উল্টোস্রোত

উল্টোস্রোত

কোনো উপলক্ষ পেলেই জুটি বেঁধে ঘোরে দুজনে। শুধু ভ্যালেনটাইন্স ডে নয়, নিউ ইয়ার, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, বন্ধু দিবসসহ অন্যান্য দিনগুলোতেও। মাহি ও রাব্বি যেন নবকাপল। মূলত তারা আদর্শ প্রেমের জুটি। আদর্শ বলারও ঢের কারণ আছে। মাহিকে যেমনি ডজনে ডজন তরুণীর মাঝ থেকে এক পলকে বেছে নেয়া যাবে। তেমনি রাব্বিকেও তরুণের ভিড় থেকে খুঁজে নিতে অসুবিধা হবে না।

দুজনের ভালোবাসার দুবছর পূর্ণ হলো আজ। এতোদিনে দুজনের মাঝে একবারের জন্যেও মতের অমিল হয়নি। তবে কখনো কখনো অপেক্ষায় কষ্ট বাড়ায়। আজকের দিনে ঘুরতে আসা সব ছেলে-মেয়ের হাতে রক্তরাঙা গোলাপ। ভালোবাসা দিবসে এজন্যে ফুলের দাম ইচ্ছেমতো হাঁকায় দোকানিরা। রাব্বি পুরো এক বিকেলের জন্যে রিক্সা ভাড়া নেয়। কিন্তু কোথায় যাবে তা ঠিক করা হয়নি। যথাসময়ে দুজন এক হলো। রিক্সার প্যাডেল চাপতে চাপতে চালক বলে, মামা কই যামু?

– রাস্তার পথ ধরে চলতে থাকুন জবাব দেয় রাব্বি।

রিক্সা চলতে থাকে। পথে পথে ছড়িয়ে পড়ে টুকরো টুকরো আহ্লাদ। রিক্সার হুক লজ্জায় আটখানা হয়। চালক বোঝে প্রেমিক যুগল রিক্সায় উঠলে সব প্রেম উছলে পড়ে। কি বিবাহিত কি অবিবাহিত! চালকও বেশ রসিক বটে। তাইতো মাঝে মাঝে ভাঙা গর্তে একটি চাকা ফেলে। ঝাকুনিতে জড়িয়ে ধরে দুজন। মেয়েটা আউ… বলে চিৎকার দেয়। সে শব্দ যদিও খুব বেশি দূর যায় না। চলতে চলতে যখন রিক্সাটি সোহাগ সেতুর উপরে আসে। চোখে পড়ে জোড়া পাখির আনাগোনা। তখন শেষ বিকেল। প্রকৃতির বুকে কোমল বিছানা পেতে রক্তিম সূর্য হারিয়ে যাচ্ছে। ধনাগোদা নদীর উপর ব্রিজের উপর থেকে এদৃশ্য মনে শিহরণ জাগায়। বিবিধ কথার ফাঁকে হঠাৎ মাহি আনমনা। রাব্বি মাহির দিকে তাকায়। হারিয়ে যাওয়া সূর্যের শেষ আলোটুকু আছড়ে পড়ছে মাহির মুখে। মায়া যেন গড়াগড়ি খায় কোমল গালে। একটু পর মনে হলো, মাহি কাউকে লক্ষ করছে। দৃষ্টির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক টগবগে যুবক।

মাহি বলে, ছেলেটা খুব স্মার্ট, তাই না?

– আমার চেয়েও?

– তাতো বলিনি।

প্রসঙ্গ পাল্টে দুজন রিক্সায় উঠে।

তারপর আরো একবছর পেরিয়ে যায়। রাব্বি একা একা সোহাগ সেতুর উপর এসে দাঁড়ায়। সূর্যটির অস্ত যাওয়া দেখে। অপর পাশে মাহি একটি ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত