ফ্রেন্ডলিস্টের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে Hi দেওয়ার তিন ঘন্টা ১৯ মিনিট পর রিপ্লাই আসলো hlw। Hi এর রিপ্লাই হিসেবে Hlw হবে কিনা hello হবে তা সমস্যা না। সুন্দরী মেয়েদের সব দোষগুলো গুণের সাগর! সমস্যা হলো আমার মায়ের আকাশ -বাতাস কাপানো ডাকের কারণে মেসেজ সিন করে আর রিপ্লাই দিতে পারিনি। আবার ফিরে এসে নিশ্চিত দেখবো আমি আরেকজনের ব্লক লিস্টে চলে গেছি। আম্মার আকাশ-বাতাস কাপানো ডাকের কারণে ফোনটা রেখেই ওসাইন বোল্টের মতো দৌড় দিলাম। ছোট বড় সব কাজেই তার আমাকে ডাক দেওয়ার একই সাইরেন। আমার তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার পরও মা বললেন , ‘ কতক্ষন ধরে ডাকছি তোকে? সারাদিন ঐ মোবাইল টার ভিতরে কি? আমি কিছু বললাম না।
‘ মোবাইল এর ভিতরে ঢুকে পড়তে পারিস না’ ‘মা, দরজা থাকলে ঠিকই ঢুকে পড়তাম। দরজা না হলেও, জানালা হলে চালিয়ে নিতাম । যেহেতু আমি একটু চিকনা আছি। একটু কষ্ট করে হলেও ঢুকে পড়তাম।’ ‘হু, বুঝছি। পোক্ত কথা রেখে এই ছেলেটির সাথে আলাপ পর। তোর মামা পাঠিয়েছে। ছেলেটার পরিচয় আমি জানি। আমাদের পাশের বাড়ির আকবর ভাইয়ের ছেলে। অনেকদিন যাওয়া হয় না তোর নানু বাড়িতে তাই এই ছেলেটাকে তেমন করে চিনিনা হয়তো। ছোটকালে হয়তো দেখেছিলাম।’, আচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুজতে বললো মা। বাপের বাড়ির মানুষদের জন্য তার আবেগটা বেশি তা আমি অনেক আগেই খেয়াল করেছি।
সপ্তাহ খানেক আগে মা, আমার বড় মামাকে বলেছিলেন একটা কাজের ছেলে দেওয়ার জন্য। যে ঘরের বাজার-সদাই করবে আবার আমাকে সঙ্গ দিবে। কারণ এই সময়টাতে আমার একাই দিন কাটাতে হচ্ছে। পড়ালেখা শেষ। মা,বাবা দুজনই চাকরি করেন। আমি যে একা দিন কাটাই না, তাদেরকে কিভাবে বুঝাবো বলুন? আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে ৩৪৫৫ জন ফ্রেন্ড আছে। তাদের মধ্যে শুধু ১০-১২ জনের সাথে চ্যাট করার পরও আমি সময় পাই না।আমার সময় দিব্যি কেটে যায়। শুধু একটু এই সন্ধ্যা বেলাটাই যত সমস্যা। কেন একটা এক্সট্রা লোক রেখে টাকা খরচ করতে যাবো? না, এটা তারা বুঝবে না। তাড়াতাড়ি করে মামাকে ফোন করে কাজের ছেলের ব্যবস্থা করলো।
ছেলেটা শোফায় বসে আছে। বয়স ১৮-১৯ হবে। পরনে গোলাপি রঙা শার্ট আর সাদা লুঙী। আমি জিজ্ঞাস করলাম,’ নাম কি তোমার?’
ছেলেটি উত্তর দেওয়ার আগে মা বললো,’ ওর নাম মকবুল’ মকবুল নিচে তাকিয়ে মেজেতে পায়ের বুড়ো আঙুল ঘষছে। নিচে তাকিয়ে আঙুল ঘষতে ঘষতে সেও বললো,’ জ্বি, আমার নাম মকবুল। পুরা নাম মোহাম্মদ মকবুল মিয়া। আব্বা খাসি জবাই করে আমার নামের আকিকা দিয়াছিলো। সবাই খায়ছিলো। আমার বংশের কাওরে খাওয়ানো বাকি ছিল না।’ ‘লেখাপড়া কতদূর করেছো?’ ‘ ৪ ক্লাস পর্যন্ত পড়সিলাম ভাইজান। যোগ,বিয়োগ করতে পারি। আমার নিজের পুরা নাম বাংলা আর ইংরেজিতে লিখতে পারি। ক্লাস টু তে একবার প্রথম হইসিলাম, ‘ বাহবা পাওয়ার আশায় মানুষ যেভাবে তাকিয়ে তাকে, মকবুল আমার আর মায়ের দিকে তাকাচ্ছে।
আমি কিছু না বললেও মা বললো,’ দেখেছিস ছেলেটা আসলেই অনেক বুদ্ধিমান। আরো অনেক কিছু পারে। তোর সময় অনেক ভালো কাটবে।’ মায়ের কথায় উৎসাহ পেয়ে মকবুল বলা শুরু করলো, ‘জ্বি খালাম্মা। আমি আসলেই অনেক বুদ্ধিমান। আমি অনেক কিছু পারি। আস্তে আস্তে সব দেখবার পারবেন। রান্না বান্না সব পারি। এলাকার বিয়া-শাদি হইলে আমি থাকিতাম বাবুর্চি’ আমি বললাম,’ তোমার কোন বুদ্ধি আমার লাগবেনা। তুমি শুধু সন্ধ্যা বেলায় আমার সাথে সময় কাটাবে। গল্পগুজব করবে। এই সময়টায় আমার একটু প্রবলেম।’ ‘সমস্যা নাই ভাইজান। আমি চব্বিশ ঘন্টায়ই আপনার লগে লগে থাকুম। আইজাকা থাইকা আমি আপনার বডি
-গার্ড।’
‘হু।’ ‘তাছাড়া আপনারে নতুন নতুন পদের খাবার বানাইয়া খাওয়ামু। একবার খাইবেন তো জিব্বায় হের স্বাদ লাইগা থাকবো। আমি ৭ রকমের চা বানাইতে পারি। কিছুদিন চায়ের দোকানে কাজ করসিলাম তো। যতদিন ঐ চায়ের দোকানে কাজ করসিলাম। ততদিন চায়ের কাস্টমারের লাইন লাইগা থাকতো,আমার হাতের বানানো চা খাওয়ার জন্য। ‘, বললো মকবুল। ‘আচ্ছা বানিয়ে দিও তো একবার।’ ‘আমি অনেক সুন্দর সুন্দর গল্পও জানি ভাইজান। আমার দাদীর কাছ থাইকা শোনা। রাজা-রাণীর গল্প, ভূতের গল্প আরো কত কি!’ অস্থির হয়ে বললাম আমি,’ না না! ভূতের গল্প আমি শুনবো না। ‘
‘কেন ভাইজান?’ ‘ভূত আমি ভয় পাই। সন্ধ্যা বেলা এই ভূতের ভয়ের কারণেই একা থাকতে ভয় করে। ভুলেও ভূতের গল্প বলবা না।’ তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো মকবুল,’কি কন ভাইজান? ভূত ভয় পাওয়ার কি আছে?’ ‘ তুমি ভূত বিশ্বাস করো?’ ‘না, ভাইজান। ‘তাহলে ভূতের গল্প বলবা কেন? ‘ যে দেখতে তার বিশ্বাস। আমি দেখি নাই তাই আমার বিশ্বাস নাই। মজা লাগে তাই বলি আর কি। আপনি না শুনতে চাইলে সমস্যা নাই। আপনার জন্য অন্য গল্প বলবো। ভূতের গল্প শোনার জন্য লাগে শক্ত হ্রদয়। কলিজা টা লাগে বড়। ‘
‘হু বুঝেছি। যেদিন আমার হ্রদয় শক্ত হবে আর কলিজা বড় হবে সেদিনই বলিস তোর ভূতের গল্প। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন দু কাপ চা বানিয়ে আন। তোরর এক কাপ আর আমার এক কাপ। ‘ মকবুল দু কাপ চা বানিয়ে এনে বললো,’ ঘরে আদা নাই। শুধু লেবু আছে। আমি চাইছিলাম আপনারে আমার স্পেশাল আদাবুটি খাওয়াইতাম। কিন্তু শালা আদা টা নাই।’, মুখ টা অদ্ভুদ ভঙ্গি করে বললো মকবুল। ‘আদাবুটি মানে কি? আদা আর লেবুর চা? ‘ ‘জ্বি, ভাইজান। আমি আমার স্পেশাল চা গুলার নাম রাখসিলাম। গুড়ের চায়ের নাম দিসিলাম ক্ষার-টি। ভাইজান
ম্যাংগো-টি খাইসেন কখনো? ‘
‘ম্যাংগো-টি মানে আমের চা? এইটাও হয় নাকি? ‘
‘কেন হইবে না? এই চা টা খাওয়ার লাইগা দূর-দূরান্ত থাইকা মানুষ আইতো।সকালে যারা সিরিয়াল ধরতো তারা দুপুরে চা পাইতো। ‘ ‘তাই নাকি? আচ্ছা বানিয়ে দিও একদিন। এখন তো আর আমের সময় না। যখন আমের সিজন হবে তখন বানিয়ে দিও।’ পরদিন সন্ধ্যা। মকবুল তার স্পেশাল আদাবুটি বানাতে গিয়েছে রান্নাঘরে। কারণ আজকে আদা পাওয়া গিয়েছে। নিজের হাতে নতুন আদা বাচাই করে কিনে এনেছে। নতুন আদার চা নাকি বেশি ভালো হবে। মামা ফোন দিয়েছে। তাকে অনেক ধন্যবাদ দেওয়ার বাকি আমার তরফ থেকে। কারণ মকবুলের মতো এত কাজের ছেলে আর আন্তরিক ছেলে দেওয়ার জন্য। ফোন রিসিভ করেই বললাম,’ থাংকু মামা।’
‘কিরে এত খুশি কেন? আবার থ্যাংকস দিচ্ছিস। ব্যাপার কি?’ ‘খুশি হবো না কেন? তোমাকে আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ। মকবুলের মতো ভালো একটা কাজের ছেলে পাঠানোর জন্য।’ অবাক হওয়ার সুরে মামা বললো,’ মকবুল!’ ‘হ্যা, মকবুলই তো ওর নাম। তুমি পাঠিয়েছো আমাদের এখানে!’, দ্বিগুন বিষ্ময়ে বললাম আমি। ‘এটা কি করে সম্ভব? আমি মকবুল কে পাঠিয়েছি ঠিকই। কিন্তু মকবুল তো কাল যাওয়ার পথে বাস এক্সিডেন্টে মারা গেছে। একটু আগে ওর জানাজার নামাজ পরে দাফন কাফন করে আসলাম। তুই ঠিক বলছিস তো? দেখ তোর মনে হয় কিছুতে ভুল হচ্ছে। তুই চেহারা,পোশাকের বর্ণনা দে তো ওর।’
আমি কাপা কাপা গলায় মকবুলের বর্ণনা দিলাম। আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো যখন মামা বললো,’সবকিছুই তো ওর সাথে মিলেছে। তবে তোদের এখানে এ কোন মকবুল। আর একটু আগে কাকে দাফন দিয়ে আসলাম?’
আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। মকবুল আমার রুমে ঢুকছে দু কাপ চা নিয়ে । ভয়ে আমার মাথা দিয়ে আগুনের মতো গরম হাওয়া বেরুচ্ছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমার ভিতর টা চিৎ করে উঠলো যখন মকবুল বললো, ‘ভাইজান আপনার জন্য আমার স্পেশাল আদাবুটি। আর আমার জন্য আনছি ব্লাডটি। ব্লাডটি মানে বুঝছেন তো? রক্ত-চা। হে হে হে। খাবেন নাকি। বানাইয়া আনবো এক কাপ?’