আজ চাঁদনীরাত, আজ জানালা খুলে দিয়েছি আকাশ দেখবো বলে। কতদিন যেন জানালা খুলিনা। ঘরে একটা ভ্যাপসা গন্ধ বিরাজ করছে। আজ জানালা খুলে দিতেই বাতাস প্রবেশ করেছে ঘরে। একটু শীত শীত লাগছে অবশ্য। একটু শীত আর একটু গরম যেন একটু একটু সবকিছু। গায়ে জামা দিলে গরম লাগে। আবার খালি গায়ে শুয়ে থাকলে শীত লাগে। বেশ মজার তো এই সময়।
ডাইরিটা আজ হাতের কাছেই রেখেছি আজ রাত জাগবো তারপর কলম আর কালির সাথে জমিয়ে গল্প হবে। ডাইরিটা কত দিন প্রেম করেনা কলমের সাথে। ডাইরি আর কলমের প্রেম টা আমিই করিয়ে দিয়েছি। আচ্ছা তাহলে কী আমি ঘটক?? আরে নাহ! এমনি করিয়ে দিয়েছি। ওদের ভালোবাসা বেশ সুন্দর, ওরাও ঝগড়া করে। অভিমান করে। ডাইরি গাল ফুলিয়ে বসে থাকে আর কলম চুপিচুপি পেছন থেকে যেয়ে জড়িয়ে ধরে তারপর ডাইরির মুখে এক চিলটে হাসি ফোটে। আমার অবশ্য দেখে ভালোই লাগে।
ডাইরি আর কলমের প্রেমের মাঝে কালি হচ্ছে ওদের বিশ্বাস, যতক্ষণ কালি আছে ততক্ষণ ওরা ভালো থাকে। ওরা ভালোবাসে। ওরা স্বপ্ন দেখে। ওরা জীবন আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে। তারপর যখন কালি ফুরিয়ে যেতে থাকে তখন অবশ্য ডাইরি মন খারাপ করে। কিন্তু কলম এক গাল হেসে বলে “আহা পাগলী আমি আছি তো কেন ভাবছো মিছেমিছি?” ডাইরি টা বড্ড বেশি অভিমানী কিছু হলেই সে গাল ফুলিয়ে বসে। কেন গাল ফুলাবে না কত বেশি ভালোবাসে যে। ভয়ও করে যদি হারিয়ে যায়। তবে সন্দেহ করেনা। এটা আমার খুব ভাল লাগে তাদের মাঝে কোন সন্দেহ নেই।
আমি অবশ্য চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি আর এদিকে তারা জমিয়ে প্রেম করছে। আমি কিন্তু নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে নেই। আবার বেহার মতো শুনছিও না ওসব। আমি এখন সত্যিই তাকিয়ে আছি, ওই যে কত্ত সুন্দর চাঁদ উঠেছে। কাঁঠাল গাছের ওপাশে বাঁশের চিকণ চিকণ পাতার ফাক দিয়ে চাঁদ আবার উঁকিও দেয় দেখি। কী অদ্ভুত নিস্থব্ধ চারপাশ, কোন শব্দ নেই। অনেক দূরে একটা শেয়াল ডাকছে করুণ তার সুর। শেয়ালের ডাক আমার বেশ ভালো লাগে। হুক্কা হুয়া! যেই না কাছে আসছে ওমনি আমাদের এলাকার কুকুরগুলো ডাকাডাকি শুরু করছে। তারপর আবার চুপ চারপাশ।
জানালার পাশে আবার দেখি ঝিঝি ভাই বাড়ি বানিয়েছে “পোকা চাই, পোকা চাই” বলে পাখনার সাথে শরির লাগিয়ে কম্পন শুরু করেছে। দারুণ লাগে তো! ওহ হো, মশারির ভেতর একজোড়া মশা ঢুকেছে দেখছি। ও বাবা একজন বসে আছে অন্যজন কানের কাছে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ানোর মতলব। পুরুষ মশা তো রক্ত খায়না। তাহলে ইনি বোধহয় মোশক ভাবী। ও মোশক ভাবী কেমন আছেন?? কদিন তো মানুষ কে ডেঙ্গুজ্বরে নাজেহাল করে ছাড়ছেন। আমার আবার এসব রোগটোগ দিয়েন না। হাতের অবস্থা একদম ভালো নেই। বুঝেন তো সবই! হঠাৎ একটা হুতুম পেঁচা ডাক দিলো, ভয়ে বুক যেন শুকিয়ে গেলো। কী ভয়ঙ্কর রে বাবা। ইশ দিনের বেলা চোখে দেখেনা আবার রাতের বেলা সবায় কে ভয় দেখানো তায়না! আমাদের আম গাছে বাসা বেঁধেছো না! আচ্ছা তুমি কী ডিম পারতে পারো গো? আমার না তোমাদের ডিম দেখার ইচ্ছা জানো তো!
বাল্বের আলোতে একটা টিকটিকি খুব চোখে পরছে। সে আবার অসাধারণ ধূর্ত। খুব চালাকি করে পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। তার সাথে আমার ঘরে চৌকির নিচে যে একজোড়া ব্যাঙ আছে তারা আবার উইপোকা খুব ভালো খেতে পারে। নিচে পরলেই টকাটক গিলে খাবে। বেচারা উইপোকার তো পাখনা গজায় মরবার জন্য এজন্য মরতে বাধ্য। ছোটবেলা যখন উইপোকা দেখতাম সন্ধায় উড়তে তখন সবায় মিলে চেঁচামেচি শুরু করতাম। কতরকমের পাখি যে আসতো খেতে। বিশেষ করে পেঁচা পাখি খুব সুন্দর করে স্টাইল করে শিকার করতো। এমন ভাবে ডিগবাজি দিতো সবায় দেখতে আসতো।
একটু পরে ঘরের আলো নিভিয়ে দেবো তারপর চাঁদের আলো আসবে আমার রুমে। বেশ সুন্দর লাগবে তখন। চাঁদের আলো সবসময় আমার অনেক ভালো লাগে। টিমটিমে বাতির আলোতে কত যে ডাইরি লিখেছি কত কথা যে সাজিয়েছি সব ওই চাঁদ জানে। চাঁদেরহাট যাবার খুব ইচ্ছা। ওখানে যেয়ে আমি অনেক আলো কিনে আনবো তারপর আমার বদ্ধ করে আলো ছাড়বো রাতে। ইশ আমাকে অনেক আলো যদি কেউ এনে দিতো। আচ্ছা চাঁদের আলোতে কী ঘ্রাণ আছে?? অবশ্যই মিষ্টি ঘ্রাণ। মিষ্টি ঘ্রাণ পেতে আমার সবসময় ভালো লাগে।
আবার বাতাস হচ্ছে এবার তো দেখছি শীত লাগিয়ে ছাড়বে। মশারি টাঙিয়েছি তবুও দেখি বাতাস আসে। ও বাতাস তুমি আজকে আমার ঘরে কেন ভাই? আজ কী তুমি আমার সাথে গল্প করবে? নাকি আমার ডাইরি পড়বে? ও বুঝেছি তোমার আজকে মন খারাপ আচ্ছা, আমি তোমার মন ভালো করে দেবো কেমন। শুধুশুধু মন খারাপ করেনা লক্ষি ভাই আমার। তুমি এসে ভালোই করেছো শিউলি ফুলের পাগল করা ঘ্রাণ আসছে। তুমি কত্ত ভালো গো, আচ্ছা তুমি জানলে কিভাবে আমার ফুলের গন্ধ প্রিয়! খুব মায়াবী লাগছে এই সময় কে জানো? ইশ কী মধুময় ঘ্রাণ গো!
ও চাঁদ তুমি কেমন আছো গো? আজ কী আমার সাথে গল্প করবে? তোমার জন্য আমি বিছানা পেতে রেখেছি। কফি খাবে? নাকি লেবু চা? আমি লেবু চা তুমি কফি! আহা আমিই বানাবো ভয় নেই। তোমার সাথে অনেক গল্প হবে। ডাইরিতে কত কথা আছে সব শোনাবো। ও চাঁদ আসবে তুমি? বাহঃ হাসলে তোমাকে দারুণ লাগে তো! আচ্ছা তুমি সবসময় এভাবে হাসবে ঠিক আছে। আমার তো খুব ভালো লাগছে তোমার হাসি। ইশ আজকে রাত টা কত সুন্দর রোমাঞ্চকর।
আজকের অনুভূতি টা অনেক স্নিগ্ধ। আজকের অনুভূতির কী নাম দিয়েছি জানো? “চাঁদের ডাইরি” খুব সুন্দর নাম নাহ বলো? ওই যে তুমি লক্ষী চাঁদ আর আমার প্রিয় ডাইরি। তোমরা দুজনেই অনেক ভালো জানো। তোমার আলোতে আমি যখন গল্প লিখবো খুব ভালো লাগবে তখন বলো? তোমাকে আমি দারুণ একটা গল্প লিখে দেবো। খুব সুন্দর গল্প। দেখো তোমার অনেক পছন্দ হবে। আচ্ছা তুমি পড়বে তো সেই আলোবৃত গল্প।
পড়লেই বুঝবে, তখন দেখবে তোমার মন একদম ভালো হয়ে গেছে। আচ্ছা শোনো আমি এখন ডাইরি লিখবো কেমন। পরে আবার তোমার সাথে কথা বলবো। তুমি আবার ঘুমিয়ে যেওনা কিন্তু। কফি বানাবো বলে চুলাতে পানি বসিয়েছি না খেয়ে যেওয়া আবার। যাও ততক্ষণে একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসো। আমি ডাইরি নিয়ে বসি, কই গেলো আমার কলম টা। ওই তো পেয়েছি এখন তাহলে লেখি কেমন……