-এইটা আমার মোবাইল !
-তাই নাকি !
সেতু যদিও ফোনের অন্য পাশে থাকা মানুষটার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না তবুও ওর মনে হল যেন মানুষ টা খুব মজা পেয়েছে ওর কথা শুনে । সেতু আবার বলল
-এটা আমার মোবাইল !
-প্রমান কি ? আমার কাছে রয়েছে, সুতরাং এটা আমার !
-না আমার !
ওর এতো পছন্দের একটা ফোন । এক মাসও হয় নি ফোন টা কিনেছে আর এরই মধ্যে ফোন টা হারিয়ে গেল । সেতুর কান্না আসতে লাগলো । সেই সাথে ওপাশে থাকা মানুষটার উপর প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো ! এখনও বাসায় জানে না যে সেতু ওর নতুন মোবাইল টা হারিয়ে ফেলেছে । জানলে কি করবে কে জানে ! অনেক সখ করে সেতু আর তার কয়েকজন বান্ধবী মিলে গিয়েছিল ঢাকা ভার্সিটি এলাকায় ঘুরতে । যদিও সেটা ওদের বাসা থেকে অনেক দুরে । উত্তরা থেকে টিএসসি আসাটা খুব বেশি সহজ কাজ নয় তবুও ওর আর ওর বন্ধুদের কাছে এটা কোন ব্যাপার নয় । সব কিছু ঠিকই চলছিল, সারাটা দিঐ ওরা অনেক জায়গায় ঘুরে বেরালো । অনেক আড্ডা দিল । কিন্তু যখনই বাসায় এসে হাজির হল সেতু লক্ষ্য করলো যে ওর কাছে ওর নতুন ফোন টা নেই । কোথায় গেল কিছুই মনে করতে পারলো না । তক্ষুনি ফোন দিল কিন্তু ফোন টা বন্ধ ছিল । এসব গতকালকের ঘটনা । আজকে সকালে ফোনে আরেকবার ফোন দিতেই সেটা রিং হতে শুরু করলো । সেতুর বুকের ভেতরে কেমন একটা টিপটিপ অনুভুতি হতে লাগলো । ফোন ধরেই বাচ্চাদের মত করে বলল যে ওটা ওর ফোন । ওপর পাশ থেকে আবার বলল
-এটা এখন আমার ফোন !
-আপনি একটা খারাপ মানুষ !
-সবাই যে ভাল হতে হবে এমন কোন কারন নেই ।
-আপনি বদ ! চোর !
-এই তো ভুল বললে ! ফোন টা আমি চুরি করি নি কুড়িয়ে পেয়েছি! এতো চমৎকার একটা ফোন যে ঠিক মত সামলাতে পারে না তার এটা ব্যবহার করার কোন অধিকার নেই ।
সেতু কি বলবে খুজে পেল না । অবশ্য বলে কোন লাভও নেই । ওর আসলে কিছুই করার নেই । যে লোকটা ফোনের সিম খুলে ফেলে তাহলে আর কোন দিন যোগাযোগ করতে পারবে না । কোন খোজও পাবে না ! সেতু রাগ করে ফোন রেখে দিল । এভাবে কথা বলার কোন মানে নেই । সেতু নিজের ফোনের আশা ছেড়েই দিল । ঠিক ১৫ মিনিট পরে আবারও ওর আগের নাম্বার থেকে ফোন এল ওর মোবাইলে !
-কি চাই আপনার ?
-কোথায় থাকো তুমি ?
-কেন ?
-আরে বলই না !
-উত্তরা !
-অনেক দুর ! কিচ্ছু করার নেই । এক কাজ কর নিউমার্কেট আসো ! এসে তোমার ফোন নিয়ে যাও ! সেতুর প্রথমে মনে হল ও মনে হয় ভুল শুনছে । শিওর হওয়ার জন্য বলল
-কি বললেন ?
-বললাম যে এখন রওনা দাও । নিউমার্কেট আসো ! আমি ঘন্টা খানেক পরে সেখানে যাবো ! এসে তোমার ফোন নিয়ে যাও !
-সত্যি বলছেন ?
-সত্যি কেন বলবো না ? সেতু কি বলবে বুঝতে পারলো না ! ওপাশ থেকে মানুষ টা আবার বলল
-শুনো মানুষটা আমি খুব ভাল না হলে খুব খারাপ নই । অন্তত বাচ্চা একটা মেয়ের মোবাইল ফোন মেরে দেওয়ার মত এতো খারাপ নই ! এখন বাজে ১০টা ! আমি ২টার বেশি থাকবো না ! এর পরে আসলে কিন্তু আমার বাসা থেকে তোমার ফোন নিয়ে যেতে হবে !
সেতু আর দেরী করলো না ! যদিও ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে লোকটা আসলেই ওর ফোন ফেরৎ দিবে কি না ! নাকি অন্য কোন মতলব আছে নাকি ! যদিও নিউমার্কেটতে মানুষটা কিছু করার সাহস পাবে না ! যখন বাসে উঠে পরেছে তখন মনে হল মিমিকে একবার ফোন করে জানায় ! সব শোনার পরে মিমি ওকে এক ঝাক বকুনী দিল এভাবে একা একা বের হওয়ার জন্য । তারপর বলল যে খবরদার যাতে সে কিছুতেই অন্য কোথাও না যায় । কোন চিপাচাপার ভেতরে না ঢুকে ।
যখন নিউমার্কেটে পৌছালো তখন প্রায় একটা বেজে গেছে । লোকটার সাথে এরই মাঝে আরও একবার কথা হয়েছে। ওকে চার নাম্বার গেটের কাছে দাড়াতে বলেছে । সেখানে দাড়িয়ে সেতু এদিক ওদিক দেখতে লাগল । এই এলাকার দিকে ওর আসা হয় না বললেই চলে । সব কিছুই বলতে গেলে এখানে অপরিচিত । আসলে এতো দ্রুত চলে এসেছে মোবাইলের কথা শুনে এখন ওর একটু ভয় ভয়ই করতে লাগলো । না জানি সামনে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে । বাসায় এখনও জানে না যে ওর ফোন হারিয়ে গেছে তাই বাসায় ঠিক মত বলতে পারে নি ও কোথায় যাচ্ছে । কেবল বলেছে মিমির কাছে যাচ্ছে । এখন যদি ওর কোন বিপদ হয় যদি ঐ লোকটা ওকে কিডন্যাপ করে তখন ? ওর মনে হল এভাবে চলে আসাটা একদম ভুল হয়েছে । চলে যাবে ? এতো কাছে এসে চলে যাবে ? তবে একটা আফসোস থেকেই যাবে ! কি করবে না করবে ভাবতে ভাবতে কাধে মৃদু টোকা পেল ! চমকে গিয়ে ফিরে দেখলো ২৪/২৫ বছরের একটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । মুখে একটু দুষ্টামির হাসি !
-সেতু !
-হ্যা ! আপনি ! আমিই সেই অধম যার কাছে তোমার ফোন !
তখনই সেতুর মনে হল যে লোকটা ওর নাম জানলো কিভাবে আর চিনলোই বা কিভাবে ! নিশ্চই এর ভেতরে কোন সমস্যা আছে ! সেতুর মনে হল এখান থেকে পালানো দরকার । যদিও আশেপাশে অনেক মানুষ আছে । তবে ছেলেটা নিশ্চয়ই সে রকম প্লান করেই এসেছে । আল্লাহ না জানি কি করবে ! ছেলেটা যেন ওর মনের কথাটাই পরে ফেলল চট করে । মুখে হাসি নিয়ে বলল
-ভাবছো যে তোমার নাম আর তোমাকে কিভাবে চিনলাম ?
-হু !
-হাহাহাহহা ! আরে বোকা মেয়ে বুঝতছো না কেন তোমার ফোন আমার কাছে ছিল । সেখানে গ্যালারী আছে সেখানে তোনার সেলফি আছে আর কত কিছু !
-কি ! আপনি আমার গ্যালারী দেখেছেন ? আপনি তো মানুষ ভাল না ! এটা কেউ করে ! বলেই মনে হল কি বলছে এসব ! এসব বলা মানায় ওর ? ওর দোষ ও নিজের ফোন হারিয়েছে ! ছেলেটা বলল
-হ্যা ! একটু অন্যায় হয়েছে অবশ্য ! তবে কৌতুহল রাখতে পারি নি ! যাই হোক সরি ! আর এই নাও তোমার ফোন ।
ফোন টা হাতে পাওয়ার পরেও সেতুর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! সামনে দাড়ানো মানুষটাক এখন আর খারাপ মানুষ বলে মনে হচ্ছে না ! মনে হচ্ছে তার মত যেন আর মানুষই হয় না ! এমন মানুষই হয় নাকি !
ছেলেটা বলল
-আমি এই যে তোমার মোবাইল টা ফেরৎ দিলাম বিনিময়ে এক প্লেট ফুচকা কি পেতে পারি আমি !
সেতু হেসে ফেলল !
-পারেন ! আর কি খাবেন বলেন ? আসলে আমি ভাবতেই পারছি না যে মোবাইল টা ফেরৎ পেয়েছি !
-আপাতত ফুচকা ! পরে দেখা যাবে !
-আমিতো এদিক টার তেমন কোন কিছু চিনি না । আপনি নিয়ে চলেন !
ছেলেটাকে আসলেই এখন আর খারাপ ছেলে মনে হচ্ছে না । তার উপর হাসিটাতে কেমন একটা মায়ামায়া ভাব আছে । ছেলেটার অনেক কথা বলল । বলল কেন সে ফোন টা ফেরৎ দিয়েছে যদিও খুব ইচ্ছে করছিল ফোন টা মেরে দেওয়ার জন্য কিন্তু মনে শান্তি পেত না বলে পারে নি । সেতুর ব্যাপারেও অনেক কথা জানতে চাইলো । কোথায় পড়ে কোথায় থাকে, বাবা মা কি করে ! এই সব ! খাওয়া শেষে এমন কি বিলটাও সেতুকে দিতে দিল না ! সেতুতো কিছুতেই বিল দিতে দিবে না কিন্তু শেষে হার মানলো ! ছেলেটা একেবারে ওকে উত্তরার গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তারপর গেল । যখন গাড়ি ছেড়ে দিল তখনই সেতুর মনে হল এতো কথাভল অথচ সে এখনও ছেলেটার নাম পর্যন্ত জানে না ! একটা বারও জানতে চায় নি ! জানলা দিয়ে বার কয়েক খোজার চেষ্টা করলো । কিন্তু কোথায় পেল তাকে । ভিড়ের ভেতরেই হারিয়ে গেছে কোথায় !
হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়ে গেল । বাসায় এসেও মন খারাপই রইলো ! ছেলেটার সাথে মনে হয় আর কোন দিন দেখা হবে না । ছেলেটা ওকে ওর হারানো মোবাইল দিয়েই কল করেছিল তাই ছেলেটার নাম্বারও সে জানে না ! মনটা খারাপ হয়েই রইলো! রাতের বেলা শুয়েশুয়ে ফেসবুকে চালাচ্ছিলো তখনই অবাক হয়ে দেখলো শাফাত রাফি নামে একজন অপরিচিত মানুষের স্টাটাস ওর ওয়ােল ঘুরে বেড়াচ্ছে । নামের উপর ক্লিক করেই দেখলো সে ওর ফ্রেন্ড লিস্টে আছে । কিন্তু ওকে ঠিক মত চিনে না ! আনফ্রেন্ড করে দিতে যাবে তখনই ছবিটা আরও একটু ভাল করে লক্ষ্য করতেই ওর হার্ট বিট বেড়ে গেল ! আরে এই ছেলেটা ওর ফ্রেন্ড লিস্টে এলো কিভাবে ? সঙ্গে সঙ্গেই নক করলো তাকে !
-আপনি আমার ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকলেন কিভাবে ? রিপ্লে এলো সাথে সাথেই !
-মেয়ে ভুলে যাচ্ছো কেন ? তোমার ফোন টা আমার কাছেই ছিল ! পুরো একদিন !
সেতু কি বলবে ঠিক খুজে পেলনা ! কেবল অনুভব করলো যে ছেলেটাকে আবার খুজে পেয়ে তার মনে অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে ! হয়তো নতুন গল্প শুরু এখান থেকেই…