কাঠফাটা রোদ্দুরে দুপুরের পার্কে এখন মহাশূন্যতা– লোকজন নেই বললেই চলে। যে দু’চারজন এখানে সেখানে বসে আছে তারাও ঘেমে নেয়ে একাকার, ধুকছে শুধু। একটা দুটো কুকুর আধমরা হয়ে শুয়ে শুয়ে হাফাচ্ছে হাপরের মতো। বাদাম চিপস আইসক্রিমওয়ালারাও গাছতলায় বসে বসে কাঁধের গামছায় ঘাম মুছে নিয়ে মনে মনে গুনে দেখছে কত টাকা বিক্রি বাট্টা হলো সকাল থেকে।
এরকম দিনে– যখন দুপুরের বিশ্রামের চেয়ে সুখের কিছু নেই ঠিক তখন প্রচন্ড খরতাপের মধ্যেই পার্কের বেঞ্চিতে একজন মধ্যবয়সী পুরুষের নমুনা চুপচাপ বসে আছে। পরিপার্শ্বের প্রতি চূড়ান্ত অমোনোযোগী দৃষ্টি তার..
ক্ষণকয়েক বাদে সেই একই বেঞ্চিতে একজন নারীমূর্তি এসে বসলো– পুরুষটির সাথে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে। পুরুষটি কোন ভ্রুক্ষেপ করলো না– একবার তাকিয়ে দেখারও প্রয়োজন মনে করলো না।
রোদ তার রমরমা অবস্থাটি ধরে রেখেছে, ঘড়ির কাটাও এগিয়ে যাচ্ছে উদ্দেশ্যহীন। আমাদের পাত্র-পাত্রী, যাদের নাম আমরা এখনো জানি না তারা কিন্তু এখনো চুপচাপ বসে আছে, কেউ কারো সাথে একটা কথাও বলেনি।
সমস্ত পার্কজুড়ে রহস্যময় নিরবতা, সব যেন ঘোরের মধ্যে জেগে আছে, থেমে আছে। গাছে গাছে বন্ধচোখ পাখিদেরও সাড়া শব্দ নেই একদম।
লোকটি বসেই আছে, নারীটিও। কোন কথা নেই। স্থিরচিত্র হয়ে। যেন দেয়ালে টাঙানো কাইয়ূমের তৈলচিত্র কোন। কিন্তু আমরা তো জানি তারা কোন তৈলচিত্রের চরিত্র নন। পাখিটিকে ধন্যবাদ, কেননা সে না থাকলে স্থবির তৈলচিত্রটি থেকে আমরা আমাদের পাত্র-পাত্রিকে বের করে আনতে পারতাম না।
পাখিটি পুরুষলোকটির শাদা শার্টের কাঁধ বরাবর মলত্যাগ করেছিলো। লোকটি বিরক্ত হয়ে নোংরা পরিস্কার করার জন্য কিছু একটা খুঁজতে লাগলো। তার কোন রুমাল ছিলো না, টিস্যুপেপারও শেষ হয়ে গেছে।
মেয়েটি তার দিকে টিস্যু এগিয়ে ধরলো, লোকটি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কয়েক মূহুর্ত।
– আমি কি আপনাকে চিনি?
– না।
– আপনি আমাকে চেনেন?
– না।
– তার মানে আমরা কেউ কাউকে চিনি না!
– একদমই না।
– তাহলে আমি আপনার টিস্যু নেব কেন?
মেয়েটি উত্তর দেয় না। চুপচাপ টিস্যু ধরা হাতটি সরিয়ে নেয়।
নিরবতা নেমে আসে আবার।
– রাগ করেছেন?
– না তো!
– কেন রাগ করলেন না?
– এমনি।
– রাগ করা উচিত ছিলো…
– হয়তো বা!
আবার নৈঃশব্দ। রোদের চাকচিক্য। স্থির সময়।
– টিস্যুটা দিন।
মেয়েটি হাতব্যাগ খুলে এক চিলতে টিস্যু বের করে দেয়।
– আপনি বলেছিলেন আমরা কেউ কাউকে চিনি না…
– হুমম।
– কোনদিন দেখা হয়নি আমাদের।
– না।
– আমরা কি এখন একে অপরকে চিনি?
– সন্দেহ আছে।
– কি রকম!
– ত্রিশ বছর এক বিছানায় একই ছাদের নিচে থেকেও মানুষ চেনা যায় না।
– এমন কথাও তো আছে চেনার মতো চোখ থাকলে এক মূহুর্তই যথেষ্ট।
– সেরকম চোখ বিরল, বিলুপ্তপ্রায়।
– হবে হয়তো।
আবার চুপচাপ।
– আরেকটা টিস্যু দিবেন প্লিজ, ঘাম মুছবো।
মেয়েটি হাতব্যাগ খোলে, বন্ধ করে পরক্ষনেই।
–সরি, টিস্যু শেষ হয়ে গেছে।
– ইটস ওকে।
পুরুষ লোকটি প্রচন্ডরকম ঘেমে আছে, মেয়েটির নাকে কপালে চিবুকে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম। পুরুষটি এই প্রথম মনোযোগ দিয়ে দেখলো নারীটিকে। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘামের মুক্তারেণু ভালো লেগে যায় তার।
মেয়েটি তার নীলাভ আঁচলটি এগিয়ে দেয়।
– ইচ্ছে হলে আমার আঁচলে মুছতে পারেন।
পুরুষটির চোখে বিস্ময় ও অবিশ্বাস মিলে মিশে একাকার।
– আপনার আঁচলে!
– হুমমম।
– কিন্তু… আমরা তো কেউ কাউকে চিনি না।
– উহু… চিনি।
– একটু আগে বলেছিলেন…
– তখন চিনতাম না। এখন চিনি। আমরা। একে অপরকে।
– তাহলে আপনার সেই ত্রিশ বছরের থিওরি! এক বিছানা, এক ছাদ…
– পার্টি বদলেছি।
দু’জনেই হাসে, শব্দ করে-একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে। এবং পুরুষ লোকটি নাম না জেনেই মেয়েটির আঁচলে ঘাম মুছে নেয়। শাড়ির আঁচলে পারফিউমের ঘ্রাণ নেই। কিন্তু প্রতিটি নারীর নিজস্ব একটি ঘ্রাণ থাকে, প্রতিটি ফুলের যেমন আলাদা আলাদা সুবাস থাকে-তেমন। এই নারীটির নিজস্ব সুবাসটি তার ভাল লেগে যায়।
– আপনার নামটি জানা হয়নি এখনো।
– জেনে কি হবে?
– কিছু না।
– তাহলে…!
– না আসলে প্রতেকেরই তো একটা নাম থাকে। সেই নামে সম্বোধন করে সকলে।
– নাম নেই। গহনাগাটির সাথে সাথে নামটাও খুলে রেখে এসেছি।
– ওহহ।
পুরুষটি আহত হয়, আবার হয়ও না। সে নিজেও কি তার এত দিনের ব্যবহৃত পুরাতন ছেঁড়াফাটা নামটিকে পেছনে ফেলে আসেনি! পিছনে ফেলে আসা কোন জিনিসের সাথেই নিজেকে জুড়তে রাজি না সে।
– তাহলে আপনাকে কি বলে সম্বোধন করবো?
– সম্বোধন জরুরী কেন?
– আসলে আমরা তো একে অপরকে চিনি এখন। মানে আমাদের দাবী আমরা চিনি। তাই একে অপরকে…
পুরুষটি ইচ্ছা করেই বাক্যটি সম্পূর্ণ করে না। নারীটি এই সময়ে রহস্যময় হয়ে ওঠে আরো। তার প্রতিটি নড়াচড়া রহস্যে ঘেরা। পুরুষ লোকটি টের পায়।
আমার নাই কোন নাম নাই, ঘরবাড়ি নাই
তুমি আমার নাম রেখে দাও যা খুশি তাই…
মেয়েটি গান ধরে, ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। এই হাসি ঝর্ণার মতো নয়, জোৎস্নার মতো নয়– খুব প্রাচীন, ইতিহাসে বহুল ব্যবহৃত অথচ দূর্গম এই হাসি। যার রহস্য ভেদ করা দুষ্কর।
নাতিদীর্ঘ নীরবতার পর মেয়েটির কন্ঠ উদাসীন স্বরে বেজে ওঠে।
– আমরা কেউ কাউকে চিনি না।
– আপনি যে বললেন…
– ভুল বলেছি।
– ওহ
– একটু পরে আপনি হয়তো দক্ষিণ দিকে হেঁটে যাবেন। আমার কোন গন্তব্য নেই-এইখানে বসে থাকবো পাথরের মতো। অথবা আমিও হাঁটবো উত্তর, পূর্ব অথবা অন্য কোন দিকে। আমাদের গন্তব্য কোনভাবেই এক হবে না।
– হুমমম
– এই সম্বোধন এই ক্ষীণ সম্পর্কের ভ্রুণ এই নাম এগুলোর কোন গুরুত্ব বহন করে না সেই অর্থে।
– হয়তো বা তাই। হয়তোবা গুরুত্ব আছে কোন না কোন আমরা ধরতে পারছি না।
– হবে হয়তো।
পুরুষ লোকটির কপালে গালে মুখমন্ডলে আবারও ঘাম জমেছে। মেয়েটি নিজেই নিজের আঁচলে ঘাম মুছে দেয় এবার, আগের সেই দূরত্বটা কমে গেছে দুজনার মাঝে।
– আমি কি আপনাকে বন্ধু ভাববো?
– আপনার ইচ্ছা।
– আপনি কি আমাকে বন্ধু ভাবতে শুরু করেছেন?
– জানি না।
বাক্যালাপে বিরতি আবার। রোদ কিছুটা মিইয়ে এসেছে এখন।
– এই অসময়ে, একা, এখানে কেন এলেন?
– কোন কারণ নেই।
– আপনি? আপনি কেন এসেছেন?
– কোন কারন নেই।
– নেই? নাকি বলতে চান না।
নিরবতা…
– আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি?
– হয়তো পারেন।
– আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন?
— আমি নিশ্চিত নই এ ব্যাপারে।
পাশাপাশি বসে না থাকলে একে অপরের মুখভঙ্গি দেখতে পেত তারা, দেখলে ভাল লাগতো অবশ্যই।
– বাসায় ফিরে যাচ্ছেন না কেন। বউ বাচ্চারা দুপুরের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে হয় তো।
ছেলেটি হাসে– সে হাসিতে যন্ত্রণা লেগে আছে শিশিরের মতো।
– আমার জন্য কোথাও কেউ অপেক্ষায় নেই। আপনি ফিরে যাচ্ছেন না কেন? টুকটাক মনোমালিন্য তো সব সংসারেই হয়। ফিরে যান।
– আপনার এমন মনে হলো কেন? সংসার, মনোমালিন্য…
– অনুমান করলাম।
– ঠিক ধরেছেন।
– ফিরে যান। সব ঠিক হয়ে যাবে।
– যাবো না। আগেই বলেছি সবকিছু খুলে রেখে এসেছি, নাম পরিচয় গহনাগাটি সম্পর্কের বোঝাগুলো। সব।
– কিন্তু কেন…
– শুনবেন?
– হুমমম
– কেন শুনবেন?
– আর কিছু করার নেই তাই। অলস বসে থাকার চেয়ে গল্প করা যাক।
– আসলে বলার মতো কিছু নেই। খুব পরিচিত দৃশ্য এসব। সংসারের ছোট মেয়ে, বাবা মায়ের চোখের মণি। বিয়ে দিতে বাবার পেনশনের টাকাগুলো শেষ, যেন জুয়ার কোর্টে শেষ সঞ্চয়টুকু ছুড়ে দিয়ে হেরে টেরে বাড়ি ফিরে এসেছে নিঃসঙ্গ জুয়ারী। অনেক টাকা যৌতুক দিতে হলো, ছেলে বড় সরকারী জব করে-এমন পাত্র হাতছাড়া করতে চায়নি বাবা মা।
মেয়েটি একটু জিরিয়ে নেয়। শুরু করে আবার– কিন্তু দেখুন কপালটা কেমন-পোড়া কপালে সুখ সইলো না। স্বামীদেব আমার মদমাতাল, কারণে অকারণে হাত পা চালায়। মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না তাই সহ্য করে গেছি বছরের পর বছর। এখন শুরু হয়েছে নতুন এপিসোড– ছোটভাইকে বিদেশ পাঠাবে তাই টাকা এনে দিতে হবে আমাকে। কোন মুখে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো বলুন তো! নিয়মিত মারধোর সহ্য করতে করতে ক্লান্ত এখন…
মেয়েটি শাড়িটি পিঠের দিক থেকে সরিয়ে ব্লাউজের প্রান্ত উপরে তুলে আঘাতের চিহ্নগুলো দেখানোর চেষ্টা করে। ফলতঃ ফর্সা ধবধবে পিঠের ওপর কালসিটে দাগগুলো বেরিয়ে পড়ে– সেই সাথে গোলাপি ব্রার স্ট্যাপ দেখা যায়।
লোকটি মনে মনে আঁতকে ওঠে। বিমর্ষ হয়। মেয়েটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কেমন অপার্থিব শোনায় সে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।
– আপনার কথা বলুন। এসব শুনে লাভ নেই।
– আমার কথা… কেমন ফাঁপা আর আজব স্বর পুরুষটির। ভালবেসেই বিয়ে করেছিলাম। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে যতটা সুখ স্বাচ্ছন্দ্য থাকা দরকার ততটাই ছিলো। অন্তত আমি মনে করি ছিলো। স্বাচ্ছল্য না থাকলেও অভাব ছিলো না কোনকালে। ভরি ভরি ওজনের গহনা না দিতে পারলেও ভালবাসায় কমতি ছিলো না। তবু কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিতো, দেয়াটাই স্বাভাবিক তাই না! এই যেমন ভাই বোনকে টাকা পয়সা দিয়ে হেল্প করা বাড়ি করতে না পারা এরকম টুকটাক বিষয়ে তর্ক হতো। কিন্তু এরকমটা হবে ভাবিনি কখনো। আমার খুব কাছের এক বন্ধুর সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বন্ধুটি বিবাহিত, দুটো সন্তানও আছে। আমি আমার স্ত্রীকে প্রচন্ড ভালবাসতাম, বাসি এখনো…
লোকটি থামে। থমথমে পার্কের আবহে আবারও তৈলচিত্রের চরিত্র হয়ে যায় তারা। কারো মুখে কোন কথা নেই।
রোদ মরে এসেছে কিছুটা। একটা বিকেল বিকেল গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বাদামওয়ালা এলো। লোকটি বাদাম কিনলো এক মোচা। আইসক্রিমওয়ালা এলো। মেয়েটি দু’টি আইসক্রিম কিনলো। মেয়েটি বাদাম খুটে খুটে দিচ্ছে, ছেলেটি খাচ্ছে। এসময়ে খুব বেশি কথাবার্তা হয় না তাদের।
– চলুন নদীর দিকে যাই, হেঁটে আসি।
– নদী! এখানে নদী কোথায়!
– এই সামনেই, ডানদিকে মিনিট পাঁচেক হাটলেই।
– ওহহ… জানতাম না। কখনো শহর ঘোরা হয়নি তো।
– চলুন। নদীর পাড়ে। তারপর শহর ঘুরবো।
উঠে পড়ে দুজন। পার্ক থেকে বেরিয়ে আসে। হাঁটতে থাকে পাশাপাশি। টুকটাক কথাবার্তা হয়।
পার্কের গেট পার হয়ে মেইন রোডে চলে এসেছে। রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তায় গিজগিছ করছে গাড়ি, কিলবিল করছে মানুষ। পুরুষ লোকটি মেয়েটির হাত ধরে রাস্তা পার হয়। মেয়েটি বাধা দেয় না।
রাস্তার ওপাড়ে গিয়ে আবার পা চালায় দু’জন, পাশাপাশি। হাতে হাত ধরা।
নদীর পাড়ে এসে ঘাসের ওপড়ে বসে তারা। কথার ফুলঝুরি চলতে থাকে, হাসি-অট্টহাসি… ফেলে আসা দুঃখস্মৃতি কারো মনে আর কোন দাগ কাটে না।
তারা বসে বসে গল্প করে। উঠে যায়, হাঁটে একটু। টঙ দোকানে চা খায়। মেয়েটি বিয়ের পর আর কোনদিন নদী বন শহরের অলিগলি কিছুই দেখেনি। তাকে কোনদিন ঘুরতে নিয়ে যায়নি তার বর। আজ সে স্বাধীন। তাই প্রজাপতির মতো উড়ছে। আর পুরুষটি– সেও যেন কৈশোরে ফিরে গেছে, প্রজাপতি ধরার খেলায় মেতেছে।
– চা কেমন লাগছে?
– দারুণ!
– এরকম দোকানে চা খেতে ভাল লাগে আমার।
– আমার কখনো এরকম পরিবেশে চা খাওয়ার সুযোগ হয়নি।
– তাই!
– হুমমম
– আর কী কী করার সুযোগ হয়নি?
– অনেক কিছু।
এই অনেক কিছু কি কি জানতে চায়নি সে। অনেক মানে অনেক, সে জানে।
– চলুন শহর ঘুরবো দুজন।
– চলুন।
হাঁটাপথে আবার জানতে চায় নারীটি।
– বাড়ি ফিরবেন না?
উত্তর দেয় না লোকটি। হাতের মুঠোয় কোমল হাতটি আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।
রিক্সা ডেকে উঠে পড়ে। উদ্দেশ্যহীন। শহরের অলি গলি ঘুরতে থাকে রিক্সা। পুরুষ লোকটি একটি হাত রাখে নারীটির পিঠের দিকে-নারীটির ভাল লাগে তাও।
গল্পে গল্পে কত কিছু জানা হয়ে যায়। কত পছন্দ অপছন্দ জানা হলো। একে অপরের খুব বেশি কাছাকাছি চলে আসে অনবধানে। পুরুষটি একসময় মেয়েটির ঠোঁটের দিকে ঠোঁট এগিয়ে নেয়, মেয়েটি বাধা দেয় না– বরং স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছিলো– ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো।
ক্ষুধা লেগেছিলো ভীষণ। একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলো তারা।
তারা যখন রেস্টুরেন্টের বাইরে এসে দাঁড়ালো তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা।
– তো… এখন কোথায় যাবেন?
– আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন।
– আপনার ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত।
– ঘর? নেই তো–
– আপনার জামাই চিন্তা করবে
– হয়তো বা।
– বাচ্চারা কাঁদবে।
মেয়েটি চুপ…
– আপনি ফিরে যান। আপনার ওয়াইফ হয়তো টেনশন করছে।
– আমার কোন অতীত নেই।
– আমারও নেই। মেয়েটির কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসে।
চলো হাঁটি। ছেলেটির হাতের মধ্যে মেয়েটির হাত ধরা। রাস্তা তুলনামুলক ফাঁকা। তারা কিছুক্ষণ নীরবে হাঁটে, কিছুক্ষণ কথা বলে, হাসে, মনখারাপ করে। কিন্তু হাঁটা থামায় না। যতটা সম্ভব দ্রুতপায়ে নিজেদের ব্যথা বিদীর্ণ অতীত থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে।
– নামটা বলবে না?
– না।
– কেন?
– আমাদের কোন নাম নেই।