গল্পের গল্প

গল্পের গল্প

একটা গল্প লিখবো ভাবছি। সেই কবে থেকেই ভাবছি। কিন্তু মাথায় কোনো থীম আসছে না। একটা গল্প লেখার জন্য খাওয়াদাওয়া চান্দে উঠেছে। সোনার চেহারা কালো বাতি হয়ে যাচ্ছে। কালকে হঠাৎ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে ঝিম ধরে বসে আছি। মা এসে বললোঃ-

– কী হইছে?
– গল্প লিখবো।

বুঝলাম না কী এমন বলেছি। মা হো হো করে হেসে সারা বাড়ি মাথায় তুলে নিলো। তারপরে তেতো করল্লা এনে বললো, খাইয়া দেখ কোনো কাজ হয় কী না। আধ ঘুমে রাত পার হলো। সকাল সকাল সব কিছু ঠিকঠাক করে বসলাম গল্প লিখবো। এবার লিখবোই। তখনই ছোট ভাই হাজির। মিচকা শয়তানের মতো লুকোচুরি হাসি হেসে বললোঃ-

– ভাই, এটেনশান গানটা চালাও তো।
– ক্যান?
– শুনবো।
– এই গানের কী মাথা তুই বুঝিস? বলতো এটেনশান মানে কী?
– বুঝবো না কেনো? এটেনশান মানে হচ্ছে মনোযোগ।
– ধুর, এটেনশান মানে হচ্ছে চিন্তা।
– মাথা তোমার পুরাই গেছে।

খরগোশটাকে বিদায় করতে গানটা চালালাম। সে একটু দূরে গিয়ে গানটা ব্যাঙ্গিয়ে বাংলা ভার্সন গাইলো, আমার মুতা ধরছে মুতা ধরছে অহ। আছি খুব চিন্তাতে। তুমি লাফালাফি করে আমার মনোযোগ পাবা না, আমার মুতা ধরছে!
ভাগ্য ভালো চারলী সাহেস এই ভার্সন শুনে নি! নাহলে হার্টফেল করতো। খরগোশটার কার্যকলাপের কারণে আর গল্প লিখতে ইচ্ছে হলো না। গল্পের থীম খুঁজতে বাড়ি থেকে বের হলাম। বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসলেই শুধু বালিকা আর বালিকা। কেউ ভার্সিটি যাচ্ছে কেউ স্কুলে যাচ্ছে।

কলেজের বালিকাদের বেশি দেখা যায়। এদের মাঝে আমার নায়িকাকে আমি খুঁজেই পাই না। একটা পরিচিত দোকানে বসে চা’য়ে চুমুক দিচ্ছি। হঠাৎ কেউ যেনো সামনে দিয়ে গেলো। আমার মনটাকে উথালপাতাল করে দিয়ে। এই তো পেয়েছি আমার গল্প! সোজা এক দৌড় দিয়ে বালিকার সামনে গিয়ে বললাম, তুমি কী আমার গল্পের নাইকা হবে? বালিকা মুচকি হেসে বললোঃ- আমি আমার বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছি। মুহূর্তেই আমার গল্পের থীম ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে গেলো! আমি এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে এসে পরলাম। বাড়িতে এসে আরেক বালিকার দেখা পেলাম। হায় হায় কী আগুন সুন্দরী। নিশ্চিত ছোট বোনের বান্ধবী। আমি গিয়ে ভদ্র ভাবে বললামঃ-

– আপনার নাম কী?
– সেতু। জাবিনের বান্ধবী। কেনো ভাইয়া?
– নাহ মানে আমাদের বাড়িতে নতুন তো সেজন্য জিজ্ঞেস করলাম।
– আমি তো এর আগে ও বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছিলাম। আপনি দেখেন নি?

আমার আর জবাব দেয়ার মন থাকলো না। মনে মনে ওয়াঁ ওয়াঁ করে কাঁদতে কাঁদতে রুমে ফিরলাম। আমার গল্পের নাইকা মনে হয় পৃথিবীতে নেই। তাই কল্পনাতেই নাইকা বানিয়ে গল্প লিখতে বসলাম। ঠাস করে কী যেনো শব্দ হলো। বাইরে দৌড় দিয়ে দেখি এক টেম্পুর চাকা ফুটছে। চাকা ফুটবার আর জায়গা পেলো না! মেজাজটাই খারাপ হলো। আমার মনে হয় গল্প লেখা আর হবে না। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফোনে গেমস খেলা শুরু করলাম। তখন টিংটিং করে ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই এতো মধুর সূরে একজন ভাইয়া ডাকলো। আহা আমি মনে হয় গল্পের নাইকা পেয়ে গিয়েছি। আমি তাড়াহুড়ো করে বললামঃ-

– হ্যাঁ আমিই সিয়াম। কিছু কী বলবেন? বলে ফেলুন কোনো সমস্যা নাই।
– আসলে ভাইয়া আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ড কাজি অফিসে। কোনো সাক্ষী পাচ্ছি না। যদি একটু আসতেন।

এবার আমার গল্পের থীম ভেঙ্গেচুরে দুই আকার হয়ে গেলো। সিদ্ধান্ত স্থির করেছি। আর গল্প লেখার ধারে কাছে ও যাবো না। বিকেলে ফেসবুকে ঢুকলাম। ভাবছি একটা স্যাড স্ট্যাটাস দিয়ে দিবো। তার আগে মেসেজ রিকুয়েস্ট চেক করতে গিয়ে দেখি এক সুন্দরী ললনা বলেছে, ভাইয়া আপনি খুব পঁচা। সেই কবে রিকু দিয়েছি। এখনো এক্সেপ্ট করেন নি! আমি মনে মনে বললাম, এবার আমি গল্পের থীম পেয়েই গিয়েছি। আর ঠেকায় কে? গল্প এবার লিখবোই। এক্সেপ্ট করে মেসেজের উত্তর দিলামঃ-

– কে গো তুমি ললনা? কারো লগে করছো কী ছলনা? দিন গেলো রাত গেলো। রিপ্লে তো আর আসে না। এক সপ্তাহ পর রিপ্লে আসলোঃ-
– না তো ভাইয়া। আমি খুশিতে গদগদ হয়ে মনে মনে বললাম, ইয়েস, শী ইজ সিঙ্গেল। আমি আবারো রিপ্লে দিলামঃ-
– কেনো? তুমি এতো সুন্দর, আর কারো সাথেই ছলনা করো নি?
– কীভাবে করবো বলেন, বর আমাকে যেই নজরদারিতে রাখে। আমার মেজাজটা সেই লেভেলের খারাপ হলো। রাগে দুঃখে রিপ্লে দিলামঃ-
– আচ্ছা আপনার সমস্যা কী? আপনি যে মেরিড তা প্রথমে বলা যেতো না হুম?

সব কিছু ছেড়ে এখন আমি পড়ায় মন দিয়েছি। হ্যাঁ অনেক অনেক বই পড়বো আজকে থেকে। গল্প দিয়ে শুরু উপন্যাস দিয়ে শেষ হবে। একটা বই বের করলাম শেক্সপিয়রের। কিন্তু এ কী? বইয়ের ভিতরে দেখি গোলাপ ফুল। তার সাথে একটা প্রেম পত্র। আমার বুক ধড়ফড় করছে। বইটা ভালো করে উপর নিচ দিয়ে দেখলাম। হ্যাঁ বইটা তো আমার! দুদিন আগে না পাশের বাসার চুমকি নিলো। আজকে মনে হয় ফেরত দিয়ে গিয়েছে। প্রেম পত্রটা পড়ে নিজেকে ধন্য করলাম। আবেগ আর সইলো না। আমার গল্পের নাইকাকে আমি খুঁজে পেয়েছি। দৌড় দিয়ে চুমকির বাড়িতে গেলাম। চুমকি চুমকি বলে ডাকতেই চুমকি বের হলো। আমি লজ্জায় লাল হয়ে বললাম, চিন্তা করো না। আমি তোমার চিঠি পেয়েছি। আর আমি ও রাজি। বলেই দৌড় দিতে চাইলাম। চুমকি বললোঃ-

– এইযে দাঁড়ান। আমি দাঁড়ালাম। চুমকির দিকে যেনো তাকাতেই পারছি না। চুমকি ও লজ্জায় লাল হয়ে ওড়না কামড় দিয়ে বললোঃ-

– আসলে ভাইয়া, কীভাবে যে বলি, চিঠিটা আপনার বন্ধুর বইয়ে দিতে গিয়ে আপনার বইয়ে দিয়ে ফেলেছি!
কথাটা শুনার সাথে সাথে আমি মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে মাঠিতে পরে গেলাম। আমার আর গল্প লেখা হলো না!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত