:আপনারা কি এই বাসায় নতুন?
:জ্বি?
:মানে বলতে চাচ্ছি যে আপনারা কি এই বাসার নতুন ভাড়াটিয়া?
:বলতে পারো
:ওহ! আচ্ছা।আপনি Android phone use করেন?
আনুমানিক ৭/৮ বছর বয়সের এই মেয়েটা আমাকে ১৯ শতকের স্মার্ট বালক ভেবে ফেলেছে!লজ্জার ব্যাপার!
আসলেই লজ্জার ব্যাপার!! এই বাসার চিলেকোঠায় আমি একা থাকিনা। আমার সাথে আমার বন্ধু শাওন ও থাকে। বাড়ি ওয়ালার ৬ টি শর্ত বিশিষ্ট একটা দলিলে সই করে এই বাসাটি পেয়েছি আমরা।মোট কথা খুব প্যারা নিতে হয়েছে বাসাটি নেয়ার জন্য। আমি মেয়েটিকে জবাবে বলি,
:Android phone! সেটা আবার কি!
:ফাইজলামি করেন আমার সাথে?
:বলতে পারো!
দুটো বাড়ির ছাদ একেবারে একটির সাথে আরেকটি লেগে আছে।তাই অনায়াসে এক ছাদ থেকে অপর ছাদে আসা যাওয়া করা যায়। মেয়েটি একটা রাগি মুড নিয়ে ২ আঙুল লম্বা চুল গুলো একবার আমার দিকে ঝামটা দিয়ে চলে গেলো।আমি মোটামুটি বিনোদন পেলাম বলা যায়। কোনো এক হলুদ সন্ধ্যায় হাতে গিটার নিয়ে টুংটাং করছিলাম। আমার বাটপার টাইপের বন্ধুটা তখন আমার পাশেই বসে ছিলো। হঠাৎ করেই শাওন বলে উঠলো!
:দোস্ত!
:হুম?
:গিটার টা দে তো! আমি ওর হাতে গিটার দিলাম। তারপর একটু জোরেই হঠাৎ করে বলে উঠলো!
:দোস্ত গিটার তো অনেক বাজালাম।এবার গিটার ছাড়া একটু গান গা
:মানে?
:আরে গা না!
:কতো দিন হলো তুই গান গাস না,আজ একটা গা।আমি শুনবো।আমার এখন গাওয়ার মুড নাই, আমার সন্দেহ হলো!ঘাপলা তো একটা আছেই! তারপরেও সাত পাচ না ভেবে গাওয়া শুরু করলাম।
I found a love,,
for me,
Darling just dive right in,
follow my lead!
গানের মাঝে খেয়াল হলো পাশের ছাদে তাকাচ্ছে শাওন বার বার। তখন গান গাওয়া অবস্থাই আমি তাকাই ওইদিকে।শাওন ইশারায় বলে ডান সাইডের টা দেখ! কিন্তু আমার চোখ ডান পাশের মেয়েটার পাশের মেয়েটার দিকে চোখ আটকে যায়।খোলা চুলে হালকা শ্যাম বর্ণের মেয়েটা ঠিক দিগন্তের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি তাকিয়ে দেখি, মেয়েটা হয়তো অষ্টাদশী হবে নতুবা ১৯সে পা দিয়েছে। আমি গান থামিয়ে দিই।তাকিয়ে দেখি তাকে,, হালকা জোর দিয়ে বাতাস বইছে।তার দীঘল কালো কেশ গুচ্ছের হাওয়ায় বিচরণ আমি অনুভব করি খুব।
গান থামাতেই সে আমার দিকে একনজর তাকায়! আমার মনে হয় আমি একটা নয় বরং অনেকটা হৃৎস্পন্দন মিস করি! তার সাথে আমার চোখা চোখি হয়, সে তার চোখ ঘুরিয়ে নেয়।আমি তাকিয়েই থাকি।কিছুক্ষন পরে সে চলে যায়।খালি পায়ে হেটে যাওয়া মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো সে আমার হৃৎপিন্ড নিয়ে পালাচ্ছে আর আমি কিছুই করতে পারছিনা।তার অনামিকা আঙুলে একটা আংটি আছে, আর ফর্সা বা হাতে আর্টসেলের রিজ ব্যান্ড। আচ্ছে সে কি আর্টসেলের ফ্যান?সে কি অনিকেত প্রান্তর,দুক্ষ বিলাস,পথচলা,এই বৃষ্টি ভেজা রাতে শোনে! হয়তো শোনে! হয়তো মেয়েটার কোনো প্রেমিক আছে,নাও থাকতে পারে! তবে সেটা বড় কথা নয়,বড় কথা হলো আমি সেদিন রাতে সেই লম্বা চুল ওয়ালিকে কল্পনা করতে করতে ঘুমের রাজ্য ত্যাগ করে ছিলাম।
:তুমি চাইলে আমার ফোন দিয়ে গেম খেলতে পারো, যেকোনো গেম,
এমবি আছে ফোনে।
:সত্যি!!!
:হ্যা।
মেয়েটা মোবাইল নেয়ার জন্য হাত পাতলে আমি বলি
:আগে পরিচয় দাও!
:আমি এই বাসায় ২ তলায় থাকি। মোবাইল হাতে নিয়েই ছাদের এক কোনায় গিয়ে বসে পরে। সন্ধ্যার কিছুক্ষন আগে আমার কাছে এসে মেয়েটা বলে,
:আচ্ছা আমরা কিন্তু আজ থেকে বন্ধু।ওকে?
এই নাও তোমার ফোন।
:ধন্যবাদ।
এরপরে আরো অনেক কথা হলো তারসাথে। মেয়েটার সাথে কথা বলে ভালো লাগে আমার।খুব গুছিয়ে কথা বলে।পিচ্চি দেখতে তবে কথায় ৮০ বছরের বুড়ি। কিছুদিন পর,,,,
:কি খবর বন মানুষ?
:আমাকে বললে নাকি?
:হুম তোমাকেই বলছি।তুমি অনেক আগোছালো থাকো।একদম বনমানুষদের মতো।
:আচ্ছা?
:হুম।আচ্ছা আজকে আর তোমার ফোন নিবোনা।তোমার সম্পর্কে জানতে চাই।ঝটপট বলে ফেলো তো!
:আমার সম্পর্কে?
:হুম
:আমার সম্পর্কে তোমার জানার মতো কিছুই নেই। আমি তাওহিদুল ইসলাম।পড়াশোনা অনার্স লাস্ট ইয়ার। আর কিছু বলার নেই।তুমি বলো
:আমি আর কি বলবো। আমি এবার ক্লাস ২ তে পড়ি।নাম তুলি।আর কিছু?
:নাহ, থাক।বেশি জানার দরকার নেই।
:হুম।আচ্ছা তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?
:জ্বি না!(আমি শিওর এই মেয়ে গার্লফ্রেন্ড বানানে ভূল করবে)
:তাহলে ক্রাশ!
:ক্রাশ?
:হুম
:নতুন বানালাম কিছুদিন আগে।
:তাই!!!অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞাসা করলো তাই?
:হুমমম।
:কে সে?
:নাম জানিনা।তোমাদের বাসার ছাদে এসেছিলো সেদিন।
:তাইনাকি!কেমন দেখতে? তার বিস্ময় দেখে আমার ভালো লাগে।
:কালো সালোয়ার পড়ে সবুজ ওড়না মাথায় দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকা সেই অষ্টাদশী সেদিন আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো।
আমি ভাবিনি কারো চোখ এভাবে কথা বলতে পারে!আমি বুঝে উঠতে পারিনি সেদিন দু দণ্ড চাহনিতে তবে আঁচ করতে পারি সে চোখের গভীরতা!তৃষ্ণা!কারো চোখের সাথে চোখ মেলানোর তৃষ্ণা! আমি দেখেছিলাম সেদিন।তবে কিছু বলতে পারিনি। আমার মনে হয় আমি সেই লম্বা চুল ওয়ালিকে ভালোবেসে ফেলেছি!
:একবার দেখেই!কিছু না জেনেই!
:হুম
:ভালো।
:তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।
:আমারো বনমানুষ।বলেই একটা দৌড় দিয়ে চলে গেলো।
সেদিন একটা বই পড়ছিলাম।কি বই সেটা ঠিক মনে নেই।বাইরে বৃষ্টি,অপর পাশের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে।আমি বের হইনি।পাছে মেয়েটা চলে যায়। আমি মনে মনে বলি, আমি বৃষ্টি হতে পারি তুমি ভিজবে বলে, বিন্দু বিন্দু আমার শরীর, ছুঁয়ে দেবে তোমাকে। ঝড়ে পড়বো একদম তোমাতে তুমি হারিয়ে যাবে আমাতে আমি বুঝিয়ে দেবো অনুভূতি, ভালোবাসার স্পর্শে,,,,
হঠাৎ দেখি আমায় ডাকছে! দূরে দাঁড়িয়ে ছাতা মাথায় তুলি ডাকছে, আমি কারন জিজ্ঞাসা করতেই বলে আপু ডাকছে,ছাদের মেয়েটাকে ইশারায় দেখিয়ে। আমি স্তব্ধ হয়ে যাই! এটা কি ছিলো!তার মানে মেয়েটা তার আপুকে আমি যা বলেছি তা সব বলেছে! মনে হচ্ছে মাটি ফাক হয়ে যাক আমি পালিয়ে যাই!! আমি ধীরে ধীরে তার কাছে গেলাম।তুলি চলে গিয়েছে।মেয়েটা ছাদে ওঠার দরজার একপ্রান্তে দাড়ানো আমি অপর প্রান্তে দাড়াই।দেয়ালে হেলান দিয়ে। মেয়েটার প্রশ্ন ছিলো,
:সারা জীবন গান শুনাবে?
:বুড়ো বয়সে একটু সমস্যা হতে পারে, হাহা,
হঠাৎ করেই মেয়েটা আমার হাত ধরে ছাদে বের হয়।আমরা ভিজতে শুরু করি। দুজন দুজনার হাত ধরে দাড়িয়ে আছি।হঠাৎ আমার কি হলো জানিনা আমি তার দুগালে হাত চেপে ধরে সাথে সাথে ঠোটে ঠোট চেপে ধরি।আমার কি হয়েছিলো জানিনা।আমি আমার ঠোট সরাতে চাইছিলাম না।অতঃপর সেও হঠাৎ আমার পিঠে হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি বুঝতে পারি এ প্রেম অনেক দূরে যাবে কোনো প্রশ্নের সামনে না এসে।আমি বুঝতে পারি নাম না জানা মেয়েটার অনুভূতি।আমি নাম না জানা মেয়েটার নাম জানতে চাইনা।আমি তার মনের সাথে পরিচিত হতে চাই।।।