একবার এক দম্পতি আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। তাদের একটা তিন বছরের বাচ্চাও ছিলো সাথে। দেখতে বেশ নাদুস নুদুস বাচ্চাটাকে দেখে আমি বললাম, ” বাহ। বেশ ভালো স্বাস্থ্যতো আপনার বাচ্চার। সাথে সাথে বাচ্চাটার মা বলে উঠলো , ” ওর বয়স মাত্র দুই বছর। কিচ্ছু খায় না। তারপরেও আমার ভাবীর বাচ্চার চেয়ে ওর স্বাস্থ্য ভালো। ” একটু প্রশংসা করলাম আর সাথে সাথে বাচ্চার বয়স এক বছর কমে গেলো। কারণটা তখন না বুঝলেও পরে বুঝেছিলাম।
আসলে এখনকার বাচ্চার মায়েরা বাচ্চার বয়স একদম কমিয়ে বলে নিজেকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যান ; যা দেখে আশেপাশের বাচ্চার মায়েরা ঈর্ষায় জ্বলে। ভাবে এইটুকু বয়সে না খেয়ে দেয়ে একটা বাচ্চার এতো গ্রোথ কি করে সম্ভব ? আর তার বাচ্চা কি না খায় না। চার ঘন্টায় দু’টো ডিম, এক পিস পেস্ট্রি, দুই গ্লাস দুধ, এক প্লেট পোলাও, তিন চার টুকরো মুরগী খেয়েছিলো। তবু তার বাচ্চা নাকি খায় না। আরেকবার আমার মায়ের এক বান্ধবীর মেয়ে আমার মাকে অনুরোধ করে আমি যেন তার বাচ্চাকে গিয়ে ইংরেজি শিখাই। মায়ের কথা অমান্য করতে পারি না। তার উপর মাসে বারো হাজার টাকার মতো দেবে। না করি কি করে ?
তো আমি এক বিকেলে ফুলহাতা শার্ট আর চশমা পরে একদম সুবোধ বালক সেঁজে গেলাম তার বাচ্চাকে পড়াতে। বাসায় গিয়ে ডোরবেল দিতেই বুয়া দরজা খুলে দিলো। আমার পরিচয় দিয়ে বাচ্চার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বুয়া বললেন , ” ম্যাডাম হাটতে গেছে। আপনি ভেতরে এসে বাচ্চাকে পড়াতে থাকেন। আমি ভেতরে এসে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসলাম। বুয়া একটা চার বছরের বাচ্চাকে নিয়ে আসলেন। বাচ্চাটা আমার কাছে রেখে বুয়া আবার গিয়ে একগাদা ইংলিশ কমিক্স আর ওয়ার্ড বুক নিয়ে আসলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম , ” কাকে পড়াবো ? ” বুয়া এবার সেই চার বছরের বাচ্চাটাকে দেখিয়ে দিলো। আমি তো পরে গেলাম চিন্তায়। চার বছরের বাচ্চাকে ইংলিশ কমিক্স আর ওয়ার্ড বুক কি করে পড়াবো ?
আমি বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করলাম , ” বেটা তোমার নাম কি ? ” বাচ্চা বললো , ” জুয়ান। ” আমি বুঝতে পারছিলাম না এটা কেমন নাম। পাশ থেকে বুয়া বলে দিলো, ” বাচ্চার নাম জোহান। ” লে হালুয়া। বাচ্চা এখনো নিজের নাম ঠিকমতো বলতে শিখে নি। বাচ্চাকে ইংলিশ শিখাতে চলেছে বাচ্চার মা। এমন সময় বাচ্চার মা আসলো। মাথায় একটা হিজাব, চোখে বড় সানগ্লাস, একটা গোলাপি টি শার্ট, নন-স্টিজ টাইট জিন্স আর কেডস। আমি তখনই বুঝে গেলাম যে মহিলা বিকেল বেলা সানগ্লাস পরে হাটতে যায় টাইট জিন্স পরে সে যে কতটা আধুনিকা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমায় দেখেই বলে উঠলেন , ” হাই !! কেমন আছো ইউ ? ” আমি লম্বা করে একটা সালাম দিয়ে বললাম , ” আফা আগে আপনার বাচ্চারে বড় হতে দেন। তারে কথা বলা শিখান। তার নামটা শিখান। তারপর ইংরেজি শিখান। একটা চার বছরের বাচ্চা যে কিনা ঠিকমতো বাংলা জানে না ; তাকে ইংরেজি কমিক্স আর ওয়ার্ড বুক শিখানো আঁতলামো ছাড়া আর কিছু নয়। আমি চললাম। ”
আমার ভাইয়ের স্ত্রী তার ছয় বছরের বাচ্চা নিয়ে ব্যপক পেরেশান। তার ইচ্ছে ছেলে কে আর্মি অফিসার বানাবে। তাই সকাল, দুপুর, সন্ধ্যে তিনি বাচ্চার পেছন পেছন একট গ্লাস গরম দুধ আর একটা সেদ্ধ ডিম নিয়ে দৌড়ান। আমি বুঝি না ডিম আর দুধের সাথে আর্মি অফিসার হওয়ার কি সম্পর্ক ? ” আফসোসের বিষয় বাচ্চার দুধ আর ডিম পেটে সয় না। তাই দেখা যায় গরম দুধ পানের জন্য বাচ্চার ডায়রিয়া হয় ; অথবা ডিমের জন্য শরীর কষা হয়ে যায়।
আর বাচ্চার এমন অবস্থা দেখে তার মাতৃভাষায় বলবে , ” বাপ-চাচা অলর মত ঐইওছ দেনা ? ” বুঝলাম না। বাপ চাচারা কি দোষ করলো ? মাথার চুল পরে গিয়ে মাথার দু’পাশ দিয়ে চর উঁকি দিয়েছে। পরিবারের লোকজন চিন্তায়। তারা আদা জল খেয়ে নেমেছে আমার বিয়ে করানোর জন্য। পুরো উদ্যমে চলছে পাত্রী দেখা। কিন্তু আমার চিন্তা অন্যখানে। ভাবছি আমার বাচ্চার আধুনিকা মা না জানি কেমন হয় ?