সাজিদের ঘুম ভাঙলো সকাল ১০.০০ টায়। ফোনে এলার্ম অপশন কখনো ইউজ করে না সে। কিন্তু তাও আগে দিব্যি ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারতো। তার ক্রেডিট অবশ্য পুরোটাই রঞ্জনার। রঞ্জনা, সে সাজিদের কি হয়?
সাজিদ এর এসব ভাববার সময় নেই। আজ দুপুরে রঞ্জনার সাথে দেখা করতে হবে। রঞ্জনা বলে দিয়েছে যেকোনো ভাবে সে সাজিদকে দেখতে চায় । সাজিদ নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত। পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিল সে। পকেটে ৪ টা বিশ টাকার নোট। আজ রঞ্জনার জন্য কি কিনবে সে? ৮০ টাকার ভেতর? রঞ্জনাকে সে কখনো কিছু দেয় নি। সে নিতে চাইতো না। কিন্তু তার পরণের পাঞ্জাবিটা আবার রঞ্জনার দেয়া। অদ্ভুত এক মেয়ে। মুচকি হাসে সাজিদ।
আয়নায় গিয়ে নিজেকে দেখে সাজিদ। গোলগাল শ্যামলা মুখ। চোখ লাল, চুল উষ্কখুষ্ক। কে বলবে এটাই ডিপার্টমেন্ট এর সবচেয়ে তুখোড় মেধাবী সেই ছেলেটি? সাজিদ একবার ভাবলো শেভ করবে। আবার চিন্তা করলো, “না রঞ্জনার তো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি পছন্দ! শেভ করা যাবে না।” মেসে তার রুমের দরজা দিয়ে পাশের হোটেলের এক ছেলে এক কাপ চা রেখে গেল। সাজিদ জিজ্ঞাসা করে,”কিরে, নাস্তা কই?” সে বলে,” গত ১ মাসের বিল তো বাকি। আপনারে খাওন দিতে নিষেধ করসে।”
“ধুর.. দিব তো আমি। আজ কালের মধ্যে দিয়ে দিব”
“এত কথা কন ক্যা? চা খাইলে খান নাইলে কাপ নিয়া যাইতেসি আমি”
ছেলেটাকে একটা চড় দেয়া যায়? সাজিদ কিছু বললো না। সে ভালো কোনো কাপড় আছে কিনা দেখতে লাগলো। রঞ্জনার আজ লাল শাড়ী পরার কথা। এই যে.. বেশি দিন না। রঞ্জনা তার ফোনে একটা ছবি দেখিয়ে বলেছিল, “বিয়ের দিন কিন্তু আমি এই লাল শাড়িটা পরব। তুমি কিন্তু কালো স্যুট পড়বে। এই.. হাবলার মতো তাকিয়ে থাকবে না। হ্যাঁ বা না কিছু বলবে তো?”
সাজিদ অবচেতন মনে এসব ভাবতে ভাবতে তার কালো স্যুটটা বের করলো। অনেক কষ্টে জমানো টাকায় কেনা। সে অনেক রাত শুয়ে শুয়ে লাল শাড়ী পরা রঞ্জনার পাশে তাকে কল্পনা করেছে। প্রথমবারের মতো স্যুট চাপালো সে। ১২ টা বাজে। আর ১ ঘন্টা পর সে রঞ্জনাকে দেখবে, রঞ্জনা তাকে দেখবে সাজিদ এখন দাঁড়িয়ে আছে রঞ্জনার পাশে। লাল শাড়ী, মেকাপ, গয়নায় অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। রঞ্জনা এতক্ষণ ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছিল। সাজিদকে দেখেই প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হাসি দিলেও পরে সামলে নিয়েছে। খুব প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছে তাকে। বিয়েতে মেয়েরা সাধারণত গোমড়া মুখে বসে থাকে। যাক, রঞ্জনা অনেক খুশি তবে! আজ রঞ্জনার বিয়ে। ছেলে BCS ক্যাডার। রঞ্জনার সাথে ভালোই মানিয়েছে। ৬ ফুটের উপরে হবে হাইট। সাজিদ ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি লম্বা। রঞ্জনা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। রঞ্জনা তাকে বার বার বলতো, “আরেকটু লম্বা হতে পারলে না?”
রঞ্জনা হাতের ইশারায় সাজিদকে ডাকে। সাজিদ স্টেজে যায়। রঞ্জনা মুচকি হেসে সাজিদকে পরিচয় করিয়ে দেয়, “এই দেখো, এ হল সাজিদ। আমার অনেক ভালো বন্ধু”। সাজিদ চিন্তা করে, তারা কি এত দিন বন্ধু ছিল? তাকে “ভালো বন্ধু” বলতে রঞ্জনার একবার বুক কাঁপলো না? বুক তো তার সেদিন ও কাঁপে নি। যেদিন বিকেলে সাজিদকে বলেছিল, “সাজিদ, শোনো? আমার বিয়েটা মনে হয় এবার হয়েই যাবে। সাজিদ বলে, ” ও আচ্ছা।”
“ছেলেটা অনেক হ্যান্ডসাম”
“ও আচ্ছা।”
“BCS নাকি শুনলাম আম্মার কাছ থেকে।”
“ও আচ্ছা।”
“ধুর.. আচ্ছা ছাড়া আর জানো কি? দেখো, তুমি নিজের যত্ন নিবে। তুমি অনেক মেধাবী। ভালো চাকরি করবে, ভালো বউ পাবে।”
“ও আচ্ছা..”
সাজিদ এর কিছুদিন আগে থেকেই খেয়াল করছিল রঞ্জনা কেন জানি তাকে এড়িয়ে চলে। বান্ধবীদেরকে ফোনে কার জানি ছবি দেখায় আর হাসে। উড়ো উড়ো অনেক কিছুই কানে এসেছিল, তাই এমন কিছু শোনার প্রস্তুতি সে নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু রঞ্জনা এত সহজে তাকে এসব বলতে পারলো? আজব। এটা কি সেই মেয়ে, যে কিছু দিন আগেও সারাজীবন পাশে থাকবে বলে কথা দিয়েছিল?
সাজিদের চিন্তায় এবার ভাটা পড়লো রঞ্জনার গলায়। রঞ্জনা বলছে, “সাজিদ খেয়েছো তো?” সাজিদ উত্তর দেয় নি। বলেছে, “আমি যাই রঞ্জনা বলে, “আচ্ছা, তাহলে। একদিন বাসায় এসো? আমার হাজবেন্ডকে তোমার কথা বলেছি। তার সাথে গল্প করে ভালো লাগবে।” সাজিদ যাওয়ার জন্য ঘুরলো। আবার কি মনে করে যেন ঘুরে বলল, “রঞ্জনা, আমি আর আসব না।” মুখে পানির ছিটা পড়লো। পাশে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চেচাচ্ছে রঞ্জনা। “এই.. এতক্ষণ ঘুমায় কেউ? তোমার না বাজারে যাওয়ার কথা? বাসায় কিছুই নেই, আর সে ঘুমাচ্ছে নাক ডেকে”
সাজিদ উঠে বসে। আচ্ছা এটা স্বপ্ন ছিল? সাজিদ রঞ্জনার দিকে তাকায়। এই মেয়েটিকে সে বিয়ে করেছে ২ বছর আগে। তার বিয়ে ঠিকই এক ছেলের সাথে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু রঞ্জনা সাফ জানিয়ে দেয়, বিয়ে যদি করতে হয়, সাজিদকেই করবে।কিন্তু বিয়ের পরও সাজিদ এই ধরণের দুঃস্বপ্ন দেখে। পাশ থেকে আবার ধমক, “লাট সাহেব আবার এখন বসে ধ্যান করছেন। ন্যাকামি যত্তসব”।
সাজিদ চিন্তা করে বিয়ে না করলেই বোধ হয় ভালো ছিল। ২৪ ঘন্টা চেঁচামেচি কার ভালো লাগে? পরক্ষনে মনে হয়, এই চেঁচামেচি না শুনলে সে বাঁচবেও না। সে যে প্রচন্ড ভালোবাসে এই মেয়েটিকে। সাজিদ রঞ্জনার দিকে তাকায়। জানালার ফাঁক দিয়ে আসা সকালের রোদ পড়ছে তার মুখে। অপরূপ লাগছে মেয়েটিকে।