বিরিয়ানি বিভ্রাট

বিরিয়ানি বিভ্রাট

সকাল আটটায় বয়ফ্রেন্ডকে কল দিলাম, কি করো?

–রান্না করি। কার জন্য?
–তোমার জন্য। ওয়াও!কি রান্না করো।

–বলা যাবেনা।কড়াইয়ে তেল দিছি,পুড়ে যাবে।ফোনে কেটে দিল টিট টিট শব্দ হলো। যে ছেলেটা চা বানাতে জানেনা সে আমার জন্য কড়াইয়ে তেল গরম করে কি রান্না করছে।এমন বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। সকাল নয়টায় অনলাইনে দেখে মেসেঞ্জারে দ্বিতীয়াবার অডিও কল দিলাম,কি করো?ফোন কেটে দিয়ে কোনো রেসপন্স নাই কেন?

–আরে কড়াইয়ে তেল পুড়ে যাচ্ছে।ফোন রাখ ফ্রি হয়ে কল দিচ্ছি। ডিস্টার্ব করোনা। একঘন্টা আগে তেল দিলা আর এতোক্ষণ পর তেল পুড়া যাচ্ছে,কি বলো এসব। এতো তেল গরম করে কি রান্না করছো?একঘন্টা আগেয়েতো বললা রান্না করছ।

–ডিস্টার্ব করোনা,তোমার প্রিয় খাবার বানাচ্ছি। ওহুম!আমি কতো লাকি,আমার বয়ফ্রেন্ড আমার প্রিয় খাবার আমাকে রান্না করে খাওয়াচ্ছে।তোমার রান্নার কথা শুনে আমার বিয়ের কথা মনে পড়ে গেল। বিয়ের পর তুমি আমাকে এভাবে রান্না করে খাওয়াবেতো?

–আহহা!বিয়ের আলোচনা পরে হবে।তুমি লাইন কেটে দাও প্লিজ। কি রান্না করছো দেখতে ইচ্ছে করছে।একটা ভিডিও কল দি ?তারপর আর দিবোনা।

— নাহ দিওনা।ইউটিউব দেখে রান্না করছি। ডিস্টার্ব করোনা।দুপুরে পার্কে চলে এসো।তখন কি রাঁধছি দেখিও। আমাকে এতোটাই ভালোবাসো?

–হুম,অনেক ভালোবাসি।আর ডিস্টার্ব করোনা।রান্নায় গন্ডগোল হয়ে যাবে। বয়ফ্রেন্ড আমার সত্যি অনেক ভালোবাসে।কয়েকদিন ধরে বলে আসতেছে,আমার জন্মদিনে সে নিজের হাতের রান্না করা একটা ডিস আমাকে খাওয়াবে। দুপুর বারোটা বাজে।দুজন পার্কের বেঞ্চে বসে আছি। রাসেল (বয়ফ্রেন্ড) বিরিয়ানি রান্না করে আনছে। চারপাশে বিরিয়ানির গন্ধ ভুঁ ভুঁ করছে।কয়েকটি কাক গাছে বসে আমাদের দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হটপট খুলতে নাকে অদ্ভুত এক গন্ধ এলো।

কাকগুলো কা কা করে উড়ে আবার একই ডালে বসলো। রাসেল এগুলো বিরিয়ানি রান্না করছে নাকি কেকাআপা টাইপের রান্না করছে বুঝতে পারছিনা। বিরিয়ানি থেকে দুধ মিশ্রিত মাংসের গন্ধ বের হচ্ছে। খাওয়ার উপযোগী কিনা ভাবছি।গন্ধ খারাপ আসছে বললে আবার অভিমান করে চলে যাবে।রাসেল আমাকে খাইয়ে দিবে। আমি হা করতে এক চামচ বিরিয়ানি মুখে ভরে দিলো।দুই তিন চামচ খাওয়ার পর বুঝলাম বিরিয়ানিতে মশলা জাতীয় কিছু বেশি হয়েছে।মুখে তিতাতিতা লাগছে।তবু খাচ্ছি। বেচারা কতো কষ্ট করে রান্নাটা করেছে।চতুর্থ চামচ মুখে দিবো এমন সময় হ্যাসকি ওঠে গেলো। রাসেল তুমি বিরিয়ানিতে কোন কোন মশলা দিয়েছ? খেতে তিতা তিতা লাগছে কেন?

–কোন কোন মসলা মানে?তুমি তিন-তিনবার কল দিলা,অনেক ডিস্টার্ব হয়েছে অনেকগুলো বিরিয়ানি রান্নার ভিডিওতে ক্লিক পড়ছে, ভিডিও দেখে বিরিয়ানি রেঁধেছি।তাই হয়তো একটু গন্ডগোল হয়েছে। অনেকগুলো ভিডিও দেখে রেঁধেছ?

–হুম,তুমি প্রথম যখন কল দিলা,তখন তেল আর মাংস দিয়েছি।কল কেটে দেখি আরেক মহিলা আসছে উনি দুধ দিতে বলল আমি ঢেলে দিলাম। কম কষ্ট হয়নি বলো? বিরিয়ানি রান্না এতো কষ্ট জানলামরে বাবা আজ। কে জানতো বিরিয়ানিতে দুধ,জিঙ্ক ফসফাইড সব দিতে হয়। কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, কষ্টতো অনেক করেছ। তোমার কষ্ট এখন আমার কলিজা ছিঁড়ে খাচ্ছে।তুমি খাবারে জিঙ্ক ফসফাইড কেন দিয়েছ?

–তৃতীয়বার যখন কল দিলা, কথা বলা শেষে দেখি মহিলাটা বিরিয়ানিতে জিঙ্ক ফসফাইড মিশাচ্ছে। বাজারে গিয়ে অনেক কষ্টে এনে তা রান্নায় মিশিয়ে দিলাম।স্বাদ হয়েছে না বলো? হুম হয়েছে হয়েছে ,হেল্প হেল্প। এনিবডি হেল্প মি প্লিজ প্লিজ।

–আরে হেল্প হেল্প করছ কেন?কি হয়েছে বলবেতো। রাসেল আমি তোমাকে কতো ভালোবাসতাম।কতো বিশ্বাস করতাম।মরার পরো ভালোবাসবো।আজ আমার জন্মদিনে তুমি আমাকে ইদুর মারার বিষ খাওয়ালে। প্লিজ হেল্প মি, এম্বুলেন্স এম্বুলেন্স ।তুমি আমাকে ইদুর মারার বিষ খাইয়েছ।আমি আমার সামনে বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন সবাইর হাস্য-উজ্জল চেহারা দেখতেছি। আমি মারা যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে চল।

— বোকা মেয়ে কিছুই করতে হবেনা,তুমি ঠিকই দেখছো। আম্মু-আব্বুদের সবাইকে আমি এখানে ডেকেছি।উনারা তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো,আন্টি বলেছিলো অনেকদিন হয়ে গেছে তুমি কৃমির ওষুধ খাওনা।তাই বাজার থেকে কৃমির সিরাপ কিনে এনে বিরিয়ানিতে ঢেলে দিয়েছি।ভালো হয়েছে না? আমি ভেবাছ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে আছি।সবাই হাসছে। আমিতো কৃমিকে ভয় পায়।তবে বিষতো আর খাওয়াইনি,শুধু একটা কৃমির সিরাপ মিশিয়ে খাওয়াইছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত