শুভ তুই? কোথায় ছিলি এতদিন? ফোনটাও অফ ছিল কেন?
=হুম আমি, ছাড়না ঐসব! কেমন আছিস বল?
=ভাল না, তুই?
=আমিতো বেশ ভালই আছি.
কথাটি শুনেই শুভর দিকে তাকায় ইতি,
=কিরে কি ভাবছিস?
=কৈ নাতো?
=চল ক্লাশে যাই?
বলেই শুভ ইতির হাত ধরে বসা থেকে টেনে তুলল। ইতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভর হাতের দিকে। আসলে ইতি ও শুভ খুব ভাল বন্ধু। খুব ভালও বাসে দুজন দুজনকে। কিন্তু বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে কেউ কাউকে বলতে সাহস পাচ্ছেনা।
আজ ইতির জন্মদিন। শুভ ভাবছে আজ যে করেই হোক ইতিকে তার মনের কথাটা বলেই তবে ছাড়বে। শুভ একটা ফুলের তোড়া নিয়ে এল ইতির জন্য। ইতিও ফুল খুব পছন্দ করে।
কিন্তু ঐদিকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই রনির সাথে দেখা। রনি ও শুভ খুব ভাল বন্ধু। রনি শুভর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,
=দোস এটা ইতির জন্যই এনেছিস তো?
=হুম..
=তাহলে দে আমিই দিয়ে আসি? প্লিজ দোস তুই না করিস না?
কথাটা বলেই রনি ফুলের তোড়াটা নিয়ে ইতির দিকে এগিয়ে গেল। ইতির জন্মদিনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করল রনি। রনি জানত যে আজ অন্তত ইতি রাগ করবেনা। রনি ফুলের তোড়াটা ইতির দিকে বাড়িয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ল। ইতিকে Happy birthday না বলে বলল,
=ইতি I love U.
হঠাত্ রনির মুখে এমন একটা আজগুবি কথা শুনে সব বন্ধুরা চমকে উঠল। আর ইতি তো হাবলু মেয়ের মত হা করে দাড়িয়ে আছে। রনি কি বলছে এইসব? ওর কি মাথা ঠিক আছে?
=রনি তুই কি কিছু খেয়েছিস?
=না ইতি আমি ঠিকি বলছি?
=আমি তোকে ভাল বন্ধু মনে করি
=তাতে কি? এখন থেকে ভালবাসবি?
পাশে দাঁড়িয়ে বোকার মত কথা গুলো শুনে যাচ্ছে শুভ। কিছুক্ষনের জন্য কেঁপে উঠল শুভর স্পন্দন। চোখের সামনে কি হতে যাচ্ছে এইসব? তবুও মুখের কোনে কষ্ট গুজে এক গাল হাসি দিয়ে বলল,
=আরে এতো খুশির খবর। রনি আজ কিন্তু ক্যান্টিনের সব বিল তুই দিবি?
=ওকে বস্! কিন্তু ইতি তো এখনো কিছুই বলছে না?
=আরে মেয়েরা কি সবকিছু মুখ ফুটে বলে নাকি?
কথাটি শেষ করেই ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
=আরে বোকা তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? ফুলটা তো আগে হাতে নে?
ইতি ঐসময়ে আর কোন উপায় না পেয়ে রনির হাত থেকে ফুল টা নিল। ভিতরে ভিতরে কেঁদে উঠল ইতি। ভাবল, এতই যদি মেয়েদের ব্যপারে এতই জানো তাবে আজ কেন বুঝতে পারছনা আমার মনের কথা? কেন বুঝতে চাওনা আমি কি চাই? কথাগুলো ভাবতেই চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল ইতির। যা শুধু শুভর চোখেই ধরা পরল।
আজ ১সপ্তাহ ধরে ইতিকে আর দেখা যাচ্ছে না ক্যাম্পাসে। ঐদিকে রনিও ইতিকে খুজে খুজে পাগল হয়ে যাচ্ছে। শুভও রনিকে কিছু বলেনি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে। যাইহোক তার ঠিক ৩মাস পরেই ইতি ও রনির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। ইতিও রাগে আর অভিমানে ফুলে আছে শুভর উপর।
আজ ইতির বিয়ে। লাল শাড়ীতে ইতিকে ডানা কাটা পরীর মত লাগছে। বিয়ের দিন শুভকে দেখে ইতি কেঁদে উঠল। শুভকে ডেকে ইতি তার রুমে নিয়ে গেল এবং ভিতর থেকে দরজা লক করে দিল।
=ইতি কি করছিস? কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।
ইতিটা শুভকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠে বলল,
=শুভ তুই কি আমাকে একটুও ভালবাসিস না সত্যি করে বলতো?
=ইতি তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি?
=আমাকে নিয়ে পালাবি বল?
=কি বলছিস ভেবে বলছিস তুই?
=আমি ঠিকি বলছি।
=ইতি ছাড় বলছি?
ইতি আরো শক্ত করে বুকে চেপে ধরল শুভকে। শুভ বলল,
=মাথা ঠান্ডা করে কাজ করবি।
এমন কিছু করবি না যাতে সমাজের কাছে সারা জীবন অপরাধী হয়ে থাকতে হয়।
কথাটি বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল শুভ। ঐদিকে অঝরে কেঁদে চলল ইতি। বিয়ে হয়ে গেল ইতির।
শুভ তার সেই না বলা কথাটি বুকে নিয়ে নিরবে চলে গেল।
আজ ইতির বিয়ের ৬মাস গত হল। ইতি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। খবর পেয়ে শুভ হাসপালে গমন করল। ঐদিনি ইতিকে শেষ বারের মত দেখে নিল শুভ।
শুভ তার একটা কিডনি ডোনেট করল ইতির জন্য। ইতি এখন সুস্থ। কিন্তু কে কিডনি দিল তা এখনো জানতে পারলনা ইতি ও রনি। ইতি আজো খুজে বেরাচ্ছে শুভকে। কিন্তু কোথাও খুজে পেল না। অনেক খুজার পরেও ইতি হাল ছাড়ল না। শুধু খুজেই চলছে।
হয়তবা এখন আর খুজে কি হবে? তবুও অনেক দিন ধরে চোখে পরছেনা শুভর সেই মুখটি।
আজ ৩বছর হল এখনো দেখা মিলেনি শুভর। ইতি আর রনি একটা শপিংমল থেকে নামছিল। নিচে একটা পাগলকে লক্ষ্য করল ইতি। তার হাতে একটা কাগজের পুটলি ছিল। সে ঐখান থেকে একটা একটা কাগজ বের করে একটু দেখে আবার পুটলির ভিতরে ভরে রাখে। ইতির কেন যেন মনে হল এটাই বুঝি শুভ।
কাছে এগিয়ে গেল ইতি। লম্বা লম্বা চুল-দাড়ি আর পরনে ছেড়া-ফাটা কাপড়। দেখে চেনাই যাচ্ছে না যে এটাই শুভ। হঠাত্ একটা দাড়োয়ান এসে পাগলটার হাত থেকে পুটলিটা রাস্তায় ছুড়ে মারল এবং তার ঘাড় ধরে বের করে দিল।
পাগলটা ছুটল তার সেই মহা মূল্যবান পুটলিটার দিকে। কিন্তু একটা কাগজ উড়ে এসে ইতির পায়ের কাছে পড়ল। ইতি কাগজটা খুলে পড়তে লাগল।
*ভালবাসা কাকে বলে জানিনা। তবে কাউকে সারাক্ষন মিস করা আর তাকে নিয়ে ভাবনাতেই মশুল থাকাই যদি ভালবাসা হয়, তবে আমিও একজনকে ভালবাসি। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। যাকে মনের রাজ্যে রানী করে সারা জীবন আগলে রাখার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছি। সে আর কেউ নয়,
সে হল আমার সেই ইতি। যাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে সময় পার হত। যাকে এক মূহুর্ত না দেখলে থাকতে পারতাম না*
চিঠিটা পড়েই ইতি চিত্কার দিয়ে উঠল। ঐদিকে কারো শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগের শব্দ পেয়ে দৌড়ে গেল ইতি ও রনি। হ্যাঁ এটাই সেই শুভ।
একটা গাড়ির নিচে চাপা পড়ে রাস্তার এক পাশে পরে আছে মৃত দেহখানি। সাথে কিছু উড়ো চিঠি। যে চিঠি গুলো ইতিকে ভেবে প্রতিটা রাতে লিখেছিল শুভ। যে চিঠির প্রতিটা পাতায় ইতির স্মৃতি আঁকা আছে।
আজ সে রাস্তার এক পাশে পরে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। ইতি পাগলের মত চিত্কার দিয়ে ঝাপিয়ে পরল শুভর বুকে। চিত্কার দিয়ে কেঁদে উঠল সে। তারাতারি রাস্তায় পরে থাকা সব চিঠিগুলো কুড়িয়ে শুভকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেল। নাহ শুভ আর নেই। ইতি শুভর বুকের উপর বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠল।