বিউটিপার্লার

বিউটিপার্লার

“কমলা বানু বিউটি পার্লার” দোকানের উপরে বেশ বড় সড় করে এই কথাটিই লেখা। কিন্তু ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম, মাঝবয়সী এক লোক অতি যত্নে গরু পালন করছেন। সেখানে মোট তিনটে গরু; তিনি সবগুলো কে খড় খাওয়াচ্ছেন। আমার খানিকটা অবাক হওয়ার কথা, কিন্তু হলাম না। এই দেশে আজকাল এমন অনেক কিছুই ঘটে; এই নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই! সেদিনও দেখলাম এক লোক গাড়িতে করে জুতা বিক্রি করছেন। ওনার গাড়ির উপরে বড় করে লেখা লিখা “মফিজের সুস্বাদু ফলের জুস”। এই হলো দেশের অবস্থা।

যাইহোক, কাজের কথায় আসা যাক। আমার দুলাভাইয়ের বিউটি পার্লারের ব্যবসা দেয়ার শখ হয়েছে। ওনার ধারণা আজকাল প্রেম করার হার বাড়ছে তাই বিউটি পার্লারের ব্যবসা ও ভালো চলবে। এর পেছনে ওনার যুক্তি হলো, মেয়েরা তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করলেই মেকাপ করে যাবে, আর সেই মেকাপের জন্য সবাই ওনার দোকানে আসবে; অতি কঠিন যুক্তি। কিন্তু এই পার্লার ব্যবসার ক্ষেত্রে কি কি জিনিসপত্র লাগে এবং লাভ-ক্ষতি কি রকম সে ব্যাপারে তিনি অবগত নন। যার কারণে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিভিন্ন পার্লার ঘুরে পার্লার ব্যবসায়ীর থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে। কমলাবানু পার্লারের দিকে এগিয়ে গেলাম। তারপর করুণ দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলাম,

:- কি অবস্থা আঙ্কেল? কথাটা শুনে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁকুচকালেন। তারপর গম্ভীরভাবে বললেন,
:- কে তুমি? কি চাও!
:- আমি অন্তু। রিপোর্টার অন্তু। “কইয়্যা দিমু” চ্যানেল থেকে আমায় পাঠানো হয়েছে পার্লার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন খোঁজ খবর নেয়ার জন্য।

কথাটা শুনে তিনটে গরুই চোখ বড় করে আমার দিকে তাকালো। তাকানোর লক্ষণ খুব বেশি সুবিধের মনে হচ্ছে না। খুব সম্ভবত আমি যে রিপোর্টার সে ব্যাপারে তারা বিশ্বাস করতে পারছে না। যাই হোক, গরুরা বিশ্বাস না করলেও চাচা ঠিকি বিশ্বাস করলেন। তিনি অতি আগ্রহের সাথে আমায় বসতে দিলেন। এবং বলা শুরু করলেন:- কি আর বলবো বাবা! অবস্থা অতি বিপদজনক! তা না হলে কি আর পার্লার রেখে গরু পালন করছি? সেদিন “এঞ্জেল লতিকা” আমার দোকানে মেকাপ করার জন্য আসলো। ইয়ে মানে.. পার্লারে মেকাপের কাজটা আমিই করতাম। মেকাপ করতে যাবো, দেখি মেকাপের পাউডার শেষ।

কি করবো বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ আটার কথা মনে পড়লো। দোকান থেকে আধা কেজির মতো আটা এনে মেকাপ করা শুরু করলাম। অবশ্য মেকাপ করার সময় “এঞ্জেল লতিকা” বার বার বলছিলো যে, তার নাকে নাকি আটার গন্ধ করছে। আমি তখন বললাম “আরে নাহ্ ম্যাডাম এটা মালেশিয়ার এঞ্জেল পাউডার, যেটা দিলে পরির মতো সুন্দর হওয়া যায়”। একথা শুনে, তিনি মেকাপ করার জন্য বাড়তি উৎসাহ পেলেন । এত্তো উৎসাহ পেলেন যে আমাকে দিয়ে ডাবল মেকাপ করালেন। ডাবল মেকাপের ফলে ওনার গালে প্রায় আধা ইঞ্চির মতো আটার আস্তরন পড়লো। যদিও দেখতে খানিকটা হরর হরর লাগছিলো, তবুও তিনি পরির মতো সুন্দর হতে পারবেন ভেবে খুশি হয়েছিলেন। এমনকি মেকাপ করার টাকাও আমায় ডাবল দিয়েছিলেন।

:- কিন্তু, সেটা তো আপনার জন্য ভালোই হল! একারণে আপনি ব্যবসা ছেড়ে দেবেন কেন?

:- আরেহ্..আগে তো পুরোটা শুনো। মেকাপ করার পর ‘এঞ্জেল লতিকা’ তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেলেন। হঠাৎ শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ওনার ‘মেকাপ’ মানে ‘আটা’ ভিজে কাই এর মতো হয়ে গেলো। ওনার পুরো মুখমন্ডলে বিভিন্ন জায়গায় কাই লেগে থাকতে দেখা গেলো। মনে হচ্ছিল যেন ওনার চামড়া খসে পড়ছে। অতি ভয়ংকর দৃশ্য। এই দৃশ্য দেখে ভয়ে ওনার বয়ফ্রেন্ড দৌড়ে পালালেন। খুব সম্ভবত সেদিনি ওনাদের ব্রেক-আপ হয়েছিল। তারপর তিনি আটার কাই মাখা মুখ নিয়েই আমার পার্লারে আসলেন। প্রথমে আমি দেখেও জোরে চিৎকার দিয়েছিলাম, পরে বুঝতে পারলাম ওনি ‘এঞ্জেল লতিকা’। তারপর ওনি ওনার বিশালাকৃতির হাত দ্বারা আমায় মুক্তহস্তে মারধর করলেন।

:- কি বলেন? মারধর পর্যন্ত করলো?

:- তবে আর বলছি কি? ঘটনা এখানেও শেষ না! আটা মাখার ফলশ্রুতিতে পরের দিন ওনার চেহারায় ফোঁড়া আকৃতির কয়েকটা ব্রণ উঠলো। সেই রাগে তিনি আবারও লাঠি সমেত আমার পার্লারে আসলেন এবং দ্বিতীয় দফায় মুক্তহস্তে মারধর করলেন।

:- ভয়ংকর ব্যাপার!

:- ভয়ংকর ব্যাপার এখানেই শেষ না। সেদিন আমাদের এলাকার ডন “লাল্লু ভাই” বিয়ে করলেন। বিয়ের দিন ওনার বউ ছিল ক্যাটরিনা। বিয়ের পরেরদিন গোসলের পর ওনার বউ হয়ে গেল “নাইজেরিয়া”। অতি অদ্ভুদ ঘটনা। তিনি বুঝতে পারলেন সব মেকাপের কারসাজি। খোঁজ নিয়ে দেখলেন মেকাপ করা হয়েছিল আমার পার্লার থেকে। বরাবরের মতো সব দোষ এসে পড়লো আমার ঘাড়ে! তারপর ওনিও আমার পার্লারে আসলেন এবং সালমান খান স্টাইলে মুক্তহস্তে কেলিয়ে গেলেন। সে কি কেলানি বাবা! মনে হলে, এখনো আমার বুকের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে!

আঙ্কেলের কথা শুনে বুঝতে পারলাম। ওনি কেন পার্লার ছেড়ে গরু পালন করছেন। ঘটনাগুলো সত্যিই বিপদজনক এবং দুঃখজনক। আজকে আর অন্যান্য পার্লারে গিয়ে খোঁজ নিতে ইচ্ছে করছে না। আমার দুলাভাই অত্যন্ত ভীতু মানুষ। পার্লার সম্পর্কে এসব ভয়ংকর ঘটনা শুনার পর ইনি আর যাই হোক পার্লারের ব্যবসা দেবেন না। এর আগেও তিনি একবার টুথপেষ্টের ব্যবসা দিয়েছিলেন।

মজার ব্যাপার হলো, সেই টুথপেষ্ট ও ওনি নিজেই আবিষ্কার করেছিলেন। বাজারজাতকরণ করার পর সেই টুথপেষ্ট যারা ব্যবহার করেছিল, প্রত্যেকের কয়েকটা দাঁত পড়েগিয়েছিল। কারো কারো সবগুলোই পড়ে গিয়েছিলো। এর জন্য অনেকে ওনার বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেছিলো। সেই মামলা কাঁধে নিয়েই তিনি এখনো ঘুরছেন। পার্লারের ব্যবসা দিয়ে নতুন ঝামেলা পাকানো ওনার জন্য কোনো কাজের কথা না!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত