কদমফুল আমার খুব প্রিয়।এটা নিশ্চয় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রিতুর কাছ থেকে জেনেছে।রিতু আবার উনার খালাতো বোন।সেটা জানার পর থেকেই এক জোড়া কদম ফুল নিয়ে আমার পিছনে ঘুরঘুর করে।ছেলেটা ভীষণ বোকা।সেগুলো আমাকে দিয়ে প্রপোজ করতে হবে তো।শুধু হাতে নিয়ে পেছনে ঘুরলেই কি হবে।আমার অনেক দিনের স্বপ্ন আমার স্বপ্নের রাজকুমার আমাকে কদমফুল দিয়ে প্রপোজ করবে আর আমি সাথে সাথেই একসেপ্ট করে নিব।আমার স্বপ্নের রাজকুমার তো পেয়েই গেছি।
কিন্তু আমাকে প্রপোজ করা তো দূরের কথা আমার সাথে একটা কথাও বলতে আসে না।এটা তো অন্তত বলতে পারে ‘‘কেমন আছ?’’ ‘‘পড়াশুনা কেমন চলছে?’’ কোনটায় না।শুধু আড়চোখে তাকিয়ে দেখবে।অবশ্য আমি গিয়েও কথা বলতে পারি। কিন্তু না,আমি আগবাড়িয়ে বলতে যাব কেন।আমারও ভাব কম না। ওর শ্যামলা বর্ণের চেহারাটায় একটা মায়া মায়া ভাব আছে।আমিও ওকে আড়চোখে দেখি।রোজ রোজ কলেজে যেতে ভাল লাগে না।কিন্তু ওকে দেখার জন্য রোজ কলেজে যাই।প্রতিদিনই ভাবি আজ হয়তো কদম ফুল দিয়ে প্রপোজ করবে।শুধু শুধু ভেবেই যাই।কদমফুল ওর হাত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে।
ওহ!আমাদের পরিচয়টাই তো দেওয়া হলো না।আমি বর্ষা অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি আর উনি মানে আবির থার্ড ইয়ারে।প্রথম জানতাম না উনি যে রিতুর খালাতো ভাই।তারপর একদিন রিতুদের বাসায় গিয়ে দেখি উনাকে। সেখানেই আমাদের পরিচয়টা হয়েছিল।জাস্ট একটু কথায় হয়েছিল আমাদের মধ্যে।এর পরে আর কখনো কথা হয় নি। রিতুর কাছে শুনেছি উনি নাকি আমাকে ভালবাসেন।নবীণ বরণ অনুষ্টানে নীল পান্জাবী পড়া,মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া,এলোমেলো চুল,শ্যামলা বর্ণের ছেলেটা যখন “হুমায়ুন আজাদ” এর ‘‘আমি সম্ভবত ছোট কিছুর জন্য” কবিতাটি আবৃতি করছিল আমি তখন ওর ভয়েস আর মায়াবী চেহারায় ক্রাশ খেয়ে অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম।মনে হয়েছিল আমি সম্ভবত ওর জন্য পাগল হয়ে এখানে এখনই মারা যাব।
তারপর প্রতিদিনই আবিরকে খেয়াল করতাম।প্রতিদিনই লক্ষ করতাম ওর চুলগুলো এলোমেলো থাকত।ইচ্ছে হতো কাছে গিয়ে চুলগুলো আঁচড়িয়ে দিতে আর বলতে “এই ছেলে তোমাদের বাসায় কি চিরুনি নেই?” “চুল এলোমেলো করে আস কেন?”।হয়তো এলোমেলো চুলে আবিরকে আরও বেশী সুন্দর লাগে,আরও মায়াবী মনে হয়। রিতুর কাছে যখন শুনলাম আমার ক্রাশই আমাকে ভালবাসে।আমার তো তখন খুশীতে নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছা করছিল।তখন ডান্স না দিতে পারলেও বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে নাগিন ডান্সের মিউজিক না পেয়ে অবশেষে বাবার লুঙ্গী পড়ে লুঙ্গী ডান্সই দিলাম।কিন্তু রিতুর সামনে মুখখান এমন ভাব করলাম যেন ওর কথা আমি তেমন খেয়াল করি নাই। রাত হলেই সব ভাবনারা এসে ভীড় জমায়।ধুর এখন এসব ভাবনা রেখে ঘুমাই।
—বর্ষা,বর্ষা,এই বর্ষা উঠ
—কি মা এত সকালে ডাকছ কেন?আমার কলেজ তো ১০টায়।আমাকে আর একটু ঘুমাতে দাও প্লীজ মা।
—রোজ তো বেলা পর্যন্ত ঘুমাস।আজ না হয় একটু তাড়াতাড়ি উঠ।
—কেন মা?আজ কি এমন হয়েছে যে আমার আরামের ঘুম হারাম করতে হবে!
—হয়েছে না তবে হবে।তোকে দেখতে আজ পাত্রপক্ষ আসবে।
—কিহ মা!!এই অন্যায় আমি কখনো মানব না।মা শুনো আমার এখনো বিয়ের বয়স হয় নাই।পড়ালেখা শেষ হোক তারপর।আমি তো এখনো তোমাদের সেই পিচ্চি বর্ষা।
—দেখ মা এমন করিস না।তোকে দেখতে আসবে বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না।
—মাআআ আহহ তবুও।মা আমাকে তো কলেজে যেতে হবে।
—আজ কলজে যেতে হবে না।একদিন কলেজে না গেলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।
এত সেত বোঝি না।তোর বাবা উনাদের আসতে বলে দিয়েছে।এখন এসব ন্যাকামি করে লাভ নেই।তার চেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে রেডি হ।আমি যাই ওই আবার কত কাজ করতে হবে।
—হুহ
ধুর বাল।কি যে করি।ইচ্ছে করছে ব্লু হোয়েল গেমটা খেয়ে থুক্কু খেলে মইরা যাই।আবিরের বাচ্চা আবির শয়তান,বোবা সব তোর জন্য হচ্ছে।সারাজীবন তুই এমন বোবা হয়ে থাকিস।আমাকে যেহেতু ভালবাসিস তো এই কথাটা আমাকে বলতে পারস না ক্যান।তুই যদি বলতি তাহলে তো বাবা মাকে তোর কথাটা বলতে পারতাম।আর বাবা মা আমার কথাটা মেনে নিত এ বিশ্বাস আমার আছে।কিন্তু এখন তো কিছুই বলার নাই। এখন আবার আরেক পুলার লাইগা শাড়ি পড়বে হবে,সাজতে হবে।আল্লাহ গো আল্লাহ তুমি পাত্রপক্ষদের চোখের উপ্রে ঠাডা ফালাও যাতে আমাকে দেখে পেত্নী পেত্নী বলে দৌঁড়ে পালায়। মাশাআল্লা,মেয়ে আমাদের খুবই পছন্দ হয়েছে।ছেলে একটু ব্যাস্ত তাই আমাদের সাথে আসতে পারে নাই।সামনের সপ্তাহে ছেলেকে নিয়ে আসব আপনাদের পছন্দ হলেই ঐদিনই আংটি পড়ানোর কাজটা সেড়ে ফেলব।
না,না,না এ বিয়ে মানি না মানব না।মেয়ে হয়েছি বলে কি হয়েছে কালই আমি কলজে গিয়ে বোবা আবিরটাকে প্রপোজ করব। বৃষ্টি আপুর সাথে আমার আবার কিসে শত্রুতা।এতদিন বৃষ্টি আসার কোন নাম নেই আজ আমার বিপদের দিনে এমন তুমুল বৃষ্টি নামতে হলো।আজকে যেভাবেই হোক বৃষ্টিতে ভিজেই আমাকে কলেজে যেতে হবে। কলেজটা তো একদম ফাঁকা।কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না।কারোই বা ঠেকা পড়ছে এমন বৃষ্টির দিনে কলেজে আসতে।আমার কপাল খারাপ বলে আসতে হলো।আজ হয়তো আবিরও আসবে না।প্লীজ আবির আসো। মন খারাপ করে বর্ষা আনমনে কলেজের পুকুর পাড়ে বসে আছে।হঠাৎ বর্ষা দেখে তার চোখের সামনে এক ডজন বৃষ্টি ভেজা কদম ফুল।চোখ তুলে উপরের দিকে তাকাতেই দেখে আবির।
—আই লাভ ইউ বর্ষা
—এত দিন পরে
—কি করব বলো এতদিন তো এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
—মানে বুঝলাম না!
—আমার খুব ইচ্ছে ছিল আমি যাকে ভালবাসব তাকে এমন একটা বৃষ্টির দিনে বৃষ্টি ভেজা কদমফুল দিয়ে আমার ভালবাসার কথা বলব।প্রতিদিনই তো কদমফুল নিয়ে আসতাম।কিন্তু বৃষ্টি তো আর আসত না।আজ সেই সুযোগ এলেো।কি উত্তরটা দিবে না?
—হুম,আই লাভ ইউ টু আবির কিন্তু একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
—কি ঝামেলা?
—আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে মানে হয়ে গেছেই।প্লীজ তুমি কিছু একটা কর।যেভাবেই পারো বিয়েটা ভেঙ্গে দাও।
—সেকি!আমাদের বিয়ে আমিই ভেঙ্গে দিব।ভালবাস অথচ আমাকে বিয়ে করবে না।এ কেমন ভালবাসা!
—আরে তোমাকে আমি ভালবাসি এবং তোমাকেই বিয়ে করব।আমি তো বলছি ওই ছেলেটার কথা।
—আসলে কি বর্ষা ওই ছেলেটা আমিই।
—কিহ!!!
—হ্যা রে বর্ষা তুই যদি এখন বিয়েটা না ভাঙ্গিস তাহলে তুই আমার বান্ধবী থেকে ভাবী হওয়ার প্রমোশন পাবি।
—রিতু তুই,তুই সব জানতি তবু আমাকে বলিস নি।
—ভাইয়ার নিষেধ ছিল।বোন হয়ে তো ভাইয়ের কথা ফেলতে পারি না।
—শুনো আবির তুমি আমাকে কাঁদাইছো অনেক টেনশন দিছ।এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
—বলো কি শাস্তি দিবা।তুমি যা শাস্তি দিবা সে শাস্তি নিতে আমি প্রস্তুত।
—প্রতিদিন আমাকে কমপক্ষে একটি কবিতা আবৃতি করে শুনাবা।তোমার আবৃতি আমার এত এত ভাল লাগে বলে বোঝাতে পারব না।
—হাহাহা,এই কথা।ভাল লাগার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।একটি কেন হাজারটা তোমাকে শুনাতে আমি প্রস্তুত।তাহলে চলো পুকুর ঘাটে গিয়ে বসি এখনই শুনানো স্টার্ট করি।
—হুম চলো।আর বৃষ্টি আপু তোমাকে অনেক অনেক অনে ক ধন্যবাদ।মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠল আমি সম্ভবত এত খুশীর জন্য এখানে এখনই মারা যাব।