গাড়িটা স্টার্ট হতেই নিসা আমার হাত জড়িয়ে ধরলো। স্মিত হেসে ওর গালে হাত বুলালাম
-আমার না কেমন জানি লাগছে
-ভয় কিসের পাগলী.!
-আম্মা যদি আমাকে পছন্দ না করে.?
কিছুটা আতংক নিয়ে আমার দিকে তাকালো নিসা। আমার দৃষ্টি তখন কাচঘেরা জানালা পেড়িয়ে দুরদুরান্তে গিয়ে ঠেকেছে।
-এতো বড় দামড়া পুলা, অহনো খালি খাই খাই করে। কয়ডা টেহা আনতে পারে না কোনহানতে, সারাদিন শুধু খাই খাই। আমার হইছে যত্ত জ্বালা। বাপটা তো মইরা গিয়া বাইচ্চা গেসে, জ্বালা দিয়ে গেসে আমারে
আম্মার কথাগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনলাম। সেই কাল রাতে অল্পকিছু বাসি ভাত পেঁয়াজ দিয়ে খেয়েছিলাম। সকালে না খেয়ে স্কুলে যাওয়াটা আমার নিত্ত রুটিন। সারাদিন কলের পানি খেয়ে বিকালে বাড়িতে এসে খাবারের খোঁজ করতেই আম্মা কথা শুনিয়ে দিয়ে গেল। প্রতিবছর ধানের সময় মাঠে কাজ করে বেশকিছু টাকা আয় করি। কিন্তু এবার সামনে এসএসসি পরিক্ষা, স্যার বলেছে স্কুল কামাই করা যাবে না। তাই এবছর কাজ করতে যায়নি দেখে আম্মা খুব রেগে আছে আমার উপর।
আম্মারই বা কি দোষ! আব্বা সেই ছোট্ট রেখে মারা গেছেন। তারপর থেকে বুড়ো দাদা আর আমার সমস্ত দায়িত্ব এসে পরেছে আম্মার উপর। চেয়ারম্যানের বাড়িতে টুকটাক কাজ করে যা পান, তা দিয়েই কোনরকম ভাবে চলছে আমাদের সংসার। মায়ের বকা খেয়ে দাদার রুমে আসলাম। আমাদের টিনের চালা ঘর, ঘরে তিনটা রুম; একটায় আম্মা থাকে, আরেকটাতে দাদা আর আমি, আর একটাতে বিভিন্ন আসবাবপত্র। আব্বা থাকতে এই ঘর বানানো হয়েছিল, পরে আর মেরামত করা হয়নি কোথাও। বৃষ্টি হলে টিনের ফুটো বেয়ে পানি পরে। তখন আমি পাতিল নিয়ে বসে থাকি ফুটো বরাবর। দাদা জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে। আমার আসার শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো;
-মা’য় বহা দিছে?
আমি মাথা নাড়লাম।
-এদিকে আয়প দাদা হাত বাড়িয়ে ডাকলো। কাছে যেতেই বালিশের নিচ থেকে একটা ২০ টাকার নোট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল;
-যা, দোয়ানতে কিছু কিন্না খা
চুপচাপ হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিলাম। দাদা মাঝেমাঝেই আমাকে এমন টাকা দেয়। কোথা থেকে পায় জানি না। একদিন জিজ্ঞেস করতে হবে। অবশ্য আমি জানি সেটা কোনদিন পারবোও না। আমাদের বাড়িতে কিছু ফলের গাছ আছে। উঠানের বা’পাশে দুইটা বড় বড় কাঠাল গাছ আছে, কাঁঠালগুলো খুব মিষ্টি আর নরম। তবে এই কাঁঠালগুলো আমরা খেতে পারি না। বড় হলে দাদা এইগুলো বাজারে নিয়ে যায় বিক্রির জন্যে। যেদিন কাঁঠাল বিক্রি করে, সেদিন আমাদের বাড়িতে গরম ভাত আর টেংরা মাছের ঝোল রান্না হয়। তবে শুধু কাঠাল বিক্রি করলেই না, আমাদের তালগাছ আছে, জাম্বুরাগাছ আছে।
এগুলো বিক্রি করলেও গরম ভাত রান্না হয়। দাদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সোজা চলে গেলাম বাড়ির পিছনে ঝোপঝাড়ে। এখানে সাধারণত কেউ আসে না, তাই এটাই আমার গোপন আস্তানা। মোটামুটি অন্ধকার নেমে এলেও জায়গাটা খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না। চারপাশে নজর বুলিয়ে মাটি খোঁড়া শুরু করলাম। বেশ কিছুটা খোঁড়ার পরই হাতে এসে ঠেকল পলিথিনটা। ঝেড়েঝুড়ে মাটি সরিয়ে ভিতর থেকে টাকাগুলো বের করলাম। মোট পাঁচশো দশ টাকা আছে। করিম ভাই বলেছিল ঢাকা যেতে পাঁচশো টাকা লাগে। আমার কাছে দশটাকা বেশিই আছে, সুতরাং আজকেই রওনা হবো। ঢাকা যাওয়ার পরিকল্পনা অবশ্য আমার বেশ পুরোনো। সবাই বলে ঢাকায় নাকি ম্যালা টাকা। আমার অনেক টাকার প্রয়োজন।
ঢাকায় আসার প্রথম কয়েকটা দিন মোটেও সুখকর হলো না আমার জন্য। শুধু কলের পানি আর বিস্কুট খেয়েই কাটাতে হয়েছে কয়েকটা দিন। তবে পাঁচদিনের মাথায় একটা মশারির দোকানে চাকরি জুটে গেল। মহাজনের নাম মকবুল হাজী। বেশ দরদি লোক। থাকার একটা ব্যবস্থাও করে দিলেন আমাকে। অমায়িক ব্যবহারের কারনে খুব বেশিদিন লাগলো না চাচার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে। চাচার আমার প্রতি ভালবাসাটা টের পেয়েছিলাম বছর তিনেক পর। যেদিন চাচার কাছ থেকে চলে এসেছিলাম, সেদিন।
-আলাদা ব্যবসা করতে চাস ভাল কথা, কিন্তু সামলাতে পারবি তো সব একা.?
কিছুটা দরদমাখা কন্ঠে প্রশ্ন করলো চাচা
-চাচা.! আপনি শুধু দোয়া কইরেন আমার জন্য, আপনার দোয়া মাথার উপর থাকলে সব পারমু আমি চাচা
কথাগুলো বলতে গিয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো গলা।
-যা বাজান, দোয়া দিলাম বড় কিছু হ জীবনে।
চাচার গলাও কিছুটা খাদে নেমে আসলো, কিন্তু লুকোনোর জন্য চেষ্টা করলেন না। আমি চাচার পায়ে হাত দিয়ে বের হয়ে এলাম। কেরাণীগঞ্জে ছোট্ট এক টিনের রুমে শুরু হলো আমার স্বপ্নযুদ্ধ। দুইজন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে চালু করলাম মশারির কারখানা। প্রথম বছর লসের মুখে পরে ব্যাংক লোন নিয়ে কারখানার খরচ চালাতে হলো। দিন যাচ্ছিল আর ক্রমাগত হতাশা বাড়ছিল। একটা সময় মনে হচ্ছিল কারখানাটা বুঝি বিক্রিই করে দিতে হবে। চরম ক্রান্তিলগ্নে হঠাৎ করেই আশির্বাদ হয়ে এলো ডেঙ্গু ভাইরাস। সে বছর সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। মশারি বিক্রি সুড়সুড় করে বাড়তে থাকে। যারা জীবনে কখনো মশারি কিনেনি, তারাও সে বছর মশারি কিনতে লাগলো। নান্দনিক কারুকার্যময় স্বপ্নবিলাস মশারির নাম ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশে। সে বছর শেষে ঢাকায় স্বপ্নবিলাস মশারির কারখানা সংখ্যা দাঁড়ালো ৪এ। তারপরের ৫ বছরে দেশের ৭ বিভাগে স্বপ্নবিলাস মশারির কারখানার সংখ্যা হলো ১৮টি। ভাগ্য আমায় শুণ্য থেকে শিখড়ে পৌছে দিল।
ঢাকায় নিজের বাড়ি হলো, গাড়ি হলো। মকবুল চাচার নামে জমি কিনলাম। সব অপূর্ণতা গিয়ে মিশলো প্রাপ্তিরেখার শেষবিন্দুতে। তবুও কোথায় যেন একটা খামতি রয়ে গেল। ৮ বছরে এই প্রথম গ্রামের কথা, আম্মার কথা, দাদার কথা বড্ড বেশি করে মনে পড়তে লাগলো। সবকিছু আস্তে আস্তে ঘুছিয়ে নিতে শুরু করলাম। আবার আমার মায়ের কোলে ফিরবো, এমন আনন্দে যখন বিভোর হলাম, ঠিক তখনই এসে উপস্থিত হলো ভয়াবহ দুঃসংবাদ। ঘড়ির কাটা রাত ১০টার আশেপাশে। সারাদিনের ব্যস্ততা ওয়াশরুমে ঝেড়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলাম টিভিটা ছেড়ে। ‘চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুন” প্রচণ্ড রকমের ধাক্কা খেলাম টিভির হেডলাইনটা দেখে। চকবাজারের কারখানাটা বন্ধ হয় রাত ১১টা নাগাদ। দ্রুত সুমনের নাম্বারে ফোন দিলাম, কয়েকবার রিং হতেই রিসিভ হলো
-হ্যালো সুমন.! কি অবস্থা
-স্যার কারখানাত আগুন লাইগা গেছে।
আমরা হোগোলে বাইর হইতে পারলেও আজাদ কাকায় আটকাইয়া গেছে এইটুকু বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো সুমন। আমি তড়িঘড়ি করেই রওনা হলাম চকবাজারের উদ্দেশ্যে। আমার চোখের সামনে পুড়ছে আমার স্বপ্ন। এই প্রথম দেখতে পেলাম স্বপ্নের রঙ। লালকালোর লেলিহান শিখায় আমার স্বপ্নছাই উড়ে বেড়াচ্ছে, আর আমি অপলক নেত্রে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। সুমনের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম
-স্যার.! আজাদ কাকায় তো মনে হয় আর বাইচ্চা নাই আমি ওর দিকে ফিরে তাকালাম। ওর চোখে তখনো পানি চিকচিক করছিল।
-আজাদ কাকার বাসা কোথায়.?
-হাজারীবাগে।
-কে কে আছে কিছু জানিস?
-কাকি মারা গেছে মেলাদিন আগে।
তয় কাকার একখান মাইয়া আছে, এবার নাকি কলেজে পড়ে। মাঝেসাঝে দুফুরে খাওন নিয়া আইতো আমগো লিগা। অনেক লক্ষী মাইয়া, কিন্তু স্যার মাইয়াডাও তো অহন এতিম হইয়া গেল বলেই আবার কান্না শুরু করলো সুমন। ফায়ারবিগ্রেডের প্রচেষ্টায় ৮ ঘন্টা পর আগুন নিভলো। ধ্বংসস্তূপ থেকে যখন এক এক করে লাশ বের করতে লাগলো, প্রচণ্ড আক্রোশে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। চারদিন পর; কেরাণীগঞ্জের কারখানা ছিল আমার অফিস। সবকিছু সেখান থেকেই তদারকি করতাম। সুমন এসে ঢুকলো, সাথে একটা মেয়ে।
-স্যার.! আজাদ কাকার মেয়ে, নাম নিসা
আমি মেয়েটাকে লক্ষ্য করলাম, বয়স ১৯ কি ২০ এর কোঠায়। পরনের কাপড়ই বলে দিচ্ছে এর অবস্থা তথৈবচ। তবে চেহারায় একটা আভিজাত্যপূর্ণ ভাব বিরাজ করছে। দুই মিনিট কথা বলেই বুঝতে পারলাম শুধু চেহারায় নয়, আচরণেও আভিজাত্য বিদ্যমান। আলাদা কোন বৈশিষ্ট নেই, তবুও কি এক অমোঘ আকর্ষণে আকর্ষিত হলাম। আর সেটা এতোটাই যে দুই মাসের মাথায় তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবই দিলাম
-আপনি কি ভেবে বলছেন এসব.? মাথা নীচু করে পায়ের বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে মেঝে খোঁচাতে খোঁচাতে প্রশ্ন করলো নিসা
-হ্যাঁ আমি ভেবেই বলছি সব।
-কিন্তু কেন.?
-কারন আমার মনে হয়েছে আমাদের দুইজনেরই দুইজনকে প্রয়োজন বেঁচে থাকার জন্য।
-আচ্ছা এমন কোন কারন নয়তো যে এখন আমি অসহায় দেখে আপনি আমাকে করুণা করছেন.?
-দেখুন, করুণা করতে চাইলে আগেই করতে পারতাম বা অন্য উপায়ে, কিন্তু কাউকে একবার ভালবেসে ফেললে তাকে ভালবাসা ছাড়া অন্যকিছু দেওয়া যায় না
-ঠিক আছে আপনি এখুন আসতে পারেন, আমি ভেবে দেখবো
হাজারীবাগের সেই ছোট্ট কুটির থেকে বের হয়ে যখন বাসায় ফিরলাম, নিজেকে কেন যেন পরাজিত সৈনিক মনে হতে লাগল। সবকিছু ফাকা আর মিথ্যে মনে হতে লাগলো। ছেলেবেলার দুঃখ, আম্মার কথা, দাদার কথা, বাড়ির কথা খুব মনে পরতে লাগলো। সে রাতে খুব কান্না করেছিলাম। কিন্তু সকালের প্রথম ফোনটা ছিল জীবনের সবচেয়ে কাংখিত ফোন।
-আমার একটা শর্ত আছে।
-জ্বি বলুন কি শর্ত!
-ঝাউচর বস্তিতে কিছু বাচ্চাদের পড়াই আমি। আমার আপন বলতে এখন শুধু ওরাই। আমি চাই ওরা আমাদের বিয়ের মেহমান হোক।
-জ্বি আমার কোন আপত্তি নেই। তবে ওদের দাওয়াত দেওয়ার সময় কত তারিখের কথা বলবো, সেটা যদি বলতেন!
-যদি আজকের কথা বলি, খুব বেশি সমস্যা হবে কি.?
-একদম না।
পৃথিবীতে নিসাই মনে হয় প্রথম মেয়ে, যে নিজের বিয়ের রান্না নিজেই করেছে। মকবুল চাচা খুব প্রশংসা করলেন রান্নার। মেহমানরা বিদায় নিতেই গুছিয়ে নিতে লাগলাম আমাদের নতুন সংসার। বিছানায় যখন গেলাম, তখন রাত ১টার আশেপাশে। জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় রাতের অর্ধেক কেটে গেল বাসন ধুয়ে আর সোফা টেবিল ঠিক করেই।
-আচ্ছা আমার জীবনের সবটাতো শুনলেনই, আপনারটা এবার বলুন জানালা দিয়ে তখন চাঁদের আলো আমাদের গা ছুঁইয়ে যাচ্ছিল, আমি সে আলো গায়ে মেখে হেটে চলতে লাগলাম অতীত শহরে। সবটা শুনে নিসাও কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে উঠলাম
-আচ্ছা শুনো, সামনের সপ্তাহেই আমরা হানিমুন যাচ্ছি। তোমার কোন পছন্দের জায়গা আছে.?
-হুম আছে তো!
-কোথায়.?
-আমার শশুরবাড়ী। যেখানে আমার শাশুড়ি আছেন, দাদাভাই আছেন সেখানে। নিয়ে যাবেন.?
আমি নিসার দিকে তাকালাম। নিসাও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। চাঁদের আলো ওর মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎই কেন জানি নিসার চেহারাটা বড্ড মায়াবী মনে হতে লাগলো।
-স্যার, বাকিলা এসে গেছি। এখন কোন দিকে যামু? ড্রাইভারের ডাকে বাস্তবতায় ফিরে এলাম।
-বামের রাস্তাটা ধরো
৮ বছর আগের গ্রাম এখন অনেক বদলে গেছে। মেঠোপথ হয়ে গেছে ইট সোলিং এর, রাস্তার দু’পাশে কারেন্টের খাম্বাও আছে। সব বদলালেও আমাদের বাড়ি এখনো সেই একচালা টিনেরঘর হয়েই আছে। আমি মায়ের কোলে ফিরেছি। আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে নাকিসুরে বিলাপ করছে। পৃথিবীর সমস্ত মা’য়ই সন্তানের পদক্ষেপ বুঝতে পারে, আমার আম্মাও নিসাকে দেখে বুঝে নিয়েছেন সবটা। নিসার গালে মুখে অনবরত ভালবাসা একে দিচ্ছেন আর প্রশ্ন করে চলছেন, নিসাও মায়ের কোলে মাথা রেখে একেক করে উত্তর দিচ্ছে। আমি দাদার রুমে গেলাম। সেদিনকার মতো আজকেও দাদা জানালার দিকে মুখ করে বসে আছেন। আমি দাদার পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসলাম।
-কেডারে তুই বাজান
-দাদা আমি সাকিব দাদা কাঁপাকাঁপা হাতে আমার মাথা স্পর্শ করলো
-কই ছিলিরে দাদাভাই এদ্দিন.? তোর মা’য় কত কানছে তোর লাই, আমি কতহানে খুঁজছি তোরে। একটু থেমে আবার বলা শুরু করলেন:
-কিছু খাইছত? আমি মাথা নাড়লাম। দাদা বালিশের নিচ থেকে একটা পুরোনো বিশ টাকার নোট বের করে হাতে দিয়ে বলল:
-তোর মা’র রান্না শেষ হয়তে আরো দেরি হইবো। তুই এইডা দিয়া দোয়ানতে কিছু কিন্না খা
আমি চুপচাপ হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে বের হয়ে আসলাম। আম্মা আর নিসাকে দেখা যাচ্ছে না। আমি জানি, আম্মা এখন নিসাকে নিয়ে পুরো গ্রামের মানুষকে দেখাবে আর বলবে “এটা আমার সাকিবের বউ”। তারপর সবাই এক এক করে আম্মার সাথে আসবে আমাকে দেখতে। আমি অপেক্ষা করছি সবাইর জন্য, আর আমার হাতে তখনো আমার জীবনের শেষ পুর্ণতাটুকু এনে দেওয়া একটা বিশ টাকার নোট।