রিতুর ইচ্ছা করছে আত্মহত্যা করতে।কারণ একটাই,রিতুর বিয়ে হচ্ছেনা।এমন অপমান কি আর সহ্য করা যায়?রাগে দুঃখে মন চাচ্ছে ইহকালকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে পরলোকের টিকেট কাটতে।রিতুর সবগুলো কাজিনের বিয়ে হয়ে গেছে,ইনফ্যাক্ট যারা বয়সে রিতুর ছোট তাদেরও।সর্বশেষ যে জন ছিল তারও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আগামী সপ্তাহে তার বিয়ে হবে।কেবল রিতুরই বিয়ে হচ্ছেনা।এই নিয়ে রিতুর মনে অনেক ক্ষোভ।সবার বিয়ে হয়,আমার হয়না কেন??আমি কি দেখতে শুনতে খারাপ?নাকি ওরা আমার থেকে বেশি সুন্দরী?? রিতুর রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিহান কথাগুলো শুনে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।হঠাৎ রিতু দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল জিহানকে।তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে বললো,
-তুমি এখানে কি করছ??
-একটা বিয়ে পাগলী মেয়েকে দেখছি।
-ভালো হবেনা কিন্তু বলে দিলাম।কাটা ঘায়ে একদম নুনের চিটা দিতে আসবেনা!!!
-নুনের চিটা কই দিলাম?আমিতো শুধু তোকে দেখছিলাম।
তোর জন্য সত্যিই আমার আফসোস হচ্ছেরে রিতু।তোর সবগুলা ছোট বড় কাজিনের বিয়ে হয়ে গেল।সর্বশেষ ছোটজনের বিয়ের দাওয়াত দিয়ে গেল আজ তোকে।অথচ তোরই হচ্ছেনা বিয়ে।সত্যি বিরাট আফসোসের বিষয়। রিতু জিহানের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে আবার কান্না করে দিলো। জিহান হাসবে নাকি রিতুর সঙ্গে আবেগের ডিব্বা খুলে বসে থাকবে বুঝতে পারছেনা।
-জানো জিহান ভাইয়া আমার খুব কষ্ট হয় যখন দেখি রিয়া,দিয়া,সোমা,তমা ওদের বরকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে,বাগানে হাঁটে,বেড়াতে যায়।আমি কি দোষ করেছি বলতো?সবাই আমাকে দেখলে বলে তোর ছোট গুলারতো বিয়ে হয়ে গেল,তোর কবে হবে? এমন কথা শুনলে কেউ ঠিক থাকতে পারে বলো?
-হ্যা আমি বুঝি তোর কষ্ট।কিন্তু কি করবো আমি বল?আমি নিজেওতো সিঙ্গেল। রিতু মুখ গোমড়া করে বললো,
-হুম জানিতো।অনি কি বললো আজ জানো?ওর বর নাকি দেখতে রাজপুত্রের মত।একেবারে সালমান খান।আর আমার কিনা বিয়েই হচ্ছেনা। কথাটা বলে নাক টানলো রিতু। জিহান আবারো ঠোঁট চেপে হাসলো।
-অনির বর সালমান খান হলেতো তোর বর শাহরুখ খানের মত হওয়া উচিত!!
-একদম ঠিক বলেছ তুমি।আমি শাহরুখ খানের মত ছেলেকেই বিয়ে করবো।
আবার নাক টানলো রিতু। জিহান মন খারাপের ভান করে বললো,
-কিন্তু তোরতো কপাল খারাপ।তোর বিয়েই হবেনা কোনোদিন।
-তাহলে আমি মরেই যাবো দেখিও তুমি।
-এছাড়া যে তোর উপায়ও নেই।কারণ তোর কুম্ভরাশি।বিয়ে শব্দটা তোর।রাশিফলে নাই।
জিহানের কথা শুনে রিতু এবার ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।মাঝে মাঝে কান্না এসে গলায় আটকে যাচ্ছে।
-আমি মারা গেলে আমার আব্বু আম্মুর কি হবে?খুব কষ্ট পাবে আব্বু আম্মু, তাইনা?
-হুম,
-এখন আমি কি করবো?
-তুই একটা কাজ করতে পারিস।ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিবি।বিয়ে হচ্ছেনা বলে এর সমাধান চাইতে পারিস। রিতু তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে বললো,
-বাহ!দারুন আইডিয়া দিলেতো তুমি!এত্তগুলো থ্যাঙ্কু তোমাকে।আমি এক্ষুণই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সমাধান চাইবো।
রিতু মোবাইল হাতে নিলো। জিহান মুখ চেপে ধরে হাসতে হাসতে চলে গেল নিজেদের বাসায়। রিতু বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।বাবা মা দু’জনই রিতুকে অনেক ভালোবাসে।অতিরিক ্ত আদর ভালোবাসায় বড় হয়েছে বলে রিতু অনেক আহ্লাদী আর আবেগী।কাজিনদের মধ্যে যারা রিতুর ছোট তাদের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে রিতুকে টেনশনে ধরে গেল।ছোটদের বিয়ে হচ্ছে অথচ ওর হচ্ছেনা।তাহলে কি রিতুকে কেউ পছন্দ করেনা?উটকো চিন্তা মাথায় এনে রিতু এখন শোকে শোকাহত।আর রিতুর শোক আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে এলো জিহান।জিহান রিতুদের পাশের বাসায় থাকে।রিতুর বাবার বন্ধুর বড় ছেলে জিহান।অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।আর রিতু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে বলে রিতুর বিয়ে নিয়ে তাড়াহুড়া নেই রিতুর বাবার।অল্প বয়সী মেয়ে,তারা রিতুকে আরো অনেকদূর পড়ালেখা করাবে।তাছাড়া রিতুকে নিয়ে তারা নিশ্চিন্ত থাকার অন্য একটা কারণ আছে।কিন্তু বেচারি রিতুই বিয়ে হবেনা ভেবে অস্থির হয়ে গেল। রিতু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো,”ফ্রেন্ডসর া আমার ছোট বড় সবগুলা কাজিনের বিয়ে হয়ে গেল অথচ আমার বিয়ে হচ্ছেনা।আমি এখন কি করবো বলতো?তোমরা প্লিজ আমাকে সাজেশন দাও কি করে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করা যায়”। জিহান এই স্ট্যাটাস দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। জিহানই প্রথম স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করলো, “স্ট্যাটাসটা দারুন হয়েছে।এগিয়ে যা,তোর সঙ্গে আমি আছি।
২য় একজন কমেন্ট করলো,”হায় হায় কি বলেন!দুঃখের বিষয়।
৩য় জনের কমেন্ট,”আপনার শোকে জাতি শোকাহত”।
৪র্থ জনের কমেন্ট,”বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে পালিয়ে যান আপু। এই কমেন্ট দেখে রিতু দাঁত কটমট করে বললো,বয়ফ্রেন্ডই নাই,আর উনি আসছে বয়ফ্রেন্ডের সাজেশন দিতে।
৫ম জনের কমেন্ট”আপনার বাবা মাকে বলেন,ফ্রিতে থাপ্পর খান”।
৬ষ্ঠ জনের কমেন্ট,”আমাকে বিয়ে করবেন?আগের কথা ভালো আমার মাথায় টাক আছে।অবশ্য এখন এসব দেখলে হবেনা।আপনার দরকার বিয়ে।কবে আসতাম বলেন”।
৭ম জনের কমেন্ট”কলিযুগ এসে গেছে।এখন মাইয়ারা নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলে।লজ্জা শরমের মাথা খাইছে”। এসব কমেন্ট দেখে রিতু রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।বালিশের উপর মোবাইলটা আছাড় মেরে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। আর জিহান এসব কমেন্ট দেখে হাসতে হাসতে পেটের চামড়ায় ব্যাথা বানিয়ে ফেললো। কিছুক্ষণ পর জিহান আবার আসলো।রিতু কাঁদছে।জিহানকে দেখে রাগী চোখে তাকালো সে।জিহান মুচকি হেসে বললো,
-কিরে রিতু কাজ হলো?
-তোমার মাথা হয়েছে!!কোনো সাজেশন পাইনি,কচুর আইডিয়া দিয়েছ তুমি!!!
-কি বলিস!!এখন কি হবে তোর??
-জানিনা।
-আমি একটা সাজেশন দেব তোকে? রিতু গাল ফুলিয়ে বললো,
-দাও।
-আমাকে বিয়ে করবি??
-কি??তোমাকে বিয়ে করবো আমি??
-হ্যা,সমস্যা কি?এছাড়াতো আর কোনো অপশন নেই তোর হাতে।আর কেউতো তোকে বিয়েই করবেনা।
-একদম ফালতু কথা বলবেনা বলে দিলাম!!আমার বিয়ে হতেই হবে!
-আমি ফালতু কথা বললাম কই?তোকেতো সাহায্য করছি আমি।তোর কাজিনদের বর থেকে কি আমি কোনো অংশে কম? রিতু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-খাওয়াবে কি আমাকে?নিজেইতো বাপের টাকায় চলো!
-চাকরি করবো পড়ালেখা শেষ হলে। মন খারাপ করে রিতু বললো,
-সেতো অনেক দেরি।
-সমস্যা কি?ভালো কিছু পাওয়ার জন্য তুই অপেক্ষা করতে পারবিনা?তোর কাজিনদের বরগুলোতো একজন বিদেশ থাকে,একজন কাপড় দোকান করে,একজন রড সিমেন্টের ব্যবসায় করে।আর তোর বর করবে চাকরি।কি বলিস ভালো নয় কি??
-হুম ভালো।
-রাজি?
-ভেবে দেখতে হবে।
-আবার কি ভাববি?
-জানিনা।
-রিতু,
-হুম,
-দেখতো আমি শাহরুখ খানের মত হ্যান্ডসাম কিনা? রিতু জিহানের দিকে তাকালো।জিহান দুই হাতের পেশি ফুলিয়ে বললো,
-দেখ আমি পাক্কা শাহরুখ খানের মত।
রিতু জিহানের কান্ড দেখে হাসতে লাগলো।হাসলে রিতুকে অসম্ভব সুন্দর দেখায়।দুই গালে টোল পড়ে।জিহান রিতুর হাসি দেখে মনে প্রশান্তি পেল। রিতুকে বললো,
-কিরে এবার রাজি? রিতু মাথা নিচু করে বললো,রাজি।