গোলাপী

গোলাপী

সকাল থেকেই জেদ ধরে বসে আছি আমি।আজ কিছুতেই বেরুবো না, যদি না সে আজ মায়ের দেয়া ওই গোলাপী শার্টটটা পড়ে।ওদিকে তিনি তো মুখ হাড়ি করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।মুড অফ নাকি পাশের বিল্ডিং এর ভাবীকে দেখে কে জানে!আমিও গোলাপী রং এর জামা পরেছি।চাচ্ছি দুই জনে সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মতো একই রং এর কাপড় পরে বেরুবো।কারণ, আজ হরতাল।যেখানে যাবো জায়গাটা বেশ দূর।রিক্সাতেও ঘন্টা খানেক লেগে যাবে।তাকে ডেকে আনলাম বারান্দা থেকে। বললাম,

– আমার চোখের দিকে তাকাও।
– তাকালাম।
-কি দেখতে পাচ্ছো?ঠিক ঠিক বলবে।একদম চালাকি করার চেষ্টা করলে কিন্তু চিৎকার দিবো।
– আরে আরে!! করো কি?ইজ্জত মারবা নাকি? পাশের বাসার ভাবী শুনবে তো।
– ভাবীকে শোনানোর জন্যই তো। বলো, কি দেখো?
– উম! ওয়েট।ভেবে নেই। হু।বুঝছি।লেপ্টে যাওয়া কাজল দেখি।
– আমার কপাল!!
-চোখ না দেখতে বল্লা!

– ধুর! এই চোখে ভালোবাসার আকুতি দেখো না?
-ওহ।এই কথা?শোন শোন।আর রাগ কইরো না পাখি আমার।এবার চলো।দেরি হয়ে যাইতেছে।
– না।
– না? মানে কি?
– মানে ওই গোলাপী শার্ট।ওইটা তুমি এখন পরবে না?
– আজ না।
– ওকে।দেখো আমি কি করি।

মনের জিদে শার্টটাকে মুচড়িয়ে ওয়াশ রুমে নিয়ে বাথ টাবের পানিতে ফেলে দিলাম।কিছুতেই আমার রাগ মিটছে না।কারন, আঁড় চোখে দেখলাম সে মিট মিট করে অসভ্যের মতো হাসছে।কাছে যেতেই দাঁত কেলানি দিলো।মেজাজ আমার হান্ড্রেড ওভার হয়ে যাচ্ছে।এই লোকটা এত্ত অসভ্য কেন!

সে আমার কাঁধে হাত রাখলো।মনে হলো শরীরে একটা এটম বোম্ব ফুটে উঠলো।এক ঝাঁড়ি দিয়ে গিয়ে রান্না ঘর থেকে কাঁচা তরকারীর ময়লার বাস্কেটটা এনে সোজা ফ্লোরে ঢেলে দিলাম।নাহ! তবুও রাগ কমছে না।এর মধ্যে সে গুন গুন করে গান গাচ্ছে।ইচ্ছে হলো গ্লাসের পানিটা,না না পুরো জগটাই ওর মাথায় ঢালি। সকাল প্রায় নয়টা বেজে গেছে।সত্যিই দেরি হয়ে যাচ্ছে।এর মধ্যে পাশের বাসার ভাবী কলিং বেল বাজাতেই সে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে যেতে উদ্যত হলো।কষে দিলাম এক ধমক।

– কি? ভাবী এসেছে মনে হচ্ছে।তাই না?এজন্য এত্ত তাড়া?
– আরে! তুমি এই শরীর নিয়ে দরজা খুলবা নাকি।তাই আমিই যাচ্ছিলাম।
– থাক।হয়েছে।

দরজা খুলতেই দেখি পাশের বাসার ভাবী।আমার তো এবার পুরা মাথা হট।ভাবীকে একদম অসহ্য লাগে আমার।যদিও দেখতে শুনতে আমিই বেশী সুন্দরী আর হট ফিগারের।মানে, ভাবের সময় সে ই এসব বলে।ভাবীকে দুই এক কথায় বিদায় দিলাম কারণ বের হতে হবে।সে এসেছিলো আমার সাথেই দেখা করতে।ভাবী মানুষ ভালো হলেও আমার কেন যেন তাকে ভালোই লাগে না।ভেতর থেকে গানের গুন গুন শব্দ যেন ভলিউম বেড়ে গেলো হঠাৎ।বুঝে গেলাম ভাবীর শব্দ পেয়ে ভলিউম বেড়েছে। ভাবী বেড রুমের দিকে যাচ্ছিলেন।আমি তো ময়লার বাস্কেট ঢেলে দিয়েছি পুরা ঘরে।এই দৃশ্য দেখলে নিশ্চিত আজ আমার ইজ্জতের ব্লিচিং ওয়াশ হবে।

ভাবী বললেন, ভাই কই? আপনি কার সাথে যাচ্ছেন? বুঝে গেলাম, সে আসলে আমাকে দেখতে আসে নাই।মনে মনে জানা অজানা পঁচিশটা গালি দিলাম ভাবীকে।কিছুক্ষন পর ভাবী চলে গেলেন।গালি দিতে পেরে মনটা কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগছে।বেড রুমের দিকে যাবার পথে ওয়াশ রুমে বাথ টাবের মধ্যে ডুবিয়ে দেয়া গোলাপী শার্টের একটা ঝুলন্ত কোণা দেখে মনে হলো এই জীবনই আর রাখবো না।ঝুলে যাই ফ্যানের সঙ্গে।আমার জামাই আমার ড্রেসের সঙ্গে কালার ম্যাচিং করে শার্ট পরেনি।এ আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।

রুমে ঢুকে দেখি সে এক পা বিশেষ ভঙ্গিতে চেয়ারে তুলে আরেক পায়ে দাঁড়িয়ে খুব মনযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে।পেছন দিয়ে তার ঘাড়ের পাশ থেকে উঁকি মেরে দেখি ভাবী মাত্রই আমার বাসার নিচ থেকে বেরিয়ে তার বাসার দিকে যাচ্ছে।তার মানে সে চুপি চুপি ভাবীকে দেখছে।দিলাম আচমকা এক ধমক।এক্কেবারে ছিটকে উঠলো।

– কি দেখছিলে শুনি?
– কই? ওহ! আকাশ দেখলাম যে বৃষ্টি আসবে কিনা।রিক্সাতে যেতে হবে তো।
– কবে যে গাড়ি কিনবে তুমিই জানো।এখন কিনবে না তো।আমি মরলে আরেকটা বিয়ে করে তখন ঠিকই সব কিনবে তুমি।আর জমিয়ে রাখা আমার সাধের শাড়িগুলো নিয়ে দিবে তোমার ওই নতুন বউকে।তাই না?

– সেটাই তো।নইলে অত্তগুলো শাড়ি ওই আলমারি পচা হয়েই তো ফুরাবে।
– তার মানে?
– মানে কিছুই না।অপচয় রোধ হবে।নতুন করে আর কিনতে হবে না নতুন বউয়ের জন্য।এই তো।
-কিহ? তুমি আবার বিয়ে করবা?
– সে কথা কখন বললাম?
-বলোনি? ওকে বাদ দাও।যাবো না আজ আমি। সে আমাকে কাছে ডাকলো।খুব স্থির গলায় বললো,

– শোন, এই যে তুমি গোলাপী শার্ট শার্ট করে মারা যাচ্ছো,একটাবার কল্পনা করো তো তুমি একটা গোলাপী ড্রেসে গোলাপী গোলাপী সাজে কত্ত চমৎকার দেখতে।আর আমি এই কালো চামড়ায় তোমার পাশে গোলাপী শার্ট পরে রিক্সায় বসে যাচ্ছি কেমন কেবলা কেবলা লাগছে।তখন তোমার ভাল্লাগবে?এই পুরুষ মানুষের জন্য গোলাপী রং না।ওইটা মেয়ে মানুষের কালার।বুঝলা?আমি ওই শার্ট জীবনে ওই একবারই পরছি।ওই ফার্স্ট আর ওই লাস্ট।আমারে যখন পাবলিক বলবে জঙ্গলে আগুন ধরছে তোমার তখন কেমন লাগবে? ভাল্লাগবে বলো?

– এই হ্যালো!! আগুনের রং কি গোলাপী নাকি?
– না, মানে ওই একই তো।
– একই মানে?
– তুমিও তো গোলাপীই।আর এই যে এখন রেগে বোম্ব হয়ে আছো ঠোঁটগুলোতো গোলাপী টস টস করছে।মনে হচ্ছে এখনই কিছু একটা করে ফেলি।
– কিছু একটা মানে কি? আর একই মানে কি? আমি গোলাপী, আগুন গোলাপী।ওই…. আমি আগুন??
– কী জ্বালা! আবার রাগ করো ক্যান?

মনে হচ্ছিলো ওই মুহূর্তে আমি কুংফু কন্যা হলাম না কেনো? সিনেমায় কি সুন্দর এনিমেশন করে শপাং শপাং, ইয়া লি পুরা আস্ত মানুষ উড়ন্ত হয়ে উল্টিয়ে গিয়ে দেয় কিক।যাই হোক কল্পনায় নিজেকে কুংফু কন্যা মনে হতে লাগলো।ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম, তোর দুলাভাইয়ের ওই গোলাপী শার্ট শুকিয়ে যাবার পর ওটার মালিক এখন থেকে তুই।তোর মা দিয়েছে তুই ই পর।দুলাভাইকে আর পরতে হবে না।ভাই আমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না তা বোঝাই গেলো।

মনে মনে আশা করেছিলাম এবার বোধ হয় সে শোকাহত হবে।কিন্তু,না।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সে এমন ভাবে উৎফুল্ল চোখ মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেনো আসন্ন বিপদ থেকে বেঁচে গেলো।দুঃখে আমার কান্না এসে গেলো।হঠাৎ খেয়াল করলাম পাশের বাসার ভাবীর বাসা থেকে সাউন্ড বক্সে মিউজিক বাজছে।মিউজিক তো না যেন দামামা।

কিসি হোটেল মে খায়ে আহহহহ আহহহহহহ চালো ইস্ক লাগাই চালো ইস্ক লাগাই আহহহহহ উহহহহ ঘোড়ার ডিম মনেও নেই লিরিক্স।আমি হিন্দি বুঝি না।তাই আমার হিন্দি গানের লিরিক্সও মনে থাকে না।যখন গাইতে ইচ্ছে করে নিজের ইচ্ছে মতো শব্দ বসিয়ে গানের সুর ঠিক রেখে গেয়ে ফেলি।কিন্তু ভাবী কেন আমার বাসা থেকে বের হয়েই ইস্ক ফিস্ক বাজাতে শুরু করলো ঠিক বুঝলাম না। ঘড়ির কাঁটায় এখন পাঁকা দশটা বাজে।চোখে মুখে মনের মতো পাউডার ঘঁষে রেডি হয়ে নিলাম আবার।প্রায় মেয়েরাই সাধারণত কান্না কাটি শেষ করে পাউডারের শরনাপন্ন হয় নিজেকে ফ্রেস দেখাতে।

দুইজনে মিলে রিক্সায় উঠেছি।রিক্সা চলছে।হালকা বাতাসে আমার চুল উড়ছে।সে আমাকে ওড়নাটা মাথায় তুলতে বললো।আমি বড় বড় চোখ করে একবার তার দিকে তাকালাম।সে বললো, না ঠিক আছে।এমনেই ভাল্লাগতেছে।তার মুখে ভালো লাগার কথা শুনতেও আমার অসহ্য লাগছে। কাছাকাছি চলে এসেছি।সে আমার হাত ধরে রিক্সা থেকে নামালো।বরাবরই আমার রাগ খুব বেশীই।বাসার লোকজন সারাক্ষন ভয়ে তটস্থ থাকতো কখন কোন ভুলে কার গর্দান নিয়ে নেই। মনে পড়ে গেলো,বাসর রাতে বিড়াল মারার যে ট্র্যাডিশনাল গল্পটা আছে আমার বাসর রাতে আমিই ছিলাম সেই গল্পের দাম্ভিক নায়িকা।আর সেই সুবাদেই সে আমাকে কিঞ্চিত সমীহ করে চলে।মানে ভয় পায়।

প্রত্যেকটা মেয়েরই উচিৎ নিজের বাসর রাতে খাটের তলায় বেঁধে রাখা বিড়ালটা মিউ করে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এক লাফে খাট থেকে নেমে নিজেই খতম করে দেয়া।তাহলে জামাই বেচারা বুঝবে কিতনি হিম্মত ওয়ালি বহু হ্যায়।আবার হিন্দি বলতে গেলাম।আমি কিন্তু হিন্দি বলতে পারি না, ভুলভাল দিয়ে বুঝ দিতে পারি যারা আমার মতো কম বোঝে তাদের জন্য। আমরা কোথায় এসেছি জানেন? হাসপাতালে।জ্বি, এই হাসপাতালে আসবো বলেই এই ভদ্দর লোক গোলাপী শার্ট পরতে নারাজ ছিলো।কিছুক্ষনের মধ্যে বাপের বাড়ি,শশুড় বাড়ি দুই বাড়িরই লোকজন সব চলে আসবে।কারণ,কাল সকালে আমার সিজার হবার কথা।

এখন ভোর। যথা সময়ে সবাই চলে এসেছে।আমাকে শাদা এপ্রন পরিয়ে চুল দুই বেনী করে দেয়া হচ্ছে।গা থেকে এক এক করে সব গয়না খুলে নেয়া হচ্ছে।পা থেকে নুপুর খুলতে গেলে আমি বাঁধা দিলাম।আরে! সিজার কি আমার পায়ে হবে নাকি? শুনে সিস্টার হেসে ফেললো।আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখে নিজেরই ভয় লাগতে শুরু হলো।মনে হচ্ছিলো কবর স্থানের জিন্দা লাশ মুভি চলছে।খাড়া একটা পেট ফোলা মুদ্দারের মতো লাগছে আমাকে।দুঃখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু একেক জনের সৌজন্য আর আয়োজন দেখে মনে হচ্ছিলো আজ আমার বিয়ে।কেমন বিয়ে বিয়ে ফূর্তি লাগছিলো।আমার বিয়েটা এক রকম নিজের কথায় নিজে ফেঁসে যাবার বিয়ে হয়েছিলো।ডাক্তার ওটি রেডি করতে করতে দুই লাইনে আমার বিয়ের কারণটা একটু বলি।

এই লোকটাকে আমার মতো সুন্দর একটা মেয়ের কক্ষনোই বিয়ে করার কথা না।সে ছিলো আমার তিন বছরের বড় ভার্সিটির সিনিয়র ভাই। অনেকের মাধ্যমে সে প্রপোজ করলেও আমি তখন রাজি হইনি।একদিন সে প্রশ্ন করলো, কিভাবে প্রপোজ করলে আমি রাজি হবো।আমি আমার মতামত দিয়েছি যে, কেউ যদি আমার কাছে এসে আমাকে না জানিয়ে পেছন থেকে হঠাৎ কোলে তুলে নেয় তবেই আমি রাজি হবো।কারণ, আমি জানি তার মতো লাজুক মানুষের পক্ষে এই কম্ম সাধন সম্ভব নয়।আর আমাকেও রাজি হতে হবে না।

আমরা সবাই সন্ধ্যার দিকে ক্যাফের পাশের রাস্তায় গল্প করছিলাম।হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার পুরো পৃথিবী ঘুরে উঠলো।মাথা পাঁক খেয়ে উঠলো।বেশ কিছুক্ষন পর আমি বুঝতে পারলাম আসলে ব্যাপারটা কি ঘটেছিলো যখন সব হৈ চৈ করে হেসে উঠলো । সে আমাকে না জানিয়ে পেছন থেকে কোলে তুলে দুই চক্কর দিয়েছিলো।আমি শুধু ওর জামার বুকটা খামচে ধরেছিলাম।এরপর লজ্জায় আর তাকাতে পারিনি ওর চোখে।অতঃপর নিজের কথায় নিজেরই ফেঁসে যাওয়া।

সিস্টার চলে এসেছে।আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে কোরবানির গরুর মতো ওটি রুমের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ওর জন্য অল্প একটু মায়া লেগে উঠলো।মনে মনে খুশি লাগছিলো।ডক্টর আমাকে আল্ট্রাসিনোগ্রাফির রিপোর্ট বলেনি কিন্তু ও তার কাছ থেকে জেনে আমায় সব বলে দিয়েছিলো।আমার পেটে তিনটা বাচ্চা আছে।দুইটা ছেলে আর একটা মেয়ে।মেয়ে বাবু খুব পছন্দ আমার। সুন্দর করে সাজানো যায়, বড় বড় বেনী করা যায়।লম্বা চুল আমার খুব পছন্দ।তবে সেটা মোটেই নিজের জন্য নয়।মেয়েটাকে আমি কুংফু কন্যা বানাবো।ছেলেদের নিয়ে আমার কোন প্ল্যানিং নেই।

আমার সিজার হয়ে গেছে।আমি সি ইউ এর বেডে শুয়ে আছি।কাটার যন্ত্রনায় পেটটা পুরো জ্বলে যাচ্ছে।মনটা ভয়ংকর খারাপ।তার চেয়ে এই মুহূর্তে বেশী খারাপ আমার মেজাজটা।ইচ্ছে করছে ওকে জ্যান্ত কাঁচা চিবিয়ে খেতে।ভাগ্যিস ও এখন আমার সামনে নেই।কারণ, আমার কুংফু কন্যা আসেনি।এসেছে মাত্র একজন।তাও আবার ছেলে।সে আমাকে উৎফুল্ল রাখতেই এই মিথ্যা রিপোর্ট বলেছিলো।

কিছুক্ষন পর জানালার গ্লাসের বাইরে তাকিয়ে রইলাম।আশ্চর্য! দাঁত বিজলানী মেরে একজন হাসছে।ইঞ্জেকশনের প্রভাবে চোখে ঘুম ঘুম ভাব।এক হাতে চোখ কচলে ভালো করে তাকিয়ে দেখি যা ভেবেছি তাই।সে আই সি ইউ এর গ্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে রয়েছে।রাগে শরীর জ্বলে উঠলো আমার।পেটের কাটার জ্বলা আর কী! দাঁত কটমট করে তাকাতেই সে হাত ইশারা দিয়ে আমাকে শান্ত হতে বললো। আজ আমাকে রিলিজ দেয়া হবে।গত কয়দিনে যেখানে যেখানেই গোলাপী রং দেখেছি আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে।গোলাপীই এখন আমার অপছন্দের রং।সিস্টারের ঠোঁটের গোলাপী লিপস্টিকও সে কথা মনে করিয়ে দিলো।সমস্ত আকাশে বাতাসে যেন গোলাপীর ছোঁয়া।

আমার শশুর এসেছেন।হাতে একটা জামার প্যাকেট আর স্বর্নের চেইন।তিনি বলেছেন ওইগুলো পরিয়েই আমার ছেলেকে বাসায় নিতে হবে।আমি খুব খুশি হলাম।চেইনটা খুলে বাবুকে পরিয়ে দিলাম।জামার প্যাকেটটা খুব খুশি হয়ে হাতে নিলাম।প্যাকেট খুলতেই আমার চোখ বিস্ফোরিত হলো।আমার ছেলে বাসায় যাবে প্রথম যে পোশাকটি পরে যা আমার সারা জীবনের স্মৃতিতে থাকবে তা হলো আমার হাতের এই পোশাকখানা।জ্বি, ইহা একটি গোলাপী শার্ট।আমার মনে হলো পৃথিবী তুমি দিধা হও,আমি ঢুকে যাই।

বাসায় ফিরে সারাদিন ব্যস্ততায় গেলো।টানা পাঁচ দিন তার সাথে আমি কথা বলি না।আজ সবাই যে যার মতো বাসায় চলে গেছে আমাকে ফ্ল্যাটে রেখে।বুয়া আপাতত সব দেখছে।গভীর রাত।বাবু এতোক্ষনে ঘুমালো।দশ দিনে আমিও এখন প্রায় সুস্থ।সে এর মধ্যে একবারও আসেনি আমার রাগ ভাঙ্গাতে।হঠাৎ পুরো পৃথিবী ঘুরে উঠলো।কিছুক্ষন পর আবিস্কার করলাম চালাকটা সেই প্রথম দিনের মতো আজ আবার আমাকে আচমকা কোলে তুলেছে। নামাতে বললাম তাড়াতাড়ি।সে কিছুতেই নামাচ্ছে না।নতুন বউয়ের মতো কোলে তুলে রেখেছে।আজ আবার আমি বুঝতে পারলাম কি গভীরভাবে ও আমাকে ভালোবাসে।তার মানে ও যা কিছু করে সব আমাকে ক্ষেপানোর জন্যই করে।কালো হলেও ওর মুখে যে এত্ত মায়া তা আজ আবার লক্ষ্য করলাম।কেবলই মনে হতে থাকলো পৃথিবীর সব রোম্যান্টিক ছেলেগুলোই কেনো কালো হয় না।

আমাকে সে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।বুঝতে পারলাম খুব রোম্যান্টিক একটা সিচ্যুয়েশন হতে যাচ্ছে।ও আমাকে চোখ বন্ধ করতে বললো। আমিও চোখ বন্ধ করলাম।আদরের আভাস পাচ্ছি।কিন্তু কিছুক্ষন পর সে আমার দুই হাত ভর্তি কিছু দিয়ে চোখ খুলতে বললো।চোখে খুলে দেখি প্যান্টের দুই পকেট থেকে আরও এত্তগুলো ফুলের পাপঁড়ি আর চকলেট বের করে যাচ্ছে।যার সবই গোলাপী রঙ্গের।মনে হলো আমি আর ইহ জগৎে নাই।সারা পৃথিবীর রং আমি গোলাপী দেখতে শুরু করলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত