শ্বাশুরি আম্মা

শ্বাশুরি আম্মা

টাকা পয়সার পেছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে বিয়ের বয়সটা ফেরিয়ে গেছে টেরই পাইনি।আজ আমার টাকা পয়সা বাড়ী-গাড়ী সবই আছে,কিন্তু নেই একটা বউ।এ নিয়ে অবশ্য কোন চিন্তা ভাবনা নেই আমার,সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই নিয়েছি এজীবনে আর বিয়ে করবো না।বিয়ে করতে না চাওয়ারও একটা কারণ আছে।এ বয়সে কেই বা আমার কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে?মাথায় নেই এক চিমটি চুল,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিয়ের কথা চিন্তা করতে আমার নিজেরই সরম লাগে।শুধু শুধু মেয়ে খুঁজতে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হবে।

কিন্তু এ কথা আমি কোন ভাবেই মা’কে বুঝাতে পারছি না।তিনি আজ কয়েকটা মাস কানের কাছে বক বক করে আমার কানের পোকা গুলো পর্যন্ত মেরে ফেলছে।তাই আর বক বক সহ্য করতে না পেরে পাত্রী খুঁজতে সম্মতি জানালাম।আমার মুখের এই কথা শুনে তিনি দীর্ঘ একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন আর মুখে হালকা শব্দ শোনালেন “আলহামদুলিল্লাহ”।

সেই শুরু হয়ে গেল আমার জন্য পাত্রী খোঁজা।কত পাত্রী যে তারা দেখলেন একমাত্র আল্লাহই জানে।সবারই আমাদের টাকা-পয়সা, বাড়ী-গাড়ী পছন্দ হয়।কিন্তু আমার ছবি দেখলে আর ফিরে তাকায় না।তাকাবে কি করে??ছবির মধ্যে যে পাত্রের মাথায় ফতুল্লা স্টেডিয়াম দেখায় যায়।অনেক খোঁজা খুঁজির পর একটা পাত্রীর সন্ধান পেলেন মা।তারা কয়েকজন মিলে দেখেও আসলেন।পাত্রীর পরিবার রাজি হয়েছে।আমার ছবি দেখানোর পরও আপত্তি করেনি।আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম পাত্রীর ছবি দেখে।এরকম একটা পরীর মত মেয়ে কিভাবে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলো??মাথায় আসলো,বোধহয় সবই টাকার খেলা।

তো সব ঠিকঠাক ভাবে চলছিল।আজ আমাদের ওই বাড়ীতে যাওয়ার কথা।আজ এংগেজমেন্ট, আংটি পড়ানো হবে।যারা যারা ওই বাড়ীতে যাবে তারা সবাই নিজ নিজ সাজুগুজু করতে ব্যস্ত।আমিও সুটবুট পড়ে তৈরী হয়ে নিলাম।সবাই রওনা দিলাম আমার হবু শ্বশুড় বাড়ীর উদ্দেশ্য।সাথে নিলাম কয়েক প্রকারের ফলমূল,মিষ্টি বিশ কেজি।
বাড়ী দূরে হওয়ায় দু-তিন ঘন্টার মধ্যে আমরা ওই বাড়ীতে পৌছে গেলাম।

আমাদেরকে ওরা যথেষ্ট আদর যত্ন করতে লাগলো।কার কি লাগবে না লাগবে খোঁজ খবর নিচ্ছে।জমপেশ একটা খাওয়ার আয়োজন হলো।খাওয়া দাওয়া শেষে আংটি পড়ানো হবে।আমার মধ্যে একটা টান টান উত্তেজনা কাজ করছে।শেষ মূহুর্তে আমরা এসে পড়েছি।এখনই আংটি পড়ানো হবে।হবু বউকে নিয়ে যখনই বউয়ের মা রুমে ঢুকলো আমার চোখ পড়লো হবু বউয়ের মায়ের দিকে,ওনার চোখও পড়লো আমার দিকে,দুজনে চোখাচোখি।হঠাৎ আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম,হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিলো,শিরা উপশিরা টান টান হয়ে গেল। হঠাৎ হবু শ্বশুড়ি মায়ের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,”ইরে রুদ্র হারামি তুই?কার সাথে আমার মাইয়ার বিয়া??তোর পোলার সাথে??” তখন ঘটক পাখি মিয়া বলে উঠলেন,”ছিঃ ছিঃ কি বলছেন??নিজের মেয়ের হবু জামাইর সাথে কেউ এভাবে কথা বলে??”

হবু শ্বাশুড়িঃকিহ??এই বুইড়া আমার মেয়ের জামাই হইবো??তুই আমার জীবন নষ্ট করছিস,আবার এখন আসছিস আমার মাইয়ার জীবন নষ্ট করতে??তোর লগে দুইটা বছর প্রেম করলাম সেই বাল্যকালে।তুই আমারে ফালাই চলে গেছিস মৌমিতার কাছে।সেই দুঃখে আমি দু-মাস পরেই বিয়া করছি তিথির বাপেরে।আর তুই এখন আসছিস এই বুইড়া বয়সে আমার মাইয়ারে বিয়া করতে।কোথায় গেল তোর মৌমিতা??

আমিঃআসলে হয়েছি কি আম্মা…

হবু শ্বাশুড়িঃকি কইলি তুই? আমারে তুই আম্মা ডাকস??আমার মাইয়া তোর হাঁটুর বয়সী,তুই আসছিস ওরে বিয়া করতে,দাঁড়া একটু।রহিমার মা,পাকঘর থেকে বটি টা আনতো।হবু শ্বাশুড়ি গেল বটি আনতে আর আমি দিলাম ভৌঁ দৌড়।দৌঁড়াতে আছি আর দৌঁড়াতে আছি।আর কত দৌঁড়ানো যায়?বুইড়া বয়সে এসে কম দৌঁড়ালাম না।ভাগ্য ভালো আজ লুঙ্গি পড়ে আসি নাই,তাইলে আর লুঙ্গি জায়গায় থাকতো না।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তোমাদের উদ্দেশ্যে একটা উপদেশ,জীবন চলে গেলেও বাল্যকালে সমবয়সী মেয়ের সাথে প্রেম করবা না।কারণ “আজকের গার্লফ্রেন্ড, আগামীদিনের শ্বাশুড়ী আম্মা”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত