এক.
তখন আমার একুশ বছর আর তার আটাশ। আমি ভিনদেশের একটি হাসপাতালের বেডে বসেছিলাম। তিনি এলেন চেকআপ করতে। তিনি পিছন থেকে আমার টনসিল পরীক্ষা করছিলেন। তার এই নির্দোষ স্পর্শে আমার ভেতরে কি যেন হয়ে গেল। তোলপাড়। বিবশতায় শরীর বোধশূন্য হয়ে গেল। তার ফর্সা লম্বা আঙুল আমার শরীর ছুঁচ্ছিল আর আমি শিহরিত হচ্ছিলাম। তিনি আমায় গুটিকয়েক প্রশ্ন করলেন হিন্দিতে, আমি কাঁপা স্বরে জবাব দিলাম হিন্দি আর ইংরেজি মিশিয়ে। তার ভরাট গলার স্বর ওয়ার্ডে গম গম করে উঠলো। উত্তর দিতে দিতে অকারণে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।
ছয়ফুটের উপর লম্বা। টকটকে ফর্সা গায়ের রং। আর্মিদের মতো ছোট করে ছাঁটা চুল। পরনে ফর্মাল পোষাক।পায়ে কালো চকচকে জুতা। মুখে রুক্ষতার ছাপ। চলার ছন্দে চোখের চাহনিতে প্রবল আত্মবিশ্বাস আর অহংকার। রাত দশটার পর তিনি ওয়ার্ডে ডিউটি করতেন। তিনি খুবই মনোযোগের সাথে কাজ করতেন। আমি বেডে বসে তার অপেক্ষা করতাম। তার গতিবিধি লক্ষ্য করতাম এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আই কনটাক্ট করতাম। লাজুক চোখে। তিনিও আমায় দেখতেন। নিরাসক্ত ভাবলেশহীন চোখে। দিনের বেলা আমার বিশাল পরিবারের সদস্যরা পালা করে আমার কাছে থাকেন। সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করাই। রাতে আমার সমস্ত সত্তা উন্মুখ হয়ে থাকতো তাকে এক নজর দেখার জন্য। মাঝে মাঝে তার এক বাঙ্গালী কলিগ ও বন্ধু ডাঃ অশোক আসতেন গল্প করতে। বুঝতাম তিনিই অশোককে পাঠাতেন। আমি দেখছিলাম তার চোখের মুগ্ধতা। ভীষণ ভাল লাগতো। একদিন ডিউটি শেষে কেবিনে যাবার পথে তিনি আমার বেডের পাশে এসে দাঁড়ালেন। কণ্ঠে কোমলতা আর দরদ ঢেলে বললেন: এভাবে রাত জাগা তোমার জন্য ঠিক না। তোমার তো ঘুম দরকার।
আমি ঝট করে তার হাত ধরলাম। আমার কন্ঠ থেকে ভিখারির মতো অনুনয় ঝরে পড়লো।
:আপনি আমার পাশে বসে থাকুন, তাহলে আমার ঘুম আসবে।
আমি মুখ উঁচু করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। চোখে ছিল করুণাপ্রার্থীর দৃষ্টি। ওয়ার্ডের লাইট অফ ছিল। কিন্তু কোথা থেকে একটি আলোর রেখা তার মুখ উদ্ভাসিত করছিল। আমার কথায় তিনি ভীষণভাবে চমকে উঠলেন। ভীষণ বিষন্নতায় তার মুখখানা ভরে উঠলো। তিনি মুখ নিচু করে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলেন খুব ধীরে ধীরে। মাথা নিচু করে তিনি চলে গেলেন। আত্মপ্রত্যয়ী ছেলেটিকে এক ঝটকায় আমি এত দুঃখী বানিয়ে দিলাম। তার মাথা হেঁট করে দিলাম।
ওদিকে প্রত্যাখ্যান আর অপমানের জ্বালা বুকের ভিতর আগুনের মতো অন্তরকে জ্বালাতে লাগলো। বাকী রাতটুকু আমার ঘুম হল না। সারা দিনে কোনো টেস্ট ছিল না, বাইরে যেতে হয়নি। সন্ধ্যা বেলাতেই তিনি অশোকসহ ওয়ার্ডে এলেন এবং আমার সাথে ইয়ার্কি করতে লাগলেন। তার চোখে ভালবাসা ছিল। আমি নিজের মাঝে নিজেকেই ধারন করতে পারছিলাম না। তিনি তার চোখের ভাষা লুকাতে পারতেন। সারা মন তিনি তার চোখেই সাজিয়ে রাখতেন। দিনে বহুবার তার সাথে আমার দেখা হত হাসপাতালের বিভিন্ন সেকশনে। চোখে আগ্রহ নিয়ে দেখতেন আমায়। তিনি ছিলেন ধীর-স্থির আর বুদ্ধিমান। তারপরও প্রেমে পড়ার পর তার আচরণে পরিবর্তন এলো। চঞ্চল হতে লাগলেন তিনি। আমি ভীষণভাবে ডুব দিলাম তার হৃদয়হ্রদে। অথবা তার ভালবাসার প্রবল স্রোতে ভাসতে লাগলাম। একটু চকিত চাহনি, একটু হাসি, একটু চোখের ইশারা। খোঁজ নেয়া, খেলাম কিনা স্নান করলাম কিনা। একটি একুশ বছরের একটি চঞ্চল বাচাল মুখরা জেদী আর আহল্লাদী মেয়েটির পুরা পৃথিবী পাল্টে গেল। সেই ভিনদেশের পাহাড়ে ঘেরা ঊষর শহরের একটি হাসপাতালে বসে সারা ধরিত্রীকে পায়ের নিচে মনে হতে লাগলো। হাতে অফুরন্ত সময়। তাকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। একুশ বছরের তরতাজা এক সুন্দরী তরুণীর আটাশ বছরের পুরুষকে নিয়ে নির্দোষ কল্পনা করতো না।
বেশির ভাগ সময় ওয়ার্ড খালি থাকতো। তিনি নির্দিষ্ট একটা সময়ে আমার কাছে এসে আমাকে জোর করে শুইয়ে দিয়ে তিনি আমার মাথার কাছে বসতেন। খুব বেশি সময় না। অল্প সময়ের জন্য। আমি সেই সময়টুকু আমি আর আমাতেই রইতাম না। বেশিরভাগ সময় তিনি চুপ করে বসে থাকতেন। আমি খুব সহজেই বুঝতাম তিনি লজ্জা পাচ্ছেন। বড্ড লাজুক ছিলেন আমার বব্বি। হা তার নাম বব্বি বিশ্বরূপ। তামিল ছেলে।
আমি অস্থিরতায় ভুগছিলাম। আমি তাকে এখনো মনের কথা বলতে পারিনি। রাত দশটার পর। আমি তার বিশাল টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালাম। তিনি কাজে মগ্ন ছিলেন। তিনি সর্বদা মনোযোগের সাথে কাজ করেন। তার দৃষ্টিতে গভীরতা ছিল। বরাবর তিনি সবকিছু দেখতেন, তাকাতেন না। অশোকের কাছ থেকে তার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনেছি। তার ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল– তার কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না। অন্তত গত তিন বছর ধরে। একটু চমকে আমার দিকে তাকালেন। আমি তাকে কেবিনে আসতে বললাম। আমার মাথা পুরোপুরি ফাঁকা। তিনি এলেন। বুকের ভেতরে ড্রাম বাজছিল। আমি ঝাঁপ দিলাম তার বুকের উপর। পাগোলের মতো যা বলেছি তার মর্ম বোধ হয় এই ছিল, যে তাকে আমি ভালবাসি। তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। সেই সাথে বিস্তর অস্বাভাবিক আচরণ করছিলাম যা শালীনতার সীমা পার হয়ে গিয়েছিল।
বহুকষ্টে তিনি আমায় শান্ত করলেন। এবং আমায় শক্ত করে ধরে গভীর আবেগে আমার ঠোঁটে চুমু খেলেন। জোর করে ধরে বেডে নিয়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলেন। আমি না ঘুমানো পর্যন্ত আমার হাত ধরে বসে রইলেন। ঘটনাটা ওয়ার্ডের সবাই দেখছিল।
দুইমাস ধরে বিস্তর টেস্ট। আট বৈঠক করে ডাক্তাররা এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, আমার গ্ল্যান্ডে দুটি ম্যাস ঠিকই আছে তবে তা ম্যালিগন্যান্ট নয়। এবং আমার সার্জারির দরকার নাই।
আমার পরিবার এই সংবাদে খুশিতে পাগল হবার যোগাড়। আমার চার ভাই এবং পিতা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। আমার অশিক্ষিত পিতা খুব অল্প বয়সে ব্যবসায় জুড়ে দিয়েছেন ভাইদের। ভাইয়েরা অশিক্ষিত এবং সরল। এবং সবাইকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করে দিয়েছেন। ভ্রাতৃবঁধুরাও তাদের মতোই অশিক্ষিত। পরিবারে ঐশ্বর্য আছে। কালচার নাই। ভাইদের ভেতর মিল বা অমিল কোনোটাই নাই। এরা সহজ সরল এবং বোকাও। মা যা বলবেন তা তারা বেদ বাক্যের মতো মানতেন। ভাবীরাও তাই। পরিবারের প্রতিটি সদস্য একটি ব্যাপারে একমত ছিল। তা হল আমাকে তারা উজাড় হয়ে ভালবাসতেন। আমি এই বাড়িতে শিক্ষা এনেছি, রুচি এনেছি। সামাজিক যোগাযোগ করিয়েছি। ঘরের নিন্টরিয়র ডিজাইনে আধুনিকতা এনেছি। নামকরা স্কুল কলেজ থেকে পাশ করেছি। এবং একটি নামকরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি। স্মার্ট, ট্যালেন্ট ফ্যাশন সচেতন একটি মেয়ে। সারা পরিবারের প্রাণভোমরা।
হাসপাতাল থেকে রিলিজ হবার আগের দিন দুপুরের পর। হাসপাতালের একজন স্টাফ আমায় জানালো যে বব্বি আমায় ডাকছেন। লোকটির পিছু পিছু গেলাম। একটি বন্ধ দরজার সামনে আমায় দাঁড় করিয়ে চলে গেল। আমি বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। তিনি একটি উঁচু বেঞ্চের উপর বসে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তার চোখে স্বপ্ন আর তন্ময়তা ছিল! তিনি আমায় দেখছিলেন অথবা কিছুই দেখছিলেন না।
আমি তার মুখোমুখি বসলাম। তিনি তার পরিবারের কথা বললেন। ছোট ভাই বোনদের প্রতি তার দায়িত্বের কথা বললেন। সব শেষে আমায় ভাবতে একবছর সময় দিলেন। একবছর পর তিনি এসে আমায় তার দেশে নিয়ে যাবেন।
আমি তার জন্য এই জনম অপেক্ষা করতে পারি। এ তো সামান্য কথা। বব্বি আমায় হাগ করলেন। কাহিনিটা কি একটু অস্বাভাবিক? দেশের ডায়াগনোসিস অনুযায়ী আমি একজন ক্যানসারের রোগী। ভাইদের কাছে কিছু জানতে চাইলে আবোল তাবোল বলে এবং বলতে বলতে চোখে পানি এনে ফেলে। আমার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল যে আমি আর দেশে ফিরে যাবো না। আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে ভাইয়েরা একটু বেশিই স্বাধীনচেতা করেছিলেন। এই রোগের কথা শুনে আমি একেবারেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে গিয়েছিলাম।
বব্বি খুবই বিচক্ষণ আর ভদ্র ছিলেন। তিনি আমার পরিবারকে ডিনারে নিমন্ত্রন করলেন। আমাদের সাথে সর্বদাই অশোক থাকতেন। ডিনারে আমার তিন ভাই এবং বাবা মায়ের কাছে তিনি আমাকে বিয়ে করার অনুমতি চাইলেন। আমার পরিবার ধার্মিক। তবে গোঁড়া নয়। আর তারা আমার জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিল। সেখানে অত নামকরা মেডিকেল কলেজের লেকচারার সুদর্শন একটি ছেলে তাদের জামাই হবে, এটাকে তারা সৌভাগ্যই মনে করলেন। আর আমার সাথে তার সম্পর্ক তো সারা হাসপাতালই জেনে গেছে। কারণ প্রতি সকালে তিনি আমার জন্য খাবার আর ফুল পাঠাতে শুরু করেছিলেন। অশোক দোভাষী ছিলেন। তাকেও আমি তুমি করে বলতাম। বব্বির সাথে কথা বলতে গিয়ে তার হাত ধরে আমার বোকা সোকা বাবাটা ভেউ ভেউ করে করে কাঁদতে লাগলেন আর আমার তিনজন মোটা তাজা বড় ভাই শেয়ালের মতো বাবার সাথে গলা মিলিয়ে সমস্ত পরিবেশকে হাস্যকর করে তুললেন।
আমি আর বব্বি ঘুরে বেড়াতে লাগলাম প্রজাপতির মতো। চেন্নাইয়ে গিয়ে দুহাত ভরে শপিং করতে লাগলাম। বব্বি আমার পুরা পরিবারকে উপহার কিনে দিলেন। আমি আর তিনি তার কোয়ার্টারে একাকী সময় কাটাতে লাগলাম। আমি তার মতো সংযমী পুরুষ দ্বিতীয়টি কি দেখবো? জানি না। আমি অনর্গল কথা বলতাম। তিনি ভীষণ আগ্রহ নিয়ে আমার কথা শুনতেন। কখনো নিজে থেকেই বলতেন: প্রিন্সেস, গল্প বল।
ঐ নামেই ডাকতেন তিনি আমায়।
বিদায় নেবার সময় হল। রেলস্টেশনে ট্রেনে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে তিনি আর অশোক নেমে গেলেন। যাবার আগে তিনি আমার সব মুরব্বীদের পা ছুঁতে ভুললেন না।
ভীষণ খুশি নিয়ে আমরা ঢাকা এলাম। চারিদিকে খুশির বন্যা। বাবা-মা দুহাতে দান করতে লাগলেন।
সময় খুব দ্রুত বয়ে যাচ্ছিল। ভিনদেশ থেকে প্রতিরাতে কল আসে। আমি তার সাথে ফোনে সময় কাটাই। আহা, এর চেয়ে সুন্দর জীবন আর কি হয়? কিন্তু ধীরে ধীরে আমার মাঝে কী যেন নাই হতে লাগলো। আমার কিছু লুকাতে মন চাইতে লাগলো। অবচেতন মন কিছু এড়াতে চাইছিলো।
তাকে আমি একটু একটু করে চিনলাম। কী সে? কে সে? হা, সে ছিল আমার মাঝের আমি। আমিই আমাকে এড়াতে চাইছি।
আমার ভেতর থেকে কেউ যেন বলছিলো, এ সিদ্ধান্ত ঠিক নয়।
আমি দেশের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমাকে সেই পরিবেশ ছেড়ে যেতে হবে?
আমার কাছে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই এত আবেগ এত ভালবাসা সব হাস্যকর মনে হতে লাগলো। আমি একটি ছেলের জন্য দেশ-ধর্ম-ভাষা সব ত্যাগ করবো! স্বজন ত্যাগ করবো? হাজার হাজার মাইল দূরের একটি অচেনা দেশ আমার দেশ হবে? একেশ্বরবাদী আমাকে মাথা ঠেকাতে হবে তিরুপতি তিরুমালার মন্দিরে! সর্বোপরি নিজের দেশে আসতে হবে পাসপোর্টের মাধ্যমে? আপনজন ত্যাগ করার চিন্তা আমায় অস্থির করে ফেলল। আমি পরমা সুন্দরী এক তরুণী। সাথে মেধাবী আর বুদ্ধিমতিও। পিতা অর্থশালী। না, এ সম্ভব নয়। একেবারেই নয়। আমি মনে মনে আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।
আমি পাল্টাতে শুরু করি। আমি তার ফোন ধরতে আলসেমি করি। ভাবীরা বব্বিকে নিয়ে তামাশা করতে এসে ধমক খায়। আমি ভুলে গেলাম তার ভালবাসার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চারতলা দিয়ে ঝাঁপ দিতে গিয়েছিলাম। সে কল করলে ভাবীদের ধরিয়ে দেই। অথবা তাদের দিয়ে মিথ্যা বলাই। কিন্তু তিনি কল করেন প্রতিদিনই। আমি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাবার উপায় নিয়ে ভাবতে থাকি।
একদিন এদেশ থেকে ফোন বাজলো। বব্বি এসেছেন এ দেশে। আমার বিশ্বাস ছিল আমার শিতল ব্যবহার পেয়ে তিনি আর আসবেন না। কিন্তু ছেলেটি যে প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীদের একজন! তাকে আমার পরিবার লাঞ্চে ডাকলেন। আমার বাবা ভাইয়েরা ব্যবসায়ী। তাদের ব্যবসার ভিতই হল বিশ্বাস আর ওয়াদা রক্ষা। আমি বুঝছিলাম তারা আমার মনোভাবকে সমর্থন করছেন না। কিন্তু আমি যে নিরুপায়!
তিনি এলেন। আমি সামনে বের হলাম না। লাঞ্চের পর আমার বড় ভাই তাকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। তারপরও তিনি আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন। আমি আমার ঘরে খাটে বসে রইলাম। তিনি এসে আমার পাশে এসে বসলেন। আমায় কাছে টানলেন। আমি শক্ত হয়ে রইলাম। তিনি খুব জোরে হেসে উঠলেন। ভরাট গলার সে হাসি আমার ঘরের দেয়ালে ধাক্কা খেতে লাগলো।
তিনি উঠে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। আমি কি মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলাম!
: প্রিন্সেস, এবার তবে তুমি আমায় বিয়ে করার অনুমতি দাও।
তিনি বড্ড রোমান্টিক ছিলেন। তিনি এই এক বছরে বাংলা শিখে কথাগুলি বাংলায় বললেন। সারা বাড়ি স্তব্ধ হয়ে আছে। চারটি শিশুও চুপ। আমি ভুলে গিয়েছিলাম এই প্রেমের খেলায় আমিই তাকে নামিয়েছিলাম। তার চোখে আমার জন্য ভালবাসা আমিই সৃষ্টি করেছিলাম। আমাকে স্পর্শ করতে বাধ্য করেছিলাম। অথচ আজ প্রতারণাতেও তিনিই পড়লেন। হায়রে সম্পর্ক! হায়রে মন! আমি সবই ভুলে গেলাম মাত্র এক বছরেই! তার আমার ছবিগুলি এই সম্পর্কের সাক্ষী হয়ে আছে। আমাকে তার মন দেওয়াই ভুল ছিল। আমাকে বিশ্বাস করাই তার বিরাট অপরাধ ছিল।
আমি বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। তিনি নিচে গাড়ির দরজায় হাত দিয়ে উপরের দিকে তাকালেন এবং তাকিয়েই রইলেন। সারা মুখ বেদনায় নীল হয়ে আছে। এই ছেলেটি কেন যে অন্তরের কথা লুকাতে পারে না! আমি তার বেদনাবিধুর মুখে ক্ষমাহীন দৃষ্টি দেখলাম। আমি বুঝলাম সারাটি জীবন তার জন্য আমাকে চোখের জলে ভাসতে হবে। কতক্ষণ পর জানিনা, দেখলাম তিনি চলে গিয়েছেন। আমি ধীরে ধীরে বসে পরলাম। হঠাৎ আমি নিজেকে চিনতে পারলাম।
দুই.
সময় তো বয়ে যায় বহতা নদীর মতো। আপনারা তো সেই ঘুটেকুড়ুনীর গল্পটা জানেন! আমিও একটি মহলের শাহজাদী থেকে ঘুটেকুড়ুনী বনে গেলাম মাত্র দুই বছরের মাথায়।
আমি অনার্স পাশ করলাম, এমএস করবো বাইরে থেকে মনে মনে এমন ইচ্ছা আমার। আমার দুই ফুপুর প্রচেষ্টায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বুয়েটের ট্রিপল-ই এর ছাত্র। জার্মানি থেকে এমএস করা। সুদর্শন। নামকরা এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করছে। বাবা মা দুজনই আমলা। বড় বোন দুলাভাই ডাক্তার। আমার খুবই পছন্দ হল। বিয়ের ডেট ঠিক হল। আমি ছেলেটির সাথে কথা বলি। মাঝে মাঝে বাইরে যাই। একটু আধটু ঘোরাঘুরি। ভাললাগার একটা জোয়ারকাল চলছিল। তার ভেতর একটু অস্বস্তি তৈরী করছিলেন শাবিবের মা। তার আচরণে অহংকার ছিল। সে অহংকার পয়সা বা পজিশনের জন্য ছিল না। অন্য কিছুর জন্য। তারা আমাদের কাছ থেকে আরো বিনয় আশা করেন। অথচ আমার ভাইয়েরা জন্ম বিনয়ী। বহু অবজার্ভেশনের পর বুঝলাম তারা পাত্রের পরিবার বলে আমাদের নিচু নজরে দেখছে। আমার হবু ননদের শ্বশুরবাড়ির লোকদের শাবিবরা খুবই তোয়াজ করে। এবং তাদের সামনে আমাদেরও বিনম্র থাকার উপদেশ দেন। আমার হবু শাশুড়ি আমার ফুপুদের সাথে গল্প করেন যে, মেয়েদের বাপের বাড়ির প্রপার্টি নেওয়া উচিৎ নয়। কাক অশুভ সংবাদ বহন করে। জ্বীনের আছর, ভূত প্রেত আত্মা তাবিজ ঝাড় ফুঁক – এসবে তাদের অগাধ বিশ্বাস। এবং তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বহু অলৌকিক ঘটনার চমৎকার এবং বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা দিতেন আমার হবু শাশুড়ি। বুঝলাম এরা শুধুই পোশাকে আধুনিক। মনটা দমে গেল। অথচ আমার প্রায় অশিক্ষিত ভাইয়েরা কত কুসংস্কার মুক্ত। অবশ্যই বিশ্বাস আমার খুবই শীঘ্রই ভেঙে গেল।
আমার মা কিছুটা চাপা স্বভাবের ছিলেন। কেন যেন তাকে আমার দুঃখী মনে হত। যদিও ভাইয়েরা এবং বাবা মায়ের কথায় উঠবস করতেন। তারপরও তার চোখে আমি হতাশা দেখেছি। শুধু আমি ছিলাম সম্পূর্ণ স্বাধীন। জানি না কেন যেন আমাকে তিনি কখনো কোন কাজে বাঁধা দিতেন না। বাড়িতে চারটি ছেলে শিশু। ভাইদের ছেলেরা। দাদী ভক্ত। বৌদের মনে কী ছিল জানি না। তবে তারাও মায়ের সামনে উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলতেন না। অথচ মা খুবই হাসিখুশি মহিলা। একদিন তিনি একটি কালো ব্যাগ নিয়ে আমার ঘরে এসে আমার আলমারির চাবি চাইলেন। দিলাম। তিনি ব্যাগটি আলমারিতে রেখে চাবি আমার হাতে দিয়ে চলে গেলেন।
এ বাড়িতে মা মাঝে মাঝেই বব্বির নাম বলেন মাথা উঁচু করে আমার মাথা নীচু করার জন্য। এখনো অশোকের সাথে আমার কথা হয়। আমি কখনো বব্বির কথা জানতে চাই না। অশোকও কখনো বলেনি বব্বির কথা। যদিও আমরা বব্বির কারণেই পরস্পরের বন্ধু।
এক অলস দুপুরে মায়ের কাছে শুয়েছিলাম। তিনি বললেন: জানিস পুটী, আমি স্বপ্নে দেখেছি বব্বির সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে।
আমি চুপ হয়ে যাই। রুমের নিরবতা অসহনীয় মনে হয়। বড্ড রাগ লাগে মায়ের উপর।
আমার বিয়ে ভেঙে গেল। ঠিক ভেঙে গেল বলা যায় না। হলুদের অনুষ্ঠানে আমার কপালে হলুদ ছোঁয়াতে গিয়ে জ্ঞান হারালেন আমার মা। তাকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করলেন। আমি মাতৃহন্তারক হলাম। ভাইয়েরা শোকের মাতম বইয়ে দিল বাড়িতে। প্রতিদিনই মায়ের মৃত্যুর জন্য আমাকে দোষী করে কান্নাকাটি ভাইদের। তারা একে একে বাড়ি ছেড়ে ব্যবসা আলাদা করে চলে গেলেন। বিশাল বাড়িতে আমরা শুধু দুটি মানুষ- আমি আর বাবা। কোনো রকম যোগাযোগ না করেই শাবিব বিয়ে করে ফেলল অন্যত্র। আমার ফুপুরা আমাদের বাড়ির পথ ভুলে গেলেন। তারা বরাবরই আমাদের সুখের সঙ্গী ছিলেন। দুঃসময়ে কেমন যেন ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে যান। আমি মাঝে মাঝেই ভাবি এই ঘটনাগুলি দুঃস্বপ্ন নাতো? নাকি করুণ কোন মুভি? সেই দিনগুলি সেই রাতগুলি আমার জীবনে কালি ঢেলে দিয়েছিল। ভাইয়েরা আমায় ভালবাসতেন না। আমি অপয়া। এই চব্বিশ বছর ধরে জেনে আসছিলাম এই পরিবারের সৌভাগ্য আমি। ভাইয়েরা আমায় প্রকাশ্যে ডাইনিও বলা শুরু করলেন। বাবার কাছে ফোন করে বড় ভাই বাবাকে চাপ দিতে লাগলেন তাদের কাছে চলে যাবার জন্য। বাবা এই ছমাসে দশ বছর বয়স বাড়িয়ে নিয়েছেন। ঘরবন্দী করে নিয়েছেন নিজেকে। শুধু তিনিই আমায় মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেননি। সেই হাসিখুশি গমগমে সংসারটি কোথায় হারালো? আসলেই মা আমার কারণে মারা গেছেন? আমি বব্বিকে বিয়ে করিনি, এই শোকে? এও কি সম্ভব?
মাঝে মাঝ অনেক রাতে বাবা তার ঘরে আমায় ডাকেন। আমরা দুই বাপ বেটি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ি। কেউ আসে না আমাদের সান্ত্বনা দিতে। আমরা কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে আপনিই থেমে যাই।
আমি একটা ঘটনায় হতবাক হয়ে যাই। আমার মা মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমার আলমারিতে যে ব্যাগ রেখেছিলেন, সেখানে আমার নামে ডিপিএস প্রাইমারি শেয়ার এবং জমির দলিল ছিল। সব মিলিয়ে বিশাল অংকের টাকা। মায়ের নামে যত টাকাপয়সা ছিল তার নমীনীও আমি ছিলাম। মা কেন এমন করেছিলেন? মা কি বুঝেছিলেন ভাইদের আমার প্রতি মনোভাব? হা খোদা! তুমি এ কী করলে!
একদিন কিচেনে কিছু আনতে গেছি। হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল। আমি পড়ে গেলাম। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন ফুপাতো ভাই। খবর শুনেও ভাইরা এলেন না। ডাক্তার আবার আগে যেখানে চিকিৎসা করেছি সেখানে যাবার পরামর্শ দিলেন। কেউ এলো না আমার মাথায় তার স্নেহের হাতটি রাখতে। কেউ বললেন না, ভয় নেই পুটী! তোর চারপাশে চারজন পাহারাদার আছে। তোর কিচ্ছুটি আমরা হতে দেব না।
আমি এবং সুমিত ভাইয়া একদিন দেশ ছাড়লাম সেই দেশের উদ্দেশ্যে যে দেশের একটি ছেলের মন নিয়ে আমি একদিন খেলেছিলাম।
অশোকের সাথে দেখা হল। আমার সকল দায়িত্ব অশোকের উপর দিয়ে দিল্লি চলে গেলেন আমার ফুপাতো ভাই- ডাক্তার সুমিত। তিনি তার কাজেই এসেছিলেন। আমি হোটেলে উঠলাম। অশোক এবং তার স্ত্রীর হাজার পিড়াপিড়িতেও ওদের বাসায় উঠতে রাজী হলাম না।
আবার হাসপাতালে ভর্তি হলাম। সেই ঘোরাঘুরি সেই টেস্ট। তবে এবার আর ওয়ার্ডে নয়। কেবিন পেলাম। গতবার কেবিন পাইনি। একা – আজ আমি একা। কত যে অসহায় লাগছিল নিজেকে! অশোকের কাছে আমি একটিবারও বব্বির কথা জানতে চাইনি। অপরাধবোধ আর লজ্জা আমায় আধমরা করে রেখেছিল। প্রতি সন্ধ্যায় অশোক আসে। মাঝে মাঝে তার স্ত্রীও আসেন।
আমার রোগ ডায়াগনোসিস হল। ইওরোলজিস্ট এপি পান্ডে স্পস্ট স্বরে রোগের নাম জানালেন, ফিওকেমোসাইটোমা যে নাম আমি বাংলাদেশেই শুনে এসেছি। আমার এড্রেনাল গ্ল্যান্ডে ক্যানসার, যে ক্যান্সারকে ফিওকেমোসাইটোমা নামে ডাকে ডাক্তাররা। অপরেশনের ডেট হল। দেশ থেকে বড় ভাই ভাবী এলেন। বাবাকে ফোন করি। দুজনে ফোন কানে নিয়ে চুপ করে দুজনে দুজনার বুকের ধুকধুক শব্দ শুনি। বেশিরভাগ সময়ে বোধশূন্য হয়ে বেডে বসে থাকি। চুপচাপ বসে শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করি।
সেদিন ভিজিটর আওয়ারে ভাবী কেবিনে। তাদের অন্তরে আমার রোগের কোন ছাপ পড়েনি। তারা শুধুই হাসপাতালে কর্তব্য করতে এসেছেন। হয়তো তারা মনে মনে অনেক আগেই তাদের পুটীকে কবর দিয়েছে। আমার নামে মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদ এর জন্য দায়ী নয় তো? এসব নিয়ে ভাইদের সাথে কি মায়ের কোন গোপন ঝগড়া হয়েছিল? আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
দরজায় টোকা পড়লো। ভাবী দরজা খুলে দিলেন। কেবিনে ঢুকে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবী কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। তিনি আমার হাত ধরে বেড থেকে সোফায় এনে বসালেন। তিনিও আমার পাশে বসলেন, ডা. বব্বি বিশ্বরূপ। আমি বহু দিন থেকেই কেমন যেন নির্বিকার হয়ে গেছি। কোনো কিছুতেই কিছু এসে যাচ্ছিল না। বব্বি আমায় কাছে টানলেন। আমায় জড়িয়ে ধরলেন। আমার বুকটা হাহাকার করে উঠলো। মা মারা যাবার পর যে জীবন আমি যাপন করছি সেই জীবনের নিরুপায় অবস্থার বোধ আমার মাঝে ফিরে এলো। আমি তার বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলাম। তিনি কোনো কথা না বলে চুপ করে আমার মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। বব্বির শরীর থেকে সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। তার আঙুলের নখগুলি সুন্দর করে কাটা। আমি তার মুখের দিকে একবার তাকালাম। হয়তো আমার দেখার ভুল। কিন্তু আমার মনে হল সে খুবই ক্লান্ত। যদিও তিনি আমার সব সংশয়, দ্বিধা আর লজ্জা দূর করতে চাইছেন।
একটু পরেই আমার অপারেশন শুরু হবে। একটু আগে অশোক আমায় অভয় দিয়ে চলে গেল। সে থাকবে অপারেশন থিয়েটারে। বব্বি কেবিনে। তিনি এই হাসপাতালের ডাক্তার না। তিনি এলাহাবাদ সরকারী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। বিশেষ অনুমতি নিয়ে তিনি থিয়েটারে থাকবেন। এই কয়দিন আমি তার হবু স্ত্রীর সম্মান পাচ্ছি। তিনি আমার পরিচয় এভাবেই দিচ্ছিলেন। কেবিনের সামনে ট্রলি এলো। তিনি আমার কপালে চুমু খেলেন। অস্ফুট স্বরে বললেন: কোনো ভয় নেই, আমি আছি না!
ট্রলির সাথে সাথে তিনি আসছেন। আমার বব্বি। যার তরতাজা হৃদয়ে কিছুদিন আগে আমি একটি ক্ষত করে দিয়েছি। আমার বব্বি। যে দুটি বছর আমার প্রত্যাখ্যানের জ্বালা সয়েও আবার আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এরা কি রক্ত মাংসের মানুষ?
আমার ট্রলির পিছনে তিনি আসছেন।
ব্যস! ব্যস!
এখানেই শেষ হোক আমার জীবন চলার পথ। আমি চলে যেতে চাই ঐ অজানা লোকে। শংকা আর তিক্ততার অবসান হোক। কেন যেন মনে হল আমি বব্বিকে ভালবাসিনি। হয়তো ভাললাগা ছিল। মোহমায়া ছিল। কিন্তু হয়তো তা ভালবাসা ছিল না। আমি তার সাথে যে অপরাধ করেছি, তাকি ক্ষমার যোগ্য? তিনি কি আমার প্রতি করুণা করছেন না? আমি তো ভুল বুঝতে পেরে এদেশে আসিনি। আমি তো নিরুপায় হয়ে এসেছি। অথবা নিয়তি আমাকে তার সামনে আমার মাথা নিচু করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি আর পারছি না বব্বির এই মহানুভবতা সইতে। সেদিনের সব প্রশ্ন যা তিন বছর আগে আমার মনে ঝড় তুলেছিল সে সব প্রশ্ন অমিমাংশিতই রয়ে গেল। বব্বির সামনে আমায় মাথা নিচু করে থাকতে হবে। খোদা আমায় উজাড় করে দিয়েছেন। না চাইতেই সব পেয়েছি। ছোট্ট জীবনটি সুখ আর সমৃদ্ধিতে ভরা ছিল। একেবারেই রাণীর মত ছিলাম আমি আমার ভাইদের হৃদয়ে।
এবার ফেরত দেবার পালা। এই জীবনে আর ফিরতে চাই না। সেই সুখের দিনগুলি আমার জীবনে অক্ষয় হয়ে থাক। আমি বব্বিকে মুক্তি দিতে চাই। অথবা আমিই মুক্তি চাই সেই তিন বছর আগেকার তার ক্ষমাহীন বেদনাবিধূর দৃষ্টির কবল থেকে।
এখানেই শেষ হোক এই জীবনের কাহিনি।