সায়েন্স

সায়েন্স

বউ আজ আমার সাথে যাবে বাজারে ৷ অনেক বুঝাইলাম তাকে, শুনলনা সে ৷ বাজারে যাবেই ৷ তবে শুধু মাছ কিনতে যাবে, আর কিছুনা ৷ শেষপর্যন্ত রওনা দিলাম ৷ পৌঁছলাম বাজারে ৷ বউ বলল মাছের বাজারে নিয়ে যেতে ৷ নিয়ে গেলাম সেখানে ৷ বোয়াল মাছ কিনতে এক দোকানদারকে বউ মিষ্টি হেসে বলল,

~ভাইয়া, মাছটার দাম কত? দোকানদার আমার রুপবতী বউয়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে বলল,

___১০০০ ট্যাকা কেজি ৷ আপনের থেক্যা ৯৫০ টাকা রাখমু! বউ চাপা কন্ঠে বলল,

~৩০০ টাকা কেজি দিবেন? নইলে গেলাম! দোকানদার বিড়বিড় করে কি যেন বলল? বউ লোকটার মুখের ভাষা হয়তো বুঝতে পেরেছে ৷ এজন্য লোকটাকে জবাব দিলো, “হ তোর মা, বোনকে ঐ গালি দে!” বলেই বউ বোয়াল মাছের দোকান ছেড়ে ইলিশ মাছের দোকানে গেল ৷ মাছের দাম জিজ্ঞেসা করা হলে দোকানদার বলল ১২০০ টাকা কেজি ৷ বউ বলল ৫০০ টাকাতে দিলে নিব ৷ দোকানদার বলল হইবে হইবে ৷ বউ বলল তাহলে দেন ৷ দোকানদার কিছুই করলোনা, চুপ রইলো ৷ বউ আমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ৷ ওদিকে দোকানদার এখন অন্য কারো জন্য মাছ ওজন করছে ৷ দেরি হচ্ছে দেখে বউ রাগস্বরে বলল,

~কি ব্যাপার মাছ দিচ্ছেন না কেন? কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব? দোকানদার বলল,

__ মাছ দিমু মানে?আপনি কি মাছ লইবেন?

~তো কি জন্য খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছি?

___৫০০ ট্যাকা কেজিতে তো ইলিশ মাছ হইবেনা, গু খায় যে মাছ পাঙ্গাস সেইটা হইবে, লইবেন? এটা শুনে বউ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ক্ষ্যাপা বাঘিনীর রুপ নিয়ে ক্ষিপ্তস্বরে বলল,

~এই যে মিঃ মাছওয়ালা, মুখ শামলে কথা বলবেন ৷ মাছ দিবেন বলেছিলেন ৷ এজন্যই এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি ৷ শীঘ্রই মাছ ওজন করুন ৷ তারপর ব্যাগে ভরে দিন!

__মাথা কি নষ্ট হইলো আপনের? কহন মাছ দিমু কইলাম? বউ পাশের দোকানদারকে চোখ মারলো ৷ সেই দোকানদার বউয়ের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে এই দোকানদারকে বলল,

___মফিজ তুই তো কইলি মাছ দিমু ৷ এহন উল্টা বলতাছিস কেন? দোকানদার বলল,

___চুপ কর, আমি কি পাগল যে ১২০০ ট্যাকার ইলিশ ৫০০ ট্যাকাতে দিমু? বউ বলে উঠল,

~অাপনি মাছ দিবেন নাকি পুলিশে কল করব? ফোনে রেকর্ড করে রাখা আছে সব ৷ আপনি মাছ দিবেন বলে রাজি হয়েছিলেন সেটাও রেকর্ড করা আছে ৷ ভাল করে জেনে নেন, অামার বড় ভাই পুলিশ অফিসার! সুতরাং, সাবধান!

দোকানদার ভয়ে ঢোক গিলে মাছ ওজন করতে লাগল ৷ তখন বউ আমাকে ফিসফিস করে বলল, “দেখো কেমনে বাজার করতে হয়, শেখো! আর পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করো ৷ আমি টাকা আনতে ভুলে গেছি!” বউ টাকা আনেনি শুনে মাথায় হাত জিহ্বায় কামড় ৷ আমিও তো টাকা আনিনি ৷ বউকে ফিসফিস করে বললাম, “অামিও তো টাকা আনিনি ৷” আমার কথা শুনে বউয়ের চোখ মুখ রক্তিম হয়ে অগ্নিমূর্তি ধারণ করল ৷ দোকানদারের থেকে মাছের ব্যাগ নিয়ে বউ হাঁটা শুরু করে দিল ৷ দোকানদার বলে উঠল, “ভাবি, ট্যাকা তো দিলেন না?” বউ লোকটার দিকে চোখ গরম করে বাকা চোখে তাকিয়ে ক্ষ্যাপাস্বরে বলল,

~আপনার কি মাথা নষ্ট? টাকা কয়বার দিব? আজব পাবলিক!

___কহন ট্যাকা দিলেন?

~যখন দাম ঠিক হলো তারপর একজনের মাছ ওজন করছিলেন, সেই লোকটি যখন টাকা দিয়েছিল তখনই আমি চকচকে ৫শ টাকা দিয়েছি! দোকানদার মাথায় হাত দিয়ে আপসোসের স্বরে বলল,

__হায়রে ভাবি! এত মিছা কতা কইতে পারেন আপনে? বউ পাশের দোকানদারকে ফের চোখটিপ মারলো ৷ সেই দোকানদার এই দোকানদারকে বলল,

___ক্যারে মফিজ তুুই কি মন ভুলার সাথে চোখভুলা হইয়া গেছস? ভাবি তো সেই কহন দাগহীন চকচকা ৫০০ ট্যাকার নোট দিলো! দোকানদার ছলছল চোখে আমার বউকে বলল,

___ভাবি দেহি ব্যাগটা?

বউ ব্যাগটা তার হাতে দিল ৷ দোকানদার ব্যাগ থেকে ইলিশ মাছ ঢেলে তার মাছের উপর রাখল ৷ তারপর সে তার প্যান্টের পকেট থেকে ৫০০ টাকা বউয়ের হাতে দিয়ে বলল,

___মাছ অন্য দোকান থেইকা কিনা নিয়েন! বাধ্য হয়ে আমাদের ঐ দোকান থেকে চলে যেতে হল ৷ বউয়ের মুখ এতটুকু হয়ে গেছে ৷ সে আপসোস করে বলছে, “ইশ অল্পের জন্য মাছটা আমাদের হলোনা!” পরে আরো কয়টা দোকানে গেলাম ৷ দাম ঠিকঠাক হলনা ৷ অবশেষে বউ সিদ্ধান্ত নিলো পুঁটি মাছ কিনবে ৷ পুঁটি মাছের এক ভাগের দাম কত? এটা দোকানদারকে জিজ্ঞেসা করলে বলল, “৬০ ট্যাকা!” বউ বলল ৩০ টাকা ৷ অনেক জোরাজুরির পর ৩৫ টাকাতে মিটমাট হলো ৷ বউয়ের কাছে খুচরা ৩৫ টাকা থাকায় জালিয়াতিতে পাওয়া ৫০০ টাকা ভাংতে হলনা ৷

পুঁটি মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম ৷ বাড়ি ফিরে দারুণ ভাবে বউ পুটি মাছ রাঁধছিল ৷ পুটি মাছের তরকারির ঘ্রাণে জিবে জ্বল এসে গেল ৷ খেতে মন চাচ্ছিল খুব ৷ খাবার সময় যেই পুঁটি মাছ মুখে নিয়ে চেক করলাম তখনই বুঝতে পারলাম মস্তবড় ঠকা ঠকেছি ৷ মাছ ভাত খাবার ইচ্ছা হারিয়ে গেল ৷ থ মেরে বসে রইলাম ৷ বউ তখনো মাছ মুখে নেয়নি ৷ আমার অবস্থা দেখে মুখে নিলো ৷ সেও পুঁটি মাছ মুখে নিয়ে স্তব্দ হয়ে গেল ৷ কিছুক্ষণ পর থু থু আর ইয়াক ইয়াক বলতে বলতে মাছ উগড়ে ফেলে দিলো ৷ এরপর বলল ছিঃ কি দূর্গন্ধ আর তিঁতা! অথচ ঘ্রাণে মনে হয় কতই না টেষ্ট হবে! ৩৫টা টাকায় লস ৷

বউ এই বলে নিজেকে স্বান্তনা দিল যে, “বাজারে গিয়ে ৫০০ টা টাকা ফ্রি পেয়েছি, এই তো অনেক!” পরদিন সকালে বউ বলল, “মাছওয়ালার থেকে যে ৫০০ টাকা পেয়েছিলাম ওটা দিয়ে এখন রেস্টুরেন্টে গিয়ে কফি খেয়ে আসব ৷ আমি গেলাম, তুমি অফিসে যাও!” বউ চলে গেল রেস্টুরেন্টে ৷ সেখানে কি কি ঘটেছিল বলছি, বউ একমগ কফি আর জুস অর্ডার করলো ৷ সেসব আয়েশ করে খেয়েও নিলো ৷ খাবার পর বেশ কিছু সময় বসে থেকে মোবাইল টিপছিল ৷ বউয়ের ভাব দেখে মনে হচ্ছিল সে মহারাণী ৷ বিল পরিশোধ করার সময় ৫০০ টাকার নোট ম্যানেজারকে দিল সে ৷ ম্যানেজার টাকাটা ভাল করে লক্ষ্য করছিল ৷ এরপর ম্যানেজার বউয়ের দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে রইলো! বউ চেঁচিয়ে বলল,

~এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? বাকি টাকা দেন ৷ আমাকে যেতে হবে!

___সরি ম্যাডাম, আপার টাকাটা জাল ৷ আপনি অন্য টাকা দিন!” বউ উত্তেজিত গলায় বলল,

~পাগল আপনি, কি বলছেন? আমার টাকা হবে জাল? ফাইজলামী করেন?” ম্যানেজার পাল্টা ঝাড়ি মেরে বলল,

___গলা নিচু করেন, জাল টাকা চালানকারী আপনি, আবার চিল্লাচ্ছেন? ভাগ্যিস পুলিশ ডাকছিনা রেস্টুরেন্টের গুডউইল নষ্ট হবে ভেবে ৷ তাড়াতাড়ি ভাল টাকা দিয়ে চলে যান!” বউয়ের চোখ মুখ তখন রক্তিম হয়ে গেল ৷ ভয়ের কারণে ৷ তার হাত পা কাঁপছিল ৷ সে কাঁপা গলায় বলল,

~কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই ৷ মাত্র ১০টাকা আছে ৷ আপনি ওয়েট করুন আমি বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসছি!

___না, তা তো হবেনা ৷ আপনি চলে গেলে টাকা হারাব,মানুষও!

~তো আমি কি করব?

___থালা-বাসন মাজতে হবে, ঐ যে কিচেন রুম ৷ ওখান থেকে থালা-বাসন নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ধুতে থাকুন!

~এসবের দরকার নেই ৷ আমার স্বামী আসলে টাকা দিয়ে দিব ৷ তাকে ফোন দিচ্ছি!

___সেটা তো হবেনা ৷ এত সময় ধরে এখানে অপেক্ষা করবেন, এজন্য কাস্টমার কম আসবে ৷ কারণ রেস্টুরেন্টের ভেতরে কাস্টমার বেশি দেখে অন্য কাস্টমার চলে যায় ৷ আপনার স্বামী যতক্ষণ না আসবে ততোক্ষণ থালা বাসন পরিষ্কার করবেন! উনি টাকা দিলে আপনার পারিশ্রমিকও দেওয়া হবে তখন!

বউ আমাকে ফোন দিলো ৷ সমস্ত ঘটনা খুলে বলল ৷ ফোন কেটে দেবার পর সে নিরুপায় হয়ে থালা বাসন মাজতে লাগল ৷ আমি যখন রেস্টুরেন্টে পৌঁছলাম তখন ওসব কান্ড দেখে খুব কষ্ট পেলাম ৷ এত কষ্ট লুকানোর জায়গা পেলাম না ৷ বউ তখন কাজে মগ্ন, আমার দিকে ফিরেই তাকাচ্ছেনা ৷ আমি ম্যানেজারের কাছে এসে টাকা দিচ্ছিলাম ৷ রেস্টুরেন্টের এককোণে ছিল টিভি ৷ নায়ক শাকিব খানের মুভি চলছিল ৷ নিশ্চয় ম্যানেজার শাকিব খানের ভক্ত! টিভিতে নজর দিয়ে দেখলাম শাকিব খান কেতাবী ডংয়ে বলছে, “এটাই সায়েন্স!” বিশ্বাস করুন আমার বউয়ের অতি চালাকি কর্মের ফলাফল দেখে মনে হলো “হ্যাঁ, এটাই সায়েন্স!”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত