মশা’র সাথে বন্ধুত্ব

মশা’র সাথে বন্ধুত্ব

বেশ অনেকটা সময় ধরেই সিগারেটের শলাকা ঠোঁটের কোনায় আটকে আছে। বারবার ধরানোর কথা মনে করলেও আর ধরানো হচ্ছে না। গল্পের কাহিনী ঠিক এমন একটা জায়গায়, লিখে শেষ না করা পর্যন্ত অন্য কোন দিকে আর মন দিতে ইচ্ছে করছে না।

শীতের রাত গুলোতে লিখালিখিটা বেশ জমে উঠে। গায়ে চাদর প্যাঁচিয়ে গরম চায়ের কাপে চুমক দিয়ে কষে দু’টান সিগারেটের ধোঁয়া যেন নিয়ে আসে গল্পের নতুনত্ব। আমি একমনে লিখে যাচ্ছি। হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেনও দুইটা মশা হাতের উপর বসে রীতিমত কামড়ানো শুরু করে দিলো। বেশ কয়েকবার মারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গেলাম। কয়েল দানিতে তাকিয়ে দেখি কয়েলটা জ্বলতে জ্বলতে কখন জানি শেষ হয়ে গেছে। যাহ! মনোযোগটাই হারিয়ে গেলো।

মশা দুইটার অতিরিক্ত বিরক্তির কারনে লিখা বন্ধ করে এক পর্যায়ে টেবিলের উপর হাতটা ফেলে রাখলাম। আয় এবার! এদের না মারা পর্যন্ত শান্তি নাই। বেশ কিছু সময় ধরে হাতের উপরে বসে রক্ত খাচ্ছে। আমি আক্রমন করার জন্য প্রস্তুত। যদি সম্ভব হয় দুইটাকেই এক সাথে মেরে ফেলবো। কিন্তু না তা আর হলো না। থাপ্পরে একটাই মরেছে। আঙ্গুল টোকায় হাতের উপর থেকে মরা মশাটাকে টেবিলের উপর ফেলে দিলাম। আর একটাকে খুঁজতে লাগলাম। আশেপাশে তার কোন দেখা নাই। ওইটা মনে হয় ভয়েই পালিয়ে গেছে। গুনগুন করা বিশ্রী রকমের গানটাও এখন আর কানে বাজতেছে না। বিরক্তি মাথায় নিয়ে আবার লিখতে শুরু করলাম। বেশ ভালই লিখা আগাছে। লিখতে লিখতে হঠাৎ করেই মরা মশাটার দিকে চোখ আটকে গেল। মশাটা মরে আছে ঠিকই কিন্তু তার পাশেই ওই মশা বসে আছে। আমি কয়েকবার হাত দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু বারবার উড়ে এসে সেই মরা মশার পাশেই এসে বসছে। আমি এমন ঘটনা আগে কখনও দেখিনি। বেশ চিন্তিত হয়ে গেলাম।

যেই মশাটাকে মেরেছি হয়তো এই মাশাটা তার আত্মীয় স্বজন হবে। না হয় পাড়া প্রতিবেশী। আবার প্রেমিক প্রেমিকাও হতে পারে। বেচারা মশা শোকে একে বারে পাথর হয়ে আছে। হয়ত পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করছে। এক সাথে দু’জন মিলে উড়ে ঘুড়ে বেড়ানোর কথা কিংবা মানুষের কানের কাছে এসে গান শোনানোর কথা। রক্ত খেয়ে খুশি মনে উড়ে যাওয়া। কত কিছুই তো হতে পারে। কেন যেন বড্ড মায়া লাগছে মশাটার জন্য। হয়ত সে তার আপন কাউকে হারিয়ে ফেলেছে। তা না হলে এতো সময় ধরে মরা মশাটার পাশে সে নিশ্চয়ই বসে থাকতো না। এ দিকে ঘরের ভিতর আবার বেশ কিছু মশার আগমন ঘটেছে। কয়েল না জ্বালিয়ে আর কোন উপায় দেখছি না। আমি নিচু হয়ে কয়েল এর পেকেট থেকে কয়েল বের করতে শুরু করলাম।

এইটা কি কয়েল ? ও রে! আপনি কথা বলতে পারেন ? জী পারি। বাহ! দারুন তো। কয়েলটার নাম জানা নাই। তবে কোন চায়না একটা কোম্পানির। আচ্ছা। আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি ? জী, করুন। আপনি ওই মরা মশাটার পাশে বসে ছিলেন কেনও ? ওই মশাটা কি আপনার কিছু হয় ? জী, ও আমার বন্ধু ছিল। একমাত্র বন্ধু। আমি তো ওইটাকে মেরে ফেলেছি।

জী। এমন কি আপনি আমার পরিবারের সবাইকেই মেরে ফেলেছেন। এই কয়েলটা অনেক খারাপ। এর ধোঁয়ায় আমার পরিবার সহ বাকি সবাই মারা গিয়েছে। আমি আর আমার বন্ধু অনেক কষ্টে আপনার চাদর এর নিচে লুকিয়ে বেঁচে ছিলাম। প্রতিশোধ নিতে আপনাকে কামড় দিয়ে রক্ত খাচ্ছিলাম। সবই তো বুজলাম। আসলে আমার কাউকে মারার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আপনাদের হাত থেকে রক্ষা পেতেই কয়েলটা জ্বালিয়ে ছিলাম। আমি দুঃখিত। না ঠিক আছে। তবে আমার আর কেউ রইলও না।

মশা প্রতিশোধ নিতে আক্রমন করে এইটা আমার জানা ছিল না। তাদের মাঝে বন্ধুত্ব প্রেম, পারিবারিক বন্ধন থাকতে পারে এটাও আমার জানার বাহিরে ছিল। কেন যেন খুব আফসোস হচ্ছে। নিজেকে একজন খুনি মনে হচ্ছে। এই মশাদের ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা থাকলে হয়তো তার বন্ধুকে হত্যার দায়ে আমার ফাঁসি অথবা জেল হতে পারতো। আর পুরো পরিবার হত্যার দায়ে কি হতো সে কথা না হয় বাদই দিলাম।

আচ্ছা, আমি কি আপনার জন্য কিছু করতে পারি! আসলে আমার বেপারটার জন্য খুব খারাপ লাগছে। আপনি আমার বন্ধু হবেন ? আপনার বন্ধু! মানে মশার বন্ধু হব আমি ? জী হবেন, যদি আপনার আপত্তি না থাকে। নাহ, আমার আপত্তি নাই। ঠিক আছে আজ থেকে আমিই আপনার বন্ধু।

সেই থেকে আমাদের ভাল একটা বন্ধুত্ব হলো। সে সকল মশাকে এই বাড়িতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে। আমার বন্ধু মশাটি ছাড়া বাড়িতে এখন আর কোন মশা নেই। আর কোন মশাও আমাকে কামড়ায় না। মশা বন্ধুটি বেশ ভাল। আমি যখন লিখতে বসি সে আমার হাতের উপর বসে থাকে। তবে কামড় দেয় না। লিখার কোন বানান ভুল হলে সাথে সাথেই ধরিয়ে দেয়। সে যে শুধুমাত্র আমার ভাল একজন বন্ধু তা কিন্তু নয়। সে আমার ভাল একজন পাঠকও। আমার লিখা যে কোন গল্প পড়েই মন্তব্য করতে কিন্তু সে দেরি করে না।

আপনারও মশার সাথে বন্ধুত্ব করুন। দেখবেন মশা আর আপনাদের কামড়াবে না। কোন নিশ্চুপ রাতে আপনাদের কানের কাছে খুব বেশি কিছু হলে একটু গানই শুনিয়ে যাবে। যেমন আমি রোজ রাতে তার একটু একটু গান শুনি। তবে বেশি শুনতে পারি না। পুরোন অভ্যাস তো, মশার গান শুনলেই হাত উঠে যায় মারার জন্য। কিন্তু বন্ধু কি আর মেরে ফেলা যায় বলুন!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত