বাসায় এসে দেখি শ্বশুর শাশুড়ি আর আমার একমাত্র সালা( বউয়ের ছোট ভাই) সোফায় বসে আছে। আমি শ্বশুর শ্বাশুড়িকে যখন সালাম করতে যাবো তখন তারা পা সরিয়ে নিলেন। আমি শ্বশুরকে বললাম,
— বাবা ভালো আছেন? উনি মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে কিছুই বললেন না। আমি শ্বাশুড়ি কে বললাম,
— মা আপনি ভালো আছেন? উনি আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বললেন,
~তুমি আমায় মা ডেকে না। আমার ঘৃণা লাগছে তোমার চেহারাটা দেখতে বুঝতে পারছিলাম না উনাদের কি এমন হলো যে আমার জন্য উনাদের চোখে এত ঘৃণা ভর করেছে। আমি আমার সালাকে( বউয়ের ছোট ভাই) বললাম,
— সাকিব, কি হয়েছে?
সাকিবও কিছু বললো না। শুধু ওর চোখে দেখতে পেলাম আমার প্রতি ওর খুব রাগ বাধ্য হয়ে নিজের রুমে ঢুকলাম। রুমের ভিতর ঢুকে দেখি দুইটা বড় বড় লাগেজ।আর খাটেরএক কোণে আমার স্ত্রী শ্রাবণী চুপ করে বসেআছে। শ্রাবণীরর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সেও খুব রেগে আছে। আমার প্রতি দুনিয়ার সমস্ত রাগ ওর এক চোখে আর অন্য চোখে দুনিয়ার সমস্ত ঘৃণা জমা হয়েছে। আমি ওর পাশে বসে বললাম,
— কি হয়েছে, তোমরা সবাই এমন করছো কেন? শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার একটা সত্যি কথাতে হয় এই সংসার ঠিকবে নয়তো ভেঙে যাবে আমি শ্রাবণীর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
— মানে কি? শ্রাবণী আমাকে টেনে সবার সামনে এনে বললো,
– তুমি সবার সামনে সত্যিটা বলবে। তুমি কি আজ পতিতালয়ে গিয়েছিলে? কথাটা শুনে আমার বুকের ধুকধুকানি বেড়ে গেলো। আমি শ্রাবণীর হাতটা ধরতে চাইলাম। কিন্তু শ্রাবণী আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো,
– তুমি প্রশ্নের উত্তর দাও। আমি শ্রাবণীকে বললাম,
— তুমি ভিতরে চলো। আমি তোমায় সব বুঝিয়ে বলছি। শ্রাবণী চিৎকার করে বললো,
– আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি হে অথবা না উত্তর দাও। আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,
— হে আমি গিয়েছিলাম। আমার কথা শুনে শ্রাবণী রুম থেকে লাগেজ গুলো নিয়ে আসলো। আর শ্বাশুড়ি বলতে লাগলো,
~ ছিঃ ছিঃ ছিঃ শেষে কি না এক লম্পটের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। আমার ছেলে ঠিকিই বলেছে, পতিতালয়ের ভিতরে একটা চায়ের দোকানের সামনে এই লম্পটকে সব সময় দেখা যেতো আমি শ্রাবণীর হাতটা ধরে বললাম,
–তুমি অন্তত আমার সব কথা শুনে যাও। শ্রাবণী আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
– যে মানুষ বউ থাকার পরেও বেশ্যাদের সাথে মেলামেশা করে তার সাথে আমার কোন কথা থাকতে পারে না আজ ৩দিন ধরে শ্রাবণীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। ওর বাসার ভিতরেও ঢুকতে পারছি না।
দারোয়ানকে সোজা বলে দিয়েছে আমি যদি ভিতরে ঢুকি তাহলে তার চাকরি চলে যাবে আজ শ্রাবণী ডিভোর্সের লেটার পাঠিয়েছে। আর সাথে একটা ছোট চিরকুট। আর তাতে লেখা, যদি মনে বিন্দু পরিমাণ লজ্জা থাকে তাহলে সাইনটা করে দিও। কারণ এই সাইনের জন্য আমার বিয়েটা আটকে আছে। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আমার কাজিনকে বিয়ে করবো এই মুহুর্তে আমি আর শ্রাবণী পাশাপাশি বসে আছি। আমি উকিলকে বলেছিলাম ওর সাথেদেখা না করে আমি সাইন করবো না। তাই ও আমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছে। শ্বাশুড়ি এসে বললো,
~ আমার মেয়েকে যা বলার তাড়াতাড়ি বলে এইখান থেকে বিদায় হও। কারণ তোমার মত নোংরা মানুষকে আমি সহ্য করতে পারছি না আমি শ্রাবণীকে বললাম,
— তোমায় ৫ মিনিটের একটা ঘটনা বলবো তারপর সাইন করে চলে যাবো। তোমার পিছন ফিরে তাকিয়েও দেখবো না। ৮ -৯ বছর আগে একটু ফিরে যায় আমি এতিম ছিলাম। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় আমি এইচএসসি পাস করি। কিন্তু সমস্যাটা হলো আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই তখন। ভর্তির জন্য এতগুলো টাকা দিতে কেউ রাজি হচ্ছিলো না। আমি ঢাকায় আসলাম। টাকার জন্য এদিক ওদিক পাগলের মত ছুটাছুটি করলাম কিন্তু একটা টাকাও মিললো না। তাই মনের কষ্টে শেষে বাধ্য হয়ে সুইসাইড করতে গেলাম ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে যখন লাফ দেওয়ার চেষ্টা করবো ঠিক তখনি একটা হাসির শব্দ পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক, মুখে সস্তা মেকাপ আর গায়ে কড়া পারফিউমের গন্ধ। আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বললো,
– লাফ দিয়ে লাভ নাই। কারণ তুই মরবি না। আমি অবাক হয়ে বললাম,
— না মরার কি আছে? মেয়েটা আবারো হাসতে হাসতে বললো,
– তোকে দেখে গ্রামের ছেলে মনে হচ্ছে।
আর গ্রামের ছেলেরা সবাই সাঁতার জানে। তুই এইখান থেকে লাফ দিবি তারপর যখন দম বন্ধ হয়ে আসবে তখন বাঁচার জন্য ঠিকিই সাঁতরে পাড়ে উঠবি। আমি মেয়েটার কথা শুনে চিন্তা করলাম ঠিকিই তো আমি তো সাঁতার জানি। বোকার কত কেন জলে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চেয়েছিলাম মেয়েটা এইবার আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর জলের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমিও মরার জন্য এইখান থেকে দুইবার লাফ দিয়েছিলাম। কিন্তু সাঁতার জানতাম বলে দুইবারি ব্যর্থ হয়েছি। তা তোর মরে যাবার কারণ কি? রাত তখন আনুমানিক ২টা বাজে। ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোষ্টের হলুদ সোডিয়াম আলোর নিচে বসে আমি আমার সব কিছু মেয়েটাকে খুলে বললাম। মেয়েটা আমার সব কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
– তুই শেষে কি না টাকার জন্য মরতে গিয়েছিলি? আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,
— তুমি কেন মরতে গিয়েছিলে? মেয়েটা বললো,
– প্রথমবার মরতে গিয়েছিলাম যখন নিজের সৎ বাবা আমায় ধর্ষণ করে।
আর সেটা মাকে বলার পরও যখন মা বলে, যা হাবার হয়ে গেছে। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আর দ্বিতীয় বার মরতে গিয়েছিলাম যেদিন মা আমায় নিজের হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার ষোল বছরের মেয়েটাকে দুইজন মাঝ বয়সী লোকের ঘরে রেখে চলে আসে। এখন আর মরতে ইচ্ছে হয় না। এই দুনিয়ার রঙ দেখতে খুব ভালো লাগে। মুখোশের আড়ালে মানুষের আসল চেহারাটা দেখতে আজকাল খুব মজা পাই। সারারাত আমার সাথে কাটানোর পর পরেরদিন স্ত্রীকে হাজারটা মিথ্যা বলার কিছু পুরুষরের চেহারা দেখে খুব আনন্দ পাই। তুই এই বয়সে মরিস না। তাহলে দুনিয়ার অনেক রঙ আর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবি। সূর্যের আলো যখন ফুটতে শুরু করবে তখন মেয়েটি আমার হাতে টাকা দিয়ে বললো,
– ভাইরে, প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাবার পরেও যদি আমি বেঁচে থাকতে পারি তাহলে তুই কেন পারবি না? সেদিনের সেই মেয়েটি আমার ভর্তির সমস্ত টাকা দেয়। এমনকি যখন আমার যা প্রয়োজন ছিলো মেয়েটি আমায় সব দিতো।
মেয়েটির সাথে আমার যৌন চাহিদার কোন সম্পর্ক ছিলো না। সম্পর্ক ছিলো ভাই বোনের। খুব চেষ্টা করেছি বোনকে এই অন্ধকার জগৎ থেকে বের করতে কিন্তু পারি নি তোমাদের মত কিছু ভদ্রলোকের ভিড়ে। অন্ধকার জগতের মেয়েদের না কি আলো সহ্য হয় না।তাই মাঝে মাঝে নিজে আলোর জগৎ ছেড়ে অন্ধকার জগৎতে মিশে যায় আমায় আলোর পথ দেখানো সেই মানুষটিকে দেখতে পেপারে সাইন করে সোজা চলে আসি। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখার কোন ইচ্ছে নেই শ্রাবণী কি করছে। শুধু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বাশুড়িকে বললাম,
– আমি না হয় নোংরা ছেলে তাই পতিতালয়ে যায়। কিন্তু আপনার ছেলে তো ভদ্র বাবা মায়ের সন্তান। সে কিভাবে জানে আমি নিষিদ্ধ পল্লীর ভিতর চায়ের দোকানের সামনে বসে থাকি? সে কি নিষিদ্ধ পল্লীতে চা খেতে যায়, না কি থাক বাকিটা বুঝে নিবেন এখন মধ্যরাত । আমি ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আছি আর পিছন থেকে একটা মেয়ে আমায় দেখে অনবরত হাসছে। এই মধ্যরাতের হাসিটা আমি অনেক বছর আগেও একবার শুনেছিলাম..