অপেক্ষা

অপেক্ষা

এই মুহুর্তে আমি হাসপাতালের এক কেবিনে বসা। না, আমি অসুস্থ না তবে আমার পছন্দের মানুষটি অজ্ঞান হয়ে আছে। আমার সামনে অজ্ঞান হয়ে থাকা অপরূপ এই সুন্দরী মেয়েটির নাম নুসরাত। তার অজ্ঞান হওয়ার ঘটনাটা জানতে হলে আপনাদেরকে তো প্রথমে বলতে হয় কিভাবে নুসরাতেরর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। গত দুই ঘন্টা যাবত এখানে বসে আছি তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায়। আরো কতক্ষণ থাকতে হবে জানা নেই। তাই এখন গল্পটা বলা ছাড়া তেমন কোন কাজও নেই আমার হাতে। চলুন, গল্পটা শোনা যাক।

নুসরাতের সাথে আমার পরিচয় এফবিতে। তখন আমি প্রথম এফবিতে একাউন্ট খুলেছি। এমনি এক সময় হঠাৎ একদিন আমার ওয়ালে এক মেয়ের ছবি আসল। নাম নুসরাত খান। দেখতে অসাধারণ এই মেয়ে। প্রোফাইল পিকে লাইক দেড় হাজার, কমেন্টস কয়েকশ। আর কমেন্টে যে কী লেখা তা তো সবারই জানা। নুসরাতের ফলোয়ার ছিল তিন হাজারেরও বেশি, এটা এক বছর আগের কথা এখন অবশ্য সাত হাজার। যাইহোক নুসরাতের প্রোফাইল দেখতে গিয়ে কখন যে Add friend বাটনে চাপ পড়েছে বলতে পারব না। পরের দিন দেখি তিন হাজার চারশো একুশজন মানুষের ভীড়ে আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছে সে।

যথারীতি আমি একজন সুস্থ ধারার এফবি ইউজার। অতিরিক্ত লাইক, কমেন্ট আমার পছন্দ না। এগুলোকে আমি এফবি দূষণ মনে করি। বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণের সাথে সথে এফবি দূষণের ব্যাপারে আমি সচেতন নাগরিক!
তাই নুসরাতের ফ্রেন্ড হয়েও আমি তার কোনকিছুতে লাইক,কমেন্ট করতাম না। কিছুদিন পর সে আমাকে একদিন নক করে:

– হাই।
– হাই।
– ভাল আছেন?
– জ্বী।
– এটা কি ফেইক আইডি?
– জ্বী না। কেন বলুন তো?
– আইডিতে কোন ছবি নেই, তেমন পোষ্ট নেই তাই।
– জ্বী, প্রয়োজনবোধ করি নি তাই দেই নি।
– আপনি কি প্রয়াজন ছাড়া কোন কাজ করেন না?
– করি তো!
– তাহলে একটা ছবি দেন
– দুঃখিত।
– আপনি কি এমনই?

– জ্বী, আমি একটু এমনই।
– তাহলে একটু বলেন আপনি কেমন?
– আমিও অবশ্য ঠিক জানি না আমি কেমন।
– নিজেকে রহস্যজনক করে রাখতে ভাল লাগে নাকি?
– রহস্যজনক না। তবে নিজের সম্পর্কে আগ বাড়িয়ে বলি না।
– আচ্ছা, তাহলে আমাকে আপনার সম্পর্কে কিছু বলেন তো শুনি।
– কী বলব? কী জানতে চান?

– নির্দিষ্ট করলাম না। দেখি নিজ সম্পর্কে কী বলেন।
– তাহলে তো সেই আগ বাড়িয়ে কথার মতোই হল।
– হা হা হা। একটা কথা বলব?
– জ্বী, বলুন।
– আমি কি তোমাকে তুমি করে বলতে পারি?
– কেন?
– এফবিতে দেওয়া বার্থ ডে অনুযায়ী আমি তোমার সমবয়সী। আর সমবয়সী কাউকে আপনি করে বলতে ভালো লাগে না।
– আচ্ছা, বলবেন।

এভাবেই আমাদের মাঝে প্রথম কথা-বার্তা হয়। এরপর থেকে নিয়মিত সে আমার সাথে এফবিতে কথা বলতো। আমি অবাক হতাম। হাজারো মানুষের ভীড়ে সে আমাকেই বা কেন সময় দেয়। তো আমিও তার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। প্রতিদিন কথা বলতাম। নুসরাতের সাথে কথা না বললে কেমন জানি লাগতো আমার। মনে হতো কী জানি একটা আমি মিস করছি। তার মেসেজটা পেলে যেন আমার অপেক্ষার অবসান ঘটতো। ধীরে ধীরে তার প্রতি আমার অনুভূতি গাঢ় হতে থাকল। আমি বুঝতে পারলাম নুসরাতই সেই মানবী যার অপেক্ষায় এতো বছর যাবত আমি ছিলাম। মূলত আমাদের পরিবারের সবার প্রতি নুসরাতের আগ্রহ-ভালবাসা আমার ভিতর এই সুপ্ত অনুভূতি জাগ্রত করেছে।

যেহেতু আমি একটু ভিন্ন টাইপের। তাই আমি আমার মনের কথাটা জানাতে চাইলেও বলতে পারতাম না তাকে। প্রত্যোকবার শুরু করতে যেয়েও থেমে যেতাম। অন্য কথা বলে পাশ কাটাতাম। নুসরাত সম্ভবত বিষয়টা বুঝতে পারে তাই সে একদিন নিজের থেকেই বলে, “মাহদী! আমার মনে হয় আমাদের দেখা করা দরকার।সব কথাই তো মেসেজে বলা যায় না! অনেক কথাই আছে যা সামনাসামনি বলতে হয়।” আমি নুসরাতে সামনে বসা ছিলাম। কিভাবে কথা শুরু করব বুঝতে পারছিলাম না। একটাই ভয় ছিল, যদি সে রাজী নাহয় তাহলে আমাদের বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাবে না তো?

– নুসরাত তুমি তো আমার পরিবার সম্পর্কে সবই জানো।
– হুম। জানি তো!
– তুমি তো জানোই আমার বড়ভাই বিদেশে আছে?
– জানি।
– এটা তো জানোই আমাদের পরিবার আজ তার মাধ্যমেই চলে। আমাকে তিনিই শিক্ষিত মানুষ করে তুলছেন। তার স্বপ্নগুলো আমাকে দিয়ে পূরণ করাচ্ছেন।

– জানি মাহদী! আজ তার কারনেই তোমরা অনেক সুখে-শান্তিতে আছো। আর তুমি তোমার বড়ভাইকে অনেক অনেক ভালবাসো। তার জন্য তুমি যে কোন কিছুই করতে পারো। কিন্তু এসব কথা তো তুমিই প্রায়ই বলো। এখন বলার কারন কী?

– আসলে বলতে পারো ভাইয়ার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে প্রায়। তার কারনেই আমার বিয়েটা আটকে থাকবে মনে হচ্ছে। কবে বিয়ে করব বলতে পারি না।
– তো?
– দেখো নুসরাত! তোমার সাথে আমার এক বছরেরও বেশি দীর্ঘ পরিচয়। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম ঠিক আমার মনের মতো তুমি।
– (চুপ করে একমনে আমার কথা শুনে যাচ্ছে নুসরাত)
– তুমি আমার পরিবারের জন্য একদম সঠিক মেয়ে। এতোদিন তোমার কথা-বার্তা, চাল-চলন সবই আমি দেখেছি। আমি ছাড়াও তোমাকে আমার পরিবারও অনেক পছন্দ করেছে।

লজ্জায় নুসরাতের ফর্সা গালগুলো টমেটোর মতো কেমন লাল হয়ে আসে। সে তার চোখের দৃষ্টি আমার চোখ থেকে নিচে নামিয়ে নেয়। বুঝতে পারি এটাই সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত! আমি হাঁটু গেড়ে একটা হীরের আংটি তার সামনে ধরে চোখ বন্ধ করে একশ্বাসে বললাম-

“Will you marry my Brother?

বিশ্বাস করো তোমার চেয়ে তার জন্য ভালো আর কোন মেয়েই হতে পারে না। আমি হাজারো মেয়ের মাঝে একমাত্র তোমাকেই তার জন্য খুঁজে পেয়েছি।” তখনই আমার সামনে জোরে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পাই। চোখ খুলে দেখি নুসরাত মাটিতে পড়ে আছে। তারপর তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছি। জানি গল্পটা শুনে আমার মতো আপনারাও তো নুসরাতের উত্তরের অপেক্ষায় আছেন। চলুন, এবার একসাথে মিলে অপেক্ষা করি!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত