বিয়ের দিন পাত্রী পলাতকা!এমন একটা নিউজ হয়ত আগামীকাল আমাদের আঞ্চলিক পত্রিকাতে ছাপানো হবে।তাতে কি আমার ছবি দেওয়া থাকবে! বুঝতেছিনা। যাই হোক,বিয়ের আসর ছেড়ে পালানোর মত কষ্ট মনে হয় পৃথিবীতে দু’টো নেই।শারীরিক, মানসিক দু’ধরনের কষ্টভোগ করতে হয়।ধরা পড়ার মানসিক কষ্ট আর পালাতে যথেষ্ট স্টামিনা ক্ষয় হয়। কি ভাবছেন? বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালাচ্ছি? আজ্ঞে নাহ! আমি জন্মগত সিঙ্গেল,রিলেশনশিপে অবিশ্বাসী বালিকা।উনিশ বছরের মেয়েদের তো বালিকাই বলে সম্ভবত!
এই পালানোর পিছনে অবশ্য আব্বুর কিছুটা দোষ দেওয়া যেতে পারে। আমি কখনো ভাবিনি যে আমার এমন হুট করে বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।তাও আহানের মত একটা ছেলের সাথে! বাবা একটিবারের জন্য ও আমার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না! আমার ভাবতেও কষ্ট লাগছে।নাহ! আহান মোটেও খারাপ ছেলে না।বরং একটু বেশি ভাল,এখানেই যত ঝামেলা।আমি রোদসী,পাত্রী হিসেবে আহানের যোগ্য না।একেবারেই না।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ বিয়ে করবোনা।আর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেছি।
আজ আমার বিয়ে,আমি খুব কষ্ট করে পালিয়ে এসছি।পালাতে আব্বুর শ্যালক ও আম্মুর ভাই অর্থাৎ আমার মামা আমাকে অজান্তেই সাহায্য করেছেন। এখন রাত ১২:১১।রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলো।চারিদিকে গাড়ির হর্ন ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ছেনা।একটু পর হয়তো কিছু মাতালের দল দৃশ্যমান হবে। কিন্তু তার আগেই একটি গ্রিন রঙের বাইক আমার সামনে এসে থামলো। বাইকটাতে অবশ্যই একটা ছেলে বসে আছে।হেলমেট না খুললে নবাবের মুখদর্শন করতে পারবোনা। বাইকার হেলমেট খুললো।আমি রীতিমত অবাক! আগন্তুক ও যথেষ্ট অবাক।
আগন্তুক:-কিরে! তুই এখন এখানে??
আমি এখনো অবাক হবার পর্ব চুকাইতে পারিনি।আগন্তুক ও পারেনি।ইতস্ততভা বে দাঁড়িয়ে রইলাম দু’জনেই।আমার বাকশক্তি এবং শ্রবণশক্তি দু’টোই লোপ পেয়েছে।বিপরীত জনের কথা শুনেও শুনছিনা এমন অবস্থা।
কথায় আছে,”যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়”।আমারো এমনি হয়েছে। আমি আহানের সাথে বিয়ে না করার জন্য পালিয়েছি।আর রাস্তায় কিনা ওর সাথেই দেখা হওয়া লাগবে!মনে হয় আমাদের টেলিপ্যাথিক যোগ আছে। একটু বলি,আহান আর আমি সেই ছোট্টকাল থেকে ফ্রেন্ড।দুষ্টুমিতে যেমন আমি নম্বর ওয়ান,ভদ্রতাতে আহান নম্বর ওয়ান।ফ্রেন্ডশিপটা ভালোই ছিল।আমার অ্যসাইনমেন্ট সহ সব কাজ আহান করে দিত।মাঝখান থেকে কেমনে যে বিয়েটা ঠিক হলো! বুঝলাম না। আহানের মত ভাল ছেলেরা বন্ধু হিসেবে পারফেক্ট। তবে,আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে না।
আহান:-কোথায় যাবি বল।নামিয়ে দিয়ে যায়।
আমি:-তুই এত রাতে! কোথা থেকে আসলি?
:-আমারো তো একই প্রশ্ন।আমি আঙ্কেলের বাসা হয়ে বাসায় যাচ্ছি।
:-তুই এত রাতে বাসায় ফিরছিস কেন?
:-আমার কথা ছাড়।তুই এত রাতে একা এই রাস্তায় কি করিস?
:-পালাচ্ছি আমি।
:-মানে? কেন পালাচ্ছিস?
:-বিয়া করবোনা তোর সাথে তাই।
:-কিহ! মাথা খারাপ তোর? আমার বিয়া হবে কিসের দুঃখে?হাহাহা,,,,
:-তাহলে আমার বিয়া কার সাথে? আমার কথা শুনে আহান অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
:-তোর মাথা ঠিক আছে?
:-আমাকে বাসায় পৌছে দিবি একটু?
:-হুম।উঠ
বাসায় পৌঁছুতে ১:৩০ বেজে গেছে। আব্বু, আম্মুসহ অনেক মানুষ নি:শ্চুপ বসে আছে ডাইনিং এ।অনেক মানুষ বিয়েবাড়িতে থাকাটা অস্বাভাবিক না।আমি সবার মুখের দিকে লক্ষ্য করলাম। আমাকে এখনো কেউ দেখেনি।চুপিচুপি রুমে চলে যাবার ও উপায় নেই।আহান আমার পিছে দাঁড়ানো আছে। আম্মুর চোখে জল শুকিয়ে লেগে আছে কিছুটা।সবার মুখেই উদ্বিগ্নতা ফুটে উঠছে। আমার বড় আপুকে দেখছিনা শুধু। ওর ঘুম অবশ্য একটু বেশি।হয়ত জেগে থাকতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আব্বুর হাতে কফির কাপ।আমি জানি,আব্বু দুশ্চিন্তা করলে অনেক কফি পান করেন। অনেকে ধুমপান করে।তবে,আব্বুকে কখনো ধুমপান করতে দেখিনি। আব্বুকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম,কফি এত পছন্দ করার কারণ কী?
আব্বু বললেন,”কফিতে ক্যাফেইন নামক এক প্রকার উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে।কফির উপাদান ক্যাফেইনের জন্যে কফি মানুষের উপর উত্তেজক প্রভাব ফেলে ও উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে” তার জন্য আব্বু কফি প্রেফার করেন। আমি ভয়ার্ত কণ্ঠে আব্বুকে ডাকলাম। কিন্তু আশ্চর্যকথা হচ্ছে,সকলেই আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আব্বু কখনো আমার গায়ে হাত তুলেননি। আজ ঠাস করে গালে চড় দিলেন। আমি কান্না না করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। আহানকে দেখে আব্বু আরো রেগে গেলেন। আহান আব্বুকে ঘটনাটা বললে,আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
আব্বু:-তুমি এত রাতে রাস্তায় কেন ছিলে?
আমি:-তুমি আমাকে না জিজ্ঞেস করে আহানের সাথে আমার বিয়ে কেন ঠিক করলে?
:-মানে? কবে?
:-ভান না ধরে সত্যিটা বলো।
:-তোমার বিয়া কখন ঠিক করলাম? আজ তো তোমার আপু রিপার বিয়ে। আহান যুক্তরাষ্ট্র থাকে।
তোমার দুলাভাই হবে। আর সবে তো তোমার উনিশ বছর বয়স।বড় মেয়ে রেখে তোমার বিয়ে কেন দিব? আমার ভুলটা বুঝতে পারলাম। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আব্বুর দিকে। আমার চোখ দিয়ে অনর্গল জল ঝরছে। আব্বু আমাকে অনেক বেশি ভালবাসে তাই বুকে টেনে নিয়ে বললেন,”তোমার বিয়ে নিজের ইচ্ছামত করবা। আমি বাধা দিব না মাম্মা।” আহান,আমার হাদারাম বন্ধুু হাসছে দূরে দাঁড়িয়ে।