রান্না বিভ্রাট

রান্না বিভ্রাট

রান্না নিয়ে আমার অনেক আগে থেকেই সমস্যা।যারা রান্না পারে তাদেরকে আমি গুরু মানি।কারন তারা তাদের হাতের মাধুর্য দিয়ে কিভাবে যেন এত মজা করে রান্না করে।যেটা আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব না মূল কথায় আসা যাক এস.এস.সি পরীক্ষা দেয়ার পরও আমি রান্না পারতাম না।রান্না তো দূরে থাক,একটা ডিমও ভাজতে জানতাম না।কারন মা আমাকে কখনই রান্নাঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি।শুধু জানতাম ডিম ভাজতে দরকার পেয়াজ,মরিচ,লবন আর বড় কিংবা মাঝারি সাইজের একটা ডিম।

একদিন মা বাসায় ছিল না।মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল।যাওয়ার সময় অবশ্য আমার আর বাবার জন্য রান্না করে দিয়েছিল।আমার আবার ডিম ছাড়া খাওয়া জমেই না।মনটা খারাপ করে রান্নাঘরে ডিম খুজতে লাগলাম।কারন আজকের রাধুনি হবো আমি।খুজতে খুজতে কাঙ্খিত ডিম আমার হাতে চলে এলো।এরপর আমি পেয়াজ, মরিচ খুজে বের করে এদের দিকে কিছুক্ষন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।কারন আমি আগে কখনই এদের জবাই করিনি।তো যাই হোক অনেক কষ্টে পেয়াজ কাটলাম,কিন্তু কোন আকারে কেটেছি সেটা আমিও জানিনা।সেদিন আমি অন্যরকম একটা ফিলিংস পেয়েছিলাম।

কারন পেয়াজ কেটেছি আর কেদেছি।মনে মনে চিন্তা করলাম কারো বিয়েতে যদি তার বউয়ের চোখে পানি না পরে তাহলে তার চোখে পেয়াজের রস দিয়ে দিব।আর মরিচ কাটছি পরে মনে হল কেউ আমার কাটা হাতে লবন ছিটিয়ে দিয়েছে। এত কষ্ট করে সব কাটার পর যখন ডিম ভাজতে গেলাম তখন দেখি ডিম আর গোল হয় না।ডিম উল্টাতে গিয়ে বাধল আরেক বিপওি।আমার চোখের সামনে ডিম ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল।শালার ডিমও শেষ পর্যন্ত আমার সাথে বেঈমানি করল!! কি আর করার আমি একে নাম দিলাম ডিমের মুড়িঘন্ট এইত গেল আমার ডিম কাহিনী।

একদিন বাসায় মেহমান আসবে দেখে মা বাবাকে ৫ প্যাকেট নুডুলস আনতে বলল।আমি মাকে বলে রাখলাম যে মা আমি নিজের হাতে নুডুলস রান্না করব।মা বলল তুই পারবি না।আমি বললাম আমি ইউটিউব থেকে নতুন নুডুলস রেসিপি শিখেছি।দেখবে আমার রান্না খেয়ে তারা কেমন প্রশংসা করে..বলবে এমন রান্না তো জীবনেও খাইনি।
যথাসময়ে আমি রান্নায় হাত বসালাম।রান্নাঘর থেকে মাকে বের করে দিলাম যেন আমার রান্নার সিস্টেম না দেখে।
দেখলাম আমার হাতের কাছে সব উপকরন রাখা।প্রথমে নুডুলসটাকে ২ মিনিটের জায়গায় ৫ মিনিট সিদ্ধ করলাম।সুতরাং অতিরিক্ত সিদ্ধোর ফলে নুডুলসটা দেখতে কাদায় পরিনত হল।ভাবলাম হয়তো মাংস,সবজি দিয়ে ভাজলে ঠিক হয়ে যাবে। তাই অত্যন্ত আশা নিয়ে রান্নায় মনোনিবেশ করলাম।

চুলোয় একটি প্যান বসিয়ে এতে এক কাপ পরিমান তেল দিয়ে এতে হলুদের গুড়া, জিরা গুড়া, মরিচের গুড়া,আদা-রসুন বাটা,পেয়াজ,কাচা মরিচ,টক দই,তেজপাতা,লং ইত্যাদি দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমান পানি দিয়ে ঠিকমতো কষালাম।আহ,কি সুন্দর ঘ্রান বের হয়েছে! এরপর এতে মাংস আর সবজিগুলো দিলাম। এরপর আবার তিন কাপ পানি দিলাম।মনে মনে ভাবলাম হয়ত এগুলো সিদ্ধ হয়ে গেছে,তাই নুডুলস এতে দিয়ে দিলাম।দেখতে পেলাম খুব সুন্দর কালার এসেছে।কিন্তু কেমন যেন পানি পানি। আমি এটাকে নাম দিলাম নুডুলস স্যুপ।অতিরিক্ত পানির জন্য নুডুলস আর সবজিগুলো দেখা যাচ্ছিলো না আর আমার পাশেও তেতুলের টক রাখা ছিল।দিলাম এক কাপ তেতুলের টক।ভাবলাম স্যুপ খেতে এই টকটা সসের চাহিদা পূরন করবে ঠিক টাইম মতোই মেহমানরা আসলো।মাও যে আজ কি সুনাম করছে..বারে বারে শুধু বলছে “আজ আপনাদের জন্য আমার মেয়ে স্পেশাল স্যুপ নুডুলস রান্না করেছে।বসুন আমি নিয়ে আসছি.” অতঃপর মা মেহমানদের সামনে আমার রান্না করা স্যুপ নুডুলস সার্ভ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।আমি তো খুশিতে আটখানা।

যখনই এক আন্টি নুডুলসটা মুখে দিল উনি কেমন যেন অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল।উনার চোখের পাপড়িও নড়ছে না। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম – কি আন্টি ভালো হয়নি।পরক্ষনেই মনে পড়ল – হায় আল্লাহ! আমি তো লবন,ধনে গুড়া আর সরিষার তেল দিতেই ভুলে গেছি বিয়ে হয়েছে সবেমাএ কয়েকদিন।এরমধ্যেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছে তারা নাকি নতুন বউয়ের রান্না খাবে।ঠিক করলাম – শুটকি ভুনা করলে কেমন হয়! তাই মাকে ফোন দিলাম রেসিপি জানার জন্য।মাও ঠিকমত বুঝিয়ে দিল।

শ্বশুর খুব সুন্দর শুটকি আনল।শুটকিগুলো দেখেই আমি মায়ের কথাগুলো সব ভুলে গেলাম যে কিভাবে রান্না করতে হয়।অসুবিধা কি আমি নিজেই তো রান্নার আইটেম আবিষ্কার করতে পারি। প্রথমে শুটকিগুলো কেটে টুকরো টুকরো করলাম।শ্বাশুরিকে বললাম আম্মা আপনি চুলোয় এক পাতিল পানি বসান।উনি বলল – এতো পানি??

আমি বললাম- হ্যা, মা আপনি শুধু দেখুন আমি কিভাবে রান্না করি…উনি কোন কথা না বলে চুলোয় এক পাতিলই পানি বসালো।এরপর আমি টুকরো করা শুটকিগুলো ওই পানিতে ভালো করে সিদ্ধ করলাম। সিদ্ধ করা হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে খুব ভাল করে টেলে নিলাম।তারপর আমি শ্বাশুরিকে বললাম- “আম্মাজান আমি বাটতে পারিনা,আপনি শুটকিগুলো থেকে কাটা বেছে আমাকে একটু কষ্ট করে বেটে দিন।” উনিও কোন কথা না বলে কাজ করতে লাগলেন।

আর আমি এদিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম মশলা কষানোর কাজে।এক চামচ হলুদ,চার চামচ মরিচ,সুন্দর ঘ্রানের জন্য একটু ঘি আর আধা জগ পানি দিয়ে মশলা কষাতে লাগলাম।এরপর বাটা শুটকি গুলো এর মধ্যে দিয়ে দিলাম।আমার কাছে মনে হলো ভুনায় পানি কম পড়েছে,তাই আরও এক জগ পানি দিলাম এতে।ভাগ্যিস বড় কড়াইতে রান্না বসাইছিলাম!

আমার এখনও মনে আছে ওই পানি শুকাইতে ১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট সময় লাগছে। আমি ঘড়ি ধরে ৫.৩০ মিনিট এ রান্নাঘরে ঢুকছি।আর বের হইছি ৭ টায় উপরোক্ত ঘটনাটি ৯৫% সত্যি।যারা পড়েছেন তারা নিজ দায়িত্বে হা হা রিয়েক্ট দিয়ে যাবেন,নয়তো আমার রান্নার অবমাননা করা হবে……..

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত