আমাদের পাড়ার সব যুবক ছেলেদের ফ্রেন্ড লিস্টে ময়ূরী নামক একটা নারী এড হয়েছে। আর পাড়ার ব্যাবাক পোলা পাইন বেশ খুশি খুশি মুডে আছে ময়ূরীকে নিয়ে। সিক্সে পড়া চাচাত ভাই ঋজু এসে বললো-
— আপা ময়ূরী নামের কেউ তোমারে রিকু দিছে?
আমি–না তো! আর রিকু দিলেও আমি এই নামের মাইয়াগো ফ্রেন্ড লিস্টে নিতাম না। কিন্তু তুই হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি ক্যারে?
সে–না আসলে পাড়ার সব পোলাপাইন এখন ময়ূরীর ফ্রেন্ড লিস্টে তাই খোঁজ নিতাছি যে, মাইয়ারাও আছে নাকি
আমি–ময়ূরী ক্যাডা? আর তুই হ্যারে ক্যামনে চিনোছ? ওর ফ্যান্ড লিস্টে পাড়ার ব্যাবাক পোলারা আছে সেইডাই বা ক্যামনে জানলি?
সে–আমি কিছু জানি না আপা, ব্যাবাক কথা মুখ ফসকায় বাইর হইয়া গ্যাছে
আমি–সব সত্যি কথা ক কইলাম, না হইলে বাঁইন্দা পিডামু আমার কাজিনসহ পাড়ার ছোট বড় সব ছেলেরাই আমাকে বেশ ভয় পায়। তাই ঋজুকে বেশী ভয় দেখাতে হলো না।
সে–আসলে আপা ময়ূরীর ফ্রেন্ড লিস্টে তুহিন ভাইও আছে
আমি–ময়ূরীডা ক্যাডা সেইডা আগে ক
সে–আপা ময়ূরী আসলে আমগো পাড়ার নয়ন
ঋজুর কথা শুনে হাসির ঠ্যালায় অবাক হতেই ভুলে গেলাম। নয়ন আমাদের পাড়ার ছেলে, নাইনে পড়ে। কিন্তু সে মেয়েদের নামে আইডি খুলে পাড়ার ছেলেদের ফ্রেন্ড লিস্টে কেনো নিছে সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার ছোট ভাই তুহিন এবার ইন্টার পাশ করেছে। ময়ূরী মানে নয়নের ফ্রেন্ড লিস্টে সেও আছে! ভেরী ইন্টারেস্টি! আজ সন্ধ্যায় চায়ের আসরটা বেশ জমবে ভেবে আনন্দিত হলাম।
সে–আপা আইজ রাইতে নাকি নয়ন তুহিন ভাইয়ের লগে চ্যাটিং করবো। আমি নয়নের দলে আছি এই কথা কইয়া এই গোপন তথ্য গুলান শুইনা নিছি
আমি–ওমা তাই নাকি? তাইলে এক কাম কর, তুই নয়নরে ক আমারে রিকু দিতে। পোলার লগে পোলা চ্যাটিং কইরা যুত নাই। মাইয়ার লগে চ্যাটিং এ আমোদ আছে
সে–ওরে বাপরে! নয়ন তোম্রে হেব্বি ডরায়। আর সে তো এই পাড়ার পোলাগো চরিত্র চেক করতাছে। আর মাইয়াগো চরিত্র চেক করলেও আমি শিওর সে তোমারে চেক করব না
সন্ধ্যায় আমরা সবাই এক সাথে আম্মুর রুমে বসে চা খাই। চা খাওয়ার সময় আমরা নানা রকমের হাস্যকর গল্প গুজব করি। আসলে এই সময়টাতেই আমরা এক সাথে হবার সুযোগ পাই। বাবার টান্সফারের পর অফিস দূরে হবার কারণে ভোর বেলাতেই বাবা অফিসের উদ্দেশ্যে চলে যায়। আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই তুহিন প্রাইভেটে চলে যায়। আম্মু রান্নায় বিজি থাকে। সকালের চা টা আমি নিজেই বানিয়ে খাই। শুধু মাত্র সন্ধ্যায় আমরা একত্রিত হই। বলা যায় সারা দিনের মধ্যে সন্ধ্যাটাই হলো আমাদের বেস্ট মোমেন্ট। আর আজ সন্ধ্যার শিরোনাম হবে ময়ূরী, ভাবতেই আমার ড্যান্স দিতে মন চাইছে। আমি সবার সামনেই তুহিনকে বললাম-
–তোর লিস্টে মাইয়া কয়ডা আছে রে ছোট সাহেব?
আমি আমার ভাইকে ছোট সাহেব বলে ডাকি কারণ এর হাব ভাব পুরোটাই সুপার ডুপার সাহেবী মার্কা।
তুহিন–আমার লিস্টে মাইয়া মানে? কি কইতে চাস আপা, আমি একশ একটা প্রেম করি?
আমি–ওমা এইডা কখন কইলাম তরে?
সে–কইলিই তো যে আমার লিস্টে কয়ডা মাইয়া আছে! আম্মা তুমি সাক্ষী আছো, শোনো নাই আম্মা?
আম্মা একবার আমার মুখের দিকে আরেকবার তুহিনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। বুঝলাম আম্মা কনফিউজড।
আমি–বাহ্ তুই তো দেখতাছি অস্কার পাওনের যোগ্যতা রাখছ।
সে–ক্যারে? আমি কি খারাপ কাম করছি যে আমারে কেউ অস্কার দিবো?
আমি–তর ফ্রেন্ড লিস্টে একটাও মাইয়া নাই, এমন আজব ঘটনা জাতি জানলে তরে টাইনা ছ্যাচরায় যাদু ঘরে লইয়া গিয়া জমা দিয়া আইবো
সে–ফ্রেন্ড লিস্টের মাইয়ার কথা কইছস নাকি লিস্টের মাইয়ার কথা কইছস? এই বার আব্বা সাক্ষী। আব্বা আপনেই কন আপা কোনডা কইছে? আব্বা আম্মার মতই মুখ চাওয়া চাওয়ী করে বললো-
–আসলে আমি তো শুনতেই পাই নাই। টোস্ট বিস্কুট খাইতে ছিলাম। টোস্টের বিকট আওয়াজে কথা শুনবার পাইনী তাইনা শান্তার মা? বলেই আব্বা আম্মার দিকে তাকালো। আম্মাও বেশ রাগ হবার ভান করে বললো-
–তোম্রে কইছি এত শক্ত টোস্ট বিস্কুট আইনো না, আইনো না, তাও আনছো। তুমি কি আমার দাঁত ভাঙোনে ষড়যন্ত্র করছো নাকি শান্তার বাপ?
ল্যা হালুয়া! প্রসঙ্গ কই থেকে কই গেলো! কিন্তু ময়ূরীকে চায়ের আসরে আমি এনেই ছাড়বো।
আমি–আইচ্ছ্যা আমার কইতে ভুল হইছে, এইবার ক তর ফ্রেন্ড লিস্টে মাইয়া কয়ডা? আমার কথা শুনে এবার সবাই অবাক হয়েছে মনে হলো। আর ছোট সাহেবের থতোমতো ভাব।
সে–যে কয়ডা মাইয়া আছে সব কয়ডা আমার স্কুল ফ্রেন্ড এর বাইরে অন্য কোনো মাইয়া নাই
আমি–কছ কি? তাইলে ময়ূরী তর ফ্রেন্ড লিস্টে নাই?
এবার ছোট সাহেব হতভম্ব হলো। আম্মা চোখ কপালে তুলে বললো-
–ছিঃ ছিঃ ময়ূরী ওর ফ্যান্ড লিস্টে থাকবো ক্যারে?
আমি–আম্মা তুমি চুপ করো। এই ময়ূরী সেই ময়ূরী না। ছোট সাহেব তুই চুপ ক্যারে?
সে–আমার ফ্রেন্ড লিস্টে ময়ূরী নামের কোনো মাইয়া নাই, তুই অযথা আমারে ফাঁসাইতেছস বুঁয়া আমার ভাইয়ের রাগ হলে আমাকে বুঁয়া বলে ডাকে।
আমি–জানি ময়ূরী নামের কোনো মাইয়া তর ফ্রেন্ড লিস্টে নাই
সে–তাইলে এই সব কইতাছস ক্যারে?
আমি–তর ফ্রেন্ড লিস্টে ময়ূরী নামের একটা পোলা আছে, যারে তুই মাইয়া ভাবস
সে–পোলা মানে
আমি–পোলাডা আর কেউ না, আমগো পাশের বাসার নয়ন। যে এখন এই পাড়ার ময়ূরী
কথাটা বলার পর গোটা ঘরটা একটা নিরবতা বিরাজ করে মিনিট খানেক পর সবাই এক সাথে হাসতে শুরু করলো।
সে–কিহ্ নয়ন ময়ূরী সাজছে? অরে কাইল আমি থাবড়াইয়া সব কয়ডা দাঁত ফ্যালায় দিমু। ফাইজলামী পাইছে নাকি?
আমি–ওর দাঁত ফ্যালাইবি ক্যারে?
সে–পোলা হইয়া মাইয়া সাজছে তাই
আমি–তাতে তর কি? এখন বহুত পোলা এই কাম করে, কয় জনরে থাবড়াইবি?
সে–ব্যাবাক পোলা তো আর আমার ফ্রেন্ড লিস্টে নাই
আমি–তাইলে ময়ূরী তর ফ্রেন্ড লিস্টে আছে কইতাছস?
সে–এই বুঁয়া এইডা কখন কইলাম?
আমি–বুঝছি আর কিছু কওন লাগবো না। তয় আইজ রাইতে ময়ূরীর ডিউটি পড়ছে তর লগে চ্যাটিং করার
সে–আমি অহনই অরে ব্লক মারুম
আমি–ফ্রেন্ড লিস্টে নাই তাইলে ব্লক মারবি ক্যারে?
সে–আসলেই তুই একখান বুঁয়া। এই আম্মা তুমি এরে দিয়া কাইল থাইকা বাড়ির সব কাম করাইবা
আমি–আম্মা তুমিও কি তোমার পোলার লগে একমত?
আম্মা–আমি কিছু শুনি নাই, মরার টোস্ট বিস্কুট
আব্বা–কাইল থাইকা আর টোস্ট আনুম না, শান্তার মা তুই হাইপার হইও না
আম্মা–আমার প্রেসার নাই, হাইপার হইলে কিচ্ছু হইবো না
আব্বা–আসলে এই সব শুনতে গিয়া আমার চা ঠান্ডা হইয়া গ্যাছে, আমারে আরেক কাপ চা কইরা দিবা শান্তার মা?
আম্মা–মনে তো হইতাছে সবারই চা ঠান্ডা হইয়া গ্যাছে। যাই চা বসাই
তুহিন–এই বুঁয়ার লাইগ্যা চা ঠান্ডা হইছে তাই চা অহন এই বুঁয়াই বানাইবো, বুঝছো আম্মা?
আমি–আমি তরে ময়ূরীর কবল থাইকা উদ্ধার করলাম তার প্রতিদান তুই এম্নে দিতাছস হাম্রী
সে–বাপ মায়ের সামনে তরে উদ্ধার করতে কে কইছে?
আমি–আব্বা আম্মা তো শোনে নাই। কি আব্বা তুমি শুনছো?
আব্বা–আমি কুড়মুড় ছাড়া কিচ্ছু শুনি নাই, আর জানিস তো আমার বয়স হইছে আমি কানে কম শুনি, তর মা না চিল্লাইলে আমি শুনতেই পাই না। কি কও শান্তার মা?
আমি–আম্মা তুমি শুনছো?
আম্মা–মরার টোস্ট বিস্কুটরে আমি কোরবানী দিমু। যাই চা বসাইগা
তুহিন–ময়ূরী কাইল আমি তরে খাইছি…..