ট্রল

ট্রল

তাশা,এই তাশা অনেকটা রাগি কন্ঠে হিমু চিল্লিয়ে ডাকা শুরু করেছে। হুট করে এভাবে ডাকার কারন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা।

-কি হয়েছে এভাবে ডাকছো কেনো?(আমি)
-এসব কি?
-কোনসব?
– এফবিতে সারাদিন তুমি এসব করো?
-কি করি?
-কি করো আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করো?
-কি করি জানলে তো বলবো! আর তুমি এভাবে ধমক দিয়ে দিয়ে কথা বলছো কেনো?
-এফবিতে সারাদিন বসে বসে আজাইরা ট্রল করা হয় তাইনা? আজ থেকে তোমার এফবি চালানো বন্ধ
– মা_মানে কি?
-মানে কি! এই দেখো, একজন তোমার নামে কমপ্লেইন করে মেসেজ দিলো। আমি তো এতোদিন তোমার আইডি চ্যাক করেনি,আজ করে তো আমি রীতিমতো অবাক…..

– ভাইয়া তাশাপু কে বলুন না গল্প লিখতে। সে কবে থেকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে। ঠিক মতো গল্প দিচ্ছেনা আপুটা। আপুর গল্পের অপেক্ষা করতে করতে হায়াত অর্ধেক শেষ হয়ে গেলো বুঝি।(সাথে করে কয়েকটা কান্নার ইমুজি) মেসেজ টা দেখে আমার চোখ কপালে। গল্প না লেখার কমপ্লেইন শেষে কিনা হিমুর কাছে গেলো? গেলাম আমি। হিমু এখন না জানি আমার উপর কোন কোন পারোমানিক বোমা নিক্ষেপ করে। ভয়ে আর হিমুর দিকে থাকাতে ইচ্ছে করছেনা। থাকালে ওর রক্ত বর্ন চোখগুলো আমার দেখা লাগবে। আর অমন চোখ দেখলে আমার ভয়ে বুক কেঁপে উঠে। মাথায় একটা জিনিস খেলছেনা লোকটা হিমুর আইডি পেলো কয়? অহহ হিমুর সাথে তো রিলেশনশীপ দেওয়া আছে। কিন্তু হিমুকে কি বলবো এখন আমি। অনেকদিন ধরে অকারণে লিখতে ইচ্ছে করছেনা। লিখতে বসলে কেমন জানি দুই লাইন লিখে হাঁপিয়ে উঠি। সারাদিন এফবিতে এমনিতে ঘুরঘুর করি। আর বসে বসে ট্রল করি৷ কিন্তু গল্প লিখিনা। অনেকে ইনবক্সে এটার জন্যে কমপ্লেইন করেছিলো। আমি অজুহাত দেখিয়ে নানা বাহানা দেখিয়ে দিতাম। ওদের রিকুয়েষ্ট দেখলে মাঝে মাঝে নিজের উপর রাগ হতো, লিখলে কি এমন ক্ষতি হবে তোর তাশা? নিজের উপর রাগ করে লিখতে বসি, কিন্ত নাহ!

পেরে উঠা হয়না নিজের সাথে। উফফফ! হিমুকে কি বলবো এখন আমি? ট্রল করে করে পোস্ট করেছি সেখানে অনেকেই কমেন্ট করেছে আর আমি সবার কমেন্টের রিপ্লাই দিয়েছি।না জানি কি কি বলেছি…. হিমু এফবি চালানোর সময় শর্ত দিয়েছিলো, গল্প লিখবা,কোন হাবিজাবি পোস্ট জেনো তোমার টাইমলাইনে না দেখি। আর অকারনে কারো কমেন্টের রিপ্লাই দিবেনা। আর এখন আমি হিমু যা বললো তার সব কিছুর বিপরীত টায় করলাম। মনে মনে অংক কষতে লাগলাম ঠিক কি থেকে কি হবে আমার সাথে সেটা। কিন্তু কোন মতে মিলাতে পারছিনা হিসাব। অংকটা বড্ড বেহিসাবি হয়ে গেলো। কি যে করি আল্লাহ এভারের মতো রক্ষা করো আর দ্বিতীয় বার এমন ভূল হবেনা। মনে মনে আউরাতে থাকলাম আমি।

– তোমাকে আমি কি শর্ত দিয়েছিলাম এফবি চালানোর সময়? যেটা বলেছি ঠিক সেটার উল্টো করা শুরু করেছো দেখি তুমি? আমার কথার কি কোন ভেল্যু নেই তোমার কাছে?

-থা_থাক_থাকবে না কেনো? আছে তো তোমার কথার অনেক ভেল্যু আমার কাছে। চোখ বন্ধ করে কথা গুলো বললাম হিমুকে। হিমু যখন আমায় ধমক দিয়ে কথা বলে তখন ভয়ে আমি তুতলাতে থাকি। কথা বলতে কষ্ট হয় তখন খুব। কিন্তু ওর কথার উত্তর না দিলে তখন সে আরো তিনগুণ জোরে ধমক দেওয়া শুরু করে। তখন মনে হয় এই বুঝি আমার হার্টঅ্যাটাক হলো।

-এই দাম তোমার কাছে আমার কথার?
-স…..সরি। ভূ….ভূল হয়ে গিয়েছে। আর হ….হবেনা এমন।
– কিসের ভূল হ্যাঁ এটা? ইচ্ছে করে করেছো এগুলা তুমি। শেষমেশ না পেরে আমার কাছে কমপ্লেইন আসে তোমার নামে।

-ব….বলছি তো সরি। আর হবেনা। আগের মতো হয়ে যাবো আবার।
-আগের মতো তোমার আর হওয়া লাগবেনা। তোমার আজ থেকে এফবি চালানো বন্ধ। মোবাইল কই তোমার?
-মো…মোবা…মোবাইল দি…য়ে কি কর…বা?
-তোমাকে মোবাইল কোথায় জিজ্ঞেস করেছি। ধমক টা হিমু খুব কড়া গলায় বললো। হিমুর এমন রাগে আমার বুক ফেঁটে কান্না আসছে। কিছু বলতেও পারছিনা হিমুকে।

– আজ থেকে মোবাইলে হাত দেওয়া বন্ধ। ধরতে আসলেই খুব খারাপ হবে। দেখি তুমি কি করে হাবিজাবি পোস্ট করতে পারো। এই বলে হিমু আমার মোবাইলটা আলমারির একটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখে। মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে ওই ভাইয়াটার উপর যে কিনা হিমুকে মেসেজ করেছে। আমি কি করবো আমার লিখতে ইচ্ছে না করলে? আমি তো চেষ্টা করেছি। আমি কি লিখবোনা বলেছি নাকি? গল্প লিখবো আবার, দিবো আবার। আর হিমু টাও শান্ত ভাবে বললে কি হতো কথা গুলো। এতো রেগে বলা কি খুব প্রয়োজন ছিলো? জানে সে তার লক্ষ্মীটার কষ্ট হয় সে এভাবে ধমক দিলে। তারপরেও কেনো? খাটে বসে বসে চোখেত জল মুছতেছি আর এসব মনে মনে বলছি। হিমু মোবাইলটা ড্রয়ারে রেখে ঢুমঢাম করে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো। আমার চোখজোড়া আলমারির ড্রয়ারের দিকে ইচ্ছে করছে মোবাইলটা নিয়ে যে হিমুকে মেসেজ দিলো তাকে ইচ্ছে মতো কথা শুনায় কতোগুলো। পরক্ষনে আবার ভাবছি মোবাইল ধরেছি এটা জানলে হিমুর রাগ আরো বেড়ে যাবে। তাই চুপচাপ বসে রইলাম। হিমুর উপর এখন প্রচন্ড রাগ হচ্ছে,ট্রল ই তো করলাম এমন ভাবে রিয়েক্ট করছে জেনো আমি পরকীয়াতে লিপ্ত হয়েছি।

-সে গেলো তো গেলো এখনো আসছেনা বাসায়৷ এই এক সমস্যা আমার উপর চিল্লিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যাবে। ঘন্টার পর ঘন্টা কোথায় কাটিয়ে দেয় সে ভালো জানে। কিন্তু আজকে একটু বেশি লেট করে ফেলছে। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। কল ও করতে পারছিনা।

– এখন নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। ওইসব পোস্ট না করলেও তো পারতাম। তার কথার কোন দাম দিলাম না আমি। ছিঃ। ও তো এটাই চেয়েছে আমি গল্প লিখি সবসময় । কারন এই গল্প লিখার মাধ্যমে হিমুর সাথে আমার পরিচয়৷ হিমু আমায় বিয়ের পর শর্ত দিয়েছিলো প্রতিদিন কম হলেও দুইটা করে গল্প লিখবে আর সেখানে আমি প্রায় পনেরো দিনে একটাও গল্প লিখলাম না। সত্যি খুব রাগ হচ্ছে এখন নিজের উপর। হিমু নিশ্চয় খুব কষ্ট পেয়েছে। বাসায় আসলে ক্ষমা চেয়ে নিবো কিন্তু হিমু তো আসছেনা এখনো। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কলিংবেলটা বেজে উঠে। তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা টা খুলে দিলাম।

হিমু মাথাটা নিচু করে আমার পাশ কেটে ঘরে প্রবেশ করে। মুখ তুলে আমার দিকে তাকালোনা। এমনিতে হাজার রাগ হলে একবারের জন্য হলেও তাকাতো আমার দিকে ঘড়ে ঢুকার সময় কিন্তু আজকে! একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে হিমুর পিছে পিছে রুমে ঢুকলাম।হিমু টাওয়াল নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। এখন ইচ্ছে মতো গায়ে পানি ঢালবে সে রাগ কন্ট্রোল করার অদ্ভুত টেকনিক তার। আমি রুমে কিছুক্ষন পায়চারি করে রান্না ঘরে এসে রাতের খাবারটা রেডি করে টেবিলের উপর রাখি কিন্তু হিমুর এখনো ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার নাম নেই। একঘন্টার পর দেখলাম হিমু মাথার চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে৷ আমি তারাতাড়ি করে ওর সামনে দুই হাত দিয়ে কান ধরে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। হিমু দেখেও না দেখার ভান করে আমার পাশ কেটে চলে গেলো। আমি আবারো কান ধরে ওর সামনে গিয়ে গুমড় মুখ করে সরি বলি। কিন্তু না হিমুর কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা।

– সরি তো। ভুল হয়ে গিয়েছে ক্ষমা করে দাওনা। দ্বিতীয় বার আর এমন ভূল হবেনা।
– খিদে পেয়েছে খেতে চলো।
– তুমি আমায় ক্ষমা না করলে আমি খেতে যাবোনা।
-তোমার ইচ্ছে খাবে নাকি খাবেনা। আমার ইচ্ছেতে তো আর খাবেনা তুমি তাইনা?
– হিমু প্লিজ বললাম তো সরি। আমি আবার নিয়মিত লিখিবো। প্লিজ এভাবে রাগ করে থেকোনা। তোমার গুমড়া চেহারাটা দেখতে আমার ভালো লাগেনা।

-তোমার ইচ্ছে তুমি গল্প লিখবে কি অন্য কিছু লিখবে। আমার কিছু না। তোমার যেটা খুশি লাগবে তুমি সেটায় করো। আমার কিছুনা।
– এভাবে বলোনা প্লিজ।
– খাওয়ার ইচ্ছে হলে আসো। না হলে আমি খেয়ে নিচ্ছি।
– হিমুর বলা কথা গুলো তীরের মতো আঘাত করছে বুকে।

প্রচন্ড রকম রাগ কষ্ট অভিমানে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছি আমি। নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছে। হিমু রুম থেকে বেরুতে গেলে পাশে থাকা টপ টা জুড়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারি আমি। চেচিয়ে বলতে লাগলাম। খা তুই, আমি খাবোনা। আমার গুলা সহ তুই খেয়ে আমায় উদ্ধার কর। করতে হবেনা ক্ষমা আমাকে তুর। যা তুই। আজ থেকে তুই যা বলবি তার উল্টো করবো আমি। দেখিস তুই।

– হিমু ফ্লোরে পড়ে থাকা টপ টার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো আই ডোন্ট কেয়ার ভাব অনেকটা। আর এদিকে খুব রাগ হচ্ছে আমার। কতোবার সরি বলেছি। ক্ষমা করলে কি হয়? বলেছি তো আর করবোনা তারপরেও!

খাটে বসে চুপচাপ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম আর নিঃশব্দে চোখের কোণা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।একটু পর পর চোখের পানি গুলো মুছে নিচ্ছি। পাঁচ কি ছয় মিনিট পর হিমু রুমে আসে।আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখি হিমুর হাতে খাবারের প্লেট। হিমুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম পলকহীন ভাবে। হিমু চুপচাপ আমার পাশে এসে বসলে আমি ওর থেকে সরে গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে বসি। আমি দূরত্ব রাখলে হিমু আরেকটু আমার কাছে এসে বসে। হাতে ভাতের লোকমা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ‘হা করো। ‘ আমি মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলি হিমুকে’খাবোনা আমি।’

-হা করতে বলেছি৷
-খাবোনা বলেছি।
– খাবেনা মানে কি? তুমি না তোমার ঘাড় খাবে। এটা বলে হিমু অন্য হাত দিয়ে আমার গাল চেপে মুখের মধ্যে ভাত পুরে দেয়। রাগে দুঃখে কাঁন্না চলে আসে আমার আবার।
-দোষ নিজে করে আবার নিজে রাগ দেখায় অন্যের উপর। পাল্টিবাজ মেয়ে।
-আমি মোটেও পাল্টিবাজ না। আমি সরি বলেছি অনেক বার। নাক মুছতে মুছতে হিমুকে কথাটা বললাম আমি।
-যা দোষ করেছো, সরি বললে হয়ে যাবে নাকি?মুখে ভাতের লোকমা দিচ্ছে আর বলছে কথা গুলো। আমি কিছু না বলে চুপচাপ ভাত গুলো চিবুচ্ছি। হিমু আমায় আবার বলতে শুরু করে

– তখন অভাবে বকে কথা বলার জন্যে সরি। দেখো তুমি তো একজন গল্প লেখক তাইনা। তুমি গল্পের প্রতি ফোকাস না করে হাবিজাবি ট্রল নিয়ে পড়ে আছো। এসব করার মানে হয়? তোমার গল্পের জন্যে অনেকজন অপেক্ষা করে আছে।শেষে না পেরে আমায় নক করলো। কাউকে এভাবে অপেক্ষা করিয়ে রাখার মানে হয় তুমি বলো? তোমার আইডি চ্যাক করে দেখলাম অনেক গুলো গল্প তুমি সম্পূর্ণ করোনি। গল্প টা যদি তুমি সম্পূর্ণ না দাও তাহলে টাইমলাইনে কেনো দিলে? একজন ভালো মানের লেখক লেখিকার এসব মানায় না। ট্রল করো ভালো কিছু নিয়ে যাতে অন্য কেউ তোমার থেকে ভালো কিছু শিখতে পেরে উপকারীত হবে। আর তুমি তো খুব ভালো করে জানো তোমার গল্পের আমি কি রকম পাগল। কয়েকদিন বিজি আছি তাই পড়তে পারছিনা আর তুমি তার মাঝে? সব ট্রল ডিলিট দিয়ে নতুন করে গল্প দিয়ে আইডিটা সাজাবে ঠিক আঁছে। আর হ্যাঁ প্রতিদিন তোমার লেখা লাগবেনা। যখন গল্পে লেখাতে মন বসবে তখন লিখবে।জোর করে লিখালিখি হয়না।

-হু।বুঝেছি। সরি৷ আমি ওইসব কিছু ডিলিট দিয়ে দিবো। সরি এগেইন তখন ওভাবে রিয়েক্ট করে কথা বলার জন্যে।
-এটা আর নতুন কি বলো। তুমি তো চোরের উপর বাটপারি করতে খুব উস্তাদ ওটা আমার খুব জানা আছে।
-কিহ আমি আমি চোর? যাও কথা নাই আড়ি তোমার সাথে।

-এটা বললে তো হবেনা। আমার কথার বাহিরে গিয়েছো সেটার শাস্তি তো পেতে হবে তোমাকে। হিমুর কথায় বেশম খেলাম আমি। কাশতে কাশতে হিমুর দিকে থাকালাম। হিমু চোখে মুখে দুষ্টামির রেখা ফুটিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি আমার ভ্রু জোরা কিছুটা কুঁচকিয়ে ওর দিকে থাকালাম। খ…ব..র..দা..র মাথায় উল্টো পাল্টা চিন্তা মাথায় আনবেনা।তাহলে খুব খারাপ হবে। হিমু আমার কথায় বলে উঠে খারাপ হোক ক্ষতি কি তাতে? এ..ই ভালো হচ্ছেনা কিন্তু হিমু ধীরে ধীরে আমার দিকে এগোচ্ছে আর আমি নিজেকে ওর থেকে দূরত্বে নেওয়ার জন্য পিছনে ঝুকতে থাকি৷ ঝুকতে ঝুকতে হঠাৎ করে ধপাস করে খাট থেকে পড়ে মাগো বলে চিল্লিয়ে উঠলাম।

-আজকে আবারো খাট থেকে পড়লে? হিমুর এমন কথায় তারাতাড়ি করে ভালো করে চারদিক ঘুরঘুর করে থাকালাম। নাহ টপ টা সে আগের জায়গা তে আছে নিখুঁত ভাবে৷ সব কিছু ঠিকঠাক আছে। গায়ের সাথে চাদর পেচানো আমার।চুল গুলো এলোমেলো। কোমড়ে হাত দিয়ে বসে আছি।তার মানে কি! এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম! যাক বাবা এটা তাহলে স্বপ্ন ছিলো। বুকের উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললাম। পরক্ষনে আবার মনে পড়লো,ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়,যদি এটাও সত্যি হয়ে যায়! তাহলে শেষ আমি।

– কি বিড়বিড় করছো বলোতো তখন থেকে। ফ্লোরের উপর কি বসে থাকবে? নাকি উঠে আসবে। হিমুর কথায় তারাতাড়ি ফ্লোর থেকে উঠে দাড়ালাম।বাবারে কোমড় গেলো বুঝি!

– উঠো জলদি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি নাস্তা রেডি করে নিয়েছি।এক সাথে খাবো।
-হুম যাচ্ছি। স্বপ্নে দেখা কথা গুলো ভাবছি। যদি সত্যি সত্যি কেউ হিমুকে আমার নামে কমপ্লেইন করে? তাহলে! হিমুকে পিছন থেকে ডাক দিলাম আমি।

-কিছু বলবা
-হ্যাঁ, না মানে হ্যাঁ। তোমার ফোন টা একটু দিবা? একটা কাজ ছিলো?
-ফ্রেশ হয়ে আসো আগে তারপরে নাও।
-নাহ আগে দাও।খুব আর্জেন্ট একটা কাজ। আমার এম্বি শেষ তাই লাগবে।
– টেবিলে আছে নাও। হিমু শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে।

হিমু বলার দেড়ি আমি ঈগল পাখির মতো ছুঁ মেরে মোবাইলটা নিয়ে তারাতাড়ি করে হিমুর নীল হিমু নামে আইডিটাতে ঢুকি। মেসেজ চ্যাক করতে লাগলাম। কিন্তু না সন্দেহ ভাজন কোন মেসেজ পেলাম না। তারপরে রিকুয়েষ্ট মেসেজ ফিল্টার মেসেজ চ্যাক করি কিন্তু নাহ তার মাঝেও পেলাম না এমন টাইপের মেসেজ। যাক বাবা বাচলাম। হাসি হাসি মুখে হিমুর হাতে মোবাইলটা দিয়ে আমি ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে আরেকটা কথা মাথায় বারি খায়।আমি আসলেই ইদানীং গল্প লিখিছিনা। ট্রল করে করে পুরাই ফেলছি।

এসব হিমু দেখলে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দিবে আমার সাথে। ও এসব দেখার আগে ডিলিট দেওয়া লাগবে। ঝটপট করে ফ্রেশ হয়ে আমার নিজের মোবাইল টা হাতে নিয়ে যতো ট্রল আছে সব ডিলিট দিতে লাগলাম এক এক করে। হায়রে এতো এতো পোস্ট কবে করে ফেলেছি আমি! শেষই হচ্ছেনা। ওরে আল্লাহ ডিলিট দিতে হাঁপিয়ে উঠেছি। অথচ শেষ হওয়ার নামই নেই। আর এদিকদ হিমু বারবার ডাকা শুরু করে দিয়েছে আমায়। যাক অবশেষে ডিলিট কমপ্লিট। মুখে একটা বিজয়ের হাসি রেখে হিমুর পাশে গিয়ে বসলাম। হিমু গম্ভীর হয়ে খাবার খাচ্ছে। কেমন জেনো চিন্তিত মনে হচ্ছে ওকে। ওর এমন চিন্তিত চেহারা দেখে আমার টেনশন হতে লাগলো। স্বপ্ন না আবার সত্যি হয়ে গেলো সে ভয়ে৷ ভয়ে ভয়ে হিমুকে প্রশ্ন করলাম, কি হয়েছে এমন করে গম্ভীর হয়ে আছো কেনো? কোন সমস্যা?

-হু, সমস্যা তো বটে।তোমার নামে একজন আমার কাছে কমপ্লেইন করেছে আজ। হিমুর কথা শুনে, রুটি দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে মুখে দিচ্ছিলাম সে দুই আঙ্গুলে উপর কামড় বসিয়ে দিয়ে হিমুর দিকে থাকালাম। হিমু মুখে রুটির টুকরো দিতে দিতে আমার দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিলো। মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে মেসেজ টা ওপেন করলাম। মেসেজ টা দেখে চোখ আমার ছানাবড়া..

– ভাইয়া আমার তাশাপু কে হিংসে হচ্ছে খুব। আপু আপনার মতো একজন স্বামী পেলো। ইশ এমন একটা হিমু জেনো আমার কপালেও জোটে। সত্যি তাশাপু খুব ভাগ্যবতী যে কিনা আপনার মতো কেয়ারিং , বুঝদার বর পেয়েছে। তাশাপু আপনাকে লেখার ধরন দেখে বুঝলাম আপনি তাশাপুর বেস্ট ফ্রেন্ড এন্ড মাইন্ড সাপোর্টার। সো সো লাকি আপুনিটা।

-মেসেজ টা দেখে হাসবো নাকি রাগ দেখাবো বুঝতে পারছিনা।
– আমাকে নিয়ে লেখা বাদ দাও।আমাকে নিয়ে লিখে লিখে দেখি হেটার্স বাড়াচ্ছো তুমি।
– বাড়লে বাড়বে তাতে কার কি? আমি আমার বর কে নিয়ে একশো বার লিখবো৷ তাতে হেটার্স বাড়লে সমস্যা নেই আমার।
-হুম।
– একটা কথা বলবো,রাগ করবেনা প্লিজ…
-হু বলো?
-হয়েছে কি, আমি না কিছুদিন ধরে কোন গল্প লিখিনাই। আমি অনেক ট্রাই করেছি লিখার জন্যে কিন্তু পেরে উঠছিনা। কেমন জেনো অস্থির অস্থির লাগে লিখতে বসলে তাই এই কয়েকদিনে আমি একটা গল্পও লিখিনাই।

– এই কথা? এটার জন্যে আমি রাগ করবো কেনো?
-নাহ তুমি তো বিয়ের পর বলেছো কম করে হলেও প্রতিদিন দুইটা গল্প লিখতে।

-আরেহ বোকা মেয়ে, এটার জন্যে রাগ করতে যাবো কেনো? আজ লিখতে ইচ্ছে হচ্ছেনা কাল লিখতে ইচ্ছে হবে। আর আমি তোমায় কি কসম কাটিয়েছি যে প্রতিদিন তোমায় গল্প লেখা লাগবে? সবসময় এক পরিবেশে থাকলেও লিখালিখির ইচ্ছে টা হারিয়া যায়। বিকেলে রেডি থেকো কোথাও গিয়ে ঘুরে আসবো। তখন মাইন্ড ফ্রেশ হলে গড়গড় করে তুমি আবার লিখতে শুরু করবা। মন খারাপ করার দরকার নেই বুঝলে। হাসি মুখে কথা গুলো বললো হিমু।

– আরেকটা কথা…
– হু বলো?
-আমি না এতোদিন অনেক গুলো ট্রল করেছি। অনেকের সাথে কমেন্টে কথাও বলেছি। সরি প্লিজ।
– হুম দেখেছি। ট্রল গুলো সুন্দর ছিলো।

আমার বউটা যে ট্রল করে করে লোক হাসাতে পারে জানতাম না। সিরিয়াসলি তোমার ওমন পোস্ট গুলো পড়ে আমি প্রচুর হেসেছি। লোক হাসাতে পারার জন্যেও ট্যালেন্টের দরকার হয়৷ সবাই কাঁদাতে জানলেও হাতে গুনা কয়েকজন মানুষ লোক হাসাতে পারে বুঝলা তাশারানী?

-হিমুর কথা গুলো শুনে আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। স্বপ্নে আর বাস্তবে কতোটা তফাৎ। স্বপ্নে কি না হাবিজাবি দেখলাম আর বাস্তবে ঠিক তার উল্টো। ভাবতে অবাক লাগে এই মানুষ টা আমায় এতো বুঝে কি করে? সত্যি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। মনে হয় জীবনে কোন পূন্য করেছি তাই হিমুর মতো এমন একটা বর পেলাম।

– আসি,টাটা। এটা বলে হিমু আমার মাথায় একটা চুমু একে দিলো।এটা হিমুর প্রতিদিনকার রুটিন। আমিও হাসি মুখে হিমু কে বিদায় জানালাম।
– বাহিরে যাওয়ার কথা ভূলে যেওনা আবার। ঠিক সময়ে রেডি থেকো। ঘুমালে কিন্তু খবর আছে। হিমুর কথায় মুখ কুঁচকিয়ে উত্তর দিলাম আমি,মনে থাকবে খুব করে। বলা লাগবেনা।
-হু। টাটা।
-টাটা।
– হিমু চলে গেলে সোফায় বসে ভাবছি স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে কতো তফাৎ।

স্বপ্নটার কথা ভাবছি আর নিজে খিলখিলিয়ে হাসছি। হিমুকে যদি এটার কথা বলি না জানি ওর রিয়েকশন কেমন হবে? যায় আপাতত সব কিছু ঘুছিয়ে রাখি। বিকালে তো আবার ঘুরতে বের হবো হিমু আমি আর আমি হিমু দুইজনে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত