খুব স্পষ্ট ভাবে সেইদিনের কথা এখনো আমার মনে আছে। কালের প্রভাবে অনেক স্মৃতি স্মৃতির ধুলোতে চাপা পরে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে অবসর বা একাকিত্বে মাঝে মাঝে কিছু স্মৃতি স্মৃতির ধুলো থেকে মনের দৃশ্যপটে উকি দেয়। তখন সময় থমকে যায়। থমকে যায় বর্তমানের সমস্ত চিন্তা চেতনা। জীবনের ফেলে আসা সমস্ত স্মৃতি মুছে ফেলে বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই চির চেনা স্মৃতির কাছে।
সেইদিন চিঠিটা ভাবনার হাতে দিতেই ও বলে উঠেছিল, “কার চিঠি? কার কাছে দিতে হবে?” ভাবনার কথা শুনে আমার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠেছিল। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। শিক্ষকের প্রশ্নে ছাত্রের উত্তর না জানা থাকলে যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর সামনে আমিও ঠিক উত্তর না জানা ছাত্রের মতন দাঁড়িয়ে ছিলাম। শেষে জড়তা ভেঙ্গে বলে ফেলেছিলাম, “এটা তোমার জন্য আমার লিখা চিঠি। ”
ক্লাসের সেরা সুন্দরী বা সেরা ছাত্রী দুটোই কোনোটাই ভাবনা ছিল না। শ্যামা বর্ণের মাঝারী আকারের একটা মেয়ে। যাকে ঠিক সুন্দরী বলা যায় না। সুন্দরী মেয়েদের মতো মুখে লাবণ্যের ছাপ না থাকলেও একটা বিশেষ গুণ ভাবনার ছিল। যেটা ক্লাসের সব মেয়ে থেকে ভাবনা যে আলাদা করে রাখতো। অন্তত আমার চোখে তাই মনে হয়েছিল। এমন মায়াময়ী চোখ শুধু আমাদের ক্লাসে কেন। পৃথিবীর সমস্ত স্কুল কলেজের কোনো মেয়ের ছিল না।
তবে মেয়েটা অনেক লজ্জাবতী ছিল। একটুতেই লজ্জা পেয়ে নিজেকে খোলসের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যেবার ওদের বাড়ির ঝোপের আড়ালে দেখা করেছিলাম মেয়েটা সেবার আমার বুকে মুখ গুঁজিয়ে অনেক কেঁদেছিল।মাথায় হাত রেখে শপথ করিয়েছিল আমি যেন কখনো ওকে ভুলে না যাই। আচ্ছা সেই শপথটাই কি ভাবনার স্মৃতি গুলো বারবার আমাকে মনে করিয়ে দেয়?
খুব ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। বাবা কোনো কিছুর কমতি করেনি। নিজের একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। যদিও ভাবনার কথা মাকেই প্রথম বলেছিলাম। বাবাকে বলার মতন সাহস ছিল না। মা কিভাবে যেন বাবাকে বুঝিয়ে সব ঠিকঠাক করেছিল। সেসব কথা মনে হলেই বুকের মধ্যের সুখ নদীতে ঢেউ উঠে। কনের সাজে ভাবনার চোখ কে অন্যরুপে দেখেছিলাম। মনে হচ্ছিল দুনিয়ার সেরা সুখী আমি। নিজের প্রিয় মানুষটাকে আপন করে পাবার মতন সুখ কি পৃথিবীতে আর কোনো কিছুতে আছে বলে আমার জানা নেই।
খুব সুখেই আমাদের দিন কাটছিল। বাবার চালের ব্যবসা ছাড়া তেমন কোনো কাজ ছিল না। মাঝেমাঝে একটু হুঁ হাঁ করলেই আমাদের ম্যানেজার সব দেখো নিতো। এছাড়া দিনের বাকি সময় ভাবনা আর গল্পের বইয়ের মধ্যেই কাটিয়ে দিতাম। ভাবনাকে নানা দেশের নানা রকম গল্প শুনাতাম আর দুজনে শহরের নানান অলিগলি ঘুরে বেড়াতাম।
একদিন ভাবনা লুকোচুরি খেলার ছলে জানালো ও মা হতে চলেছে। খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিলাম সেদিন।
সুখের বৃষ্টি নেমে এসেছিল আমাদের বাড়িতে। সেই বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছিল আমাদের বাড়ির সবাইকে। ভাবনাই আমাদের মেয়ের নাম ঠিক করেছিল। ও বলেছিল আমাদের প্রথম সন্তান মেয়েই হবে। তাই ওর আর আমার নাম মিলে মেয়ের নাম রেখেছিল শোভা।
শোভার জন্ম আমার কাছে যতোটা আনন্দের ছিল। তার থেকে কয়েকগুণ বেশি ছিল দুঃখের। সৃষ্টিকর্তা শোভাকে দিয়ে ভাবনা কে কেড়ে নিলেন। আমার পৃথিবীজুড়ে অন্ধকার নেমে এলো । নিমিষেই সব কিছু হারিয়ে ফেললাম। চেনা জগত অচেনা হয়ে উঠলো। জীবনের রঙ হারিয়ে গেলো। মা অনেক করে বুঝালেন আরেকটা বিয়ে করতে। বুড়ো বয়সে কোনো মা বাবা তার ছেলে কে বিপত্নীক রেখে মারা যেতে চায় না। কিন্তু আমি যে শপথ ভাবনা কে দিয়েছি সেটাই বা ভুলে যাই কি করে। তাছাড়া ভাবনা তো আমাকে একে রেখে যায়নি। ওর একাকিত্বকে ভুলে থাকবার জন্য রেখে গেছে শোভাকে। দিনে দিনে শোভাই আমার কাছে পৃথিবী হয়ে উঠলো।
মায়ের সাথে শোভার একদম কোনো মিল নেই। ভাবনা যেমন ছিল, শোভা তার ঠিক উল্টো। একদম চঞ্চল একটা মেয়ে। কোথাও একদন্ড চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় শোভা আমার মেয়ে না, ছেলে। স্বভাব চরিত্র একদম ছেলেদের মতন। ছেলেদের মতন করে চুল কাটবে। ছেলেদের মতন কাপড় কিনে নিবে। প্রথম কেউ শোভাকে দেখলে মনেই করবে না ও মেয়ে। ভাবনা মারা যাবার পর আমার মা শোভাকে বড় করে। কিন্তু মা হঠাৎ করে মারা গেলে সব ভার এসে পরে আমার উপর।
দিন দিন শোভা বড় হয়ে উঠলো। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি সাধারণত ছেলেরা অন্যায় করলে তার বাবার কাছে মানুষ নালিশ করে যায়। অথচ শোভার বেলায় তা সম্পূর্ণ উল্টো। প্রত্যেকদিন ছেলেদের বাবারা শোভার নামে আমার কাছে নালিশ দিতে লাগলো। আজ এর ছেলেকে মেরেছে তো কাল অন্যজনার ছেলেকে জুতোপেটা করেছে। কাউকে কানমলা দিয়েছে নাহলে কারো নাক ফাটিয়েছে। কখনো যদি শোভা কে জিজ্ঞাস করি, “কি’রে মা তুই নাকি নীরবের নাক ফাটিয়ে দিয়েছিস?” শোভাও যুক্তি দিয়ে নীরবের নাক ফাটানোর কারণ ব্যাখ্যা করতো।
” দেখো বাবা নীরব ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর বলে কিনা ও ইচ্ছে করে ধাক্কা মারেনি। অথচ আমি জানি খেলার আগে আমার দিকে ও রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমি মেয়ে বলে কি ওদের সাথে খেলতে পারবো না?” শোভাকে আমি ছোটবেলা থেকে খুব আদর দিয়ে মানুষ করে আসছি। কখনো উচ্চস্বরে ওর সাথে কথা বলিনি। সন্তানদের বাবা যখন তাদের ধমক দেয় তখন তারা মায়ের আঁচলে মুখ লুকায়। মা ধমক দিলে বাবার ছায়াতে এসে লুকিয়ে পরে। আমার শোভাকে ধমক দিলে কার আঁচলে মুখ লুকাবে?
তখন শোভার বয়স বারো কি তেরো। একদিন দুপুরবেলা ঘুমিয়ে আছি। শোভার চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দৌড় গিয়ে দেখি শোভা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। যখন ওর কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে। তখন ও পায়ের দিকে দেখিয়ে দিলো। দেখলাম শোভার পা বয়ে একটা রক্তের ধারা নিচ দিকে নেমে যাচ্ছে। দৌড়ে পাশের বাড়ির নীলা ভাবীর কাছে চলে গেলাম। নীলা আমার সহপাঠী, ওকে বললাম শোভাকে একটু দেখে আসতে। মেয়েদের এসব গোপন ব্যাপারে বাবাদের যেতে নেই। মাকেই এসব ব্যাপার দেখতে হয়। কিন্তু শোভার যে তাও নেই। ওকে দেখবে কে?
সেইদিনের ঘটনার পর শোভা অনেক বদলে গেলো। দেহের পরিবর্তন এলে মনেও পরিবর্তন আসে। শোভা আর আগের মতন ছেলেদের সাথে মিশে না। স্কুল ছাড়া বাকি সময় বাড়িতেই থাকে। দাদুর সাথে দুষ্টামি করে অথবা আমার বুকশেলফ থেকে বই নিয়ে পড়ে। শোভার এই হঠাৎ পরিবর্তনে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের একটা অদ্ভুত শক্তি দিয়েছে। ওরা হঠাৎ করে খুব বেশি নিজেকে পরিবর্তন করে নিতে পারে। পৃথিবীর অন্য কোনো প্রাণী এমনভাবে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে কিনা সন্দেহ হয়।
শোভা ওর নাচ, স্কুল, গল্পের বইয়ের পাতায় ডুবে থাকতে শুরু করলো। আমিও নিজের ব্যবসায় মন দিলাম। দেখতে দেখতে কখন যে আমার মেয়েটা চোখের পলকে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেলো জানতেই পারলাম না। মেয়েরা মনে হয় খুব হঠাৎ করে বড় হয়ে যায়। বাবার চোখের পলক পড়ে কিনা তার মধ্যেই বড় হয়ে যায়। বাবারা বুঝতেই পারেনা মেয়ে তার বড় হয়ে গেছে। পৃথিবীর সকল বাবার কাছে তার মেয়ে মনে হয় প্রথম দিনে জন্ম নেওয়া শিশুর মতো রয়ে যায়। মেয়ে যতো বড় হোক না কেন বাবার কাছে সে শিশুই থাকে।
বিয়ে দিয়ে দিলাম শোভাকে। খুব ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে ঠিক করেছিলাম। একমাত্র সন্তান আমার। আমার যা আছে সব তো শোভার জন্য। তাহলে কেন ওর বিয়েতে কমতি রাখবো। একবিন্দু কমতি রাখবো না। বাবারা মেয়ের বিয়েতে কমতি রাখতে চায় না। এটা বাবাদের জন্মগত অভ্যাস। ওরা যখন শোভা কে নিয়ে যাচ্ছিল তখন বুকের মধ্যে কে যেন একটার পর একটা তলোয়ার ঢুকিয়ে দিচ্ছিল। ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল বুকের মধ্যে। দুপুরবেলা শোভাকে নিয়ে গেল বরযাত্রী। সারাটা বিকেল বুকটা ভার লাগছিল। সন্ধ্যার দিকে একটা ফোন এলো। ফোনে যা শুনলো সেটা শুনে আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো। সৃষ্টিকর্তা আমাকে এত্ত বড় শাস্তি দেবেন ভাবতেও পারি নি। জানি না নিজের অজান্তে সৃষ্টিকর্তার কাছে কত্ত বড় পাপ করেছিলাম।
রাস্তায় বরের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি ছুটে গেলাম হাসপাতালে। বৌ এর সাজে আমার ছোট্ট মেয়েটা হাসপাতালের সাদা আর নিষ্ঠুর বেডে শুয়ে আছে। লালরঙা শাড়িটা যেন আরো বেশি লাল হয়ে আছে। মাথায় মোড়ানো সাদা ব্যান্ডেজটাও লাল হয়ে গেছে। আমি মেঝেতে বসে পরলাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু করুণাময় আমার চোখের পানিটুকুও মনে হয় কেড়ে নিয়েছিলেন। নিজেকে সামলে নিলাম। বাবাদের ভেঙে পরলে যে হয় না! শত ঝড়েও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এই বাবা নামক মানুষগুলোর।
এরপরই খবর পেলাম শোভার জামাই এর অবস্থা খুবই খারাপ। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। কাঁদলাম, সৃষ্টিকর্তার কাছে কত কাকুতিমিনতি করলাম। গভীর রাত্রিতে খবর এলো রাতুল নামের অনেক স্বপ্ন চোখে ধারণ করা ছেলেটা আর নেই। কথা ছিল আমার মেয়েটাকে নিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে যাবে সে। নতুন একটা জীবন শুরু করবে। অথচ তাকে যেতে হচ্ছে অন্ধকার ঘরে, সম্পূর্ণ একা। রাতুল এর লাশের খাটিয়াটা অনেক বেশি ভার হয়ে ছিল আমার কাঁধে।
দীর্ঘ দু মাস হাসপাতালে থাকার পর আমার মেয়েটা সুস্থ হলো। কিন্তু ভেতর থেকে সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। বাকপটু মেয়েটা আমার এক্কেবারে চুপ হয়ে গিয়েছিল। ওর শশুড়বাড়ির মানুষগুলো প্রথম প্রথম ওর খোঁজ নিতো হাসপাতালে থাকাকালীন। কিন্তু একসময় ওদের আচরণ বুঝিয়ে দিল যে তাদের ছেলে হারানোর জন্য আমার মেয়েটাই একপ্রকার দায়ী। শোভা যখন সুস্থ হয়ে ওই বাড়িতে যায়,ওর শাশুড়ি আর ওকে সহ্য করতে পারেন নি। ভদ্রমহিলা ছেলের মৃত্যুর জন্য আমার মেয়েকেই দায়ী করেছিলেন। তাকে আমি কোনো দোষ দেই না। সন্তান হারানোর বেদনা অনুভব করা দূরে থাক, আমি হয়ত ভাবতেও পারব না তা। শোভা আমার কাছেই ফিরে এলো। আমরা বাবা মেয়ে আগের জীবনেই ফিরে গেলাম। কিন্তু কোথায় যেন একটা সুর কেটে গিয়েছিল।
শোভা এখন একাই থাকে বলতে গেলে। আমার সাথেও তেমন একটা দেখা করে না। ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখে সারাদিন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের কথা কানে আসতে লাগল। আমার মেয়েটাকে “অপয়া” বিশেষণ দিতে সময় লাগলো না আমাদের এই শিক্ষিত সমাজের। জন্মের সাথে সাথে মা কে মেরেছে! বিয়ে হতে না হতে স্বামীর জীবন নিয়েছে! যেন শোভাই নিজ হাতে খুন করেছে ওদের! সেদিক আমার মনে হচ্ছিল ভাবনা চলে গিয়ে আসলে বেঁচেই গেছে। মেয়ের এই পরিণতি মা হয়ে কি করে সহ্য করতো ও? সৃষ্টিকর্তা এতটুকু করুনা আমাকে করেছেন। কিন্তু তবুও মনে হয়। দূর থেকে সে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছে। আমরা বুকটা ভেজা লাগে খুব। ভাবনার চোখের জলে ভেজা বুক আমার।
শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম অতীব শিক্ষত, যান্ত্রিক এই সমাজে আর থাকব না। মেয়েটাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব।
শোভাকে বললাম, ” চল কিছুদিন ছুটি নেই এই জঞ্জাল থেকে।” শোভা ভালমন্দ কিছুই বলল না। শুধু বড় বড় চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল অনেক্ষণ। আজ বহুদিন পর ট্রেনে উঠলাম। আমার সামনের সিটটাতে বসে শোভা আমাকে “শেষের কবিতা” পড়ে শোনাচ্ছে। ট্রেনে উঠে শোভার চোখেমুখে আমি বহুদিন পর উচ্ছাস দেখতে পেলাম। একটা মুক্তির আনন্দ খেলা করছিল ওর চোখে।
আমি বহুকাল পর আমার চোখের সামনে ভাবনাকে দেখতে পেলাম। বিয়ের পর কত বহু রাত আমি আর ভাবনা কবিতা পড়ে কাটিয়েছি। বিয়ের পর যখন হানিমুনে গেলাম সমুদ্র দেখতে ট্রেনে যাওয়ার পথে অবিকল এই ভঙ্গীতে ভাবনা আমাকে “শেষের কবিতা ” শোনাচ্ছিল। বুকের বামপাশটা আবার ভেজা ঠেকলো। ভাবছিলাম আমার সারাটা জীবনের কথা। জানিনা আর কদিন বাঁচবো। জানিনা আমার মেয়েটার ভবিষ্যৎই বা কি?
মনে মনে কল্পনায় বিভোর ছিলাম। দূর পাহাড়ে বাপ-মেয়ে ছোট একটা কুঁড়েঘর বানাবো। সারাজীবন এর সঞ্চয় দিয়ে কোনোরকম এ পাড় করে দেব জীবন। সেখানে এই শহরের মত শিক্ষিত মানুষ থাকবে না জানি, হয়ত এই যান্ত্রিক শহরের মত নিষ্ঠুরতাও থাকবেনা। সবুজের কাছাকাছি থাকা মানুষগুলোর মন সবুজের মত সুন্দর হয়। জীবন কল্পনার মতো সুন্দর নয় জানি। জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ এ কি আছে। আমি নাহয় অপেক্ষায় আছি ভাবনার কাছাকাছি যাবার। কিন্তু শোভার জীবনটা কিভাবে কাটবে? সব কিছু সৃষ্টিকর্তা জানেন। তবুও আমরা সুন্দর স্বপ্ন দেখি। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এতো কিছুর সাথে স্বপ্ন দেখার একটা ভীষণ শক্তিও দিয়েছেন। জীবন যেমনই হোক না কেন! স্বপ্ন দেখায় পাপ নেই কোনো।