প্রিয়া

প্রিয়া

– প্রিয়া।
– হুম।
– তোমার শপিং করতে ভালো লাগে না?
– ভালো লাগে মানে? অনেক ভালো লাগে। মনে হয় মার্কেটের সব দামি ড্রেসগুলো কিনে নিয়ে আসি।
– দামি গাড়ি করে চলতে ভালো লাগে না?
– হুম। কিন্তু তুমি তো কিনো না। আমার প্রত্যেকটা বান্ধবীকে তাঁদের বর গাড়ি কিনে দিয়েছে।
– আমাদের কী সুন্দর সংসার তাই না?
– সুন্দর সংসার না ছাই! তোমার বুড়ি মা টা যা বিরক্তকর। ভালো করে কথা বলতে পারে না। না দেখে চোখে ঠিক মতো। কিছুক্ষণ পরপর শুধু এটা চাই ওটা চাই।

– ঠিক বলেছো।
– আচ্ছা তোমার বুড়ি মা টা কে কালকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে, ঠিকাছে?
– হুম। আমি ও ভাবছি।
– ইশ, সো সুইট অফ ইউ।
– কালকে তোমার জন্য অনেক গিফট অপেক্ষা করছে।
– তাই সত্যি? এই কী দিবা? সোনার হাড় না ডায়মন্ড এর রিং?
– তা তো দিবোই। সাথে আরো অনেক কিছু।
– উফ, কী শুনাইলা আমার তো আজকে রাতে ঘুমই আসবে না। আমাদের তো আবার এ সি ও নাই।
– এ সি ও আনা হবে হবে কালকে।

প্রিয়া খুশিতে আমাকে অনেক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো। রাতের আঁধার অতীত হলো। সকালের সূর্য উঠলো। মাকে শেষ বারের মতো রেডি করছি। আর এই বাড়িতে আর এই বুড়িটাকে রাখা যাবে না। বড্ড অসামাজিক। আমার মা টা ও না! একটু ও কাঁদছে না। এজন্য রাগ হচ্ছে। আমি চাচ্ছি মা কাঁদুক। কেঁদে কেঁদে আমার কাছে একটু আশ্রয় ভিক্ষা চাক। মাকে নিয়ে নিচে আসলাম। মৌ অনেক খুশি। আজকে থেকে আর বুড়িটাকে সহ্য করতে হবে না। মৌ বললোঃ-

– উনাকে দূরের কোনো বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবা। যেনো চাইলেই সহজে না ফিরে আসতে পারে।
– একদম। চিন্তা করো না।
– এই শুনো, আমার গিফটগুলো কোথায়? বলতে না বলতে প্রিয়ার ব্র‍্যান্ড নিউ গাড়ি চলে এসেছে। বললামঃ-
– এই হলো তোমার গাড়ি। প্রিয়া বিশ্বাস করতে পারছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বললোঃ-
– উম লাভ ইউ এত্তগুলা। আর কই?

আমি গাড়ির ভিতর থেকে সুটকেস নিলাম। সুটকেসের ভিতর থেকে ক্রমে ক্রমে সোনার হাড় থেকে শুরু করে ডায়মন্ড এর রিং পর্যন্ত দিলাম। প্রিয়া যেনো আকাশে উড়ছে। সর্বশেষ একটা কাগজ দিলাম প্রিয়ার হাতে। প্রিয়া বললোঃ-

– কীসের কাগজ এটা?
– আমার সব সম্পত্তি তোমার নামে লিখে দিলাম। তারই কাগজপত্র। প্রিয়া এবার সবার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ-
– তুমি যে এত্ত ভালো তা আগে জানা ছিলো না। আমার আর কিছু লাগবে না। যাও বুড়িটাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসো। আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললামঃ-

– আরেকটা গিফট আছে প্রিয়া।
– আরেকটা? তাড়াতাড়ি দাও না। আমার আর তর সইছে না।
– এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক। আরো কী যেনো বলে, বাইন তালাক।

প্রিয়ার হাত থেকে মাত্র দেয়া আই ফোনটা মাঠিতে পরে গেলো। প্রিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। বললোঃ-

– হোয়াট? আর ইউ জোকিং?
– নো মাই সুইটি। আমি সুস্থ সজ্ঞানে চারটা শব্দ বললাম। বিশ্বাস হলো না? সম্পত্তির দলিলের নিচে দেখো ডিভোর্স এর কাগজপত্র। প্রিয়া কান্নাজরিতো কণ্ঠে বললোঃ-

– তুমি পাগল হয়ে গেলা নাকি?
– একদম। তোমার শেষ এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় গিফটা দেখো রিকশায় আমার মাকে ধরে বসে আছে। কালকেই আমাদের বিয়ে হলো। শী ইজ মাই ওয়াইফ এন্ড এভ্রিথিংস। সে জানো কে? বৃদ্ধাশ্রমের সাধারণ নার্স। সে অনেক ভালো তোমার মতো শিক্ষিত ফার্স্টক্লাস মেয়ের থেকে। ভালো থেকো প্রিয়া বাড়ি গাড়ি গহনা নিয়ে।

– এই শুনো।
– দুঃখিত, বুড়িটাকে নিয়ে অনেক দূরে যাচ্ছি। আর তোমার ধারেকাছে ও আসতে পারবে না।

প্রিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। সে আজকে অনেক টাকার মালিক। আমার বাড়ি থেকে শুরু করে ব্যাংক ব্যালেন্স সব কিছুর মালিক। এক টাকার মালিক ও এখন আমি নই। তবে আবারো শুরু করবো সব কিছু নতুন করে। কুঁড়েঘর বাঁধবো। বুড়িটা খারাপ থাকবে না সঙ্গে দ্বিতীয় চৌকাঠ। আপনারাই বলুন না। আমি কী ঠিক করেছি?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত