায় এসে ভাইয়াকে বললাম,
— ভাইয়া, তোমার বাইকের চাবিটা একটু দাও তো। ভাইয়া তখন ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভিতে খেলা দেখছে। টিভির দিকে তাকিয়ে থেকেই ভাইয়া বললো,
-কোথাও যাবি না কি? আমি বললাম,
— হে ভাইয়া। সব বন্ধুরা মিলে একটু ঘুরতে যাবো।
আজ যেহেতু ইন্ডিয়ার ক্রিকেট খেলা আর তুমি যেহেতু ইন্ডিয়ার দালাল সেহেতু তুমি তো মনে হয় না আজ আর বাহিরে যাবে। তাই ঘন্টা দুই ঘন্টার জন্য তোমার বাইকটা আমাকে দাও এই বার ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে রেগে গিয়ে বললো,
– আমি ইন্ডিয়ার দালাল হলে তুই পাকিস্তানের রাজাকার। তুইও তো পাকিস্তান সাপোর্ট করিস। তোর ভাবীর থেকে বাইকের চাবি নিয়ে এই মুহূর্তে বাসা থেকে যা। তা না হলে তোর সাথে আমার ঝামেলা হয়ে যাবে আমি হাসতে হাসতে ভাবীর কাছে গেলাম চাবিটা আনতে। আড়াল থেকে খেয়াল করলাম ভাবী বাইকের চাবিটা তাড়াতাড়ি বিছানার তোশকের নিচে লুকিয়ে ফেলেছে। আমি ভাবীকে বললাম,
— ভাবী, বাইকের চাবিটা দেন তো। ভাবী এদিক ওদিক কতক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে বললো,
~চাবিটা তো এইখানেই ছিলো।
কি জানি তোমার ভাইয়া কোথায় যে রেখে দিয়েছে আল্লাহ জানে। আমি আর ভাবীকে বলি নি যে, চাবিটা তো আপনি নিজেই বিছানার তোশকের নিচে রেখেছেন। বললে হয়তো উনি বলে বসবে, আজকাল কি তুমি আমার বিছানার নিচের খবরও রাখো না কি একটু পর শুনি ভাবী ভাইয়াকে বলছে,
~ ছোট ভাই চাইলেই বাইকের চাবি দিয়ে দাও। মনে নেই কয়েকদিন আগে বাইকে দাগ ফেলে দিয়েছিলো। ভাইয়ের টাকার বাইক তো তাই চালানোর সময় হুঁশ থাকে না। নিজের টাকা দিয়ে কিনলে ঠিকিই হুঁশ থাকতো। ভাইয়া ভাবীর কথা শুনে কিছুই বললো না। শুধু বললো,
– এখন সামনে থেকে যাও খেলা দেখছি মা মনে হয় আমার মন খারাপটা বুঝতে পেরেছিলো। আমার পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বললো, আজকাল বাইকে খুব এক্সিডেন্ট হয়। তোর বাইকে যাওয়ার কোন দরকার নেই কয়েকদিন পর দেখলাম ভাইয়ার গাড়ির হেডলাইট ভাঙা। ভাবীর ছোট ভাই এক্সিডেন্ট করে ভাইয়ার গাড়ির হেডলাইট ভেঙে ফেলেছে। ভাবী তখন তার ছোট ভাইকে সমানে বলছে,
~ গাড়ি ভেঙেছে কোন সমস্যা নেই। তোর দুলভাই কালকেই ঠিক করে ফেলবে। তোর কিছু হয় নি তো? ভাইয়া তখন ভাবীর ভাইকে বললো,
– এক্সিডেন্ট হলো কিভাবে? ভাবী তখন চিৎকার করে বললো,
~ এক্সিডেন্ট কি বলে হয় না কি? এক্সিডেন্ট তো হতেই পারে। আর গাড়ির কি এমন ক্ষতি হয়েছে? হেডলাইটটা শুধু ভেঙেছে। ভাবীর কথা শুনে ভাইয়া আর কিছু বললো না। ভাইয়া অফিসে যাওয়ার আগে আমার রুমে এসে ১ হাজার টাকা দিয়ে বললো,
– কিছু কাঁচাবাজার লাগবে কিনে নিয়ে আসিস তো। এমন সময় ভাবী এসে বললো,
~পিয়াস, বাজার করার সময় কোনটা কত টাকা নিয়েছে একটু লিখে নিয়ে এসো তো। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ঠিক আছে ভাবী এটা বলেছে যেন আমি টাকা সরালে সেটা যেন উনি বুঝতে পারে। এই কথা শুনার পরেও ভাইয়া নিরব রইলো প্রতি মাসের ৩ তারিখে ভাইয়া আমাকে ২ হাজার টাকা দেয় আমার হাত খরচের জন্য। অথচ এইমাসে যখন দিতে গেলো তখন ভাবী ভাইয়াকে বললো,
~ তোমার ভাই সবে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ওকে এই বয়সের হাত খরচের জন্য এতটাকা দিতে হয় কেন? ৫০০ দিলেই তো হয়। আমি ভাবীর কথা শুনে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— ভাবী ঠিকিই বলেছে। আমার এত টাকার দরকার নেই। আগের মাসে যে টাকা গুলো দিয়েছিলে সেগুলোই আছে। এই মাসে আর লাগবে না রাতে সবাই মিলে যখন খাচ্ছি তখন ভাবী বললো,
~সংসারের এত মানুষের রান্না করতে করতে আমার আর ভালো লাগে না। ভাবীর কথা শুনে মা হেসে বললো,
– এত জন কই? আমরা তো মাত্র চারজন। তোমার শ্বশুররা ছিলো ৫ ভাই আর ৪ বোন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিলো মোট ১৫ জন। আমি তিন বেলা এই ১৫ জন সদস্যের রান্না করতাম একা। তখন কিন্তু তোমাদের মত রাইস কুকার, প্রেসার কুকার এইসব কিছুই ছিলো না। মাটির চুলায় রান্না করতাম। মার কথা গুলো ভাবীর হয়তো সহ্য হয় নি। উনি খাবার টেবিল থেকে উঠে বললো,
~ কাল থেকে আমি দুইজনের বেশি রান্না করতে পারবো না। এইকথা বলে ভাবী চলে গেলো। ভাইয়া তখনো নিশ্চুপ। ভাবী যে আলাদা হবার ইঙ্গিত দিয়ে গেলো সেটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম পরদিন সকালে ভাইয়া মাকে এসে বললো,
– মা, রোহীকে(ভাবী) বিয়ে করার সময় ওর মা বাবাকে কথা দিয়েছিলাম রোহীকে কখনো কষ্ট দিবো না। তাছাড়া আমাদেরও ভবিষ্যৎ আছে। রোহী আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমি ওকে কষ্ট দিতে পারবো। তাই আমি আলাদা ফ্ল্যাটে ওর সাথে থাকবো। এইবার আমি ভাইয়াকে কিছু বলতে যাবো তখন ভাইয়া আমাকে থামিয়ে দিয়ে ভাবীকে বললো,
– তুমি যেমন আমার অর্ধাঙ্গিনী তেমনি আমার মা আমার গর্ভধারিণী। আমি আমার মাকেও কষ্ট দিতে পারবো না। তাই আমার ৩টা শর্ত আছে। ভাবী অবাক হয়ে বললো,
~ কি শর্ত? ভাইয়া তখন বললো,
– প্রথম শর্ত, সপ্তাহে ৩ দিন তোমার সাথে থাকলে ৩ দিন আমি আমার মার কাছে থাকবো।
আর বাকি রইলো ১টা দিন। সেই ছুটির দিনটা আমি আমার ছোট ভাইকে সময় দিবো। ঐ দিন দুইভাই মিলে আগের মত ঘুরবো, মহল্লায় ক্রিকেট খেলবো, ইন্ডিয়া পাকিস্তানের খেলা দিয়ে দুই ভাই তর্ক করবো দ্বিতীয় শর্ত তোমার ভাই বোনকে আমি যত টাকা দিবো তার ডাবল আমি আমার ছোট ভাইকে দিবো রোহী, আমার ছোট ভাই যদি বাইকে একটু দাগ ফেলে দেয় তাহলে তোমার সহ্য হয় না। আর তোমার ছোট ভাই আমার গাড়ি ভেঙে নিয়ে আসলেও আমি কিছু বলতে পারি না।
আমার ভাইকে ১ হাজার টাকা দিয়ে বাজারে পাঠালে সেই টাকার হিসাব এসে তোমাকে দিতে হয়। অথচ আমার চোখের আড়ালে তুমি তোমার ভাইকে হাজার হাজার টাকা দাও অথচ সেই হিসাব আমাকে কখনোই দাও না। দুই হাজার টাকা হাত খরচ আমার ভাইয়ের জন্য বেশি হয়ে গেছে অথচ ক্লাস নাইনে পড়ে তোমার বোনকে সেদিন আমি ১২ হাজার টাকা দিয়ে কানের দুল বানিয়ে দিলাম। তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করেছি দেখে তুমি প্রতিনিয়ত আমার মা ভাইকে অপমান করবে আর আমি সেটা সহ্য করবো তা আর হবে না।
আমার তৃতীয় শর্ত হলো, এর পর থাকে আমার মা ভাইকে অপমান করলে আমি তোমার দুইগালে দুইটা কষে থাপ্পড় মারবো। এই ৩টা শর্ত মানতে পারলে তবেই বাপের বাড়ি থেকে এসো তা না হলে আমার বাসায় আসার আর দরকার নেই। এখন বাপের বাড়ি গিয়ে চিন্তা করো কি সিদ্ধান্ত নিবে ভাবী বাপের বাড়ি চলে গেছে। আমি রুমে বসে কান্না করছি আর ভাবছি আমি আমার বড়ভাইকে মনে মনে কত কি বলেছি। এমন সময় ভাইয়া এসে বললো,
-কি রে, পাকিস্থানের রাজাকার। তোদের তো অস্ট্রেলিয়া একের পর এক বাঁশ দিচ্ছে আমি চোখের জল মুছতে মুছতে ভাইয়াকে বললাম,
— আরে ইন্ডিয়ার দালাল, তোমাদের তো ইংল্যান্ড শুধু বাঁশ না বাঁশের বাগান সহ দিচ্ছে..