রোমান্টিক বেয়াই

রোমান্টিক বেয়াই

ও সুন্দরী, আছো নাকি ফ্রী ’ পেছন থেকে কারো কণ্ঠে এই কথাগুলো শুনতেই আঁখি ভূত দেখার মতই চমকে উঠে থমকে দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালো। সুদর্শন এক যুবক পুনরায় বলল, ‘ মাশাল্লাহ তোর ঝেল্লা আমায় ঘায়েল করেছে।’ আঁখি দু’পা সামনে এগিয়ে এসে বলল, ‘ এই, অদ্ভুত তো, কে আপনি, আর এগুলো কী বলছেন?’ যুবক পেছনে কলারের সাথে ঝুলিয়ে রাখা সানগ্লাসটা চোখে পড়ে মুচকি হেসে বলল, ‘ আমি বেয়াই।’

: বেয়াই মানে?

: মানে আপনি একপ্রকারে আমার ভাই অথবা বন্ধুর শালী। সুতরাং আপনি আমার বেয়াইন, আমি আপনার বেয়াই।

: ঐ আপনার মাথা ঠিক আছে তো?

: ঠিক থাকবে কেমনে, এতক্ষণ ঠিক ছিল, আপনারে দেখার পর সব শেষ, এখন মাথার মধ্যে চরকির মতন খালি আপনি ঘুরতাছেন, মনের অন্যসব ফাংশন এক প্রকার হ্যাং হইয়া আছে।

: ঐ, আপনি কী বলছেন এসব?

: কি বলছি হেইয়া বলমুয়ানে পরে, আগে বলেন সিট খালি আছে।

: অদ্ভুত তো!

: বেয়াইন, আপনি অদ বলেন আর ভূত বলেন, আপনার জন্য সবই হইতে রাজি, শুধু একবার বলেন ভালোবাসি।

আঁখি মুচকি হেসে বলল, ‘ বাপরে! চিনলাম না, জানলাম না, ডাইরেক্ট ভালোবাসাবাসি।’

: কি বলেন চিনলাম না জানলাম না, আমার তো মনে হয় আপনি আমার জনম জনমের চেনা, আদিম যুগে মোবাইল টেলিফোন ছিলনা তাই যোগাযোগ করতে পারিনাই।

: তাই নাকি?

: তয় আবার কী, মনের মানুষকে সবকথা ভাইঙ্গা বলা লাগে নাকি, তার তো মনের ওয়্যারলেস কানেকশনের মাধ্যমে বুঝে নেবার কথা।

: আচ্ছা আচ্ছা, তো এবার আপনার নামটা বলবেন প্লিজ!

: আমার নাম আহাম্মেদ সুলেমান, তুমি আমায় ভালোবেসে সালমান ডাকলেই ধন্য হতাম সুন্দরী।

আঁখি মনে মনে বলল, ‘ কাম সারছে, পুরনো পাগল ভাত পায়না, নতুন পাগলের আমদানি।’ সুলেমান বলল, ‘ নীরবতা কিন্তু সম্মতির লক্ষ্মণ বেয়াইন। এইরকম রোমান্টিক মুহূর্ত সাইলেন্ট মুডে থেকে বরবাদ করবেন না প্লিজ।’

: এতো রোমান্স আসে কোথা থেকে অ্যা?

: বেয়াইন, আপনি রাজি থাকলে শুধু একবার এক চাপেন, এই হৃদয়ে রোমান্সের পানিভর্তি সুইমিং পুলে চুবাইয়া যদি আপনার সর্দি কাশি না বানাই তখন বলবেন।

: এই না না, আমার সর্দি কাশির দরকার নাই, আমি এরকমই ভালো আছি।

: এই মূহুর্তে একটা সঙ্গীত পরিবেশন করতে না পারলে ব্যর্থতায় আমার বুকটা ফেটে যাবার সম্ভাবনা আছে বেয়াইন, অনুমতি দিলে শুরু করি।

: করেন করেন।

সুলেমান গান শুরু করলো, ‘এতদিন কোথায় ছিলে, ও আমার ভালোবাসা, তুমি একা আমি একা, আগে কেন হয়নি দেখা।’ গান শেষে সুলেমান বলল, ‘ কী বেয়াইন, আমার গান আপনার হৃদয়ে দোলা দিয়া উল্টাইয়া পাল্টাইয়া ভালোবাসার ভুমিকম্পের উদয় ঘটাইয়া ফালাইছে নিশ্চয়ই।’ আঁখি মুচকি হেসে বলল, ‘বেয়াই, হৃদয়ে ভুমিকম্প না হইলেও কানের পর্দার উপর দিয়ে কিন্তু কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। আর একটু সময় গাইলেই ভালোলাগার উত্তেজনায় ভিরমি খেতাম নিশ্চয়ই।’

: বেয়াইন, ভালোবেসে ঘাসফুল দিলেও সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে দামী, ভালোবেসে বিশ্রী সুরে গাইলেও মধুর, তাই আপনার জন্য গাইলাম আমি।

: বাহ! ভালো তো।

: বেয়াইন, আপনার বাসা কোথায়?

: ঢাকায়, আপনার?

: আমার কথা বলা লাগে, আমি তো সেই বিখ্যাত এলাকার ছেলে।

: না বললে বুঝবো কী করে, কোন বিখ্যাত এলাকার।

: আই এম ফ্রম বরিশাল, মেইড ইন বরিশাল।

: ও আচ্ছা, লঞ্চে করে আসছেন?

: কেন, সেকথা বললেন কেন?

: না, সবাই তো প্রায় ওভাবে আসে।

: নসিব বেয়াইন নসিব, উপরে আকাশ, নিচে জল, সেই জলে গভীর রাইতে জোছনা টলমল, প্রকৃতির মুক্ত বিশুদ্ধ হাওয়া, কজনের কপালে জোটে সেই হাওয়া খাওয়া। শুয়ে বসে ভ্রমণ, হেটে ঘুরে ভ্রমণ, রাজকীয় অনুভূতি। নিজেকে যদি কপালপোড়াদের লিষ্টে রাখতে না চান, জীবনে একবার হইলেও লঞ্চে চড়ে দেখবেন।

: আচ্ছা, তা এই বিয়ে বাড়িতে এত মেয়ে থাকতে আমার পেছনে লেগেছেন কেন?

: ঐ যে, আপনাকে দেখে টাস্কিত, পুলকিত, রোমাঞ্চিত, মনের ওয়াইফাই অটোমেটিক চালু হতেই বুঝলাম হটস্পট আশেপাশেই আছে। হা,হা করে হেসে উঠে আঁখি বলল, ‘ আপনি তো খুবই মজার মানুষ, মানুষকে হাসানোর অদ্ভুত ক্ষমতা আছে আপনার মাঝে।’

: ধন্যবাদ, ভালোবাসলে জীবনটা হাসি খুশিতে ভরিয়ে দেবার দায়িত্ব আমার।

: আচ্ছা ভালো বাসলে আর কি করবেন?

: যা দেখতে পারবেন তা শুনে কী লাভ।

আঁখি ভেংচি কেটে বললো, ‘ বরিশাইল্লা ভালোবাসা আমার লাগবে না,’ তারপর চলে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই পেছন থেকে সুলেমান ডেকে বলল, ‘ ও মনু, বরিশাইল্লার মন বুঝলি না, ওরে ঢাকাইয়া; চান্দের দ্যাশে লইয়া যামু, আমি তোরে ভাগাইয়া।’ আঁখি পেছন ফিরে বলল, ‘ বরিশাইল্লার মন চাইনারে আমি ঢাকাইয়া। চান্দের দেশে শখ নাই যাবার, পারলে নিয়ো ভাগাইয়া।’ আঁখি চলে যাচ্ছে, সুলেমান চেচিয়ে বলল, ‘ চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড, হেরে যেতে আসিনি, বউ করে ঘরে নিয়ে যাবো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত