ইদানীং আমার স্বামী আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায়না। ওনার প্রতিটা দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসেই কাটাতে হয়। সারাদিন ঘরে বসে থাকতেও ভালো লাগেনা। ওইদিন যখন অভিমানের জেদটা একটু বাড়িয়ে দিলাম সেদিনই আমার আদরের স্বামী আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে রাজি হয়েছে।
সেদিন আমি আর আমার স্বামী দু’জনে মিলে বাংলাদেশের নাম করা এক পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। খোলা প্রকৃতি, ফরমালিন মুক্ত ঠান্ডা বাতাসে বসে বসে দু’জনে গল্প করছি। পরিবেশটা খুবই ভালো। মাঝে মাঝে কার না মন চাইবে এমন পরিবেশে প্রিয় মানুষটাকে পাশে রেখে নিজেকে আবিষ্কার করতে! সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই মনটা থমকে গেলো একটা দৃশ্য দেখে। একটা মেয়ে বাইক থেকে নেমে চায়ের টং দোকানে গেলো। দোকানীকে কি বলে দুইটা সিগারেট নিয়ে জ্বালালো। একটি দিয়েছে যে বাইক চালিয়েছে তাকে আরেকটা সে নিজেই টানতে লাগলো। স্বামীকে প্রশ্ন করলাম;-
-এইগুলো কি দেখলাম? সে উত্তরে বললো;-
-এগুলো হলো সমান অধিকার!
অবাক হলাম। তাহলে আমাদের সমাজের সুশীল মেয়েবাদীরা রাত দিন টকশোতে এই সমান অধিকার নিয়েই কি গলা পাঠাচ্ছেন?
-হয়ত
ছিঃ ছিঃ। ঘৃনা করি তাদের যারা আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে সমান অধিকারের নাম করে করে অশ্লীলতার স্রোতের দিকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।
আমার মনটা তখন চাইলো ইচ্ছে মত জোর করে কষে এনে একটা থাপ্পড় দিয়ে মেয়েটার মুখ থেকে সিগারেট নিয়ে পায়ে ডলে নিঃশেষ করে দিতে। কিন্তু আমি পারিনি। কারণ এটা আমার ভালো করেই জানা আছে, আমি কিছু করতে গেলেই ওর হয়ে আরো ৫০ জন নেশাখোর আমার বিরুদ্ধে লেগে যাবে। আর তখন নিজের ইজ্জত নিয়ে ফিরে আসাটাও সম্ভব হবে না। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা সে জায়গাটা ত্যাগ করলো। আরেকটা মেয়ে আসতেছে বয়ফ্রেন্ড নামক ধর্ষককে সাথে নিয়ে। একদম উদাম বুকে। গলাতেও কোন ওড়না নেই। রাসেলকে প্রশ্ন করলাম এটা কি? সে বললো,
-এটাকে এক কথায় বলে জাস্ট ফ্রেন্ড।
আমি বললাম,
-তুমি কিভাবে জানো? সে বললো,
-কারণ আমিও পাবলিক ইউনিভার্সির স্টুডেন্ট ছিলাম। -তাহলে তুমি কি এসব সাপোর্ট করো?
-কখনোই না।
-কখনো প্রতিবাদ করেছো?
-অনেকবারই করেছি।
-কেমন সাড়া পেয়েছো?
-আল্লাহ যাদের বুঝার তৌফিক দিয়েছেন।
জানো রাসেল অথচ এসব মেয়েদের বাবা-মা জানে এরা দেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। নিজের পিতা কত কষ্ট করে এদের পড়ালেখা করিয়ে এতটুকু লতেই পৌছিয়ে দিয়োছেন। অনেকের বাবা এখনো মাথার ঘাম পায়ে পেলে এদের পড়ালেখার খরচ দিয়ে থাকেন। দিনশেষে অন্যদের সাথে গর্ব করে নিজের সন্তানের সফলতার গল্পটাও শুনায়। একটা সময় এরাই সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে ‘নষ্টা’র ট্যাগ লাগিয়ে বের হয়।
একটা জাতি কতটা উন্নত তা সেহ জাতির শিক্ষা ব্যাবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। আর আমরা কতটুকু উন্নত সেটা আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো দেখলেই সহজেই অনুমান করা যায়। তামান্না এসব বাদ দাও অন্য টপিক নিয়ে কথা বলো। বাদ দিবো কিভাবে বলো? দেখো সবাই জোড়ায় জোড়ায় হাটতেছে। এরা কি এখানে এসেছে জোড়ায় জোড়ায় হাটার জন্যে বলো! অবশ্যই না! বর্তমানে আমাদের দেশের বেশির ভাগ পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় এখানে জোড়ায় জোড়ায় হাটার প্রতিযোগিতা চলতেছে।
দেখো রাসেল, পড়ালেখার নাম করে এরা কি না করতেছে? এদের ভিতরে ধর্মীয় জ্ঞান না থাকার কারণে এরা দুনিয়ার মোহে অন্ধ হয়ে নিজেরদের সর্বস্ব বিসর্জন দিচ্ছে। মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে যেসব ছেলে/মেয়ে এসব পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পায় তারাও এদের কারণে ধর্মীয় নিয়ম নীতি মেনে চলাফেরা করতে পারেনা। এদের র্যাগিং এর স্বীকার হতে হয়। দেখোনা মাঝে পত্রিকার পাতায়ও দেখা যায়।
শুনো তামান্না এই র্যাগিং এর স্বীকার আমি নিজেও হয়েছি। কিন্তু আমার এলাকার পরিচিত এক বড় ভইয়ের কারণে ওরা আমাকে বেশি বেশি করতে পারেনি। কিন্তু আমার মত সবার হয়তো বড় ভাই নেই। তবে হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া কেউ এই র্যাগিং এর প্রতিবাদও করেনা। প্রতিবাদ করবেওবা কিভাবে গ্রামের একটা সাধারণ ছেলে/মেয়ে যদি এখানে মেধা তালিকা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় তখন সে র্যাগিং কি সেটাই বুঝবেনা। প্রতিবাদ করবে কিভাবে?
জানো তামান্না সব ছেলে আর সব মেয়ে এক না। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন একটা ছেলেকে চিনতাম যে ছেলে, সারাদিনের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কারো সাথে কথা বলত না, মিশত না, ফ্রী সময়ে টিউশনি করাতো। সবাই ছেলেটাকে ভাব ওয়ালা, গ্রাম্য ক্ষেত বলে ঢাকতো। ছেলেটার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই ছেলেটার সাথে ট্রল করতো। কিন্তু ছেলেটার সাথে পরিচয় হওয়ার পর জানতে পারলাম, তার বাবা নেই মা অসুস্থ। টিউশনি করে যে টাকা পায় তার একটা অংশ মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে।
জানো রাসেল কিছু কিছু সময় ভাবতেও খুব খারাপ লাগে কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে আমাদের স্কুল কলেজগুলোতে? জনগনের ব্যাটে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েও বিশ্বের নামকরা শীর্ষ ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরা থাকিনা। এটা সত্যিই আমাদের জন্যে খুব লজ্জাজনক। দেখো রাসেল আমাদের বাংলাদেশের এই বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শুধু বাংলা ভাষাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।যেহেতু বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই বাংলা শিক্ষাটা আসলে কতটুকু যৌক্তিক বলে তুমি মনে করো?
দেখো তামান্না বাংলাদেশে শিক্ষার মাধ্যম বাংলা ভাষা হবে। আমার জানামতে, হাতেগোনা কয়েকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশে বাংলাভাষাই পাঠদানের কাজ চলছে। আমাদের মাতৃভাষা বুঝতে সহজ তাই মাতৃভাষাই শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত। আচ্ছা তামান্না তুমিতো মহিলা মাদরাসায় পড়েছো। তোমার মতে আসলে মহিলা মাদরাসার সিলেবাস কেমন হওয়া উচিত?
মহিলা মাদরাসাগুলোতে দাওরায়ে হাদিস ও ইফতা-তাখাস্সুসের যে সিলেবাস করা হয়েছে এক্ষেত্রে আমি ভিন্নমত পোষণ করি। আমি মনে করি আমাদের জন্যে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয় প্রাধান্য দিয়ে সিলেবাস প্রনয়ণ করা উচিত। পুরুষ যা শিখবে নারীও তাই শিখবে এটা সঠিক চিন্তা নয়।
আমার মতে, আমাদের নিসাব হবে সংক্ষিপ্ত এবং আমাদের প্রকৃতি ও তার দায়িত্ব-কর্তব্য অনুযায়ী। আমাদের জন্য যা যা প্রয়োজন, সে অনুযায়ী শিক্ষাসিলেবাস হওয়া উচিত। তাই অভিন্ন নিসাব না হয়ে আমাদের জন্য পৃথক নিসাব প্রণয়ন করে পাঠদান করা বাঞ্ছনীয় আমি মনে করি। চলো আজকের মত উঠি।
শেষকথাঃ আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে আরো পরিবর্তন আনতে হবে। যেখানে যেটার প্রয়োজন সেটাকে রেখে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে পরিহার করতে হবে। তবেই আমরা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। আল্লাহ আমাদের বুঝারমত তৌফিক দান করুন। আমিন।