আমার বন্ধু আদর।নাম যেমন আদর তার কাজকর্ম ও সেরকম।আমি, অর্ষা,টিয়া ও লামিয়া এই চারজনের মধ্যে যে কাবাব মে হাড্ডি, সে হল আদর। চার বান্ধবীরই চোখের মণি আদর।এই পৃথিবীর সব নিয়মের বিপরীতে চলে সে।গত ৫ বছর ধরে আমরা ৫ জন একসাথে।কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই ৫ বছরে আমাদের মধ্যে কখনো কোন মনোমালিন্য হয়নি কিন্তু তাই বলে একজন আর একজনকে যে পঁচাইনি তা কিন্তু নয়।আসলে বেশিরভাগ ঝড় তুফানগুলো আদরের উপরেই যায়।
৪ জন মিলে একসাথে উঠতে বসতে অপমান করি তাকে।কিন্তু এটা নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই।কারণ এসব ছাড়াও তার জীবনে হতাশা আর দুঃখের আরো অনেক কারণ আছে।ক্লাসের সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র হল আদর। তবুও প্রতিদিন তার নিত্যনতুন দুঃখ,নিত্যনতুন হাহাকার।কোন পরীক্ষায় যদি সে ১০০ তে ৯০ পায় তবুও সবচেয়ে হায়েস্ট পেয়েছে এটা কোন ব্যাপার না,বরং ১০ মার্ক্স কম পাওয়ার কারণে সারাদিন গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।মাঝেমাঝে মনে হয় হতাশা ওর জীবনে আসেনা, ও নিজেই যেচে পড়ে হতাশার কাছে যায়।আমাদের ৫ জনের যোগাযোগে যাতে সুবিধা হয় তাই আমরা কনভার্সেশনের জন্য একটা গ্রুপ খুলেছিলাম।গ্রুপটা আমি ই খুলেছিলাম আর নাম দিয়েছিলাম The 5 stars! কিন্তু অর্ষা কয়েকদিনের মধ্যে সেটার নাম পাল্টে দিয়ে দিয়েছে The super ladies!আর সেটা নিয়ে তো মহা কেলেঙ্কারি। অর্ষা আর আদরের মধ্যে চুলাচুলি,হাতাহাতি এমনকি লাথালাথি ও হয়ে গেল।
আদর- ” অর্ষানি…আমাকে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে লেডিস লাগে তোর?বলবি?”
অর্ষা- “তুই লেডিস না তো কি? এই এতগুলো বছরে তুই একটাও ছেলে বন্ধু জোগাড় করতে পেরেছিস? সবসময় আমাদের পেছনে ঘুরিস।যা ভাগ।”
আদর- ” বুঝলাম.. বুঝলাম সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতন চলছে।” ঘটনা আরো কিছুদূর গড়াতো।কিন্তু তার আগেই আমরা দুজনকে দুদিকে টেনে নিয়ে গেলাম। আর আমি তাড়াতাড়ি গ্রুপের নাম পাল্টে আবার আগের নামে নিয়ে আসলাম।
আদরের জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃখ যেটা, সেটা হল এখনো পর্যন্ত সে একটাও প্রেম করতে পারেনি।এ নিয়ে সে প্রতিদিন আমাদের সামনে হতাশাপূর্ণ বক্তব্য রাখে।কিন্তু আমরা এখনো অবধি বক্তব্যই শুনে গেছি এর কোন সুরাহা করতে পারিনি।সে প্রতিদিন জানতে চায় তার কিসের কমতি?কেন মেয়েরা তাকে পাত্তা দেয়না।আমি অনেক ভেবে বললাম- “দোস্ত,তুই আসলে ভাই ম্যাটেরিয়াল।তোকে দেখলে নিজের মায়ের পেটের আপন ভাইয়ের মতন লাগে”।
অর্ষা গম্ভীরভাবে বলল- তোর গ্রুমিং দরকার।শরীরে ফিটনেস আনতে হবে।
লামিয়া বলল- “তুই জিম জয়েন কর”
টিয়া বলল- “ডায়েটিং শুরু কর”
আমাদের কথা ওর মনে ধরেছে।সব একসাথে শুরু করেছে।চেষ্টার কোন কমতি নেই।শুধু মাঝেমাঝে আমাদের কাছে এসে বলে- “দোস্ত আমারে গাড়ি ফেল্।”
আমরা- “কেন?”
আদর-” আজ দুইপ্লেট বিরিয়ানি খাই ফেলছি।নিজেরে সামলাইতে পারি নাই।”
আর একদিন হয়ত এসে বলবে – “দোস্ত আমার মাথায় একটা বাড়ি দে।আজ দুইটা স্প্রাইট খাইছি।ডায়েটের বারোটা বাজল বলে!!! “লেখিকা, কবি আর গায়িকাদের প্রতি আদরের তীব্র আকর্ষণ। সে প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন গল্পের আর কবিতার গ্রুপে চক্কর দেয়।এই চক্করের কারণ গল্প কিংবা কবিতা পড়া নয় বরং খুঁজে খুঁজে মহিলা কবি কিংবা লেখিকাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, কেউ তার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করেনা।একদিন কোন এক মাঝারি ধরণের জনপ্রিয় কবি তার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করল।সে সঙ্গে সঙ্গে লাফাতে লাফাতে আমাদের কাছে চলে এলো।
আদর- বান্ধবিস্! কাজ হয়ে গেছে রে,কাজ হয়ে গেছে! তোরা আমাকে বলদ বলিস, কিন্তু দ্যাখ্! শেষমেশ নিজের বুদ্ধিতেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করালাম।
টিয়া বলে উঠল- ” কি বুদ্ধি?”
আদর- “রিকোয়েস্ট এর সাথে সাথে ছোট্ট করে একটা মেসেজ পাঠালাম” লামিয়া ছোঁ মেরে মোবাইলটা নিয়ে বলল – “কি মেসেজ দেখি?”
আদর – “এই দ্যাখ”
মেসেজে আদর লিখেছে- Would u like to b my friend?I wanna make friendship intensely!
অর্ষা- “দোস্ত,তোরে একটা কথা বলব- প্লিজ মাইন্ড খাইসনা।”
আদর- কি???
অর্ষা- “তুই আসলে একটা ভাদাইম্যা।” ব্যাস! আবার লেগে গেল দুজনের।
লামিয়া বলে উঠল- দোস্ত,তুই আসলে কাজটা ঠিক করিস নাই।এটা তোর প্রেস্টিজ এর ব্যাপার।শুধু তোর না।আমাদের ও।
আদর- প্রেস্টিজ ট্রেস্টিজ বুঝিনা।এমনিতে যখন কেউ পাত্তা দিলনা তাই অনুরোধ করে হলেও পাত্তা নিতে হবে।
টিয়া- তোর যা খুশি কর।
আমি- এক্সেপ্ট যখন করেছে তখন একটু মান ইজ্জত রেখে কথা বলিস।বেশি লাফালাফি করিসনা।বুঝলি?
আদর- হ্যাঁ,তা তো অবশ্যই।তোরা আমাকে কিন্তু টিপস দিবি।ঠিকাছে?
আমরা সবাই একসাথে বললাম ঠিকাছে! পরের দিন সকালে আদর আমাকে কল করে বলল -“দোস্ত খুব জরুরি কিছু কথা আছে,প্লিজ ক্যাম্পাসে একটু তাড়াতাড়ি আসিস”। আমিও কি না কি হয়েছে ভেবে তাড়াতাড়ি চলে গেলাম।গিয়ে দেখি সেখানে অর্ষা,লামিয়া আর টিয়াও আছে।আর আদর গম্ভীরভাবে এদিক থেকে সেদিক পায়চারি করছে।আমি যাওয়ার সাথে সাথে ধমক দিয়ে বলল- ” এতক্ষণে মহারাণীর আসার সময় হল?”
আমি- স্যরি রে একটু লেট হয়ে গেল।
আদর- “আচ্ছা,ওসব ছাড়। এখন যেজন্য তোদের ডেকেছি,আমাকে একটু বাংলা টাইপ শেখাতে পারবি?” ওর কথা শুনে আমারা চুপসে গেলাম! এটাই ওর গুরুত্বপূর্ণ কথা!!!
আমি বলে উঠলাম- হ্যাঁ,পারব।এটা কোন ব্যাপার? তুই আমাকে ১৫ মিনিট সময় দে।সব শিখিয়ে দেব।কিন্তু হঠাৎ বাংলা কেন? তুই তো পুরাই বাংলিশ! একটা লাইনে ৫ টা ইংলিশ বলিস! বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ বাংলা প্রীতির কারণ? আদর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল- আসলে সুলোচনা বলেছে…
অর্ষা- সুলোচনা মানে ওই মহিলা কবি?
আদর- হ্যাঁ
লামিয়া- তা,কি বলেছে?
আদর- ও বলেছে ওর সাথে কথা বলতে হলে বাংলা ফন্টে লিখতে হবে।ইংলিশ ফন্টে বাংলা বললে ও কথা বলবেনা। এই ব্যাপারে সে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের একটা লেকচার ও…
টিয়া-” থাক বুঝে গেছি। আমরা থাকতে তুই কোন চিন্তা করিসনা”
অতঃপর আমরা সবাই মিলে বাংলা ফন্টে বাংলা লিখতে শিখালাম।আদর তো মহাখুশি। এবার সে সুলোচনাকে ইমপ্রেস করতে পারবে।যদিও তার আকার ইকার সহ কিছু ব্যাপারে কনফিউশন রয়ে গেছে তবুও সে বলেছে সে সেটা ম্যানেজ করে ফেলবে। সেদিনের পর থেকে আদর নিখোঁজ। ফোন বন্ধ,ক্লাসেও আসেনা।গ্রুপেও ইনঅ্যাক্টিভ।আমাদের খুব টেনশন হচ্ছিল। প্রায় ৩ দিন পর তাকে ক্যান্টিনের বাইরে সিঁড়িতে আবিষ্কার করলাম।আমরা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেছি। “দোস্ত..”কোথায় ছিলি তুই? কি হয়েছে???”
আদর করুণ মুখে বলল- “সুলোচনা আমাকে ব্লক মেরেছে।”
আমরা- “কেন??? কি করেছিলি তুই?”
আদর-“টাইপিং মিসটেক”
আমরা- কিরকম? পুরা কাহিনী বল।
আদর- ” সুলোচনার সাথে এ কথা সে কথা বলছিলাম।হঠাৎ সে জানতে চাইল আমি প্রেম করি কিনা।আমি বললাম না। সে বলল কেন করিনা।আমি তখন ওকে ইমপ্রেস করতে একটু কাব্যিকভাবে উত্তর দিয়েছিলাম।আর তাতেই বিপত্তিটা ঘটল।
আমরা- কি উত্তর দিয়েছিলি?
আদর- দোস্ত বিশ্বাস কর,’এ’- কার টা যে পড়েনি আমি মোটেও খেয়াল করিনি।ও পর পর কয়েকবার জিজ্ঞেস করল কিন্তু আমি একই উত্তর দিয়েছিলাম।
আমরা বিরক্ত হয়ে বললাম- “আরে কাহিনী না করে কি উত্তর দিয়েছিলি সেটা বল।”
আদর- “প্রেম করিনা -কারণ প্রেমের নাম বদনা!”