:- হ্যালো..
:- জী বলুন..
:- জী আমি রাতুল, বাসা সরি আমি আমার পরিচয় গোপন রাখতে চাচ্ছি,
আসলে আমি কয়েক বছর যাবত খুব বড় ধরণের প্রবলেমে আছি, আমি জানিনা এটা আমার মানসিক রোগ নাকি দৈহিক, আসলে আমি মেয়েদের প্রতি কোনো রুপ আকর্ষণবোধ করিনা, অনেক সময় আমার কাছে নিজেকেই কেমন যেনো মেয়ে মেয়ে লাগে, সবাই বলে আমি নাকি মেয়েদের মতো হাটি,কথা বলি, ইতিমধ্যে আমার শারিরিক সম্পর্কও হয়েছে কয়েকবার, বাট আমি আমার এই প্রবলেমে ইতস্তত, আমি এই প্রবলেম থেকে পরিত্রান চাই এই বলে থামলো রাতুল, ফোনটা কানের থেকে ঢিল করে রেডিও এর দিকে মনোনিবেশ করলো, ফোনের অপরপ্রান্তে ছিলো তিনজন সাইকোলজিস্টসহ একজন উপস্থাপক, রাতুল ফোন করেছে রেডিও সেন্টার ৯৬.৪ এ, ওদের “তোমাদের প্রবলেম আমাদের পরামর্শ” পোগ্রামটা খুব ভালোলাগে রাতুলের, প্রবলেম দ্বারা তারা মানসিক প্রবলেমকে মিন করেন, অনেকেই নিজেদের অনেক প্রবলেমের কথা বলে এবং সুন্দর পরামর্শও পায়।
কেউ বলে “তার পড়ালেখা ভালোলাগে না”, কেউ বলে “ফেইসবুকিং ছাড়তে পারিনা” কারো সুসাইড প্রবোণতা, কারো একাকিত্ব ভালোলাগে, কারো মিজাজ খিটখিটে এমন নানারকম সমস্যার কথা নানাজনে ফোন করে বলে, তার মধ্যে রাতুলকে ফোন করতে উৎসাহ দিয়েছে যে ফোনটাতে সেটা ছিলো ২৭বছর বয়সের আবিরের, সে বলে “তার নাকি একই মেয়ের সাথে অনেকদিন একঘেয়ে একঘেয়ে লাগে, সে ভার্সিটি লাইফেই গার্লফ্রেন্ড বদল করেছে ১৩বার, এখন সে বিবাহিত, তার স্ত্রীর ক্ষেত্রেও নাকি এমনই হচ্ছে, এতে নাকি সে পরকিয়ার দিকে ঝুকতে শুরু করেছে” বিশাল প্রবলেম, বাট সুন্দর পরামর্শ দিয়েছিলেন ডক্টর নাজমুল স্যার, অন্য দুজন থেকে তার পরামর্শগুলা বরাবরই ডিফারেন্ট এবং স্ট্রং হয়। রাতুল অনেক দ্বিধাদন্দ্ধে ভুগে অবশেষে নিজের প্রবলেমের কথা বলতে ফোন করে রেডিও সেন্টারে। ফোনের এপ্রান্তে চারটি সত্তা স্তব্ধ রাতুলের প্রবলেমে। বাট নাজমুল স্যারের চেহারাটা ভাবান্তর, নাজমুল স্যার রাতুলের কথা থেকে মোট ৫টি পয়েন্ট সনাক্ত করলেন…
১. সে মেয়েদের প্রতি ইন্টারেস্টেড না।
২. নিজেকেই তার মেয়ে মনে হয়।
৩. অনেকেই তাকে বলে সে নাকি মেয়েদের মতো।
৪. শারিরিক সম্পর্কও হয়েছে।
৫.সে নিজে থেকে এর প্রতিকারে আগ্রহী।
এর মাঝে স্যার সবচেয়ে ইনপর্টেন্ট পয়েন্ট হিসেবে নিয়েছেন তিন নাম্বারটা। রাতুল অপেক্ষা করছে কোনো সুস্থ পরামর্শের, ড.তময় এবং ড.সুমী, প্রায় আধ ঘন্টা লাগিয়ে রাতুলকে পরামর্শ দিলো, রাতুলের ততোটা ভালোলাগলো না, আর লাগবেই বা কিভাবে রাতুল তো ওয়েট করতেছে ড.নাজমুল স্যারের, সব শেষে স্যারের পালা, রাতুল মনোযোগের সর্বস্ব দিলো এদিকে, স্যার শুধু এতোটুকু বললেন রাতুল! তুমি আমার চেম্বারে চলে আসো এ বলে তিনি ঠিকানাটাও দিয়ে দিলেন। পরদিন নির্ধারিত সময়ের আধঘন্টা পরে চেম্বারে উপস্থিত হলো রাতুল, রাস্তায় যেই জ্যাম!! চাইলেও টাইম মেইন্টেন সম্ভব নয়, নাজমুল স্যার দেখতে ৫০ বছরের লাগলেও বয়স আরো কমই হবে বেশী না, একটা চশমা নাকের ঠিক ডগাতে লটকে আছে, পরনে পাঞ্জাবী, চুলগুলো আধ পাঁকা, চোখগুলো সুন্দর, এই জন্যে হয়তো তার পুরো চেহারাই আকর্ষনিয়।
:- আসসালামুয়ালাইকুম স্যার…
:- এসো রাতুল!
কথাটা রাতুলের দিকে না তাকিয়েই বললেন স্যার, রাতুল ভাবে.. চিনলো কিভাবে? হয়তো ফোন করা হয়েছে যে রাতুল নামের কেউ ঢুকবে এখন আপনার চেম্বারে, কি জানি…চেম্বারটা বেশ গোছালো এবং উন্নত, অনেক ভীড় স্যারের রুমের বাইরে, সবই কি নাজমুল স্যারের রুগী নাকি সেটা রাতুল অবশ্য জানেনা, তবে চেম্বারে কোনো পাগল নেই এটা শিউর, এখানের সব রুগীরাই বোধহয় সুস্থ মস্তিষ্কের মানসিক রুগী। দেশে সাইকোলজিস্ট ডক্টর যেনো সোনার হরিণতুল্য, ডক্টর কচুরিপাতার মতো সহজলভ্য হলেও সাইকোলজিস্ট খুবই কম। দেশের বেস্ট সাইকোলজিস্টদের মধ্যে নাজমুল স্যার অন্যতম, যার চেম্বারে ঢুকতে হলে কম করে সপ্তাহ খানেক আগে থেকে সিরিয়াল ধরতে হয় আর এই দুষ্কর জিনিসটা সহজ হয়েছে রেডিও এর কল্যাণে বা রোগের কল্যাণে..রাতুলের সৌভাগ্যই বলা চলে।
:- তা রাতুল কেমন আছো?
:- জী ভালো আপনি?
:- এইতো… তা চা নেবে নাকি কফি?
অন্য সময় হলে রাতুল অবশ্য কফির কথা বলতো বাট এখন কেনো যেনো তার লেবুর সরবত খেতে ইচ্ছে করছে।
:- জী লেবুর সরবত, সম্ভব না হলে কফি প্লিজ। কানে ফোনটা লাগিয়ে স্যার শুধু বললেন, দুটো লেবুর সরবত।
:- লেবুর সরবত!! কোনো ডিফারেন্ট ওয়ে? (মুখে চিন্তার ছাপ)
:- নো স্যার, জাস্ট গরম লাগছে তাই আরকি, আমি আবার গরমে লেবুতে মজি..(মুচকি হাসি)
:- Good boy
স্যার যেনো সস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, লেবুর সরবতে কিন্তু সাইকোলজিক্যাল একটা কানেক্ট থাকতে পারতো, রাতুলের রোগটার একটা স্তর আছে যেমন ধরুন রোগটা যদি মহারোগে পরিনত হয় তাহলে মানসিক এবং অনেকক্ষেত্রে শারিরিক পুরোটাই Female চয়েজের মতো হয়ে যায়, যেমন টক খেতে পছন্দ করা, মেয়েদের পোশাক পরিধাণ করে বেরিয়ে পরা ইত্যাদি। বাট রাতুলের মধ্যে প্রবলেমটা অনেকটাই গৌণ বলে ধারণা করছেন নাজমুল স্যার, তবে এখনো তিনি শিউর না। দেখা যাক। ইতিমধ্যেই দুটো লেবুর সরবত চলে এসেছে, স্যার প্রথম চুমুকটা দিয়ে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে রাতুলকে জিজ্ঞেস করলেন।
:- তখনতো পরিচয় গোপণ রাখছিলে এখনো কি রাখবে নাকি? তবে না বললেও প্রবলেম নেই, জানালে আমার জন্যে ভালো হতো।
:- জী না স্যার আসলে আমি তখন বলতে চাইনি যদি আমার পরিচিত কেউ শুনে ফেলে তখন…
:- আমি বুঝতে পেরেছি..এখন বলো…
:- আমার বাসা মগবাজার, আমরা দু ভাই দু বোন। জগন্নাথ থেকে অনার্স শেষ করে আর এ্যাডমেশন নেওয়া হয়নি, বাবার ব্যবসাতেই কমবেশ হাত দিচ্ছি এখন।
:- কি নিয়ে পড়েছো,আর এ্যাডমিশন নিলে না কেনো?
:- পড়েছিলাম বাংলা সাহিত্য নিয়ে, আর এ্যাডমিশন না নেওয়ার মধ্যে আমার রোগটার প্রভাব ছিলো, আইমিন ইতস্তত আমি।
অনেক মনোযোগ দিয়েই শুনছেন নাজমুল স্যার, রাতুল তার সরবতে প্রথম চুমুকটা দিলো, সরবতটা তো বেশ!! এতোটা সুন্দর সরবত শেষ কবে খেয়েছিলো মনে নেই, তবে সেদিনের মহাখালীর সরবতটা এরকমই দারুন ছিলো। স্যার খেয়াল করলেন, রাতুল অনেক সিরিয়াসলি এন্সগুলা দিচ্ছে বিধায় কপাল ঘেমে যাচ্ছে, ছেলেটা তার রোগ নিয়ে বেশ চিন্তিত, বোঝাই যাচ্ছে।
:- রাতুল! বিয়ে-শাদীর কথা কী ভেবেছো? (মুখে হাসি, রাতুল যেনো ইজি হয় তাই ইচ্ছে করেই এই প্রশ্ন করলেন স্যার) বাট রাতুল যেনো আরো সিরিয়াস হয়ে গেলো, মুখটা শুকিয়ে গেলো, চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
:-স্যার ফ্যামেলী থেকে বারবার বলছে, বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে তাই বাসা খালি, মা বার বার তাগিদ দিচ্ছে, তারা মেয়েও ফাইনাল করে ফেলেছে বাট আমি এতোটুকু বলে রাতুল থেমে গেলো স্যার বুঝলেন, রাতুল বিয়ে নিয়েই সবচেয়ে বেশী টেনশনে আছে, বাবা মা চাচ্ছে ছেলে বিয়ে করুক বাট রাতুলকে রোগটি কুড়েকুড়ে খাচ্ছে, রাতুল কিভাবে নিজের বউকে সন্তুষ্ট রাখবে? অথচ সে এসবে ইন্টারেস্টেডই না, এই কারণেই সে প্রথমে রেডিও পরে এখানে এসেছে।
:- রাতুল তুমি ১ বছর সময় নাও ফ্যামেলি থেকে, যেকোনো উপায়ে।
:- ওকে স্যার দেখি ট্রাই করে।
রাতুল এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের বাকি সরবতটুকু শেষ করলো, নাজমুল স্যার তো প্রথম চুমুক খেয়ে সেই রেখেছে গ্লাসটা আর ধরেই নাই, হয়তো তার ভালোলাগেনি।
:- রাতুল তুমি কি মুভি দেখো? (ইজি বানানের চেষ্টা)
:- জী দেখি তো!
:- ফেভরিট মুভি কি তোমার??
:- Forest Gump, The Shawshank, Bekas
:- বাহ তোমার চয়েজ তো খুব সুন্দর.. এসব মুভি পছন্দ হওয়ার জন্যে তো মুভিখোর হওয়া লাগে তুমি কি তাই?
:-মুভিখোর কিনা জানিনা তবে অনেক দেখি।( হাসি)
:- Bekas মুভিটা দেখা হয়নি আমার, এটা নিয়ে বলো তো।
:- স্যার এটা ইরাকী ফিল্ম, কিছু বলার নেই স্যার, শুধু বলবো জাস্ট দেখেন।
:- A Beautiful Mind দেখছো??
শুধু এই প্রশ্নটা করার জন্যেই নাজমুল স্যার মুভি নিয়ে কথা শুরু করেছেন, তার মতে প্রতিটি মানসিক রোগীর উচিৎ এই মুভিটা দেখা, মানসিক রোগের সবচেয়ে বড় প্রতিকার হলো নিজের অটুট ইচ্ছা ব্যাস মুভিটা একটা মানসিক রুগীকে উৎসাহ দিবে, পথ দেখাবে প্রতিকারের।
:- জী না স্যার দেখা হয়নি।
:- ইশ! মিস করেছো তুমি। তাহলে চলো আজ আমি Bekas দেখি আর তুমি A Beautiful Mind দেখো, কি বলো?
:- ওকে স্যার..(হাসতে হাসতে)
:- ওকে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে তোমার সাথে।
;- ok, তাহলে আসবো স্যার?
:- হম, টেক কেয়ার..
:- শিউর স্যার।
রাতুল বোঝে না আজ কি হলো? বাসায় ফিরতে ফিরতে রাতুল ভাবতে লাগলো! গেলাম রোগ নিয়ে বাট রোগ নিয়ে কোনো কথাই বললো না ডাক্টার সাহেব, হুদাই একটা মুভি ধরাই দিলো, ধুর ইনি কি আসলেই ডক্টর?! আমার চিকিৎসা নিবে? ভাবসাবে তো কয়না, ধুর আর আসবো না, নাহ দেখি আর একদিন এসে। মুভিটা দেখি, কাল সরাসরি পয়েন্টে আসার চেষ্টা করবো। মুভিটি দেখেছে রাতুল, স্যারের প্রতি যে ক্ষোভটা ছিলো রাতুলের, গতকাল রাতে মুভিটা দেখে সব উবে গেছে, একরকম ফ্যান বনে গেছে, মুভি দেখার পর রাতুল বুঝতে পারে “আসলে এই মুভিটা দেখাও চিকিৎসার একটা অংশ”। মুভিটা মুলত একটা বায়োগ্রাফীক্যাল ফিল্ম সেখানে দেখানো হয় যে একজন মানুষিক রুগীর নিজের রোগের সাথে যুদ্ধ।
:-কি রাতুল কি অবস্থা?
;- জী স্যার ভালো….
:-আজ কি নিবে চা,কফি,সরবত?
;- আজ কফি হলেই চলে। কফির অর্ডার দিয়ে স্যার রাতুলের দিকে তাকালেন.।
;- দেখো রাতুল রোগ এটা মানুষের মধ্যে অতপ্রতভাবে বিদ্যমান,
কারো ভিতর কম কারো ভিতর বেশী, কারো মধ্যে শারিরিক কারো ভিতর মানসিক, সো এটা নিয়ে ট্যানশনের কোনো কারণ নেই, শারিরিক রোগটার কিছু রুলস থাকে, তার প্রতিকারে অমুক ঔষুধ খেতে হয় তমুক মেডিসিন নিতে হয়, বাট মানসিক রোগের সবচেয়ে বড় রুলস হলো নিজেকে প্রতিকারের দৃঢ় ইচ্ছা থাকা, যখন সে এটা বুঝতে পারে যে আসলেই আমি একটা রুগী তখন এটা তার জন্যে একটু সহজ হয় গতকালের মুভিতে নিশ্চয় সেটা দেখেছো তুমি। সো তুমি দৃঢ় হও রোগকে প্রশ্রয় দিবে না দেখতে রোগ ভাগবে সত্বর।
আসলে সমকামিতা কোনো মানসিক রোগ নাকি এটা মানুষের একটি স্বতন্ত্র Gender এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে একদল ডক্টর মনে করে এটি রোগ নয় এটা নারী পুরুষ হিজড়া দের মতো এটা আলাদা জেন্ডার কিন্তু বেশীরভাগ ডক্টর এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাদের অভিমত এটা একটা রোগ, তবে এটায় সবাই একমত যে, রোগটা যদি জিনেটিক কারণে হয় সেটা শারীরিক রোগ, তবে এখানেও অনেকে দ্বীমত করেছেন, তাদের ভাষ্য জিনেটিক হলেও সেটা মানসিকের উপরই প্রভাব বিস্তার করে সো এটাও মানসিক…। যদিও আমরা ধরে নেই এটা শারীরিক তারপরেও এর পরিমান খুবই কম, ধরতে পারো মাত্র ০.২% মানুষ সমকামী হয় তিনটি কারণে….
১/ জিনেটিক…
২/পরিবেশ…
৩/রুচির বিকৃতি…
জিনেটিক -এক কথায় জন্মগত, পরিবেশ -তোমার চতুর্দিকের মানুষগুলো তোমাকে সমকামী বানাবে, যেমন ছাত্র হোস্টেলে একসাথে স্টুডেন্টরা থাকলে, মানুষের কটাক্ষ্যতে, বিবাহিতরা স্ত্রী বা মেয়েদের নাগালের বাইরে থাকলে, ব্লা ব্লা আর সমকামী হওয়ার এই কারনটাই সবচেয়ে বেশী, এই কারণটাই সবচেয়ে বেশী সমকামী বানাচ্ছে। আর এক শ্রেণী আছে যারা রুচির বিকৃতির কারণে সমকামী হয় যেমন অনেকে শখের বসে ভিন্ন পন্থায় সেক্স করার জন্যে এ পথে হাটে, ব্লা ব্লা তোমার ফোন দ্বারাই আমি বুঝেছিলাম তোমার এই প্রবলেমটা আসলে পরিবেশের কারণে হয়েছে, আচ্ছা তোমার এই প্রবটা তুমি ফিল করা শুরু করেছো কবে থেকে??
:- জী আমার শারিরীক সম্পর্ক ১ম হয়েছে ছোটোবেলায় যখন আমার বয়স ১৪/১৫, এক রকম অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি এটার মুখোমুখি হয়েছি, বাট এই প্রবলেমটাকে আমি উপভোগ করা শুরু করেছি ৩/৪ বছর যাবত, এবং আমি আগ্রহ এবং ইচ্ছাকৃতই শারিরীক সম্পর্ক করেছি।
:-তার মানে তুমি ৪ বছর আগে সম্পুর্ণ ঠিক ছিলে বলে মনে করো,?? আইমিন এরকমটা ছিলে না?
:- না স্যার এরকম ছিলাম না, শিউর…
:- তোমার কেনো নিজেকে মেয়ে মনে হয়? আমি তো তোমার দিকে তাকালে সক্ষম পুরুষই মনে হয়।
:- জানিনা স্যার, আমি ইনজয় করি ছেলেদের, আমি একাই না সবাই বলে আমি নাকি দেখতে কিউট, মেয়েদের মতো হাটি, কথা বলি…
:- কারা বলে তোমাকে?
:- বন্ধুরা বেশী বলে..
:- কবে থেকে?
:- সেই ছোটোবেলা থেকেই…
:- ছোটোবেলা থেকে এখন পর্যন্ত বলে এমন কে কে আছে তোমার ফ্রেন্ডদের মধ্যে?
:- আছে অনেকেই, শামীম, মাহমুদ, রাফী, সানজিদা, আশরাফ… এরা আমার ছোটোবেলার বন্ধু….
:- তার মানে এরা ছোটোবেলা থেকেই বলে?
:- জী স্যার অনেকটাই..
:-এইতো একমাত্র পরিবেশ, পরিস্থিতি, তোমাকে সমকামিতার দিকে নিয়ে গেছে,
তুমি বলছো তোমার চারিদিকের মানুষগুলো তোমাকে ছোটোবেলা থেকে বলে আসছে তুমি মেয়েদের মতো, একটা কথা তোমাকে যদি ১বছর, ২বছর, ৩বছর, ৫বছর বারবার, উঠতে বসতে, হাটতে চলতে বলা হয় তোমার মাথায় সেটার ইফেক্ট পরবেই বাধ্যতামূলক, আর সেরকমটাই ঘটেছে তোমার বেলায়, তোমাকে ওরা বলে ছোটোবেলা থেকে, বাট তোমার মাথায় সেটার ইফেক্ট পরিপূর্ণতা পেয়েছে ৪বছর আগে তার মানে এর আগে ওরা বললেও তুমি সুস্থ ছিলে,
আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে তুমি সমকামিতার দিকে এগিয়েছো সমকামিতার অনেকগুলো সাইড ইফেক্ট রয়েছে, যেমন ধরো সমকামিতারা সবসময় অস্বস্তিবোধ করে, মন মিজাজ খিটখিটে থাকে, অল্পতেই রেগে যায়, মাথা ব্যথা করে ইত্যাদি রাতুল দেখলো সাইড ইফেক্টগুলো সবই রাতুলের মাঝে আছে, নাজমুল স্যার সব সাইড ইফেক্টগুলাই বললেন, বাট একটা কথা গোপন রাখলেন, সেটা হলো সমকামিরা সুসাইডপ্রবন হয়, ওরা আত্মহত্যা করে বসতে পারে কোনো কারণে। তিনি এটা বললেন না এই কারণে যে, রাতুলের মস্তিষ্কে হয়তো সুসাইড প্রবণতা নেই এখন যদি সে বলে তাহলে হতে পারে যে, এটা বলার দ্বারাই তার মস্তিষ্কে সেটার প্রভাব ফেলবে।
:- রাতুল..
স্যারের ডাকে সম্মিত ফিরে পেলো রাতুল, একটু চমকেই উঠলো সে, আসলে ওর মস্তিষ্ক আজ সব দিকে ক্ষণে ক্ষণে ঘুরছে, সে বুঝতে পারছে ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধুগুলোর কারণেই ওর আজ এই দশা। স্যারের ডাকে তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন স্যার সিগরেট ধরিয়েছেন, লোকটা সিগরেটও খায়? নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলো রাতুল।
:- দেখো তোমার ট্রিটমেন্টের জন্যে সর্বপ্রথম দরকার তোমার পরিবেশ ঠিক করা, কেউ যেনো তোমাকে আর ঐ কথাগুলো না বলে সেটাে ব্যবস্থা করা, তাই আমি চাই তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে আমি কথা বলি।
:- না স্যার, আমরা কয়েক মাসের ভিতর অন্য কলনীতে শিফট হবো, আমি চেষ্টা করবো ওদের থেকে দূরে থাকতে, আমি চাইনা যেটা ওরা জানেনা ওটাও জেনে ফেলুক. আসলে রাতুল চায়না বন্ধুরা এটা জেনে না ফেলুক যে রাতুল সমকামি, এতে অবস্থা আরো বেগতিক হতে পারে। ওরা হাসাহাসি করবে। এদিকে এখন নাজমুল স্যারের জানার দরকার আসলে রাতুলের মধ্যে এই রোগটার প্রভাব আসলে কতোটুকু… তাই জিজ্ঞেস করলেন…
:- আচ্ছা রাতুল তুমি ব্লু-ফিল্ম দেখো? আইমিন পর্ন ভিডিও তো দেখো রাইট??
:- (লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে বললো) জী দেখা হয় স্যার…।
:- তখন তুমি ডিফারেন্ট কিছু ফিল করো?
:- তা কেমন স্যার?
:- অকে ফাইন, তুমি আজ রাতে দেখবে, কাল আবার কথা হবে… এখন বাসায় যাও।
:- ওকে স্যার আসি তাহলে।
রাতুল বোঝে না চিকিৎসার সাথে পর্নের মতো জিনিসের কি কানেক্ট, তারপরেও সে দেখেছে, অনেকগুলাই দেখেছে, সব খেয়াল করেছে তার সাথে কি বিশেষ ঘটে। রাতুল এখন আর ঘর থেকে বেশী বেরোয়না, শুধু চেম্বারে আসার সময়তেই বের হয়, আজ রাতুল চেম্বারে যাওয়ার সাথে সাথেই দেখলো স্যার আগে থেকেই দুটো কফির অর্ডার দিয়ে রেখেছে, কফিতে চুমুক দিতে দিতে স্যার জিজ্ঞেস করলেন।
:- কাল রাতে তাহলে পর্ন দেখেছো?
:- জী স্যার..
:- ডিফারেন্ট কি কিছু ফিল করেছো?
:- স্যার কেমন ডিফারেন্ট..(রাতুল ডিফারেন্টের মিনিং ই ধরতে পারছে না)
:- ধরো, আমরা যদি পর্ন দেখি তখন আমরা ছেলের জায়গায় নিজেদের কল্পনা করি, তুমি কিরকম ফিল করছো?
:- স্যার এভাবে তো ভাবিনি..আইমিন এটা খেয়াল করিনি যে কি কল্পনা করেছি।
:- এট জানতে হবে, দরকার হয় আবারো দেখো এখন।
:- না স্যার দেখতে হবেনা, আমি শিউর আমি ছেলের স্থানটাই কল্পনা করেছি।
:- হস্তমৈথুন করেছো?
:- মম্মমমম..(আমতা আমতা করছে রাতুল)
; (রাতুলের লজ্জা বুঝতে পেরে স্যার বললেন) থাক বলতে হবেনা।
তবে স্যার একটা সস্তির নিশ্বাস নিলেন, রাতুল যখন নিজেকে পুরুষের জয়গায় ভেবেছে তার মানে সে ততোটা আক্রান্ত নয় এই রোগে, জাস্ট তার ভিতর থেকে মেয়ে সত্তাকে মেরে ফেলে পুরুষ সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
:- আচ্ছা রাতুল শেষ কবে হস্তমৈথুন করেছো??
:- ইয়ে মানে কাল..(তার লাজুক জবাব)
:- তার আগে শেষ কবে? (স্যারের স্বাভাবিক প্রশ্ন. যেনো এটা কিছুই না।)
:-অনেক দিন, ঠিক কবে তা মনে নেই তবে ১বছর তো হবেই।
:- ওকে তুমি আগামী ২ সপ্তাহ পরে আসবে, এই দুই সপ্তাহে কোনো ছেলে বা মেয়ে কারো দিকে তাকাবা না,
আইমিন চেষ্টা করবা কারো দিকে না তাকানের, সবচেয়ে ভালো ঘরে থাকলে। সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখবা, হয়তো বই পড়বা, মুভি দেখবা, গেম খেলবা,ইত্যাদি, কিচ্ছু ভাববা না, কোনো রকম কোনো ভাবনা ভাবা যাবেনা। মা বাবার সাথে গল্পগুজব করবা। এভাবে এক সপ্তাহ পর কখনো তিনদিন পর কখনো বেশী, বা কখনো কাল, এভাবে স্যারের নির্দেশনায় চলতে থাকে রাতুল।
আজ ৮ মাস হয়ে চললো স্যারের কথা মতো চলছে রাতুল, স্যার ওর ট্রিটমেন্ট করেছে নিজের মতো করে, এখন রাতুল অনেকটা সুস্থ বলা চলে, আগের মতো ঐ ফিলটা অনেকটাই নেই, মেয়েদের প্রতি অনেকাংশে এখন আগ্রহ রাতুলের, প্রথম দিকে রাতুলের স্যারের কথাগুলো আজীব লাগতো, আর এমনসব জিনিস করতে বলতো সত্যিই কেমন যেনো লাগতো, বাথরুমে যেতে হবে দিনে রাতে দুইবার, হাতে কোনো পত্রিকা নিয়ে যেতে হবে যেনো বসে পড়া যায়, সকালে ঘুম থেকে উঠতে বলতেন ১০টায়, রাতে ঘুমাতে বলতেন ৭টায়, এটা কিভাবে সম্ভব?
উহু ঘুমের ঔষধ খেয়ে হলেও এতো ঘুমাইতে হবে, এভাবে ২মাস যায় এরপর স্যার আজীব ধরনের আদেশ দেয়, এক প্রকার ক্যাপসুল দেয় সেক্সবর্ধক, এবং ক্যালসিয়ামের বড়ি, এবং ৫ দিন পর পর পর্ন দেখতে বলেন এবং হস্তমৈথুন করতে বলেন, অনিচ্ছা হলেও করতে হবে বাধ্যতামূলক, এরপর চারদিন পর পর, এরপর ৩ দিন পরপর, এরপর ২দিন, এরপর প্রতিদিন একবার করে পর্ন দেখতে বলেন আর হস্তমৈথুন করতে বলেন, আস্তে আস্তে রাতুল নিজে সেক্স করার প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠে, আইমিন তার সেক্সের পরিমানটা বাড়তে থাকে ঔষধের কারণে সো সে নিজের বির্যস্খলনের জন্যে মাধ্যমের প্রয়োজন অনুভব করে, তখন তার মাধ্যম হিসেবে মেয়েদেরই সর্বপ্রথম মস্তিষ্কগত হয় এবং মেয়েদের প্রতি আকর্ষণটা একটু আধটু করে ফিরে আসছিলো, এর মাঝে রাতুলের মাথায় দুইবার ইলেক্ট্রনিক শকও দেওয়া হয়েছে, রাতুল ১ম এ ভয় পেলেও খুব হালকা পিনপিন শব্দ আর দুই একবারের ছোটো ঝটকা পর্যন্তই ছিলো শক দুইটা।
প্রয়োজন ছিলো রাতুলের ভিতর থেকে মেয়ে সত্তাকে মেরে ফেলে পুরুষ সত্তাকে জাগিয়ে তোলা, নাজমুল স্যার অনেকাংশেই সফল ছিলেন।রাতুল এখন বিবাহিত, স্ত্রী মারিয়াকে পেয়ে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবানই মনে করে রাতুল, প্রচন্ড ভালোবাসে রাতুল তার স্ত্রীকে, নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসে, মারিয়া এমনই একটা মেয়ে যাকে ভালোবাসতে বাধ্য থাকবে যে কেউ, কিছু মেয়ে এমন থাকে, ওরা সবার কাছেই প্রিয় পাত্র, ভালোই যাচ্ছিলো রাতুলের দিনকাল, একদিকে স্ত্রীর ভালোবাসা, অপর দিকে মা বাবার মুখে হাসি, এক কথায় রাতুলের সুখি জীবনই কেটে যাচ্ছিলো, কিন্তু এই খুশির ঘরে বাঁধ সাজলো রাতুলের পুরোনো রোগটা।
মাসখানেক আগে একটা বিয়ে বাড়িতে পুরোনো সব বন্ধুদের সাথে দেখা, সবাই আড্ডা দেওয়ার মাঝে প্রস্তাব উঠালো, সবাই মিলে ট্যুরে যাবে কয়েকদিনের মাঝে, সব বন্ধুরা একেকজন একেক দিকে, আবার কবে সাক্ষাত হয়, না হয়, ঠিক নেই তাই সবাই রাজি হয়ে যায়, রাতুলও কিছু পরোওয়া না করে হ্যাঁ করে দেয়।
ট্যুরে রাতুলদের দলে এমন দুইজনও ছিলো যাদের সাথে রাতুলের কোনো কালে শারিরিক সম্পর্কও হয়েছে, ট্যুরে রাতুলের সেই পুরোনো ফিলটা আস্তে আস্তে ফিরে আসছিলো, নিজের অজান্তে রাতুল পুরোনো আগুণে পা দিয়েছে, সেই ফিলটা ফিরে আসছে রাতুল বুঝতে পেরে দিশেহারা হয়ে যায়, রাতুল নিজের সাথে পেরে উঠেনা, পুরোনো টানে আবারো শারিরিক সম্পর্ক হয় ট্যুরে।
বাসায় এসে রাতুল চেষ্টা করছিলো সব ভুলে যেতে এবং ফিলটা দমন করতে, কিন্তু রাতুল ব্যর্থ, রাতুল আগের মতো নেই মারিয়াও টের পেয়েছে, মারিয়া জানেনা ওর স্বামীর কি হয়েছে, রাতে মারিয়াকে স্পর্শও করেনা রাতুল, অথচ রাতুল স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে না শুলে ঘুমাতো না একসময়। রাতুল বুঝতে পারে দিনকে দিন তার রোগ আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেদিন রাতে মারিয়া রাতুলকে কাছে নিতে চেষ্টা করেছিলো, মারিয়া ভেবেছিলো শারিরিক মিলন করলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু রাতুল প্রত্যাখ্যান করে, কোনো আগ্রহ পায়না রাতুল, নিজেই অবাক হয়, সেদিন রাতে রাতুল ঘুমোতে পারেনি, সারা রাত রাতুল কাঁদে, কেনো আবার এমন হলো রাতুলের। কেনো?? মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে রাতুল, মারিয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসে কিন্তু রাতুল তার চাহিদা পুরণ করতে পারছেনা, মারিয়াও রাতের আঁধারে কাঁদে।
রাতুলের আরো বেগতিক অবস্থা হয়, ওদিকে রাতুলের এখন যে নাজমুল স্যারকে জানানো উচিৎ সেটাও মাথায় আসেনা, তার ভিতর একটাই চিন্তা যে মেয়েটি তাকে এতো ভালোবাসে তার জীবন নষ্ট করছে রাতুল, নিজের ভালোবাসাকে কাঁদতে দেখে রাতুল নিজেও ভেঙ্গে পড়ে, কখনো মাঝ রাতে উঠে ফাকা মাঠের মাঝে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদে মেয়েটির কি হবে, ভালোবাসার কি হবে, যদি মারিয়াকে সত্যি বলে মারিয়া তাকে ঘৃণা করবে, না জানালে ভালোবাসার মানুষটা তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে। আফসুসে রাতুল পাগলের মতো হয়ে যায়।
আস্তে আস্তে রাতুলের মাঝে সুসাইড প্রবণতা চলে আসে, রাতুল খুঁজে পায় সুসাইডই সব সমস্যার সমাধাণ করবে, কোনো একটা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে মারিয়ার, তার মতো কলঙ্ক থেকে পৃথিবী থেকে মুছে যাবে, এভাবে বেচে থাকার থেকে মারা যাওয়া ভালো, আর কতো! এভাবেই পৃথিবী থেকে ঝড়ে যায় একটা ফুটন্ত গোলাপ বন্ধুদের অগোচরে ঘটে যাওয়া বিশাল ভুলের কারণে। রাতুল সেদিন রাতে নিজেকে মেরে ফেলেছে, স্ত্রীর ওড়নাকেই নিজের গলায় বেঁধে নিয়ে গেছে পরপারে, শুধু একটা কাগজে লিখে গেছে *” আমার মৃত্যুকে উৎসর্গ করলাম শামীম, মাহমুদ, রাফী, সানজিদা, আশরাফ…তোদের”*
রাতুল চলে গেছে, চিরকুটে লিখে যাওয়া বন্ধুদের গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু চিরকুটের ভাষা এটা বলেনা যে এরা রাতুলকে মেরে ফেলেছে সো তারা ছাড়া পেয়ে যায় সহজে, শামীমরা নিজেরাও জানেনা কেনো লিখেছে ওদের নাম, কেনো? ওর স্ত্রী মারিয়াও জানেনা কেনো, বাবা মাও জানেনা, জানে শুধু এক নাজমুল স্যার। নাজমুল স্যার একমাস পর বাহির থেকে এসে জানতে পারে রাতুলের কথা, আজ নাজমুল স্যারের একটাই আফসুস কেনো সে রাতুলকে এটা জানালো না যে “সমকামীরা সুসাইডপ্রবণ হয়” জানালে হয়তো সুসাইড করতে একটু হলেও নিজের মনের কাছেই বাঁধাপ্রাপ্ত হতো।