ঘুম

ঘুম

ভাইয়া উঠে যা বাজারে যেতে হবে। আরে উঠছ না কেন? আম্মু তোমার ছেলেরে তুমি উঠাও। আম্মু এসে ঝাঁকুনি দিতে শুরু করলেন,

-ফাহিম, এই ফাহিম উঠ।
-হু হু।
-হু কি রে তুই উঠবি নাকি মেরে তক্কা বানিয়ে দিব। গতকালও বাজার করিছ নাই, এর আগের দিনও না। আজ যদি না করিছ তাহলে ডিম আর আলু খাবি।
-আচ্ছা।
-উঠ বলছি এখনি উঠ, আঁখি পানি আন তো।
-আরে পানি লাগবে কেন? আর আমি কি ঘুমে নাকি চোখে বন্ধ করে অংক মিলাচ্ছিলাম, জটিল অংক ওয়েট আরেকটু তারপরই শেষ।

-অংক মানে…
-আমি হলাম ব্যবসায় বিভাগের স্টুডেন্ট, এই বিভাগের ছাত্রদের মাথায় সব সময় টাকা আর অংক লেগেই থাকে।
-ফাজলামি না করে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যা।
-ছেলেদের জন্মই হইছে বাজারের ব্যাগ বয়ে নেয়ার জন্য, যাও লিস্ট বানাও গিয়ে। আম্মু লিস্ট বানাতে বসার ফাঁকে আমি আবার ঘুমিয়ে পরলাম। অতঃপর আবার ডাকাডাকি শুরু,

-কিরে আবার ঘুমাই গেলি।
-হু হু।
-ফাহিম, এই ফাহিম।
-আরে ঘুমাই নাই তো নয়ের নামতা মনে মনে পড়ছিলাম। নয় একে নয়, নয় দুগুণা আটারো, তিন নং সাতাশ।
-তুই কি যাবি নাকি না।
-আরে যাচ্ছি তো, কি অদ্ভুত মহিলা!

রাস্তায় বোতল পরে আছে দেখা মাত্র প্রতিটা বাঙালি নিজের ভিতর একজন পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি আবিষ্কার করে। আমি সেইসব থেকে আলাদা নই রাস্তায় বোতল পরে আছে দেখে দিলাম ফ্রি-কিক শর্ট, ঠাশ করে কিছু দূর একটা শব্দ হল তারপর চেয়ে দেখি সামনে একজনের হাত থেকে ফোন পরে স্ক্রিনে বাংলাদেশের মানচিত্র হয়ে গেছে। ধর ধর বলার আগেই রিকশায় উঠে পরলাম, জীবনেও আর ফুটবল খেলব না। এই যে বোতলের আঘাতে ফোনে মানচিত্র অঙ্কন হয়েছে এটা নতুন না এর আগেও একবার কিক মেরে শুনি উহ! শব্দ হইছে চেয়ে দেখি মাথায় হাত দিয়ে পিছন দিকে যিনি তাকিয়েছেন তিনি আর কেউ নন আমার চাচা। রিকশায় উঠে আবার ঝিমুনির মত চলে এসেছে বাজারে এসে রিকশাচালক আমারে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলল,

-ভাইসাব ঘুমাইয়া গেছিলেন নি?
-আরে না রে ভাই, ভাবছিলাম দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে?
-ক্যান ভাই দেশ কি হাটা শুরু করছে নি?
-শুরু করেছ তো হাসিনা বুবু আর খালেদা আপার কামড়াকামড়ি তে দেশ আমাদের রেখে দৌড়াচ্ছে।
-বলেন কি ভাই! তাজ্জব ব্যাপার।
-হ রে ভাই তাজ্জব ব্যাপার এইসব যখন ভাবি তখন চোখ আপনে বন্ধ হইয়া যায়।
-বুঝবার পারছি। আপনি কি আবার চোখ বন্ধ কইরা ভাববেন?
-না আপাতত বাজার টা করেই আসি নইলে দেশ আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে বাড়ি আমাকে রেখে চলে যাবে।

বাজার শেষ করে বাসায় ঢুকার কিছুক্ষণ পর চিৎকার করে কেউ ডাকতে শুরু করল। ভেবেছিলাম এখন আবার ঘুমিয়ে যাব কিন্তু না এরা আমাকে ঘুমাতে দিবে না। বাহিরে এসে দেখি রফিক দাঁড়িয়ে আছে। রফিক আমার সমবয়সী, তবে বন্ধু নয়। রফিকের সাথে মাঝে মধ্যে খেলার মাঠে দেখা হয় টুকটাক কথা হয় এর বেশি কিছুই নয়। সে আমার সাথে যতক্ষণ কথা বলবে যেন তার আমি খুব কাছের ফ্রেন্ড, তার কথার বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে মেয়ে মানুষ। সেই মেয়ে আবার তার প্রেমে হাবুডু খাচ্ছে সে মোটামুটি পাত্তা দিচ্ছে আবার নাও। তার কথা আমরা মজা করেই শুনি সেখানে অসাধারণ ভাবে কিছু অশ্লীল বর্ণনাও থাকবে নিশ্চিত ভাবে। তবে ভূতের গল্প আমরা যেমন শুনে ভয় পাই কিন্তু আমরা জানি এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় কারণ ভূত বলতে কিছু নেই, ঠিক সেইভাবে তার কথা আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনব তবে বিশ্বাস কখনো করিনি। রফিক আমার কাছ ঘেঁষে বলল,

-মেয়ে তো পটাই ফেলছি।
-খুব ভাল করেছিস, নিশ্চই মেয়ে অনেক সুন্দর।
-আরে শুন কি হইছে মেয়ে হচ্ছে আমার খালাত ভাইয়ের চাচাত বোন। দেখতে আসমানের পরী।
-তাহলে তো ভালই হল বিমানে চড়ে তর আর বিদেশ যেতে হবে না, পরীর পিঠে চড়ে চলে যাবি।
-মজা করিছ না, তবে আমি এখনো বলিনি যে ওকে ভালবাসি। সেই আমাকে আগে প্রপোজ করেছে, আমি বলেছি ভেবে জানাব।

-তর মত স্মার্ট, শিক্ষিত, ভদ্র ছেলের প্রতি সহজেই মেয়ে পটে যাবে এটা আর নতুন কি?
-তুই কিন্তু আমার সাথে মজা করছিস?
-প্রত্যেক বার এসে যদি একেক মেয়ের ঘটনা বলতে থাকিস তাহলে তো মজা করা স্বাভাবিক।
-এখনকার টা সত্যি।
-প্রত্যেকবার সত্যই থাকে।
-এখন মেয়ে বলেছে ওর ফোনে ১০০টাকা দিতে, আমার কাছে বর্তমানে টাকা নেই। তুই যদি একটু হেল্প করতি। কাল দিয়ে দিব।
-ভাইরে আমি নিজেই ফকির, তুই কেমনে বললি এই কথা।
-সত্যি তর কাছে নাই।
-থাকলে অবশ্যই দিতাম।

রফিক কে বিদায় করে বিছানায় মাত্র শুয়েছি তখন রূপার ফোন ঝাল ঝাল কণ্ঠে বালিকা বললেন,

-তোমার না আমার সাথে দেখা করার কথা।
-আবহাওয়া খারাপ হওয়াত জন্য আজকের ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
-ফাজলামি কর, তুমি এখনি আসবা।
-পাগল নাকি, আমি এখন অন্ধকার দেখছি।
-কোথায় অন্ধকার বাহিরে তো ঝকঝকে রোদ।
-ওহ মনে পরেছে আমি তো চোখের পাতা বন্ধ করে শুয়েছি সেজন্য অন্ধকার দেখছি।
-ফাহিম, তুমি যদি আজ না আসো খুব খুব খারাপ হবে।
-আচ্ছা আসতেছি।
-এই তো ভাল ছেলে।

রিকশায় উঠে আবার ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি রিকশার উডে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলাম, রিকশা থেমে আছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চক্কু চড়ক গাছে উঠে গেছে, এতক্ষণে রিকশায় পৌঁছে যাবার কথা। ফোন বের করে দেখি রূপার ১৩টা কল এসেছে। ডাকাডাকি করতেই পাশের দোকান থেকে রিকশাচালক হাজির, কঠিন ধমক দিয়ে বললাম,

-তুমি রিকশা থামিয়েছ কেন?
-টায়ারের টিউব ফুটো হয়ে গেছে।
-আমাকে বলবা তো তাহলে আমি অন্য রিকশায় যেতাম।
-আমি ভাবলাম আরাম কইরা ঘুমাইতেছেন ঘুমান।
-ফাজলামি কর, আমার মোবাইলে একের পর এক কল আসছিল ডাক দেও নাই কেন?
-আমি ভাবলাম গান লাগাইয়া ঘুমাইছেন তাই আমিও শুনতেছিলাম।
-হায় আল্লাহ্‌।

রূপারে ফোন দিতেই লাইন কেটে দিল। পঞ্চমবারের সময় ফোন ধরে বলল, তুমি আর ফোন দিবা না, ১ঘন্টা অপেক্ষা করে এখন বাসায় চলে আসছি। তুমি তোমার ঘুম নিয়া থাকো। বাই। এতক্ষণে টিউব বদলানো হয়ে গেছে। অতঃপর আমি আবার রিকশায় উঠে বললাম, ঘুমাইলাম মিয়া যেখান থেকে তুলেছিলা ওইখানে গিয়া আমারে ডাক দিও।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত