আমার সামনে এখন যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে, সেই মেয়েটা রেগে আছে। কেন রেগে আছে আমি জানিনা। কিন্তু আমার জানা উচিত ছিল। আমি চিনিনা মেয়েটাকে, কয়েকবার মনে করার চেষ্টা করে দেখলাম, কিন্তু কোন ভাবেই মনে করতে পারলাম না মেয়েটাকে কোন ভাবে চিনি কিনা। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা, রাগে সাপের মত ফুস ফুস না করলেও ফর্সা মুখের নাকের ডগাটা লাল হয়ে আছে। ঝড়ের পুর্ব লক্ষন এটা। ” আপনি আমার ছোট ভাইকে কি লিখে পাঠিয়েছেন???” মেয়েটা একটু জোড়েই বলে উঠে। আমি আকাশের দিকে তাকাই। কিছুক্ষন স্মৃতিচারণ করি। আকাশের দিকে তাকালে কেন যেন আমার সব কিছু মনে পড়ে যায়। কিন্তু আজ মনে পড়েনা। তার মানে এই মেয়েটা কে আমি সত্যিই চিনি না।
“আপনার ছোট ভাই কে??” আমি জিজ্ঞাসা করি মেয়েটির রাগের মাত্রা বাড়তে থাকে। আমি একটু ভড়কে যাই। ভালো করে লক্ষ্য করি। মাঝারি গড়নের ফর্সা বর্ণের মেয়েটি যথেষ্ট মায়াবী। কিন্তু আমি মায়া ধরতে জানি না। কিভাবে মায়ায় পড়তে হয় বুঝিনা আমি। আমার পড়া উচিতও না বলে মনে করি আমি। “এখন ন্যাকামো করা হচ্ছে তাই না?? ” মেয়েটি এক প্রকার চিৎকার করে উঠে। “আপনাকে দেখে নিবো” বলেই উলটা দিকে ঘুরে হনহন করে হেটে চলে যায় মেয়েটি আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই। কিছুক্ষনের জন্য মাথা চুলকাই। ভাবি, ডেকে কিছু বলবো কিনা। পরক্ষণেই মনে পড়ে বাবার কথা। উনি অপেক্ষা করছেন, একসাথে খাবো বলে।
“আজ থেকে তুমি আর তানহা কে পড়াতে আসবেন না রাহাত”। সামনের টেবিল এ রাখা বিস্কুট হাতে নিয়ে কামড় বসাতে গিয়ে থমকে গেলাম আন্টির কথা শুনে। উনার কন্ঠে বিরক্তির ভাব স্পষ্ট। মোটামুটি অবাকই হলাম। তানহাকে আমি গত দেড় বছর থেকে পড়াচ্ছি। এর মাঝে অনেক টিউশনি ছেড়েছি ধরেছি। কিন্তু এটা ছাড়তে পারিনি। বলতে গেলে তানহার মা নিজেই ছাড়তে দেয়নি। তিনি আমাকে সম্পুর্ণই তার ছেলের মতই ভাবেন। কিন্তু আজ হঠাৎ এমন কথা বলছেন কেন বুঝলাম না। বিস্কুটটা আর মুখে গেলনা। রেখে দিয়ে দাড়ালাম। তিনি যখন না করেছেন অবশ্যই কারন আছে।
আমি কারন জিজ্ঞাসার মধ্যে গেলাম না আর। “আচ্ছা আসি তাহলে” বলে চলে আসবো, তখনি “একটু দাড়াও রাহাত” বলেই আন্টি হাতে একটা খাম গুজে দিলেন। বললেন, “মাস শেষ হতে আরো আট দিন বাকি, তারপরেও দিয়ে দিলাম। আর আমরা তানহার জন্য নতুন টিচার খুজে পেয়েছি।” আমি কিছু বললাম না, কিছুক্ষন খামটার দিকে তাকিয়ে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার এখন কি বলা উচিত খুজে পাচ্ছিলাম না। যাই হোক টিউশনিটা গেলেও টাকাটা পাওয়া গেল। অন্তত, দিন বিশেকের মত চলে যাবে। এর মধ্যে কিছু একটা ব্যাবস্থা করা যাবে কিন্তু বাসায় গিয়ে বাবাকে কি বলবো। মিথ্যা বললে কিছুদিন পর এমনিতেই ধরা পড়ে যাবো। তার থেকে ভালো সত্যিটাই বলে দিবো।
তানহাদের বাসা থেকে যখন বের হই তখন আকাশ মন খারাপ করে বসে আছে। অথচ আমি ঢোকার সময়েও যথেষ্ট রোদ ছিল। আজকাল আকাশের অবস্থা কখন পালটে যায় বুঝা দায়। এই মুহুর্তে আকাশ আর আমার মাঝে এই দিক দিয়ে যথেষ্ট মিল আছে। কিন্তু পার্থক্য হলো আকাশ যেকোন সময় কেঁদে ফেলতে পারে, কিন্তু আমি কাঁদতে পারিনা, কাঁদা উচিতও না। আমি তানহাকে পড়ানোর পর আরেকটা বাসায় দুই ভাই বোনকে পড়াতাম। আজ সেখানে যাবো কিনা ভাবতে ভাবতেই মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। দেখলাম আমার সেই স্টুডেন্ট দুইটার মা।এই অসময়ে ফোন দেওয়ার কারন দুইটা হতে পারে, প্রথমত কোথাও ঘুরতে যাবেন তাই পড়াতে যেতে হবে না, আর দ্বিতীয়ত আজ শপিং এ যাবেন তাই একটু লেট করে যেতে হবে। কারন আন্টি একটু শপিং প্রিয় মানুষ। কয়েকদিন হলো তার বোনের বাসায় যাবেন যাবেন করে যাওয়া হচ্ছেনা উনার। সেজন্য প্রথম চিন্তাটাই যুক্তিযুক্ত মনে হলো। এক প্রকার খুশিই হলাম আজ যেতে হবেনা বলে। ফোন রিসিভ করেই সালাম দিলাম। “হঠাৎ কি মনে করে আন্টি, আজকে কি পড়াতে যেতে হবেনা??।” ওপাশ থেকে সালামের উত্তর পেতেই জিজ্ঞাসা করে বসলাম আমি।
“দেখো রাহাত বাবা, একটা কথা বলবো কিছু মনে করোনা। আমরা মনে হয় তোমাকে আর রাখতে পারছিনা, তুমি আর ওদের পড়াতে এসোনা। আমরা নতুন টিচার খুজে নিবো।” আন্টি বলে উঠলেন। আমি এবার যারপরনাই অবাক হয়ে গেলাম। কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিনা একদিনেই দুইটা টিউশনি হারিয়ে যাবে। কি এমন কারন থাকতে পারে। কোনভাবেই হিসাব মিলাতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম কারণ জিজ্ঞাসা করবো কিন্তু করলাম না।
“আন্টি, মাসতো প্রায় হয়ে আসলো বেতনটা কি দেওয়া যাবে?? আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম। “হ্যা আমরা এতটা অকৃতজ্ঞ নই রাহাত, কিন্তু বাবা আমরা হাফ বেতন দিবো। কারন এখনো মাস হয়নি। তুমি এসে নিয়ে যেও” আন্টি জবাব দিলেন।
“আচ্ছা আন্টি” বলেই রেখে দিলাম। ততক্ষনে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। পাশেই দোকান থেকে একটা পলিথিন নিয়ে মোবাইল আর তানহার মায়ের দেওয়া টাকার খামটা পেচিয়ে বৃষ্টির মধ্যে নেমে গেলাম। ভাবলাম এখনি গিয়ে বেতনের টাকাটা নিয়ে আসবো কিনা। পরেই চিন্তা পাল্টালাম। আজ বৃষ্টিতে ভিজবো ইচ্ছামতো জ্বর বাধলে বাধুক। বৃষ্টিতে ভিজার যে কি ফল সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি গত সাতদিনে। জ্বর বাধিয়ে বিছানা থেকেই উঠতে পারিনি। বাবা নিজেই হার্টের রোগী। সময় মত ঔষধ না খেলে তার বুকের ব্যাথা বেড়ে যায়। তারপরেও তার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। রান্না করা, আমার মাথায় পানি দেওয়া থেকে শুরু করে সেবার ত্রুটি রাখেননি। আমি একা হয়ে যাবো সেই জন্য লোক পাঠিয়ে ঔষধ আনিয়েছেন।
মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স সম্ভবত বারো থেকে একটু বেশী। আমার রাহাত নামটা মা নিজে রেখেছিলেন। মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে যখন তখন একেবারে লাস্ট স্টেজ। কিছুদিন পরেই আমাদের একা করে চলে যান। বাবা ছিলেন একজন এনজিও কর্মকর্তা। মা মারা যাওয়ার পর আমাকেই অবলম্বন করে তার দুনিয়া সাজান। তার বেতনের টাকায় মোটামুটি আমাদের দুজনের চলে যায়। কিন্তু বাবা হার্ট এটাক করার পর চাকরিটা ছেড়ে দেন। ততদিনে আমার পড়াশুনা শেষ। চাকরি খুজছি। বাবার এই অবস্থায় সংসারে হাল ধরতে টিউশনি শুরু করি। কিন্তু সাতদিন আগেই যে আমার টিউশনি চলে গেছে সেটা বাবাকে জানায়নি এখনো। সাতদিন জ্বরে পড়ে থাকার পর আজ অনেকটাই সুস্থ। আমি রুম থেকে বের হই। দেখি বাবা বই পড়ছেন বারান্দায় বসে। আমি পিছনে গিয়ে দাড়াই
” আজ শরীর কেমন রাহাত??” বাবা পিছনে না তাকিয়েই জিজ্ঞাসা করেন। আমি অবাক হইনা কারন পৃথিবীর সকল বাবাদের একটা ক্ষমতা আছে, যারা তার সন্তানের গায়ের গন্ধ বুঝেই টের পান।
” আজ ভালো বাবা। তুমি এত এত যত্ন করেছো নিজে অসুস্থ হয়েও, আমি সুস্থ না হয়ে পারি বলো। বাবা বই রাখেন। আমি সামনে গিয়ে দাড়াই। বাবার পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে বাবার কোলে মুখ গুজি।
” আমার টিউশনি দুইটা চলে গেছে বাবা” বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেন,
” সেকি! দুইটাই চলে গেছে?? কিন্তু কেন??”
“আমি জানিনা বাবা, কারণ জিজ্ঞাসা করিনি”
“এখন কি করবি ভাবছিস??
” আমাকে নিয়ে ভাবার কিছু নেই, আমার সব চিন্তা তোমাকে নিয়ে। তুমি ঔষধ ঠিকমত না খেলে তোমার আবার হার্ট ফেইল হতে পারে। টিউশনির কিছু টাকা পেয়েছিলাম এটা দিয়ে কিছুদিন চলা যাবে। কিন্তু তারপর কি করবো??” বলেই ঝর ঝর করে কেদে দিলাম। বাবা আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। “আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করিস না। জানিস ইদানীং তোর মাকে মনে পড়ে খুব। প্রায় দেখি স্বপ্নে আমাকে ডাকছে। আমিও মনে হয় দুনিয়াতে আর বেশীদিন থাকবো না। তোর মায়ের কাছে চলে যেতে হবে এবার। যদি আমি না থাকি তুই নিজেকে মানিয়ে নিস। মনে রাখিস এই দুনিয়াতে বেচে থাকতে হলে তোকে সংগ্রাম করে বেচে থাকতে হবে।” আমি বাবার কোল থেকে মাথা তুলি, দেখি বাবা কাঁদছেন। আমার চোখেও জল আসে। বাবাকে সান্তনা দেওয়ার মত ভাষা নেই আমার।
কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন, বাবার বুকের ব্যাথা আগের থেকে বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝেই তিনি বলে উঠেন, ” রাহাত দেখ তোর মা এসেছে।” আমি বলি ” কোথায়??” “ওই যে দেখ আমাকে ডাকছে।” বাবা ছোট শিশুর মত আনন্দে বলে উঠেন। আমি কাদি, বাবা মায়ের সাথে কথা বলেন। বুকে জমে থাকা অভিমান প্রকাশ করেন।
বাবার ঔষধ শেষ। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র দেড়শ টাকা। বাবার বুকের ব্যাথা যেন আজ একটু বেশীই। আমি অস্থির হয়ে পড়ি। বাইরে বের হই। দেখি কাজ মিলে কিনা। হাটি উদ্ভ্রান্তের মতো। হঠাৎ মোবাইলে কল আসে। দেখি অচেনা নাম্বার আমি ফোন রিসিভ করি। ” কে??” জিজ্ঞাসা করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে, “আমি নীরু।” আমি মনে করতে চেষ্টা করি এই নামে কাউকে চিনি কিনা। নাহ এই নামের পরিচিত কোন মুখ আমার চোখে ভাসেনা। “নীরু কে??” আমি জিজ্ঞাসা করি। “ওই যে একদিন আপনাকে রাস্তায় অপমান করেছিলাম। আমার ছোট ভাইকে দিয়ে বাজে কথা লিখে আমাকে চিঠি পাঠানোর জন্য।” মেয়েটা জবাব দেয়। এতদিনে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম মেয়েটার কথা। এইমাত্র মনে পড়লো আবার।
“তো আজ কি মনে করে, আর আমার নাম্বার পেলেন কোথায়? জিজ্ঞাসা করি আমি।” আসলে একটু মিসটেক করে ফেলছি, অন্য একটা ছেলে আমার ছোট ভাইয়ের কাছে বাজে বাজে কথা লিখে চিঠি পাঠিয়েছিল। দূর থেকে আমার ভাই চিনিয়ে দিলেও আমি মনে করেছিলাম আপনি। কারন ওই ছেলেটা আপনার পাশেই ছিল। তাই প্রতিশোধ নিতে আপনাকে ফলো করি আর আমার জন্যই আপনার টিউশনি দুইটা চলে গেছে। আপনার ছাত্রী তানহার মার কাছ থেকেই আপনার নাম্বার নিয়েছি স্যরি বলার জন্য। আমি সত্যিই দুঃখিত।”
মেয়েটির কথায় আমার রাগ হয়, আর কথা বলতে ইচ্ছা হয়না। তাও বলি,” আপনি না জেনে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমার কতটা ক্ষতি করেছেন বলতে পারবোনা। কিন্তু দুইটা কথা বলবো, প্রথমত আমার টিউশনির টাকায় আমার যাবতীয় খরচ সহ বাবার ঔষুধ এর খরচ চলতো। দ্বিতীয়ত, আমার বাবা হার্টের রোগী। তাই ঔষধ নিয়মিত খেতে হয়। আর আজকে বাবার ঔষধ শেষ। কিন্তু মাস হয়ে গেল আপনার প্রতিশোধ এর কারনে টিউশনি না থাকায় আমার কাছে এই মুহূর্তে ঔষধ কিনার মত কোন টাকা নেই। সময়মত ঔষধ না কিনে নিয়ে যেতে পারলে যদি বাবার কিছু হয়ে যায় তাহলে ভাববেন না আপনার দোষ দিব, মনে করবো হয়তো কোন বড় পাপ করেছিলাম যার শাস্তি এখন পাচ্ছি। ” ফোন কেটে দিলাম। শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একটা মেয়ে এত কিছু করতে পারে কিভাবে ভাবতে পারছিলাম না।
দুদিন হয়ে গেল, বাবার ঔষধ কিনতে পারিনি। বাবার বুকের ব্যাথা যেন আজ আরো বেড়েছে। ছটফট করছে বলা যায়।এর মাঝে মেয়েটি অনেকবার কল করলেও আর ধরিনি। শেষ পর্যন্ত মোবাইল বন্ধ করে রেখেছি। আজ একটা কাজ পেয়েছি, রাজমিস্ত্রির কাজ। বাবাকে দেখে রাখার মতো আমি ছাড়া আর কেউ নাই। তাই রফিক নামের এক ছেলেকে রেখে গেলাম খোজ খবর নেওয়ার জন্য কিন্ত টাকাতো দরকার। তাই বাবাকে সকালের খাবার খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে এসেছি। মাথায় নানা রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েটির কথা।
সব চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে লেগে গেলাম। দিন শেষে চারশ দিবে। তাও বাবার ঔষধ কিনার টাকা হবে কিছুটা হলেও। তখন দুপুর, বাবার জন্য মনটা কেমন যেন ছটফট করছে। আজ একেবারে উঠতে পারার মতো শক্তিও নেই উনার। না জানি বিছানায় বুকের ব্যাথায় কেমন ছটফট করছে। আমি যেখানে কাজ করি সেখানের দেখাশোনা করা জসিম ভাইকে বলতেই তিনি আমার দিকে তাকালেন। তারপর হঠাৎ পকেট থেকে এক হাজারের একটা নোট বের করে দিয়ে বললেন, ” যাও আজ কাজ করতে হবেনা, আর পুরো টাকা তুমি রাখো। মনে করো তোমার ভাই তোমাকে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি আংকেলের জন্য ঔষধ নিয়ে যাও।
আমি কি বলবো বুঝতেছিলাম না। জসিম ভাইকে জড়িয়ে ধরেই কেদে দিলাম আমি। তিনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে সান্তনা দিতে থাকলেন। সেদিন জসিম ভাইয়ের টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে নিয়ে যেতে পারলেও বাবার অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তাই বাড়ির সামনের শতাংশ দুয়েক জমি বিক্রি করে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আজ আর কাজে যাইনি।ছুটি নিয়েছি। উদ্দেশ্য হাসপাতাল। হাটছিলাম উদ্ভ্রান্তের মতো।
” একটু দাঁড়াবেন, প্লীজ” একটা মেয়ের ডাকে হাটতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। পিছন ফিরে দেখি নীরু নামের মেয়েটা।
” হুম, বলুন” আমি উত্তর দিলাম।
” আমি সত্যিই দুঃখিত, আপনি প্লীজ আমাকে মাফ করে দেন। আমি কথা বললাম না। আবার হাটা শুরু করলাম। এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় আমার নেই।
” কোথায় যাচ্ছেন উত্তর না দিয়ে।” মেয়েটি আবার বলে উঠলো।
আমি মুচকি হেসে উত্তর দিলাম ” কিছুক্ষন আগে আমার বাবা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাই একমাত্র ছেলে হিসেবে তার দাফন কার্য সম্পন্ন করতে যাচ্ছি।” আমি আর কথা না বাড়িয়ে উলটো দিকে ঘুরে হাটতে শুরু করলাম। সামনেই হাসপাতালটি দেখা যাচ্ছে। বুঝলাম মেয়েটি তাকিয়ে আছে আমার দিকে। অনুতাপে ভরে আছে তার মন। আমি মাফ করে দিয়েছি। ঝেড়ে ফেলেছি সব মন থেকে। ভুলে গিয়েছি, নীরু নামে কেউ ভুল করে অন্যের প্রতিশোধ আমার উপর নিয়েছিল।