আধুনিক যুগের মেয়েরা স্বামীকে আহ্লাদ করে জানু মানু,কানু, কদু, মদু কত কি বলে ডাকে, আর আমার বউ আমাকে ডাকে দুলাভাই। দুলাভাই ডাকটা পৃথিবীর সেরা মধুর রোমান্টিক ডাক, যেটা ডাকার অধিকার শুধু মাত্র শালীকাদের। কিন্তু আমার বউ নিজেকে আমার শালীকাই ভাবে আর দুলাভাই বলে ডাকে। ইভেন আমার ভবিষ্যৎ ছেলে মেয়েদেরকে সে নাকি আমাকে খালু ডাকতে শিখাবে। এই সব দুঃখে আমি রোজ মনে মনে ছয় সাত বার পাহাড় থেকে নিচে ঝাপ দেই।
ভেবে ছিলাম পরে ঠিক হয়ে যাবে, জানু মানু, কদু, মদু না ডাকুক, হ্যা গো, ওগো এসব তো অন্তত বলবে। তাও যদি না হয় তবে আমার নাম ধরে তো ডাকবে! আমার নাম তিতাস,মোটামোটি খারাপ নয় নিশ্চই? কিন্তু সে আমাকে দুলাভাই বলে ডাকে। অপরিচিত কোনো মানুষের সামনে যখন দুলাভাই ডাকে তখন আমার বউয়ের গদোগদো ভাব দেখে মানুষ আমার দিকে আড় চোখে তাকায়। শপিংমলের সেলসম্যানরা তো হা করে তাকিয়ে থাকে। ওরা হয়ত মনে মনে ভাবে কত চরিত্রহীন দুলাভাই হলে শালীকাকে এত কিছু কিনে দিতে পারে। সেদিন আমার একটা স্টাপ বলছিল-“তিতাস সাহেব কপাল করে একটা শালীকা পেয়েছেন আপনি”
আমি-“মানে ঠিক বুঝলাম না”
সে-“আপনাকে ফোনে না পেয়ে অফিসের ল্যান্ড ফোনে ফোন দিয়ে ছিল আপনার শালীকা। সে কি তার টেনশন আপনার জন্য!”
উনার কথা শুনে আমি চেপে গেলাম। সাহসই পেলাম না যে জিজ্ঞেস করি সে ফোনে কি বলে ছিল। কি করে উনাকে বুঝাবো যে ওটা আমার শালীকা নয় আমার আপন বউ! আর কোনো ভাবেই ঐ ল্যাং চন্ডী পাগলীকেও বোঝাতে পারিনী যে এটা আমার চরিত্রের প্রশ্ন। ওর একটাই কথা হলো, দুলাভাই ডাক শুনতে হবে সেই শর্তেই বিয়ে হয়েছে। অগত্যা আড়াই বছর ধরে নিজের বউয়ের দুলাভাই হয়েই জীবণ অতিবাহিত করছি। কি মরতে যে ঐ গ্রামে গেছিলাম মেয়ে দেখতে সেই দুঃখে মনে হয় থানায় গিয়ে বলি- “হাবিলদার ভাই, ঢের অন্যায় করেছি মেয়ে দেখতে গিয়ে তাই আমার ফাঁসির ব্যবস্থা করুন”
তিন বছর আগে বিয়ের জন্য আমার বাবা পাগল হয়ে গেলেন। উনার পাগলামীতেই বাধ্য হয়ে মেয়ে দেখতে মামার বাড়ি যাচ্ছি। মামীর বোনের মেয়ে নাকি রূপে লক্ষী গুণে স্বরসত্বী। যদিও আমার গ্রামের মেয়ে পছন্দ নয় তবুও বাবার বায়নাতেই লক্ষী আর স্বরসত্বীকে দেখতে যাচ্ছি। পাঠকগণ আমার বাবা নিজের বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে এমন কিছু যেনো আবার ভাইবেন না।
চাকরীতে জয়েন করার পর থেকেই দিন রাত বিয়ে কর, বিয়ে কর বলে বাবা আমার কানের পর্দা ফাটানোর উপক্রম করেছে। খাইতে বসে বলে বউ আন, বসতে গেলে বলে বিয়ে কর, ঘুমাইতে গেলে ঘুম থেকে টেনে তুলে বলে, বিয়ে করবি কবে? টিভি দেখতে বসলেই বলে বউ থাকলে এখন তোকে আর আমাকে চা বানিয়ে খাওয়াতো। একদিন বাথরুমে গেছি বাইরে থেকে বাবা চিৎকার করে বললো-“তিতাস তুই এক মাসের মধ্য যদি বউ না আনিস তাহলে বাথরুমেই তোকে লক করে রাখবো। এই লক মারলাম”
আমি-“এই বাবা খবরদার না, আমি বাথরুম থেকে বেরিয়েই মেয়ে না দেখেই বিয়ে করতে যাবো তবুও তুমি এই কাজ করো না প্লীজ”
এক বছর ধরে জব এ জয়েন করেছি এর মধ্য দেড়শ মেয়ে দেখেছি কিন্তু একটাও আমার পছন্দ হয়নী। জীবণে যদি একটা প্রেম করতাম তবে এই মেয়ে পছন্দ করার প্যারা সহ্য করতে হতো না। স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই আমি কোনো মেয়ে পছন্দ করতে পারিনী। আমি যে খুব লাজুক তা কিন্তু নয়। এই এক বছর ধরে ঘটক সাহেব রোজ কোনো না কোনো পাত্রীর ছবি নিয়ে হাজির হন। যেনো আমি ঘটক সাহেবের ঘাড়ে উঠে বসে আছি। উনি আদা জল খেয়ে নেমেছেন আমাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন। ঘটকের সাথে আমার বাবার দস্তি হয়ে গেছে। রোজ রাতে ঘটক সাহেব এ বাসাতেই ডীনার করে। আর আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি ততোক্ষণ ঐ একটাই বিখ্যাত গান শুনি-“বিয়ে কর, বিয়ে কর, বিয়ে কর” যে song এর singer শয়ং আমার পিতা আর একমাত্র শ্রোতা হলো হতভাগা তিতাস।
মনের দুঃখে লক্ষী স্বরসত্বীকে দেখতে মামার বাড়ি যাচ্ছি। মামার বাড়ীতে যেতে একটা নদী পার হতে হয়। নৌকো থেকে নামতেই দেখলাম এক দল বালিকা দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওরা সবাই যেনো আমার জন্যই অপেক্ষা করছে। ওদের মধ্যে দুটো আমার মামাত বোনও আছে। আমি ওদের পাশ দিয়ে হেটে যেতেই একটা মেয়ে আমাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিলো। আমি পড়ে গিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকলাম। নিজেকে কিছুটা মফিজ মনে হলো। ল্যাং মেরে মেয়েটা অট্ট হাসিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ফেলছে। ওর হাসি দেখে আমি রাগে মুগ্ধ হতে ভুলে গেলাম। আমি উঠে দাড়াতেই সে বললো-
-“কার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে, অবনি তার শক্তি যাচাই করবে না?”
বলেই সে আবার হাসতে শুরু করলো। এই মেয়ে যদি বিয়ের পাত্রী হয় তবে লক্ষী স্বরসত্বী বাদ দিয়ে একে কালি চন্ডী বলা উচিত। গায়ের রঙ কালো নয় কিন্তু আচরণটা ঐ টাইপেরই। আর এমন মেয়েকে আমি বিয়ে করলে এই মেয়ে সারাটা জীবণই আমাকে ল্যাং মারবে এটা আমি শিওর। তাই বিয়ে ক্যান্সিল। মনে হলো এখান থেকেই ঢাকা ফিরে যাই কিন্তু মামা মামী কষ্ট পাবে তাই আর ফিরে যাওয়া হলো না।
রাতে খাবার টেবিলে ঐ মেয়েটা আমাকে খাবার তুলে দিচ্ছে। আমি বেশ আতঙ্কে আছি কখন আবার সে আমার শক্তি পরীক্ষা নেয়। সবার সামনে নিলে তো মহাবিপদ। কিন্তু নাহ সে বেশ শান্ত লক্ষী রূপ ধারণ করে আছে। বাহ্ দেখে মনেই হচ্ছে না যে, সে বিকেলে আমাকে ল্যাং মেরে ছিল। এখন তো লক্ষীই মনে হচ্ছে। এখন ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী তাহলে বিয়ে করাই যায়। কিন্তু বিকেলে গায়ের রঙটা একটু কম ফর্সা মানে শ্যামলা মনে হচ্ছিল আর বাম গালে একটা তিল ছিল দেখে ছিলাম। এখন তো ডান বাম কোনো গালেই তিল দেখছি না! হয়ত সারা দিন বাহিরে ঘুরে ধুলো ময়লাতে কালচে দেখা যাচ্ছিল বোধ হয় আর ঐটা বোধ হয় তিল নয় পোকা টোকা গালে পড়ে ছিল মনে হয়। কিন্তু সে আবার বহুরূপী পাগলী টাইপের নয় তো? হয়ত মাথায় গন্ডগোল আছে! তাহলে বিয়ে ক্যান্সিল।
খাওয়া শেষে মেয়েটা লাজুক স্বরে বললো-“রান্নাটা কেমন হয়েছে?” আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম ওর গলার স্বর শুনে। বিকেলে গলার স্বরটা ঝাঁঝালো ছিল কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে গলা দিয়ে স্বর বেরুতে কষ্ট হচ্ছে। আমি তো এমনিতে লাজুক নই তবে লাজুক স্বরেই আমিও উত্তর দিলাম-“খুব ভালো” সে একটা লাজুক হাসি দিয়ে চলে গেলো। বাব্বাহ্ মেয়েটা আবার লজ্জাও পায় দেখছি! বাহিরে গেলে কি তবে লজ্জা গুলো বাড়ি রেখে যায় নাকি?
রাতে ঘুম ঘুম ভাব আসতেই মেয়েটা রুমে ঢুকে আমার গায়ে থেকে কাঁথাটা টান দিয়ে সরিয়ে দিল।আমি তো চমকে উঠে লাফ দিয়ে বসে পড়লাম। আমার গায়ে শার্ট নেই বলে খুব লজ্জাও লাগছিল। আগে যদি জানতাম যে মাঝ রাতে আমার গায়ের কাঁথা ধরে টানাটানি হবে তাহলে শার্ট পরেই ঘুমাতাম। এই রে আবার বাম গালে পোকা দেখছি, মনে তো হচ্ছে ওটা পোকা নয় তিল। আর গায়ের রঙও শ্যামলা দেখছি। খাবার সময় তাহলে নিশ্চই মেকআপ করে ছিল আমাকে দেখানোর জন্য! মেয়েটা হি হি করে হেসে
বললো-“ল্যাং মারার জন্য দুঃখিত, আসলে ওটা আমার স্বভাবের দোষ”
আমি-“এমন স্বভাব এর আগে কখনোই দেখিনী।”
সে-“এখন তো সারা জীবণ আপনাকে মাঝে মধ্যেই দেখতে হবে।”
বলেই সে হিহি করে হেসে চলে গেলো। এই রে, এই মেয়ে তো ভেবেই নিয়েছে যে, আমার সাথে ওর বিয়ে হবে। তাই মাঝে মধ্যে ল্যাং মারার প্রস্তুতিও নিচ্ছে মনে হয়। এ রকম হলে বিয়ে ক্যান্সিল। আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। এই মেয়ের আচরণ একাক বার একাক রকমের। আবার চেহারাটাও দেখছি একটু ভিন্ন। এই বয়সেই চোখে কম দেখছি নাকি? আমি ঠিক বুঝেই উঠতে পারছি না যে এই মেয়েটা লক্ষী নাকি চন্ডী। তবে তার এই চাঞ্চল্যতা আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছে বলে মনে হচ্ছে, তেমনই একটা সিগন্যাল পাচ্ছি। ভোর বেলা মেয়েটা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে হাটতে বেরুলো। এখন আবার তিল নেই ফর্সা দেখাচ্ছে।তাহলে বোধ হয় মেকআপ করার কারণে তিল ঢেকে গেছে।
কেমন লাজুক লাজুক ভঙ্গিমায় মাথা নিচু করে আমার পাশে হাটছে। একটা কথাও বলছে না। এত লাজুক বউ হলে জীবণটা পানসে হয়ে যাবে। বিয়ের পর দু একটা রোমান্টিক কথা বললে সে তো লজ্জায় গড়াগড়ি খাবে। আর রোমান্টিক কার্যকলাপ করলে এই মেয়ে যে লজ্জায় সুইসাইড করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওর ঐ কালিচন্ডী রূপটাই বোধ হয় বেটার। মাঝে মাঝে ল্যাং মারলেও জীবণটা হাসি খুশিময় হবে। কিন্তু কখনো লক্ষী কখনো চন্ডী হলে তো বিপদ। আমি নিরবতা ভেঙে বললাম-“আপনার নাম কি?” সে লাজুক স্বরে বললো-“শ্রাবণী” কিন্তু ল্যাং মারার সময় তো বলে ছিল অবনি! এখন বলছে শ্রাবণী তখন মনে হয় ভুল শুনে ছিলাম।
আমি-“আমার নাম জিজ্ঞেস করবেন না?” সে লাজুক স্বরে বললো-“জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করছে”
আমি-“আমার নাম তিতাস”
আমার নাম শুনে সে ওরনা এমন করে মাথায় টেনে ঢাকলো যে, মনে হলো সে আবার এক বস্তা লজ্জা পেলো।
মনে মনে বললাম, এত এত লজ্জা কই থাইক্যা আমদানী করো লজ্জাবতী? কিন্তু এই কথা যদি ওকে বলি তাহলে এখানেই সে লজ্জায় ধুপধাপ পড়বে সেটা আমি শিওর। এই মেয়েটাকে বিয়ে করলে আমার জীবণটা বিটিভি হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু চন্ডী রূপে তো আবার ডর লাগে। ধুর বিয়েই করবো না।
হাটা হাটি শেষ করে বাড়ি ফিরতেই দেখি একই রকম দেখতে আরেকটা মেয়ে সামনে দাড়িয়ে হাসছে। আমার পাশে দাড়ানো মেয়েটা যদি বিয়ের পাত্রী হয় তাহলে সামনে দাড়ানো মেয়েটা কে? আমি কি তবে ভুল দেখছি নাকি? তবে সামনে দাড়ানো মেয়েটা সেই শ্যামলা তিল ওয়ালী। বুঝলাম কাল থেকে দুটো মেয়েকে আমি এক জন ভেবেছি আবার দ্বিতীয়বার মফিজ হলাম। পরে মামাত বোনের থেকে শুনে সব ক্লিয়ার হয়ে গেলো। শ্রাবণী আর অবনি দুই বোন। শ্রাবণীর এক বছরের ছোট হলো অবনি কিন্তু চেহারার এতটাই মিল যে অনেকেই জমজ ভাববে।
বিকেলে অবনির সাথে ঘুরতে গেলাম। মেয়েটা শ্রাবণীর উল্টা। এক নম্বর বাঁচাল। চাঁদ সূর্যও বোধ হয় কিছু সময় থেমে থাকে কিন্তু এই মেয়ের কথা থামে না। তাও যদি কথা গুলো একটু ম্যাচুয়্যাড কথা হতো তাহলে একটু শুনতে ভালো লাগতো। কি সব হাবি জাবি কথা বলে নিজেই হেসে হেসে আকুলী ব্যকুলী হচ্ছে। একজন লজ্জায় গড়া গড়ি খায় আরেক জন হাসিতে আকুলী ব্যকুলী খায়। কিছু দূর যেতেই সে বললো-“আপনাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেবো?”
আমি-“কেনো?”
সে-“খুব ল্যাং মারতে ইচ্ছে করছে”
আজব মেয়ে একটা! ল্যাং মারতে আবার মানুষের ইচ্ছে করে নাকি? ওর কথা শুনে অবাকের ঠ্যালায় রাগ করতেই ভুলে গেলাম।
আমি-“অবনি তুমি আমার প্রেমে পড়েছো নিশ্চই?”
সে-“এমা না, আমি এই সব পড়ি না”
আমি-“তাহলে ল্যাং কেনো মারতে চাইছো?”
সে-“ল্যাং এর সাথে প্রেমে পড়ার কি সম্পর্ক?”
আমি-“সম্পর্ক আছে তুমি সেটা জানো না”
সে-“ধুর্ আপনি তো আমার দুলাভাই হবেন আমি কেনো আপনার প্রেমে পড়তে যাবো দুলাভাই?”
দুলাভাই হলো পৃথিবীর সেরা মধুর ডাক কিন্তু অবনির মুখে দুলাভাই শুনে মনে হলো আমার কানে বিস্ফোড়ন হলো। পৃথিবীর সব ছেলেই বিয়ের আগে দুলাভাই ডাকটাতে খুব দূর্বল হয়। কিন্তু এই মেয়ের মুখে দুলাভাই ডাক শুনে সামনে বয়ে চলা নদীতে আমার ঝাপ দিতে মন চাইছে।
আমি-“আচ্ছা আমি যদি শ্রাবণীকে বিয়ে না করে তোমাকে বিয়ে করি তাহলে কেমন হবে?” সে হিহি করে হেসে বললো-“খুব জঘণ্য হবে” ওর কথা শুনে আমি অপমান বোধ করলাম। এভাবে মুখের উপর এর আগে কেউ আমাকে জঘন্য বলেনী। আমি তো দেখতে খুব একটা খারাপ নই তাহলে জঘণ্য কেনো হবো সেটাই বুঝলাম না। তরতাজা অপমানিত হয়েও জিজ্ঞেস করলাম
-“কেনো?”
সে-“আপনাকে আমার দুলাভাই দুলাভাই মনে হয়, কখনোই আপনাকে আমার স্বামী মনে হবে না তাই”
ধুর্ আজব মেয়ে একটা! একে প্রেম বুঝানো আর চোরকে ধর্মের কাহিণী শোনানো সেম কেস। বিয়ে ক্যান্সিল।
বিয়েই করবো না ডিসাইড করলাম। আর ঐ ন্যাকা লজ্জাবতী শ্রাবণীকে বিয়ে করার চেয়ে বিয়ে না করাই বেটার। আমার ঢাকায় ফিরার সময় হলো। দুই দিন ওদের সাথে হৈ হৈ করে বেশ কাটলো। ছুটি শেষ আমাকে ফিরতেই হবে। বিদায়ের আগে মামী আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করলো আমার শ্রাবণীকে পছন্দ হয়েছে কি না। আমি কি করে বলবো যে, আমার শ্রাবণীকে নয় ঐ ল্যাং চন্ডী অবনিকে পছন্দ হয়েছে!
দারুণ রকমের দ্বিধায় পড়ে গেছি। এদিকে অবনির এতটাই ছেলে মানুষী হাব ভাব যে, আমি শিওর সে আমাকে ঐ রকম কিছু ভাবেইনী। ওকে এসব বলতেও লজ্জা করছে। যদি বলি তোমার বোনকে নয় তোমাকে পছন্দ হয়েছে তাহলে নির্ঘাত সে আমাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেবে। মামীকে বললাম পরে জানাবো। ঢাকায় ফিরে এসে বাবাকে বললাম শ্রাবণীকে নয় অবনিকে পছন্দ হয়েছে। বিয়ে করলে অবনিকেই করবো না হলে বিয়ে বাদ। এই প্রথম বাবাকে ফাঁদে ফেলতে পেরে খুব শান্তি লাগছে। এক বছর ধরে আমাকে বিয়ে বিয়ে বলে জ্বালিয়ে মারছে। এখন ঠ্যালা সামলাও!
বেকায়দায় পড়ে বাবাই মামীকে ফোন করে সব জানিয়ে দিল। বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে কোনো বাবা মা-ই চাইবে না। ওরা প্রথমে রাজী না হলেও পরে রাজী হলো। কিন্তু অবনি নাকি কিছুতেই রাজী নয়। তারপর ওকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজী করানো হয়েছে তবে শর্ত একটাই সে আমাকে দুলাভাই ডাকবে। আমি ওর শর্তে রাজী হলাম ভেবে ছিলাম বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু শ্রাবণীর জন্য খুব খারাপ লাগছিল। সে কারণেই শ্রাবণীর বিয়ের জন্য ছয় মাস অপেক্ষা করার পর আমার আর অবনির বিয়ে হলো। বাসর রাতে আমি রুমে ঢুকতেই সে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নিচে নেমে দাড়িয়ে বললো
-“এই দুলাভাই আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেনো? প্রথম থেকেই আপনাকে আমার দুলাভাই দুলাভাই লাগে সেটা তো বলেই ছিলাম তবুও কেনো বিয়ে করলে?” বাসর রাতে বরকে সালাম না করে দুলাভাই ডাকসহ উদ্ভট কথা শোনার সৌভাগ্য নিয়ে বোধ হয় আমি একাই পৃথিবীতে এসেছি।
আমি-“এখন তো তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাই আর দুলাভাই ডেকো না প্লীজ”
সে-“দুলাভাই ডাকবো সেই শর্তেই বিয়েতে রাজী হয়েছি তাই সারা জীবণ দুলাভাই-ই ডাকবো”
আমি-“লোকে শুনলে কি ভাববে”
সে-“যা ইচ্ছা ভাবুকগে, আর আপনার আরেকটা শাস্তি হলো আমার ছেলে মেয়েরা আপনাকে খালু ডাকবে হিহি”
আমি-“আজব তো! এসব কি ধরনের পাগলামী?”
সে-“পাগলামী নয় punishment”
আজীবণ মেয়াদী এই দুলাভাই নামক punishment এর আড়াই বছর কেটে গেছে, জানি না আমি এই punishment সহ আর কত বছর বাঁচবো!